টপিকঃ কিছুক্ষণ উইথ স্বপ্নীল : পর্ব ১০ : অতিথি: মেরী ও তুষার
ফাতেমা ইয়াসমীন মেরী এবং তুষার বা শীতল৬৯ বা shitol69 এর ইন্টারভিউ কয়েকদিন আগেই নেয়া হয়ে গেছে, তুষারকে আপনারা সবাই চেনেন, সে অনেক পরিচিত ফোরামিক যার নাম shitol69 । মেরী ও তুষারের সাথে আমার খুবই ভাল রিলেশন। তারা আমার খুবই আপন দুজন মানুষ, মেরী তো ভাইয়া বলতে অজ্ঞান, আর তুষার সবসময় খেয়াল রাখে আমার প্রতি। মেরী খুব চঞ্চল কিন্তু তুষার একদম ধীর স্থির শান্ত মানুষ। বাস্তবে তারা খুবই ক্লোজ ফ্রেন্ড, তুই তোকারি করে কথা বলে, আবার খুবই অসাধারণ প্রেমিক-প্রেমিকাও বটে। আর হ্যা, তুষার সারাদিন খুব কষ্ট করে লেখাগুলো টাইপ করেছে, তাকে ধন্যবাদ কিভাবে দিবো বুঝতে পারছি না। তারপর তার টাইপ করা অংশটুকু রাত ২টা থেকে রাত ৫ টা পর্যন্ত আমি একটু একটু করে সাজিয়েছি। বিরাট একটা চ্যালেন্জ ছিল আমার আর তুষার দুজনের জন্যই। আজকের পর্বটুকু সবার জন্য চমক হয়েই এসেছে, আমি সবসময়ই বিভিন্ন পর্বে চমক ও ভিন্ন কিছু নিয়ে আসতে চাই। আজকের পর্বে প্রথমবারের মত ২ জন মানুষকে একসাথে ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছে, যারা কিনা আবার গুড কাপলও, আর ইন্টারভিউটুকু সাজানোও হয়েছে একটু ভিন্নভাবে। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে : স্বপ্নীল
কিছুক্ষণ উইথ স্বপ্নীল: পর্ব ১- অতিথি: সালেহ আহমদ
কিছুক্ষণ উইথ স্বপ্নীল: পর্ব ২- অতিথি: সমন্বয়ক শিপলু
কিছুক্ষণ উইথ স্বপ্নীল: পর্ব ৩- অতিথি: ছবি আপু
কিছুক্ষণ উইথ স্বপ্নীল: পর্ব ৪- অতিথি: আহমাদ মুজতবা
কিছুক্ষণ উইথ স্বপ্নীল: পর্ব ৫ - অতিথি: রূপসী-রাক্ষসী
কিছুক্ষণ উইথ স্বপ্নীল: পর্ব ৬ - অতিথি: jemsbond
কিছুক্ষণ উইথ স্বপ্নীল: পর্ব ৭ - অতিথি: অন্তিক
কিছুক্ষণ উইথ স্বপ্নীল (ঈদ স্পেশাল) : পর্ব ৮ - অতিথি: সমন্বয়ক উদাসীন
কিছুক্ষণ উইথ স্বপ্নীল: পর্ব ৯ - অতিথি: এডমিন স্বপ্নচারী
ইন্টারভিউ: ১ম পার্ট
স্বপ্নীল: তুষার আর মেরী তোমরা কেমন আছো?
মেরী: আমি ভাল আছি ভাইয়া।
তুষার: আমিও ভাল আছি ভাইয়া।
স্বপ্নীল: গুড। তুষার, প্রথম প্রশ্ন তোমার কাছে: তোমার তিন জায়গায় (প্রজন্মে, ফেসবুকে আর বাস্তবে) তিন নাম কেন?
তুষার: আমি যখন প্রথম নেট নিলাম বাসায় তখন শীতল নামটা মাথায় এসেছিল ছদ্ধনাম হিসেবে, তাই শীতল। আর যখন বিভিন্ন সাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে যাইতাম তখন shitol নামটা নিতোনা, তাই সাথে 69 যোগ করা! 69 টা এসেছিল ফারুকীর 69 নাটক থেকে! আউলা ঝাউলা কিছু একটা! আর ফেসবুকে শান্ত বালক দিয়েছি কারণ ( হাসি) আপনি জানেন আমি ধীর স্থির শান্ত মানুষ
স্বপ্নীল: হাহা, বেশ মজার । আচ্ছা, তুমি প্রজন্মে এসেছ অনেক আগে, কিন্তু এতদিনেও মেরীকে প্রজন্মে কেন আননি?
তুষার: মেরীকে না আনার কারন মেরীর বাসায় পিসি ছিলনা. আর যখন পিসি আসে সাথে নেট ছিলনা! এইসব আরকি! এখন ল্যাপটপ আছে! সামনে ইনশাআল্লাহ প্রজন্মে আসবে!
স্বপ্নীল: এখন একটা জিনিস জানতে চাইব: তোমাদের পরিচয় কখন থেকে?
তুষার: পরিচয় মূলত ক্লাস ৯ থেকে। এর আগে ক্লাস ৮-এ মাঝে মাঝে দেখেছি! তবে খুব একটা খেয়াল করা হয়নি! তবে ৯ এ বিভাগ আলাদা হবার সাথে সাথে ছেলে মেয়েদের কম্বাইন্ড ক্লাস দেয়া হয়! সেখান থেকে আল্টিমেটলি দেখা, তবে কথা হতনা বললেই চলে! :p
স্বপ্নীল: প্রথম কথা হয় কিভাবে মনে আছে??
তুষার: ব্যাপারটা অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু মনে আছে! কারণ আমি মেয়েদের সাথে কথা বলতাম কম! ক্লাস ৯ এ মেরীর সাথে কোন কথাই হয় নাই! ক্লাস ১০-এর মার্চ বা এপ্রিল মাসে প্রথম কথা হয়! আমরা স্কুল থেকে পিকনিকে গিয়েছিলাম, তার কিছু ছবি চেয়েছিল মেরী- এই প্রথম কথা!
স্বপ্নীল: দুজনে বেশ ভাল একটা সম্পর্কের দিকে কিভাবে গেলে?
তুষার: আসলে সম্পর্কে যাওয়াটা অনেক পরে। আমাদের মাঝে বন্ধুত্বটাই বলতে গেলে শুরু হয় আমাদের ssc পরীক্ষার আগে আগে। তখন আসলে খুব একটা কথা হতনা, নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয় hsc এর শুরু থেকে।
মেরী: ভাইয়া, এখন আমি বলি: আমাদের আসলে ওই সময়টা খুব একটা কথা হতনা। এইচএসসি এর পর থেকে আমাদের মাঝে যোগাযোগ শুরু হয় ঠিকই, তবে কথা একদমই হতনা। সারাদিন শুধু sms দেয়া-নেয়া হত এরপর আস্তে আস্তে বেশ ভাল একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে।
স্বপ্নীল: হুমম... আচ্ছা বর্তমানে কে কি করছো? ভবিষ্যতের প্ল্যানই বা কি?
তুষার: আমি বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে Government & Politics নিয়ে পড়ছি। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে ভবিষ্যতে মাস্টার্স করার ইচ্ছা আছে। এরপর একটা এমবিএ করবারও ইচ্ছা আছে. আমি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এডুকেশন সেক্টর নিয়ে কাজ করতে চাই।
মেরী: আমি বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং-এ BBA করছি। ভবিষ্যতে আমার ইচ্ছা কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করা।
স্বপ্নীল: পড়াশোনার পাশাপাশি বর্তমানে কেউ কোন জব করছো কি?
তুষার: আমি বর্তমানে ব্রিটিশ কাউন্সিলে বিভিন্ন সময়ে কাজ করছি। ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটা ডিপার্টমেন্ট বাদে মোটামুটি সব ডিপার্টমেন্টেই কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। ভার্সিটির ফাঁকে যখনই সময় পাই তখনি কাজ করতে চেষ্টা করি। গত ৭-৯ ডিসেম্বর একটি Regional Policy Dailogue হয়ে গেল রূপসী বাংলা হোটেলে। Policy Dailogue এর বিষয় ছিল Building Bridges Between Universitis & Communities। আয়োজনে ছিল ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ আর ইউজিসি। সেমিনারের বিভিন্ন দিক নিয়ে টানা ২০ দিনের মত Coordinator হিসেবে কাজ করলাম, খুব ভালো অভিজ্ঞতা ছিল। আর এই বছর সম্ভবত একটা রিসার্চ ফার্মে পার্টটাইম কাজের জন্য জয়েন করছি!
মেরী: আমি আপাতত কোন পার্টটাইম কাজের মাঝে নেই! তবে কিছুদিন টিউশনি করেছি!
স্বপ্নীল: যাক অনেক কিছু জানা গেলো তোমাদের সম্পর্কে। একটু বিরতি নেই চলো সবাই। একটু ফ্রেশ হয়ে আবার আসব।
ইন্টারভিউ: ২য় পার্ট
স্বপ্নীল: এবার আমরা তোমাদের প্রত্যেকের একজন ক্লোজ ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলব। প্রথমে মেরীর বান্ধবী প্রিয়াম এর সাথে কথা বলব: প্রিয়াম, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু
প্রিয়াম: ওয়ালাইকুম সালাম ভাইয়া।
স্বপ্নীল: কেমন আছো প্রিয়াম?
প্রিয়াম: জি ভাইয়া, ভাল আছি।
স্বপ্নীল: তোমাকে প্রথমেই জানিয়ে রাখি এটা অনলাইনের সুপরিচিত একটি ফোরাম প্রজন্ম ফোরামে প্রকাশ করবার জন্য একটা ইন্টারভিউ নেয়া হচ্ছে...
প্রিয়াম: ঠিক আছে ভাইয়া।
স্বপ্নীল: প্রথম প্রশ্ন তোমার কাছে: প্রিয়াম তুমি কি ধরনের মানুষ?
প্রিয়াম: আমি যার সাথে মিশি তার সাথে অনেক কথা বলি, আর যার সাথে মিশি না তার সাথে খুব একটা কথা বলিনা।
স্বপ্নীল: বেশ ভালো। আচ্ছা প্রিয়াম তুমি এখন মেরী সম্পর্কে কিছু বলো আমাদের।
প্রিয়াম: মেরী সম্পর্কে? আচ্ছা, মেরী অনেক ফ্রেন্ড বানাতে পছন্দ করে...ও অনেক ফ্র্যাঙ্কলি---ফ্রেন্ডের জন্য ও জান- প্রাণ। সবার সাথে মিশে, ফ্রেন্ডের দরকারে সবসময় আগায়া যায়।
স্বপ্নীল: ক্লাসে মজা করে না ?
প্রিয়াম: হ্যা ভাইয়া, ও সবার সাথে খুব মজা করে ..অনেক দুষ্টামি করে...যদিও স্যাররা টের পায় না।
স্বপ্নীল: তাই??এবার বলো মেরীর খারাপ দিক কি?
প্রিয়াম: খারাপ দিক?? উমম...মেরী সবসময় লেট করে..ওকে সকাল ৭ টায় বাসের জন্য দাড়িয়ে থাকতে বললে ৭.৩০ এ আসে।
স্বপ্নীল: হাহাহা..বেশ মজার তো। নেক্সট টাইম মেরীর ঘড়ি এগিয়ে দিও।
প্রিয়াম: ভাইয়া ভাবসিলাম তো আগাই দিবো, কিন্তু আর দেয়া হয় নাই (হাসি)।
স্বপ্নীল: আচ্ছা, মেরীকে নিয়ে ফান টান হয় না?
প্রিয়াম: না তেমন কিছু নাই। আসলে সবই মজার, আলাদা কিছু নাই।
স্বপ্নীল: হুম..এবার বলো: তুমি প্রজন্ম ফোরাম সম্পর্কে কিছু জানো?
প্রিয়াম: না তেমন কিছ জানিনা।
স্বপ্নীল: তোমাকে প্রজন্ম ফোরামে দাওয়াত আর ইন্টারভিউ ছাপা হলে তোমাকে প্রিন্ট করে দেখানো হবে। অনেক মজা হলো তোমার সাথে আড্ডা দিয়ে। ভাল থেকো।
প্রিয়াম: থ্যাংকস ভাইয়া, ভাল থাকবেন।
অফ দ্যা রেকর্ড কথা বার্তায়
স্বপ্নীল: মেরী দেখো তো প্রিয়াম কনফারেন্স লাইনে এখনো আছে নাকি?
মেরী: প্রিয়াম, আছিস?
প্রিয়াম: আছি
স্বপ্নীল: এই প্রিয়াম, তুমি জলদি লাইন কাটো
(এক পশলা হাসি হয়ে গেল আমাদের ৪ জনের মাঝে )
স্বপ্নীল: এবার আমরা কল করছি তুষারের বন্ধু কাননকে: আসসালামু আলাইকুম, কানন। কেমন আছো?
কানন: ওয়ালাইকুম সালাম। ভাল আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?
স্বপ্নীল: আমিও ভাল আছি। তুমি একটু নিজের পরিচয় দবে প্লিজ সবার উদ্দেশ্যে?
কানন: হ্যা অবশ্যই। আমি কানন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে Environmental science নিয়ে পড়ছি।
স্বপ্নীল: তোমার সাথে তুষারের পরিচয় কিভাবে হল?
কানন: আমাদের পরিচয় ক্লাস টেন থেকে। আমার বাসা আর তুষারের বাসা একদম কাছাকাছি।
( একটা বিশেষ টাওয়ার থেকে সবার বাসা কত দূরে তা নিয়ে সবাই বেশ হাসাহাসি করলাম)
স্বপ্নীল: কানন, আমাদের বলো: তুষারের সবচেয়ে ভালো গুন কোনটা?
কানন: তুষারের সবচেয়ে ভালো গুন হচ্ছে ও অনেক রেসপনসিবল একজন পার্সন, কোন কাজ করলে দায়িত্ত্ব নিয়ে কাজ করে। কখনো ওর কাছ থেকে এমন কোন বিহেভ পাই নাই যা কষ্টদায়ক। আর ও সবসময় সত্য কথা বলে।
স্বপ্নীল: OMG!! তুষার তো তাহলে দারুন একটা ছেলে।
(প্রশংসার বদলে তুষার ওকে খাওয়াবে কিনা সেটা নিয়া বেশ মজা হলো)
আচ্ছা এখন বলো: তুষারের কি ভালো লাগেনা?
কানন: তুষারের বাসায় গিয়ে নেট থেকে কিছু আনতে গেলে দিতে চায়না! হা হা হা...
মোস্ট অফ দ্যা টাইম কম্পিউটারে সাথে বসে থাকে...আরেকটা অভিযোগ হচ্ছে আমরা কার্ড খেলতে বসলে আমি যদি কোন ভুল করি তাহলে আমাকে বকতে থাকবে। কল না উঠাতে পারলে তো কথাই নাই...হা হা হা....
স্বপ্নীল: হাহাহাহা।
(তুষার প্রতিবাদে কিছু একটা বলল, হাসি ঠাট্টায় কথা শেষ হলো)
স্বপ্নীল: কানন, জম্পেশ একটা আড্ডা হলো তোমার সাথে, সত্যি খুব মজা পেয়েছি। ভাল থেকো।
কানন: আপনিও ভাল থাকবেন ভাইয়া।
(কাননের সাথে কথা বলার পর মেরীর ওজন কম নাকি ঠিক আছে তা নিয়ে আমরা তর্কে মেতে উঠলাম। সমাধান করতে ডা: নাকিবকেও কনফারেন্সে আনার চেষ্টা করা হলো, কিন্তু সংযোগটা কিছুতেই হলো না। ফেসবুকের ৪৪ কমেন্টের পর নাকিবের কাছ থেকে জানা গেলো: মেরীর ওজন ঠিক আছে )
স্বপ্নীল: মেরী এবং তুষার। অনেক আড্ডা হলো। আবার একটু বিরতি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে আমরা আবার হাজির হবো।
ইন্টারভিউ: শেষ পার্ট
স্বপ্নীল: আমাদের ইন্টারভিউয়ের শেষ অংশে তোমাদের স্বাগতম। এবার তোমাদের ফ্যামিলি সম্পর্কে জানতে চাইছি, একটু বলবে প্লিজ?
মেরী: আমার ফ্যামিলি মেম্বার ৬ জন, আমি, আমার বাবা-মা, আমার দুই বোন আর এক ভাই। আমি সবার বড়.ভাইটা আমার একবছরের ছোট..আর বোন দুইটা স্কুলে পড়ে।
তুষার: আমার ফ্যামিলিতে আমার মা আর আমি। আমার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। আমার কোন ভাই বোন নেই, ছোট বেলা থেকে একাই বড় হয়েছি। আম্মু সরকারী চাকুরী করে..এইতো..
স্বপ্নীল: তুষার, তোমার বাবা কিভাবে মারা গেলেন?
তুষার: আব্বু আসলে অনেক ভাল ছিল। আব্বু যখন মারা যায় তখন আমার বয়স খুব কম। আমার জন্ম ১৯৯০ সালে আর আব্বু মারা যায় ১৯৯৩ সালের অক্টোবর মাসে। বুঝতেই পারছেন কত ছোট ছিলাম। আমার যতদূর মনে আছে আমি আব্বুর সাথে প্রায় প্রতিদিন বিকালে হাটতে বের হতাম। আব্বু ৩.৩০ এর মাঝে বাসায় চলে আসতো। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২.৩০ পর্যন্ত অফিস হত। আব্বুর সাথে বের হলে যা চাইতাম তাই কিনে দিত, কখনো না শুনেছি বলে মনে পড়েনা।
যতদূর মনে পড়ে, সে সময়টাতে সপ্তাহে একদিন সরকারী ছুটি ছিল। আব্বু মারা যায় ব্রেইন স্ট্রোকে, অনেকেকেই দেখেছি যারা বেশ কয়েকটা স্ট্রোক হবার পরেও দিব্যি ভালমত বেঁচে আছে, কিন্তু আব্বুর ক্ষেত্রে প্রথম বারেই সব শেষ। আমার মনে আছে আব্বুর স্ট্রোক হয়ছিল সকালে আর সারাদিন পর আব্বুকে যখন নিয়ে আসে আব্বু তখন মৃত। সবাই খুব কান্নাকাটি করছিল।
( বলতে বলতে তুষার বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে, আমার কি যে খারাপ লাগতে থাকে তার কথা শুনে বুঝাতে পারব না)
আমাদের গ্রামের বাড়িতে যাবার জন্য একটা নদী পার হতে হয়। নৌকায় যখন নদী পার হচ্ছিলাম , আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে প্রচুর লোক নদীর পাড়ে দাড়িয়ে চিৎকার করে কাদছিল।লোকসংখ্যা হাজারের নিচে হবেনা, ব্যাপারটা আমাকে অবাক করেছিল। আসলে আমাদের গ্রাম এবং এর আশেপাশের গ্রামের সবাই আব্বুকে খুব ভালোবাসতো। তখন আসলে কিছুই বুঝতাম না। এখন আমি বুঝি ওই অল্প বয়সে কতবড় ক্ষতিটা আমার হয়ে গেছে।
তবে আমি আমার আম্মুর প্রতি কৃতজ্ঞ, আম্মু আমাকে কখনই বাবার অভাব বুঝতে দেননি।
স্বপ্নীল: তুষার, আমার খুবই খারাপ লাগছে, তোমাকে যে কি বলব বুঝতে পারছি না।
(কিছুক্ষণ নীরবতা বিরাজ করে সবার মাঝে, হালকা কথা বার্তার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়)
স্বপ্নীল: আচ্ছা, এখন আমাকে বলো: তোমাদের রিলেশনের ব্যাপারটা তোমাদের বাসার কেউ জানে?
তুষার: রিলেশনের ব্যাপারটা আসলে ফ্যামিলির কেউ জানেনা, তবে সবাই হয়তো গেস করে। আমাকে মেরীর ফ্যামিলির সবাই মোটামুটি চেনে। আর আমার মার সাথে মেরীর দেখা হয়েছে, দুজনের মাঝে ভালোই সম্পর্ক। আশা করি ভবিষ্যতে সমস্যা হবেনা।
মেরী: আমারও একই কথা- ফ্যামিলির কেউ আসলে রিলেশনের ব্যাপারটা জানেনা.
কিন্তু তুষারকে সবাই মোটামুটি চেনে। আমার মনে হয়না ভবিষ্যতে খুব একটা সমস্যা হবে আমাদের...
স্বপ্নীল: তোমাদের সারাদিন কিভাবে কাটে? মানে রুটিনটা জানতে চাচ্ছি।মেরী তুমি ফার্স্ট আনসার দিবা
মেরী: আসলে রুটিন দুই ধরনের...ভার্সিটি খোলা থাকতে একরকম, ভার্সিটি খোলা না থাকলে একরকম..ভার্সিটি খোলা থাকলে সকাল ৭.৩০-৮.০০ এর মাঝে বেরিয়ে যাই। ১০ টার মাঝে পৌছাই, বাস থেকে নেমে সোজা আমাদের কমন রুমে চলে যাই! তারপর ক্লাস...ক্লাসে ঢুকে থার্ড বেঞ্চ বা ফোর্থ বেঞ্চে বসা হয়....ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে আড্ডা দুষ্টামি হয়..
আমরা চার পাঁচজন বান্ধবী একসাথে বসি! মাঝে মাঝে ক্লাসে গল্প করতে করতে ধরা খেতে খেতেও খাইনা! এ পর্যন্ত ধরা খাইনি আরকি...লাকি বলা যায়। ম্যাক্সিমাম ৩.৩০ পর্যন্ত ক্লাস হয় আমার। ক্লাস শেষে ভার্সিটির বাসে বা বাইরের বাসে বাসায় চলে আসি! এইতো ....এরপর সন্ধায় একটু আধটু টিভি দেখা হয়...আর পরীক্ষা থাকলে অনেক পড়ালেখা হয়! নয়তো খুব কম... আর ছুটির দিনে ১১-১২ টা পর্যন্ত ঘুমাই.বাকিটা খুবই কমন...সবার যেমন কাটে..তেমনি...
তুষার: সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি প্রথমে পিসি নিয়ে বসি...বিভিন্ন সাইট ব্রাউজ করা হলে কিছু খাওয়া-দাওয়া করি। তারপর ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেই। সাধারনত ৯.৩০ -১০ টার মাঝে ভার্সিটিতে পৌছে যাই.. সাধারনত ১০.১০ - ১.০০ পর্যন্ত ক্লাস হয়! দেড়টার দিকে ভার্সিটি থেকে একটা বাস ছাড়ে। ক্লাস করে দেড়টার বাসের জন্য দৌড় মারি! ২.৩০ এর মাঝে বাসায় চলে আসি! তারপর আবার পিসি নিয়ে বসি!আসলে আমার দিনের বেশিরভাগ সময় পিসির সাথেই কাটে! রাতে ১২-১ টার মাঝেই ঘুমিয়ে পড়ি.
স্বপ্নীল: তুমি বাইরে আড্ডা দাওনা?
তুষার: আমার ফ্রেন্ড সার্কেলটা আসলে মিরপুরেই..আগে যেমন ফ্রেন্ডদের সাথে বেশি দেখা হত বা ঘোরাফেরা হত, এখন তেমনটা খুব একটা হয়না। মাঝে মাঝে দেখা হয়। ব্যাপারটা মিস করি...আগে সবাই এক স্কুলে পড়তাম, কিন্তু এখন একেকজন একেক ভার্সিটিতে পড়াশুনা করি। সবাই ব্যস্ত থাকি, তাই স্বাভাবিকভাবেই আড্ডা খুব কম হয়।
স্বপ্নীল: হুমম, ব্যস্ত নাগরিক জীবন!! আমরা আমাদের ইন্টারভিউয়ের একদম শেষে এসে গেছি। সর্বশেষ প্রশ্ন মেরীর কাছে: মেরী, তুষারের কোন ব্যাপারটা তোমার ভালো লাগেনা?
মেরী: ( কিছুক্ষণ ভেবে) উমম.. আগে তুষার আমাকে অনেক সময় দিত। এখন খুব একটা সময় দেয়না। ব্যাপারটা আসলে মাঝে মাঝে আমি সহজভাবে মেনে নিতে পারিনা।
(মেরী খানিকটা আবেগ-প্রবণ হয়ে যায়)
স্বপ্নীল: তুষার, মেরী যা বলল তার ভিত্তিতে তোমার বক্তব্য কি?
তুষার: আসলে ভাইয়া, সময় কিন্তু এখন আগের মত নেই। এখন আমি পার্টটাইম কাজ করি। কাজের ফাঁকে সময় পেলেই আমি ফোন দেই। আর যখন কাজ করিনা তখন তো কথা হবেই। আসলে এ ধরনের অদ্ভুত অভিযোগ পেইনফুল।
স্বপ্নীল: হাহাহা, হ্যা আসলেই.. আসলেই.. মেরী, বাস্তবে আসলেই সেভাবে টাইম ছেলেরা ম্যানেজ করতে পারে না, অনেক রকম ভেজালে ব্যস্ত থাকতে হয়।
( মেরী, তুষার আর আমার মাঝে বেশ কিছুক্ষণ এ নিয়ে আলাপ হলো)
স্বপ্নীল: আচ্ছা ঠিক আছে, তুষার, এখন বলো: মেরীর কোন ব্যাপার তোমার ভালো লাগেনা?
তুষার: তেমন কিছুনা.তবে মাঝে মাঝে অযথাই রাগ করে এবং কিছুতেই রাগ ভাঙানো যায়না।এই ব্যাপারটা ভালো লাগে না।
স্বপ্নীল: হাহা, মেরী কিছু বলবা?
মেরী: (হেসে) ভাইয়া, আমার কিছু বলার নেই।
স্বপ্নীল: অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাদের। সত্যি আজ (২ ঘন্টা ব্যাপী) দারুন একটা কনফারেন্স আড্ডা এবং ইন্টারভিউ ( থ্রো এয়ারটেল স্পেশিয়াল ) হলো তোমাদের দুজনের সাথে। অতিথি শিল্পী হিসেবে প্রিয়াম আর কানন তো ফাটিয়ে দিয়েছে। আর ডা: নাকিবকেও স্পেশিয়াল থ্যাংকস। খুবই খুবই মজা পেয়েছি। তোমরা ভাল থেকো। আরো এমন আড্ডা হবে আশা করি।
মেরী: ( উচ্ছ্বসিত কন্ঠে) আসলেই ভাইয়া, খুবই মজা পেয়েছি। আপনিও ভাল থাকবেন।
তুষার: আমারও খুব ভাল লেগেছে। ভাইয়া ভাল থাকবেন।