টপিকঃ সীরাতুন্নবী (সাঃ) ৫১, তায়েফে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) (১)
আগের পর্ব সীরাতুন্নবী (সাঃ) ৫০,কঠোর ধের্য্য
নবুয়তের দশম বর্ষের শুরুর দিকে ৬১৯ ঈসায়ী সালের মে মাসের শেষ দিকে অথবা জুন মাসের প্রথম দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাওয়া-আসার পথ একশত বিশ মাইল দূরত্ব পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেছিলেন। আল্লাহর রাসূলের সাথে তার মুক্ত করা ক্রীতদাস যায়েদ ইবনে হারেসা (রা) ছিলেন। তায়েফ যাওয়ার পথে পথে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতেন। কিন্তু কেউ তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করলো না। তায়েফে পৌছার পর রসুলুল্লাহ (সা) ছাকিফ গোত্রের তিনজন সর্দারের কাছে যান। এরা পরস্পর ভাই ভাই। এদের নাম ছিল আবদে ইয়ালিল, মাসউদ এবং হাবিব। এদের পিতার নাম ছিল আমর ইবনে ওমায়ের ছাকাফি। রসুলুল্লাহ (সা) তাদের কাছে পৌঁছে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং ইসলামের সাহায্য করার আহবান জানান। জবাবে একজন টিপ্পনির সুরে বললো, কাবার পর্দা সে ফেঁড়ে দেখাক যদি আল্লাহ তাকে রাসুল করে থাকেন। অন্য একজন বললো, আল্লাহ তাআলা কি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে পেলেন না ? তৃতীয়জন বললো, আমি তোমার সাথে কোন কথাই বলতে চাই না। কেননা তুমি যদি নবী হয়ে থাকো, তাহলে তোমার কথা রদ করা আমার জন্য বিপজ্জনক হবে। আর তুমি যদি আল্লাহর নামে মিথ্যা রটাও, তবেতো তোমার সাথে আমার কথা বলাই উচিত নয়। এসব শুনে রসুলুল্লাহ (সা) উঠে দাড়ালেন এবং বললেন, তোমরা যা করেছো করেছো, তবে বিষয়টা গোপন রেখ।
রসুলুল্লাহ (সা) তায়েফে দশদিন অবস্থান করেন। এ সময়ে তিনি তায়েফের সকল নেতৃস্থানীয় লোক অর্থ্যাৎ গোত্রীয় সর্দারদের কাছে যান এবং প্রত্যেককে দ্বীনের দাওয়াত দেন। কিন্ত সবাই এক কথা বললো যে, তুমি আমাদের শহর থেকে বেড়িয়ে যাও। শুধু এ কথা বলেই তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি বরং উছ্শৃন্খল বালকদের উস্কানি দিয়েছিলো। তিনি ফেরার সময় ওসব দুর্বৃত্ত বালক তাঁর পেছনে লেগে গেল। তারা রসুলুল্লাহ (সা)কে গালাগাল করছিলো, হাততালি দিচ্ছিলো এবং হৈচৈ করছিলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই এত বালক এবং দুর্বৃত্ত লোক জড়ো হলো যে, পথের দু’ধারে লাইন লেগে গেল। এরপর গালাগাল দিতে এবং ঢিল ছুঁড়তে লাগলো, এতে তাঁর দু’পা রক্তাক্ত হয়ে তাঁর জুতা রক্তে ভরে গেল। এদিকে হযরত যায়েদ ইবনে হারেস(রা) ঢাল হিসেবে নবী (সা) আগলে রাখছিলেন। ফলে নিক্ষিপ্ত ঢিল তাঁর গায়ে পরছিলো। তাঁর মাথায় কয়েক জায়গা কেটে গেল। হৈচৈ করতে করতে দুর্বৃত্তরা আল্লাহর রসুলের পিছু নিয়েছিল। এক সময় তিনি মক্কার ওতবা, শায়বা ও রবিয়াদের একটি বাগানে আশ্রয় নিলেন। এ বাগান ছিল তায়েফ থেকে তিন মাইল দুরে। রসুলুল্লাহ (সা) এ বাগানে আশ্রয় নেয়ার পর দুর্বৃত্তরা ফিরে গেল।
রসুলুল্লাহ (সা) একটি দেয়ালে হেলান দিয়ে আঙ্গুর গাছের ছায়ায় বসে পরলেন। কিছুটা শান্ত হওয়ার পর এ দোআ করলেন যা “দোআয়ে মোসতাদয়েফিন” নামে বিখ্যাত। এ দোআর প্রতিটা শব্দ দ্বারা বোঝা যায় যে, তায়েফবাসীদের খারাপ ব্যবহার এবং একজন লোকেরও ঈমান না আনার কারণে রসুলুল্লাহ (সা) কতটা মনোকষ্ট পেয়েছিলেন। তাঁর দুঃখ ও মনোবেদনা ছিল কত গভীর। এই দোআয় রসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, হে আল্লাহ রহমানুর রহিম, আমি তোমার কাছে আমার দুর্বলতা, অসহায়তা এবং মানুষের কাছে আমার মুল্যহীনতা সম্পর্কে অভিযোগ করছি। দয়ালু দাতা, তুমি দুর্বলদের প্রভু, তুমি আমার ও প্রভু, তুমি আমাকে কার কাছে ন্যস্ত করছো ? আমাকে কি এমন অচেনা কারো হাতে ন্যস্ত করছো ? যে আমার সাথে রুক্ষ ব্যবহার করবে। নাকি কোন শত্রুর হাতে ন্যস্ত করছো যাকে তুমি আমার বিষয়ের মালিক করে দিয়েছো ? যদি তুমি আমার উপর অসন্তুষ্ট না হও তবে আমার কোন দুঃখ নেই, আফসোস ও নেই। তোমার ক্ষমাশীলতা আমার জন্য প্রশস্ত ও প্রসারিত করে দাও। আমি তোমার সত্বর সে আলোর ছায়া চাই, যা দ্বারা অন্ধকার দুর হয়ে আলোয় চারিদিক ভরে যায়। দুনিয়া ও ।আখেরাতের সকল বিষয় তোমার হাতে ন্যস্ত। তুমি আমার উপর অভিশাপ নাযিল করবে বা ধমকাবে, যে অবস্থা তোমার সন্তুষ্টি কামনা করি। সকল ক্ষমতা ও শক্তি শুধু তোমারই। তোমার শক্তি ছাড়া কারো কোন শক্তি নেই।
{চলবে}