টপিকঃ শেষ দেখা!!
গল্পটার আইডিয়া জেনারেশন হয়েছে ২ মাস আগে যখন আমি মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম, কতদিন ভয়ংকরভাবে শ্বাস আটকে মুখ-চোখ লাল হয়ে যেত, আর আমি পাগলের মত বুকে বার বার হাত দিতাম, মনে মনে সব ঠিক হয়ে যাবার জন্য প্রার্থনা করতাম, মনে হত সবকিছু বোধহয় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তখন হঠাৎ কোনো একজনকে খুব দেখতে ইচ্ছা করত।
- আপনি কি বললেন?
প্রশ্ন শুনে আমি একটু অবাক হয়ে বড় ডাক্তারটার দিকে তাকালাম।
- আমি বলেছি: আমি চলে যাব, কিন্তু হয়ত আবার ফিরে আসব আরেকজনের মাধ্যমে।
রগচটা বয়স্ক ডাক্তারটা সেটা শুনে কেমন যেন আনমনা হয়ে গেলেন। ভাবতে লাগলেন: সেও ঠিক একই কথা বলত। তার ছোট ভাই, খুব অল্প বয়সে মারা গেছে। সে বিশেষ একজনকে দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু মেয়েটি আসার আগেই তার ভাই মারা যায়। সেই একই দৃশ্য, সেই একই কাহিনী। আশ্চর্য!! একই ঘটনা কিভাবে বার বার ঘুরে ফিরে আসছে? ডাক্তারদের জীবন কি এরকমই?
- আপনি নাকি একজনকে খবর দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এখন আর চাচ্ছেন না, আমার এসিস্টেন্টকে নিষেধ করে দিয়েছেন?
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম।
-কি? কথা বলছেন না কেন?
- আসলে আমি চাই না ও জানুক। প্লিজ, ওকে জানাবেন না।
- ও আচ্ছা।
ডা: সাহেব কি যেন চুপচাপ ভাবতে লাগলেন। আর কিছু বললেন না।
লেখাটি লিখেছেন: স্বপ্নীল - প্রজন্ম ফোরাম
এত বড় ডাক্তার, শত ব্যস্ততার মাঝেও আমাকে নিয়ে কেন দৌড়াদৌড়ি করছেন,বুঝতে পারছি না। আমার কাছে খুবই অবাক লাগছে, সেদিন তো ধমক দিয়ে চেম্বার থেকেই বের করে দিয়েছিলেন, এরপর আবার এসিস্টেন্ট দিয়ে ডাকিয়ে আনলেন। সেদিন থেকেই কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেলেন।
ডা: সাহেব বহু কষ্টে মেয়েটিকে ফোনে পেলেন:
-হ্যালো, আপনি তো সব শুনলেন। আসবেন প্লিজ?
মেয়েটি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে তার অপারগতার কথা জানাল।
- আসলে ছেলেটির সাথে আমার কখনো কথা হয়নি। ক্লাসমেট ছিল, পাগলের মত পিছে পিছে ঘুরত, কিন্তু কখনো কিছু বলত না। আমিও আর কিছু বলিনি। তারপর আমার হুট করে বিয়ে হয়ে গেল, তাই এসব নিয়ে ভাবার আর সময় পাইনি। আর.....
- আর??
- আমার শশুর-শাশুরি বিদেশ থেকে এসেছেন, বাসায় অনেক মানুষ, অনেক কাজের চাপ। তাছাড়া আমার স্বামী ও বাসার সবাই একটু অন্যরকম। স্বামীর সংসারে শত দায়িত্বের বেড়াজ্বালে আমি আবদ্ধ, একটুও সময় বের করতে পারি না, তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু করতে পারছি না। আই এম রিয়েলি সরি।
লেখাটি লিখেছেন: স্বপ্নীল - প্রজন্ম ফোরাম
ডা: সাহেব আমাকে এসে বললেন: আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। মেয়েটির সাথে আমার কথা হয়েছে। সে আসবে।
মিথ্যাটুকু বলতে গিয়ে ডা: সাহেবের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।
রাতে আমার অবস্থা দ্রুত খারাপ হলো। আমি বুঝলাম আমার সময় শেষ। তাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে, খুব..আমার এ পৃথিবীতে আর কেউ তো নেই সে ছাড়া। কিন্তু মানুষের সব শখ কি পূরণ হয়?
ডা: সাহেব অস্থিরভাবে অপেক্ষা করছেন। মেয়েটি শেষ মুহূর্তে বলেছে সে আসছে। সে বাসার গাড়িতে করে রওনা দিয়েছে। গাড়ি ঝড়ের বেগে ছুটে আসছে...
ডা: সাহেব মনে মনে প্রার্থনা করছেন:
-আল্লাহ, একই ঘটনা যেন আবার না ঘটে, মেয়েটি যেন ঠিক সময়ে এসে এই ছেলেটির শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারে। হে আল্লাহ, তুমি আমার এই একটি কথা রাখো, প্লিজ....
লেখাটি লিখেছেন: স্বপ্নীল - প্রজন্ম ফোরাম
আমার খুব ছোটবেলার কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেলো, আশ্চর্য, কত কিছু ঘটে গেছে আমার জীবনে, কত ভালো লাগা মূহুর্ত, ছোট ছোট কত কষ্ট, সব মিলিয়ে আমি যেন মুক্ত পাখির মত এক স্মৃতি থেকে আরেক স্মৃতিতে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। শরীরের কষ্টটুকু আস্তে আস্তে কমে যেতে লাগল, এর নাম কি মৃত্যু??
আমার চোখের সামনে সব কিছু কেমন ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে....চারপাশে অদ্ভুত কি একটা যেন রিনরিনে শান্ত সুরে বাজছে...আমার ঘুম পাচ্ছে, অনেক ঘুম..............