আরণ্যক লিখেছেন:ব্রাশু ভাইয়া লিখেছেন:আমগাছ-জামগাছ টাইপের যুক্তি আমজনতার জন্যই বেশি প্রযোজ্য, এই লেভেলে হালে পানি পাবে না। যাকগে, আসলেই অফটপিক হয়ে যাচ্ছে।
সে ক্ষেত্রে জায়গা শিফট করার সুযোগ আছে। 
অফটপিককে টপিকে পরিণত করলাম: 
দু'টি ভিন্ন প্রজাতি মিক্স এ্যান্ড ম্যাচ করে নতুন আরেকটি প্রজাতি উৎপন্ন আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে। ঢাকা চিড়িয়াখানায় লাইগার নামে একটি সংকর প্রাণী তৈরী করেছিলো বেশ কয়েক বছর আগে। পুরুষ সিংহের (lion) সাথে মাদী বাঘ (tigress) সংকর করে Liger প্রজাতী উৎপন্ন করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই লাইগার তৈরী করা হয়েছে। উল্টোটাও আছে - male tiger এর সাথে lioness সংকর করে Tiglon তৈরী করেছেন অনেকে।


১৫০ বছর আগে ডারউইন প্রথম উদাহরণ দিয়েছিলেন পোষা কুকুরের। বিভিন্ন প্রজাতীর কুকুর সংকর করিয়ে নতুন নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করে চলেছে মানুষ সেই ভিক্টোরিয়ান যুগ থেকে। এখানে আরো কিছু উদাহরণ পাবেন।
এ তো গেলো প্রাণীর উপর খোদকারী।
উদ্ভিদ জগৎে একটি প্রাসংগিক উদাহরণ হলো ইসকুল টিফিনের "কলা"। মানে ব্যানানা। কদলী নামক "ফল"-টি প্রাগৈতিহাসিক মানুষের হস্তশিল্প। প্রকৃতি (পড়ুন ঈশ্বর) কলাগাছ নামে কোনো উদ্ভিদ সৃষ্টি করে নি। কলার উত্তরসূরী ছিলো ট্রপিকাল অন্চলের অখাদ্য বুনো বাঁশগাছ টাইপের একটি উদ্ভিদ। আনুমানিক ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ বছর আগে প্রাগৈতিহাসিক মানুষ গ্রাফটিং-এর মাধ্যমে বুনো প্রজাতিটিকে আমূল বদলে দেয়। সম্ভবত: অল্প কিছু জায়ান্ট, ওয়াইল্ড, অখাদ্য, বিচীযুক্ত কলা ক্রোমোযোমাল এ্যাবনরমালিটির (chromosome triplication) কারণে খাবার উপযুক্ত হয়ে থাকবে - এক পর্যায়ে তা অনুসন্ধিৎসু মানুষের গোচরে আসে। ডাইনিং টেবলে ফলের ঝুড়িতে হলুদ, লম্বাটে যে ফলগুলো দেখেন সেগুলো মানুষের ১০ সহস্রাব্দ-ব্যাপী সিলেক্টিভ বৃডিং-এর ফলাফল।
বুনো, অখাদ্য কলা:

ফ্রম ব্যামবু টু ব্যানানা (ক্যাভেন্ডিশ কদলী): 

কলার ইমিউনিটি ব্যবস্থা খুব দুর্বল (সম্ভবত: আর্টিফিশিয়াল প্ল্যান্ট হবার কারণে) - নিষ্ঠুর বিবর্তনের মিলিয়ন বছরের অনবরত ব্যাটল টেস্টিং-এর মুখোমুখি হতে হয় নি এই উদ্ভিদটিকে। হয়তো তাই সামান্য একটি দু'টি ভাইরাল/ফাংগাল এ্যাটাকে পুরো পৃথিবীর কলা নিমিষেই স্রেফ উবে যায়।
বর্তমানে হলুদ রঙের যে কলাটি আমরা খাই সেটি ক্যাভেন্ডিশ প্রজাতির। কয়েক বছর আগে আরেকটি নতুন স্ট্রেইনের ভাইরাস আবির্ভূত হয়েছে - সেন্ট্রাল আফৃকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কিছু এলাকায় এই ভাইরাসের প্রকোপে হাজার হাজার একর প্ল্যান্টেশন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাইরাসের প্রকোপ থামাতে না পারলে ক্যাভেন্ডিশ কলাও অতীত হয়ে যাবে খুব শিগগীরই।
কলা বিষয়ে বিরাট একটি আর্টিকল গোগ্রাসে পড়েছিলাম বেশ কিছুদিন আগে (লিংকটা খুঁজে পাচ্ছিনা এখন)। ৪০-এর দশকে নাকি গ্রো মিশেল (Gros Michel) নামে প্রচন্ড ফেমাস একটি প্রজাতির কলা ছিলো। ঐ কলাগুলো আকারে বিরাট, মাংসল এবং বেশ মিষ্টি ছিলো - কিন্তু কোনো এক ভাইরাস স্ট্রেইনের ইনফেক্সনের কারনে পুরো পৃথিবীর সমস্ত অন্চলে গাছটি মারা পড়ে; মাত্র ৬/৭ বছরের মাথায় পুরো প্রজাতিটিই বিলীন হয়ে যায়। একটি গাছও ভাইরাল (নাকি ফাংগাল?) এ্যাটাক থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয় নি মানুষের পক্ষে - টোটাল এ্যান্ড কমপ্লিট এ্যানায়ালেশন। এই ঘটনাকে দ্যা প্যানামা ম্যাসাকার বলে অভিহিত করেন অনেকে। বর্তমানের প্রচলিত ক্যাভেন্ডিশ কলা সম্ভবত: ফিলিপিনের একটি প্রজাতি থেকে তৈরী করেছিলেন উদ্ভিদবিদরা। তবে ওল্ড-টাইমাররা দাবী করে ক্যাভেন্ডিশ কলা নাকি স্বাদ এবং সাইযের দিক দিয়ে ঐ গ্রো মিশেল কলার ধারেকাছেও যায় না।
বর্তমানে যে ভাইরাসটি ক্যাভেন্ডিশ প্রজাতি আক্রমণ করছে সেটি ডোল, চিকিতা-র মত জায়ান্ট কোম্পানীর নাওয়া-খাওয়া একদম হারাম করে দিয়েছে। এরা পাগলের মত ম্যাস মার্কেটের জন্য উপযোগী এবং ভাইরাস/ফাংগাস রেজিস্ট্যান্ট নতুন প্রজাতির কলা উদ্ভাবন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে - বাইচান্স ক্যাভেন্ডিশও যদি ইণ্তেকাল ফরমাইয়া ফেলে।
একবার যদি ভাইরাসটি ক্যারিবিয়ান ব্যানানা রিপাবলিকগুলোতে ঢুকতে পারে, এই বিরাট মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানীগুলো স্রেফ হাওয়া হয়ে যাবে। (ব্যানানা কোম্পানীগুলো বদমাশীও কম করে নাই - বিভিন্ন দেশে প্রচুর লোক মেরেছে, ডিক্টেটরদের টাকা পয়সা খাইয়ে ব্যবসা বের করে নিয়েছে - এদের ইতিহাস তেল কোম্পানীগুলোর চেয়ে কম নৃশংস নয়) ভাবতে পারেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে আর কয়েক বছর পরে হলুদ রঙা কলাটি একদম বিলীন হয়ে যাবে!?!?! অতীব দু:খের বিষয় হলো, গবেষকরা এখনো ক্যাভেন্ডিশের যোগ্য রিপ্লেসমেন্ট খুঁজে পান নি!
(আমাদের দেশে অবশ্য ক্যাভেন্ডিশ ছাড়াও বেশ কিছু প্রজাতির কলা পাওয়া যায়
)

মানুষের খোদার উপর খোদকারীর সবচাইতে প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বোধ করি গম (wheat)। এ্যাডাম/ঈভ, আব্রাহাম আর মোযেসের বংশধরদের খাওয়াপরার দায়িত্বের কথা বললেও ঈশ্বর কিন্তু wheatgrass নামে কোনো উদ্ভিদ সৃষ্টি করে দিয়ে যান নি - ওটাও মানুষকেই তৈরী করে নিতে হয়েছে।
প্রাগৈতিহাসিক প্রকৃতিতে গোটউইড (goatweed) বলে বুনো ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ ছিলো। ১০,০০০ বছর আগে মানুষ কোনো এক এ্যাক্সিডেন্টের মাধ্যমে অখাদ্য ঘাস জাতীয় goatweed-কে গ্রাফটিং করে wheatgrass তৈরী করে।
জ্যাকব ব্রনোভস্কীর ১৩ পর্বের মাস্টারপীস ডকুমেন্টারী সিরিজ দেখেছিলাম কিছুদিন আগে - The Ascent of Man (1973)। সিরিজের একটি পর্বে (সম্ভবত: ৩র্ড এপিসোডে) ব্রনোভস্কী চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন কিভাবে প্রাগৈতিহাসিক মানুষ এই উদ্ভিদটিকে নিজের প্রয়োজনে মডিফাই করে নিয়েছে, এবং উদ্ভিদটি নিজেও মানুষকে কিভাবে তার বংশবিস্তারের কাজে ব্যবহার করেছে - পারফেক্ট সিমবায়োসিস!
১০,০০০ বছর আগের হান্টার-গ্যাদারার মানুষ গম সংকর "প্রস্তুত" করেছিলো এ্যাক্সিডেন্টালী - আর এই একটি শস্যই মানুষকে শিকারী যাযাবর প্রাণী থেকে এ্যাগৃকালচারাল, সোশাল প্রাণী হিসাবে সেটল করতে সুযোগ করে দেয় - সভ্যতার জন্মদান হয় এই গম, বার্লী আর পরবর্তীতে গবাদী পশুকে (draft animals) ঘিরে। মানবেতিহাসের বিরাট বিরাট সভ্যতাগুলো যেমন এ্যানশিয়েন্ট নিয়ার ঈস্ট, মিশরীয়, ভারতীয়, গৃক, রোমান - সবগুলো সভ্যতা সরাসরিভাবে এ্যাগৃকালচারাল রেভুলুশনের উপর নির্ভরশীল। হাজার বছর আগে মানুষ যদি ভুল করে wheat আবিষ্কার না করতো, আমাদের ইতিহাস হয়তো অন্যভাবে লিখতো কেউ...

Wheat is probably the single most important plant in the entire evolutionary history of mankind - it had jump-started the agricultural and social revolution some 10 millenia ago, and is still maintaining it.
The next time you devour a banana or munch on an atta-roti, think about that! 
No wheat, no civilization!
No civilization, no god.
Wheat == god??? 

Calm... like a bomb.