টপিকঃ GIMP-এ স্পিনিং গ্লোব এনিমেশন : পদ্ধতি-১
GIMP-এ অটোমেটিক স্পিনিং গ্লোব এনিমেশন তৈরি করার বিল্ট-ইন একটি পদ্ধতি আছে। এ টপিকে সেটিই দেখাবো। পরবর্তীতে (সময় পেলে) মেনুয়াল পদ্ধতিটি নিয়ে আরেকটি টপিক লেখার ইচ্ছে আছে।
আমাদের কাজের আউটপুট হবে অনেকটা নিচের মত:
আসুন, শুরু করি।
১। প্রথমে ইন্টারনেট থেকে সিংগেল কালারের একটি ট্রান্সপারেন্ট ব্যাকগ্রাউন্ডের ওয়ার্ল্ড ম্যাপ (PNG কিংবা GIF) ডাউনলোড করে নেই। যেহেতু আমরা এটা শুধু শেখার উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করবো সেহেতু কপিরাইট ভঙ্গের পাপটি করতে হবে না। এছাড়া এসব ছবি অনেক ফ্রীও পাওয়া যায়। যাই হোক আমি গুগল করে নিচের ছোট্ট ছবিটি পছন্দ করলাম:
২। গিম্প ওপেন করুন। মেনু কমান্ড File > Open-এ যান এবং ফোল্ডার নেভিগেট করে ডাউনলোড করা ফাইলটি খুলুন।
৩। এই ফাইলটির কালার মোড হলো Indexed। টিপিক্যালি গ্রাফিক্স প্রোগ্রামগুলোতে এই কালার মোডের ইমেইজের উপরে বেশিরভাগ ফিল্টারই অ-প্রয়োগযোগ্য। গিম্পের বিল্ট-ইন স্পিনিং গ্লোব এনিমেশনও একটি ফিল্টার এবং এটি বর্তমান কালার মোডে এপ্লাই করা যাবে না। তাই ছবিটির কালার মোড RGB-তে কনভার্ট করে নিন।
৪। ম্যাপের রং আপনাদের পছন্দ হচ্ছে? আমার হচ্ছে না। বরং আসুন এর কালার পরিবর্তন করে সবুজ করে নেই। কিভাবে? একটি নতুন লেয়ার নেই।
৫। বামের টুলবক্সের ফোরগ্রাউন্ড কালার পছন্দ করার আইকনটিতে ক্লিক করুন ও সংরক্ষিত প্রিসেট কালারগুলোর মধ্য থেকে মোটামুটি গাঢ় সবুজ রংটি পছন্দ করুন।
৬। টুলবক্স থেকে Bucket Fill Tool সিলেক্ট করে ক্যানভাসে ক্লিক করুন (নিশ্চিত হোন যে লেয়ার প্যালেটের লেয়ার স্ট্যাকে নতুন লেয়ারটি সিলেক্টেড আছে)।
৭। লেয়ার প্যালেটের লেয়ার মোড ড্রপ-ডাউন লিস্ট থেকে Multiply মোড সিলেক্ট করি নতুন লেয়ারটির জন্য। ওভারঅল ইমেইজ কালারের পরিবর্তন লক্ষ্য করুন।
৮। উপরের লেয়ারটিকে নিচেরটির সাথে মার্জ করুন।
৯। ম্যাপটিতে হালকা কেরামতি করি একটু ডেপ্থ ইফেক্ট দেয়ার জন্য। আমরা বেভেল ফিল্টার ব্যবহার করবো।
১০। ম্যাপটির চারপাশ ক্যানভাসের বাউন্ডিং বক্সের সাথে প্রায় মিশে গিয়েছে। একটু স্কেল ডাউন করে নিলে ভালো হবে (কিংবা আপনি ক্যানভাস সাইজটিকেই বড় করে নিতে পারেন) যাতে মোটামুটি ক্যানভাসের বাউন্ডারির সাথে ম্যাপের বাউন্ডারির কিছুটা গ্যাপ থাকে। প্রস্থ ৩৮০ ও উচ্চতা ২০০ পিক্সেল রাখুন। প্রয়োজনে ম্যাপটিকে ক্যানভাসের ঠিক মাঝখানে এনে নিন মুভ টুল ব্যবহার করে।
১১। নতুন একটি লেয়ার নিন এবং লেয়ার স্ট্যাকে নতুন লেয়ারকে ড্র্যাগ করে নিচে নিয়ে আসুন।
১২। নিচের এই নতুন লেয়ারটির জন্য নীল রং পছন্দ করুন। এই লেয়ারটি হবে আমাদের গ্লোবের বেইস কালার।
১৩। উপরের মাপ লেয়ারটিকে নিচের লেয়ারের সাথে মার্জ ডাউন করি।
১৪। মার্জ্ড হয়ে যাওয়া সিঙ্গেল লেয়ারটিতে মেনু কমান্ড Filters > Animation > Spinning Globe... এপ্লাই করুন।
১৫। স্পিনিং গ্লোব এনিমেশনের সেটিংস ডায়লগ বক্সে চিত্রের মত করে ভ্যালু ও অপশন পছন্দ করুন। সেটিংসগুলোর মতলব যথাক্রমে:
ক) বাই ডিফল্ট গিম্প কিপ্টেমি করে প্রতি এক ঘুর্ণণের জন্য ১০ ফ্রেম বরাদ্দ রেখেছে যার আউটপুট এনিমেশনটি একটু কম স্মুথ মনে হবে, আমরা এটাকে বাড়িয়ে ২০ ফ্রেম করে নিচ্ছি (বেশি বাড়ালে রিসোর্স, ফাইলসাইজ বেশি খাবে )।
খ) গ্লোবটি বাম থেকে ডানে ঘুরবে।
গ) পেছনে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড রাখতে চাচ্ছিনা, কারণ আমরা এর ট্রান্সপারেন্সী ইনফরমেশন সহকারে আলফা সাপোর্টেড জিআইএফ এনিমেশন করতে চাই যাতে পরবর্তীতে একে কোন ওয়েবপেইজ বা এপ্লিকেশনে ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডে সেট করা যায়।
ঘ) অরিজিনাল ম্যাপটি পরবর্তীতে আবার ব্যাবহার করা লাগতে পারে। তাই আমরা এর একটি কপিতে এই স্পিনিং এনিমেশন তৈরি করতে বলছি গিম্পকে।
সেটিংসগুলো OK করার পরে গিম্প বেচারা কিছুটা সময় নেবে এনিমেশনের ফ্রেমগুলো রেন্ডার করতে।
১৬। প্রতিটি ফ্রেম একেকটি লেয়ার হিসেবে তৈরি হবে। নতুন লেয়ারযুক্ত উইন্ডোটি ম্যাক্সিমাইজ করে নিন। মেনু কমান্ড Filters > Animation > Playback... এপ্লাই করুন। একটি আলাদা উইন্ডোতে প্লে-ব্যাক করা যাবে প্লে বাটন প্রেস করে।
১৭। বাস্তবে পৃথিবীর আকৃতি যাই হোক না কেন মিঃ গিম্পের সৌজন্যে প্রাপ্ত এনিমেশনের গ্লোবটির চ্যাপ্টা সাইজ দেখতে ভালো লাগছেনা। তাই আসুন ওভারঅল ইমেইজ সাইজটির উচ্চতা বড় করে নেই। টুলবক্সের স্কেলিং টুল দিয়ে সবগুলো লেয়ারের উচ্চতা স্কেল-আপ করা ঝামেলার। তাই আমরা Image মেনুর সাহায্য নেব। মেনু কমান্ড Image > Scale Image... প্রয়োগ করি। Scale Image ডায়লগ বক্সে বাই ডিফল্ট Width ও Height-এর ভ্যালু কানেক্টেড থাকে (অর্থাৎ একটিকে কমালে-বাড়ালে অপরটিও সে অনুপাতে কমে-বাড়ে)। আমরা এখানে Width ঠিক রাখতে চাচ্ছি। তাই ডানের চেইনের মত কনস্ট্রেইন্ট আইকনটিতে ক্লিক করে Height ভ্যালু ২০০ পিক্সেল করে দিন। নিচের Scale বাটনে ক্লিক করুন। মোটামুটি চলারেবল ( ) আকৃতির একটি গ্লোব পাওয়া গেল। প্লে-ব্যাক করলে আগের ভোঁতকা গ্লোবের চেয়ে দেখতে ভালো লাগবে এটাকে।
১৮। ফাইলটি সেভ করতে হবে এবার। মেনু কমান্ড File > Save দিন। Save Image ডায়লগ বক্সের নিচের দিকে Select File Type-এর বামের ছোট্ট + আইকনটিতে ক্লিক করে File Type লিস্ট এক্সপান্ড করুন (যদি ইতোমধ্যে এক্সপান্ডেড না হয়ে থাকে)। ওখান থেকে GIF image (gif এক্সটেনশন) পছন্দ করুন এবং ডায়লগ বক্সটিতে উপরের দিকে থাকা Name বক্সে ফাইলটির একটি যুতসই নাম দিন। সেইভ করুন।
১৯। Export File ডায়লগ বক্সে Save As Animation অপশনটি পছন্দ করুন। বাই ডিফল্ট ইনডেক্স কালার মোডে কনভার্ট করে নেয়ার অপশন থাকবে, ওটা ওভাবেই রেখে দিন। ফিল্টার প্রয়োগের সুবিধার্থে আমার RGB মোডে কনভার্ট করে নিয়েছিলাম। কিন্তু আউটপুট হিসেবে গিম্প বাবাজি ইনডেক্স কিংবা গ্রেস্কেল মোডেই এক্সপোর্ট করবে।
২০। এরপরে Save as GIF ডায়লগ বক্সেও ডিফল্ট প্রেফারেন্স রাখুন, বিশেষ করে Loop Forever অপশনটি পছন্দ করতেই হবে। নইলে গ্লোব একবার চক্কর দিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। নিচের দুটি অপশন আনচেক্ড রাখুন। ফ্রেম ডিলে কিংবা ডিসপোজালের ব্যাপারটি গিম্পের স্পিনিং গ্লোব ফিল্টারটিই দেখভাল করেছে। আমাদেরকে এ নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না (মাথা বেশি ঘামালে চুল পড়ে যায় যেমন আমার পড়ছে)। আপনার কম্পিউটারের অন্য কোন ইমেইজ ভিউয়ার দিয়ে ইমেইজটি দেখুন।