মামুন.pb লিখেছেন:আমি বিজ্ঞানের ছাত্র নই।বানর থেকে মানুষ এটা আমার বিশ্বাস হয় না।যদি বলেন,বলেন মানুষ থেকেই মানুষের বিবর্তন হয়েছে,বিভিন্ন রং চেহারা,বিভিন্ন দেহ কাঠামো;তাহলে আমার আপত্তি নেই।গাড়ির বিবর্তন গাড়ি থেকেই হয়েছে।আচ্ছা বানর বা বানর সাদৃশ্য প্রনীই কি পৃথিবীর প্রথম প্রাণী?
তাহলে বানর বা বানর সাদৃশ্য প্রানীগুলো কি থেকে বিবর্তিত হলো?
সে যাই হোক এটা আমার ব্যাক্তগত মতামত।বিজ্ঞানে কিন্তু অনেক জায়গাতেই মতবিরোধ আছে,বিজ্ঞান সম্ভবনার বিশ্বাস করে।বিজ্ঞান কিন্তু মত বদলায়,বিজ্ঞান কিন্তু সর্বশেষ প্রমানিত বিষয় মানতে দ্বিধা করে না।।গবেষকগন অনেক জ্ঞান।আসলে অন্ধ ধার্মিক আর অন্ধ বিবর্তনবাদী একই কথা।যখন বিজ্ঞানের কোন গবেষনা রিপোর্ট আপনার বিশ্বাসের বিপক্ষে যায়,শুধু অত্যেজিত না হয়ে বলুন বিজ্ঞানের নতুন রিপোর্ট এটা বলেছে।ব্রাসু ভাইকে ধন্যবাদ।বিজ্ঞান আর কতো তথ্য আমাদেরকে জানাবে।
(কিছুটা অফটপিক হয়ে যাচ্ছে) বানর থেকে মানুষ এসেছে এটা বিবর্তনবাদ কখনো বলে না - বরং কিছু মানুষ-রূপী বানর তথা কৃয়েশনিস্টরাই এ ধরণের ফালতু মিথ্যে তথ্য তৈরী করেছিলো। (সম্ভবত: এদের ব্রেন ডেভেলপমেন্ট বিবর্তনের একটি পর্যায়ে এসে থেমে গেছিলো যার জন্য তারা এইপস আর মাংকী-র মধ্যে পার্থক্য বুঝতে অক্ষম)
মানুষ এবং এইপস-এর কমন উৎপত্তি সম্পর্কে এখানে অল্পদিন আগে আলোচনা করা হয়েছে।
অন্ধ ধার্মিকের ব্যাপারে কিছু বলার নেই। তবে "অন্ধ বিবর্তনবাদী"-র ব্যাপারে আপত্তি আছে। খেয়াল করে দেখুন - রুডল্ফেনসিস ফসিল প্রথম আবিষ্কার হয়েছে আজ থেকে ঠিক ৪০ বছর আগে। কিন্তু এত বছর ধরেও উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে প্যালিওবায়োলজিস্টরা কোনো দাবী করেন নি। ৩/৪ বছর আগে যখন আরো প্রমাণ পাওয়া গেলো, এখন ২০১২ সালে এসে গবেষকরা বলছেন যে ওটা আলাদা এক প্রজাতির হোমো। ওটা যে আলাদা প্রজাতির ফসিল তা তাঁরা প্রথমবারই আঁচ করেছিলেন, তবুও নিজের খেয়ালখুশিমত কোনো তত্ব উপস্থাপন করেন নি, উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তাঁদের ৪০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর পরেও বিবর্তনবাদীদের যদি কেউ অন্ধ তকমা দেন, বোধ করি তা বরং ঐ ব্যক্তিরই বৈজ্ঞানিক গবেষণাপদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞতাপ্রসূত।
এজন কে যুক্তি দিতে দেখেছিলাম বিবর্তনবাদের অকাট্য প্রমান হতে পারে ডাইনোসারের যুগে খরগোশের ফসিল উদ্ধার। যা কখনও পাওয়া যাবে না বলে তিনি দাবি করেছেন।
আমার কাছে বিবর্তনের একটা বিষয় অদ্ভুদ লাগে, যোগ্যতমের টিকে থাকার জন্য এক কোষি প্রাণীরা বিবর্তিত হয়ে বহুকোষী এবং বর্তমানের আকার বিশিষ্ট প্রাণীতে পরিনত হলো। কিন্তু আবার দেখা যায় এক কোষী প্রাণীরা ঠিকই পৃথিবীতে টিকে আছে। ঠিকে থাকার জন্য তাদের বিবর্তিত হতে হলো না।
আরশোলাই কি তাহলে নিখুত প্রাণী? কারণ তারা বিবর্তিত হয়েছে সবচেয়ে কম। আবার আরশোলার দেখি বিভিন্ন প্রজাতিও রয়েছে।
ওটা বোধহয় রিচার্ড ডকিন্সের উক্তি। না, যতদূর জানি তিনি ডাইনোসরের লেয়ারে খরগোশ পাওয়া যাবে না এমন ভবিষ্যৎবাণী করেন নি। তবে এখনো পর্যন্ত যে লক্ষ লক্ষ ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে সঠিক যায়গায় একটাও উল্টো ফসিল পাওয়া যায়নি এই যুক্তিটি দিয়েছিলেন।
ফোরামে কলোডিকটিয়ন সম্পর্কে একটি থ্রেড আছে - এরা বিলিয়ন বছর ধরে "অপরিবর্তিত"। আরশোলা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর আগে একটা পর্যায়ে এসে মোটামুটি থেমে গিয়েছে - আধুনিক আরশোলার সাথে পৃহিস্টোরিক আরশোলা ফসিলগুলোর অমিল খুব বেশি না (সামান্য বিবর্তন অবশ্যই হয়েছে)।
আপডেট: উইকী থেকে ৩০০ মিলিয়ন বছর আগের ফসিলের ছবি (আরশোলাটি এ্যাম্বার পাথরের মধ্যে আটকা পড়েছিলো তাই এত নিখুঁতভাবে শতশত মিলিয়ন বছর সংরক্ষিত রয়েছে):

সম্ভবত: ২০০০ সালে আরশোলার প্রাগৈতিহাসিক ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছিলো। ডাইনোসরের ৫০-৬০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর বুকে আরশোলা আবির্ভূত হয়েছে। ডাইনোসররা বিলীন হয়ে গেছে - কিন্তু এই নচ্ছার প্রাণীটি এখনো সগর্বে টিকে আছে!
এভুলুশনারী প্রেশার বা সিলেক্সন প্রেশার বলে একটি ব্যাপার আছে। একটি প্রাণীকে তার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে (এ্যাডাপ্টেশন) চলতে হয় - এ কারণে প্রাণীর শারীরিক কাঠামো বিবর্তিত হয়ে চলেছে। কিন্তু কোনো প্রাণী যদি এমন একটি স্টেজে চলে আসে যখন সে তার ইকোসিস্টেমের সাথে সুন্দরভাবে ফিট হয়ে যায়, তখন প্রেশারটা কমজোর হয়ে যায়, প্রাণীটির পক্ষেও আর বিবর্তিত হবার পেছনে কোনো জোরালো কারণ থাকে না। আরশোলা প্রাণীটি ৩০০ মিলিয়ন বছর আগেই বিবর্তনের জিগস পাযল মিলিয়ে ফেলেছিলো - অর্থাৎ আরশোলা তার পারিপার্শ্বিক ইকোসিস্টেমের সাথে সুন্দরভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলো।
স্কুল/কলেজের বায়োলজী থেকে আপনি জানেন আরশোলার কংকালটি এক্সো-স্কেলিটন নামে পরিচিত (অর্থাৎ, এদের কংকালটি দেহের বাইরে থাকে)। স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন মানুষের কংকালটি এন্ডোস্কেলিটন (দেহের ভেতরে থাকে) - কংকালের চারপাশে সফট টিস্যু (মাসল, ধমণী/শিরা, ত্বক) দ্বারা পরিবেষ্টিত।
আরশোলার জন্য এক্সোস্কেলিটন ভালো সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। শক্ত কাইটিন প্রোটিন দিয়ে গঠিত স্কেলিটন এদের দেহকে বেশ এফিশিয়েন্টলী রক্ষা করে। স্তন্যপায়ী প্রাণীর নমনীয় ত্বকের তুলনায় আরশোলার কাইটিন শেলের হার্ডনেস বেশি। যেহেতু স্কিন বলে কিছু নেই তাই এদের স্কিন ইনফেকশন হবার ঝামেলা নেই, রুক্ষ পরিবেশে চলাফেরার সময় ত্বক ছিলে যাবারও সমস্যা নেই। এক্সোস্কেলেটনের ওজন খুব হালকা - অল্প শক্তি ব্যয় করে ওড়া যায়। আরো কিছু সার্ভাইভাল ট্যাকটিক্স এরা রপ্ত করেছে - যেমন এরা বহু দিন কিছু না খেয়েই বেঁচে থাকতে পারে। আরশোলার মাথা কেটে ফেললে মাথাটিও বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে - এদের ফিজিওলজী অত্যন্ত এনার্জী এফিশিয়েন্ট মোডে কাজ করে (হয়তো মিলিয়ন বছর আগে খাবারের অপ্রতুলতা দায়ী)। আরশোলা সফলভাবে পারিপার্শ্বিকের সাথে খাপ খাইয়ে ফেলেছে, তাই অদূর ভবিষ্যৎে এরা বিবর্তিত হবার সম্ভাবনা কম।
তবে আরশোলা একদম বিবর্তিত হয় নি তাও বলা যাবে না, যেমন টারমাইট (উইঁ পোকা) - এরাও প্রাগৈতিহাসিক কালে আরশোলা ছিলো। কাঠ-জাতীয় ডায়েট ফলো করার কারণে বিবর্তিত হয়ে এরা বর্তমানে টারমাইটে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া আমেরিকান ফার্মাররা দেখছে- পেস্টিসাইড ব্যবহার করে আর কাজ হচ্ছে না, আরশোলাগুলো কেমিক্যাল পয়জনের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাচ্ছে। এটাও এক ধরণের মাইক্রো বিবর্তন।
পৃথিবীতে প্রায় ৪৫০০ প্রজাতির আরশোলা আছে, এদের মাত্র ১% প্রজাতি মানুষের সাথে থাকে। আমাদের দেশে চকলেট রঙা যে প্রজাতীটি বিরক্তিকর হিসাবে পরিচিত এটি সম্ভবত: জার্মানিক প্রজাতির তেলাপোকা। ঢাকায় পেট শপে বিরাট সাইযের মাদাগাস্কার আরশোলা মাঝেমাঝে কিনতে পাওয়া যায়।
Calm... like a bomb.