টপিকঃ যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা : স্টুডেন্ট গাইডলাইন ১
একটা সময় পড়াশোনার জন্য আটলান্টিকের ওপারে যাওয়াটা ছিলো নিতান্তই আকাশ-কুসুম কল্পনা টাইপ ব্যপার। এখন সময়ের সাথে এটা এখন খুবই সহজ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কয়েক বছর আগে এম্রিকান সরকার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কোটা বাংলাদেশী ছাত্রদের জন্য দেয়ায় এটা সহজতর হয়ে গেছে। এখন অনেক বাংলাদেশীই আন্ডারগ্র্যড বা গ্র্যড করার জন্য বেছে নেন এম্রিকা যার প্রধান কারণ হচ্ছে এদের টপ-নচ কোয়ালিটি এডুকেশন।
যারা এখানে ফিউচারে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক তাদের সবার আগে চিন্তা করতে উচিৎ কোন উদ্দেশ্যে বেছে নিয়েছেন এম্রিকা? যদি আপনার উদ্দেশ্য হয় পড়াশোনা করে তাহলে এম্রিকা ওয়েলকামস ইউ। কোনো মতে ভিসা পেয়ে এখানে এসে পড়াশোনা না করেও হয়তোবা ইলিগ্যলি থাকতে পারবেন কিন্তু আপনার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ইনকাম থাকবে ৭-৮ ডলার যেটা নিতান্তই লজ্জাজনক। আর ইলিগ্যল অবস্থায় ধরা খেলে তো কথাই নাই, খাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী কারণ এখানে সব জায়গায়ই ছোটো খাটো কারণে আপনার গর্ভণমেন্ট ইস্যুড আইডি দেখতে চায়।
সত্যিকার অর্থে এখানে ব্যচেলর ডিগ্রী পড়তে আসা খুব একটা ওয়াইজ ডিসিশন না যদি না আপনি ইকোনমিক্যলি খুব স্ট্রং হন। সবচেয়ে ভালো কাজটি হচ্ছে, ব্যচলরে আসতে চাইলে বাংলাদেশের ভালো কোনো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে ২-৩ বছর পরে আসা। সেক্ষেত্রে আপনি অনেক কম খরচেই এম্রিকান ডিগ্রী পাচ্ছেন। যেখানে আপনার শুরু থেকে এখানে পড়তে আসলে টোটাল খরচ হয়ে যাবে ১০ গুন প্রায়। এছাড়াও আপনি যদি এ-লেভেলস শেষ করে আসেন এবং আপনার অনেক গুলো কোর্স থাকে এ-লেভেলসে (অবশ্যই একটা ভালো স্কোর সহ) তাহলে সেসব কোর্স আপনার এখানে কাউন্ট হবে। যার মানে হলো এখানে ব্যচেলর শুরু করেই আপনি ২০-৩০ ক্রেডিট পাচ্ছেন, যেটা যে কারো জন্য অনেক বড়ো ব্যপার।
এখানে উল্লেখ্য যে ক্রেডিট ট্রান্সফারের ব্যপারে বেশীর ভাগ মানুষের একটা ভুল ধারণা থাকে যে এম্রিকান নির্দিষ্ট কোনো ইউনিভার্সিটির সাথে এফিলিয়েশন থাকলে বুঝি এরা আপনার ক্রেডিট এক্সেপ্ট করবে না। আসলে এটা মোটেও ঠিক না, আপনার ভালো সিজিপিএ থাকলে অবশ্যই আপনার সবগুলো ক্রেডিটই এক্সেপ্ট করবে। আমার পরিচিত অনেক ভাইয়া এখানে ফ্রেশম্যন হিসেবে এডমিশন নিয়েছে, পরে এখানে আসার পর তাদের বাংলাদেশী ক্রেডিট ট্রান্সফার করে একেবারে লাফ দিয়ে সফোমোর হয়ে গেছে। (এরা ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ার ইউজ না করে ব্যচেলর ডিগ্রীর ৪ বছরকে যথাক্রমে ফ্রেশম্যন, সফোমোর, জুনিয়র, সিনিয়র ইয়ার বলে)
পড়াশোনা করতে আসার আগে সবাই ট্যুইশন এবং লিভিং কস্ট নিয়ে চিন্তা করেন। এখানে পাবলিক ইউনিভার্সিটি গুলোর গড় খরচ বছরে প্রায় ১৭-১৮ হাজার ডলার। এই খরচ শুধু মাত্র আপনার পড়াশোনা রিলেটেড খরচ, এছাড়াও থাকা খাওয়া, হেলথ ইন্সুরেন্স এগুলো মিলিয়ে বছরে ২৫ হাজার ডলারের মতো পড়ে গড়ে। সাধারণত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গুলোর পড়াশোনার খরচ আরেকটু এক্সপেন্সিভ, আর ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং এ ১-২০ এর মধ্যে যেগুলো আছে সেগুলো আবার অতিরিক্ত এক্সপেন্সিভ। এছাড়াও আপনার থাকা খাওয়ার খরচ নির্ভর করছে আপনি কোন স্টেইটে থাকছেন সেটার উপর। এখানে প্রত্যেকটা স্টেইট মানে এক একটা ভিন্ন দেশ বলতে পারেন। সাধারণত যারা এখানকার নেটিভ এবং ইউনিভার্সিটি যেই স্টেইটে সেই একই স্টেইটে থাকেন তারা সবচেয়ে লো ট্যুইশন দেয়, আর ইন্টারন্যশনাল এবং ঐ স্টেইট বাদে অন্য স্টেইটের এম্রিকানরা একই পরিমাণ ট্যুইশন দেয়।
সবশেষে যারা পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট-টাইম কব করে এইখান কার ট্যুইশন দেয়ার কথা ভাবছেন তাদের জন্য কিছু কথা। মূলত, এরা স্টুডেন্ট আনার কোটা বাড়িয়েছেই নিজের ইকোনমির অবস্থা ফিরানোর জন্য তাই কোনো ভাবেই এইটা এখানে সাপোর্ট করে না। শুধু মাত্র আপনি টুক টাক খরচ যোগাড় করার জন্য স্টুডেন্ট হিসেবে ক্যাম্পাসের ভিতর জব করতে পারবেন, যেটা পাওয়া অনেক কঠিন নি:সন্দেহে, কারণ 'সিন্নি কম মানুষ বেশী"। এইতো গত সেমিস্টারেও যারা এম্রিকাতে ঢুকেছে তারাও ১ বছর পর অফ-ক্যাম্পাস জব করার পার্মিশন পাবার জন্যে এপ্লাই করতে পারতো নিয়ম অনুযায়ী। কিন্তু এইটাও সম্প্রতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এরপরের পর্বে কি করে বুঝে শুনে ইউনিভার্সিটি সিলেক্ট করবেন এবং অফার লেটার পাবেন সেটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো