arnob216 লিখেছেন:কিছুদুর পড়ে আমার ব্রেইন ক্র্যশ করেছে। 
তবুও বড়দের মাঝে কিছু নরমাল প্রশ্ন করি।
১) কোরআন নিয়ে ননইসমালিক মানুষরা কি মনে করেন? এটা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? একা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এতো জটীল একটা জিনিষ লিখেছেন? যদি একজন এর পক্ষে এটা অসম্ভব ধরি তাহলে এটা আসলে কোথা থেকে তৈরি?
এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ওয়েবসার্ভারে আগুন ধরে যাবে। অমুসলিম স্কলার যাঁরা আর্লী ইসলাম নিয়ে গবেষণা করেন তাদের ওরিয়েন্টালিস্ট বলা হয়। ইগনায গোল্ডযিহার, স্কাক্ট, ওয়েনসব্রো এরা বেশ নামকরা ওরিয়েন্টালিস্ট - তবে এদের বইগুলো নেটেও দুষ্প্রাপ্য। আমি ইবন ওয়ারাকের Origins of the Koran বইতে এদের কিছু আর্টিকল পড়েছিলাম। এছাড়া সানা কোরানের গবেষক লাক্সেমবার্গের Syro-Aramaic Reading of the Koran লিখেছিলেন। এ দু'টো বইয়ের স্ক্যানড পিডিএফ নেটে পাওয়া যায়। প্যাটৃসিয়া ক্রোনের Hagarism বইটাও নেটে পেয়েছি (এটা অবশ্য আমি পড়িনাই, আর লেখিকা নিজেই মনে হয় তাঁর তত্ব বাতিল করেছিলেন)।
ছোটোবেলায় যেমনটি শিক্ষা পেয়েছিলাম ধর্মগ্রন্থটি ঐশী, অবিকৃত, স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা এর রক্ষক - ইতিহাস ঘাটঁতে গিয়ে এই দাবীর স্বপক্ষে তেমন জোরালো সমর্থন পাইনি। বরং অনেক ডিস্টারবিং পলিটিক্স সম্পর্কে জেনেছি।
arnob216 লিখেছেন:২) মেজর ২ ধর্ম ক্রিশ্চিয়ানিটি আর ইসলাম অনেকটাই এক। ইসলাম কে ক্রিশ্চিয়ানিটির আপগ্রেডেড ভার্শন মনে হয়। তাহলে ধর্ম হিসেবে এই ২ এর একই কি সেরা নয়? (আরেকটু ডিটেইলস এ গেলে ইসলাম আগায় যাবে)।
ক্রিশ্চিয়ানিটির পরে ইসলাম এলেও এর উপর বরং জুডাইজমের প্রভাব আরেকটু প্রগাঢ়। যেমন ক্রিশ্চিয়ানিটিতে পর্ক নিষিদ্ধ নয়, সারকামসিশনও তারা মানে না। আর সব ধর্মগুলোর মধ্যে যরথ্রুস্ত ধর্মের গভীর প্রভাব আছে (এ ব্যাপারে আর কিছু লিখছিনা
, এর আগে পুরো থ্রেডটাই ডিলিট করে দিয়েছিলো)
arnob216 লিখেছেন:৩) আরেকটি জিনিষ জানতে চাই। ২০০০ বছরের ইতিহাস নিশ্চয়ই এতো বিকৃতি হয় নি। আমার প্রশ্ন হলো নবী আর রাসুলরা তাহলে সত্যিই পৃথিবীতে ছিলো এবং তারা তাদের আগের নবীদের অস্বীকার করেছেন কি? না করলে ধর্মে বিশ্বাসটা একটু জোরদার হয়।
সম্ভবত: এরা মিথলজী আর হিস্টোরিসিটির মিশেল - যাকে বলে mythistory । হয়তো তাদের কেউকেউ রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন - তবে ধর্মগ্রন্থে যেমন তাদের নিয়ে অতিপ্রাকৃতিক দাবীগুলো হয় তা খুব সম্ভবত: স্ক্রাইবদের কল্পনা। হিব্রু বাইবেল মতে একেশ্বরবাদী ধর্মের ফাউন্ডিং ফাদার অর্থাৎ প্যাট্রিয়ার্ক হলেন আব্রাহাম। মিশরের ফ্যারো মারনেপতাহ-র আমলের একটা হায়ারোগ্লিফিক্সে "আবিরাম" নামটির উল্লেখ পাওয়া গেছে। তবে তিনি ৯০০ বছর বেচেঁ ছিলেন, বা ঈশ্বরের সাথে রেসলিং ম্যাচ খেলে জিতে গিয়েছিলেন - এগুলো জুয়িশ স্ক্রাইবদের অতিরন্জন ছাড়া কিছু না। দূর অতীতে উল্কাপাতের কারণে পৃথিবীতে একটি ম্যাসিভ ৎসুনামী হয়েছিলো বলে জীওলজিস্টরা কিছু ক্ষীণ ট্রেস পেয়েছেন। পৃথিবীর প্রায় সব প্রাচীন ধর্মে এই ফ্লাডের রেফারেন্স আছে - নিজস্ব ধর্মের মোড়কে। সুমেরীয় গিলগামেশের গল্প ছোটোবেলায় হয়তো পড়েছেন। মৎস্য পুরাণেও এই ফ্লাডের উল্লেখ আছে। ব্যাবীলনীয় হাম্মুরাবীর ধর্মগ্রন্থেও ফ্লাডিং-এর ঘটনা আছে। আবার হিব্রু বাইবেলেও আছে। ৎসুনামীটা যে উল্কার কারণে হয়েছিলো তার বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে মাদাগাস্কারে। তবে নোয়াহ নামে আদৌ কেউ ছিলেন বা থাকলেও তিনি আগেভাগে খবর পেয়ে আর্ক বানিয়ে প্রাণীজগৎকে রক্ষা করেছিলেন এটা মনে হয় ভ্যাটিকানও বিশ্বাস করে না। (তবে তারা বিশ্বাস না করলেও প্রতি ৫/১০ বছর অন্তর অন্তর নূহ নবীর নৌকা আবিষ্কৃত হয়ে চলেছে) ৩য় প্যাট্রিয়ার্ক মোজেসের এক্সোডাসের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। ইসরায়লের গোল্ডেন এইজের অন্যতম সম্রাট কিং ডেভিড এবং পুত্র কিং সলোমন (দাউদ ও সোলেমান নবী) - বাইবেল বলে এরা নর্দার্ণ ও সাদার্ণ কিংডম অর্থাৎ ইসরাইল এবং জুডাহ প্রদেশকে একত্রিত করে বিশাল ইহূদী রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করেছিলেন। আর্কিওলজিস্টরা পুরো লেভান্ট অন্চল উল্টেপাল্টে বিশাল সাম্রাজ্যের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পান নি। এরা খুব সম্ভবত: ছোটোখাটো কিছু গুচ্ছগ্রামের রাজা ছিলেন, অন্য গোত্রের উপর বিজয়ী হয়েছিলেন। এদের বীরত্বের কাহিনীকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিশাল করে বাইবেলের লেখকরা উল্লেখ করেছেন। যেমন একটা উদাহরণ দেই: হিব্রু বাইবেলে আছে ব্যাটল অব জেরিকোর উল্লেখ: নবী জশুয়া জেরিকোর সামনে দাঁড়িয়ে ৭ বার শিংগায় ফুঁক দিলেন আর অমনি ঈশ্বর জেরিকোর চারধারে যে ডিফেন্সিভ ওয়াল ছিলো তা ধ্বসিয়ে দিলেন। আর্কিওলজিস্টরা জেরিকোতে যুদ্ধ ধ্বংসযজ্ঞের আভাস পেয়েছেন। তবে জেরিকো শহরটা হলো ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায়, কি একটা ফল্ট লাইনের একদম সেন্টারে অবস্থিত। ঐ অন্চলে এখনো প্রতি বছর কয়েক ডজন কুয়েক হয়। আশা করি আমার ড্রিফটটা ধরতে পারছেন।
বেশিরভাগ ঘটনারই সিম্পল, ন্যাচারাল ব্যাখ্যা আছে। আগেকার মানুষ জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে এসব ফেনোমেনন ব্যাখ্যা করতে পারতো না, আর তাই সুপারন্যাচারাল এজেন্ট দিয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে চেষ্টা করতো (God of the gaps)
যীশু নামে হয়তো রক্তমাংসের মানুষ কেউ ছিলেন। তবে সান অব গড জীসাস দ্যা সেভিয়ার - এসব হয়তো মিশরীয় দেবতা হোরাস, আখেন-আতেন, পারসী মিথরা, ও রোমান প্যান্থিওনের অন্যান্য ডেইটীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধার করা।
আব্রাহামিক ধর্মগুলোর নবীদের মধ্যে নবী মোহাম্মদ সম্ভবত: একমাত্র প্রফেট যাঁর জীবনকাল কেটেছে ঐতিহাসিকদের মতে "in the full light of history"। তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। তবে কোরাণ অফিশিয়ালী লিপিবদ্ধ হয়েছিলো তাঁর মৃত্যুর ২০ বছর পরে। বিভিন্ন সহী হাদিস কালেক্সন (বুখারী, তিরমিজি, মুসলিম ইত্যাদি), ইবন ইসহাকের লেখা সীরাৎ সংকলন করা হয়েছিলো ১০০ থেকে ২০০ বছর পরে।
arnob216 লিখেছেন:4) আর এন্ড রেজাল্ট যাই হোক, ধার্মিক জীবন তো আমার কাছে বেটার লাগে (সেটা যে ধর্মই হোক)। আল্লাহ বা দেবতা যাকেই কেউ একটুও ভয় পাবে সে কি কম আকাম করবে না?
এই ধারণা আমারও ছিলো। তবে দু'টো কারণে ধারণাটা আর নেই -
অনেক দিন জাপানে ছিলাম। অধিকাংশ জাপানী ব্যক্তিগতভাবে প্রায় নাস্তিকের মত থাকে। এমনিতে নিজেদের শিন্টো এবং যেন/কনফুশিয়ান বুদ্ধিস্ট বলে আইডেন্টিফাই করে, তবে প্র্যাক্টিকাল লাইফে তেমন কোনো আচার পালন করে না। ধর্মীয় লায়াবিলিটি না থাকলেও এদেরকে অন্তত: আমাদের তুলনায় বহুগুণে বেশি এথিকাল, মোরাল এবং কমপ্যাশনেট বলে মনে হয়েছে। (এদের অবশ্য যেনোফোবিক বলে দুর্নাম আছে)
২য় কারণ হলো স্যাম হ্যারিস। তিনি মাণুষের এথিকস এবং মোরালিটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন। মোরাল রেলেটিভিজম নিয়ে তাঁর লেকচারগুলো অসাধারণ। বেশ কয়েকটা বইও লিখেছেন - সর্বশেষটা মনে হয় "মোরাল ল্যান্ডস্কেপ" - এটাও এথিকস নিয়েই।
তিনি দেখিয়েছেন, উচুঁস্তরের প্রাণীর মধ্যে এথিকাল বিহেভিয়ার ডেভেলপ করার জন্য গড বা কোনো পানিশিং সুপারভাইজারের প্রয়োজন নাই। প্রাণী নিজের প্রজাতির সার্ভাইভালের জন্যই মোরালিটি ডেভেলপ করে নেয়। ডকিন্সের সেলফিশ জীন প্রাণীজগতে অল্ট্রুইযম নিয়েও বিশদ আছে।
বিশ্বাস জিনিসটা বড়ই বিচিত্র। কোন ট্রিগার্ড ইভেন্ট (ব্রাশু ভাইয়ের ক্ষেত্রে হয়ত সেটা ছিল নিষ্পাপ শিশুটির মৃত্যু) না ঘটার আগ পর্যন্ত, যতই বুঝুন, যতই জানুন, ইউ ক্যান্ট জাম্প আউট অব দ্যা কুয়া।
আরে ভাই, আগেও কইছি, এখনো কইতেছি... ঐ একটা দুইটা ঘটনা দিয়ে এরকম বিরাট ইন্টেলেকচুয়াল কুয়া জাম্পিং হয় নাই। হাজারো সিড়ির মধ্যে ঐটা একটা স্টেপ ছিলো। এর আগেও আরো ভয়ানক ট্র্যাজেডী হয়েছিলো।
আপডেট: এখানে সিরিয়াস অফটপিক হয়ে যাবে বিধায় একটা ফালতু থ্রেড খুলে ফেললাম। আমার sob whiny bitching epic story-টা এখানে।
Calm... like a bomb.