টপিকঃ সর্দি
গত কয়েকদিন যাবৎ আমার বেশ ঠান্ডা লেগেছে। এটা নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করলাম। বেশ কিছু মজার তথ্য পেলাম। যেমন আপনি কি জানেন যে সর্দির কোন ঔষধ নেই(!)?
কমন কোল্ড বা সাধারন ঠান্ডা বা সর্দি একটি শ্বসনতন্ত্রের ভাইরাস জনিত সংক্রামক ব্যাধি।
লক্ষন: কাশি, গলাব্যাথা, নাক বন্ধ থাকা, নাকদিয়ে পানি পড়া, জর। ক্ষেত্র বিশেষে মাথা ব্যাথা, মাংসপেশীতে ব্যাথা, রুচি কমে যাওয়া ইত্যাদি।
স্থায়িত্ব: সাত থেকে দশ দিন। ক্ষেত্র বিশেষে সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহের মত থাকতে পারে।
কমন কোল্ডের জন্য দায়ী প্রায় ২০০ রকমের ভাইরাস চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে প্রায় ৩০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই এটি হয় রাইনোভাইরাস এর জন্য। ১০ থেকে ১৫ ভাগ ক্ষেত্র হয় করোনাভাইরাস জন্য, ৫ থেকে ১৫ ভাগ ক্ষেত্রে হয় ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য।বাকি ভাইরাস গুলো সচারচর দেখাযায় না।
রাইনোভাইরাস এর ছবি:
সংক্রামন: এই ভাইরাস গুলো সাধারনত বায়ুবাহীত হয়ে নিকট দূরত্বে সংক্রামিত হয়। আক্রান্ত ব্যাক্তির নাক, মুখ, এবং নাক মুখের লালার সংস্পর্শের মাধ্যমেও এটি সংক্রামিত হয়। এই ভাইরাস গুলো আমাদের পরিবেশে লম্বা সয়ম বাচতে পারে তাই আক্রাত্র ব্যক্তির ব্যাবহৃত বন্তুর স্পর্শেও এই ভাইরাস সংক্রামিত হতে পারে।
বেশীর ভাগ ভাইরাস জনিত রোগের মতই সর্দির কোন প্রতিকারক বা প্রতিশেধক ঔষধ নেই। আমারা যেসকল ঔষধ খাই এগুলো সাধারনত ভাইরাস নিধনের বদলে লক্ষন সমুহ উপশম করে। ঔষধ গুলো সাধারনত কাজ করে আমাদের শরীরের বিপক্ষে, যদিও সরাসরি ভাইরাসের পক্ষে নয়। ব্যাপারটা আরেকটু খোলসা করি।
মানুষ যেসকল রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হয় সর্দির ভাইরাস এরমধ্যে প্রথম। বয়স্ক মানুষ বছরে ২ থেকে ৩ বার এবং শিশু বছরে ৬ থেকে ১২ বার সর্দি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাছাড়া সর্দির ভাইরাস অনেক পুরাতন ভাইরাস। আমাদের ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা) এই ভাইরাস কে চেনে কোটি বৎসর যাবৎ। অনেকটা মানব প্রজাতিতে ইভল্ব হওয়ার আগে থেকেই। তাই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া কিছুটা উগ্র।
এই ভাইরাস আমাদের শরীরের জন্য কোন ভয়ঙ্কর হুমকি নয়, উপরে বর্নিত লক্ষন সমুহ মুলত ভাইরাসের আক্রমনে নয় বরং আমাদের শরীরেরই তৈরী করা প্রতিক্রিয়ার ফল। আপনার বাড়িতে আপনার পুরাতন কোন শত্রুর আগমন ঘটলে আপনার যেমন প্রতিক্রিয়া হয়… হয়তো রাগের মাথায় মশা মাড়তে কামান দাগাতে গিয়ে শত্রুর বদলে আপনার বাড়িরই ক্ষতি করে বসবেন… অনেকটা সেরকম।
যেমন ধরুন সর্দির জন্য আপানার জর এসে গেল। কেন? কারন আপনার শরীর চাইছে ভাইরাস কে পুড়িয়ে মারতে! মানুষের শরীর সহজেই ১০২/১০৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। অন্যদিকে ৯৮ ডিগ্রির উপরে গেলে রাইনোভাইরাস আর বংশ বিস্তার করেত পারেনা। আপনি হয়তো জর কমাতে একটা প্যারাসিটামল খেলেন, প্যারাসিটামল আপনার ইমিউন সিস্টেমকে বলবে “ভাইজান শান্ত হোন, শরীরের তাপটা একটু কমান, এগুলো রাইনোভাইরাস মাত্র, এরা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না” আপনার ইমিউন সিস্টেম হুংকার দিয়ে প্যারাসিটামলকে বলবে “তোর কি মাথা খারাপ নাকি! চিন্তা করে দেখ *লাদের কত্তবড়ো সাহস! আমার শরীরে আক্রমন করে! সব *লাদের সেদ্ধকরে মারব!” বাড়তে থাকে জর।
নাক দিয়ে গলগল করে পানি পরছে। কেন? কারন আপনার শরীর চাইছে আপনার শ্বসনতন্ত্রে নতুন জন্ম নেয়া ভাইরারস গুলোকে পানির সাথে বের করে দিতে। আপনি হয়তো একটা হিস্টাসিন খেলেন। হিস্টাসিন মিনমিন করে আপনার ইমিউন সিস্টেমকে বলবে “হুজুর শান্ত হোন, নাকের পানি বন্ধ করুন একটু নিশ্বাস নিতে দেন” আপনার ইমিউন সিস্টেম কটমট করে হিস্টাসিনকে বলবে “প্রশ্নই আসে না! সবকটা ভাইরাসের বাচ্চকে দেহ ছাড়া করা পর্যন্ত কোন নিস্তার নেই! সব *লাদের ডুবিয়ে মারব!” বাড়তে থাকে নাকদিয়ে পানি পড়া।
এই রোগের সবচেয়ে ভাল প্রতিকার হল বিশ্রাম নেয়া। আপনার শরীরকে যুদ্ধ জয়ের সময় দিন। সাধারনরত আক্রাত্র হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যেই আপনার শরীর এটা বুঝতে পারে! লক্ষন সমহু দেখা দেয় ২ দিনের মাথায়। ৭ থেকে ১০ দিনের মাথায় যুদ্ধ জয়। আমারা যে গাদাগাদা ঔষধ খাই ওগুলো সর্দি তারাতারি ভাল করেনা। তবে হ্যা আপনার বিশ্রাম নেয়ার সময় না থাকলে ঔষধ খেয়ে লক্ষন গুলোকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। আমাদের গ্রামে গঞ্জে স্বশিক্ষকিত-ডাক্তার(!) গন সর্দির জন্য মাঝে মধ্যে এন্টিবাইটিকও দিয়ে থাকেন! অত্যন্ত দুঃখজনক।
যাই হোক, সর্দি লাগলে বাসায় বসে পড়াশুনা করুন। ভাল একটা মুভি দেখুন। আর আপনার শরিরের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। জয় আপনার নিশ্চত!