টপিকঃ অংকের আমি জাহাজ
ছোটবেলা থেকেই আমি খুব ভাল ইস্টুডেন্ট ছিলাম।
এত ভাল ছিলাম যে বলাই বাহুল্য।
খালি ক্লাস থ্রিতে অংকে একবার ২ পেয়েছিলাম এই যা!
এরপরে ক্লাস six বা seven এ ওঠার পর থেকে ten পর্যন্ত দুইটার বেশি সাবজেক্টে কোনদিন ও ফেল করি নাই।(ফাইনাল পরীক্ষায়)
শুধু অংক আর ইংলিশেই ফেল করতাম। আর কোনটায় ফেল করতাম না কিন্তু।
এভাবেই আমার হাইস্কুল জীবন কাটে।
মানুষ চিন্তা করত first second third হওয়ার । আর আমি চিন্তা করতাম :
“ একটায় ফেল করলে বিবেচনায় পাশ। দুইটায় করলে
বিশেষ বিবেচনায় । আর তিনটা করলে ফেল। সুতরাং তিনটায় কিছুতেই ফেল করা যাবে না।”
আর আমি কি এতই খারাপ ছাত্র যে তিনটায় ফেল করব?? বিশেষ বিবেচনায় হলেও পাশ করেই ছাড়তাম!!! ফেল করার ছাত্র
অন্তত আমি ছিলাম না।
পরীক্ষার রেজাল্ট যেদিন দিত , তার সাতদিন আগে আর সাতদিন পরে স্কুলের ত্রিসীমানায় ঘেঁষতাম না।
কিন্তু একদিন কপালটা ছিল খারাপ । এমনই দিনে স্কুলে গেলাম যেদিন ছিল রেজাল্ট দেওয়ার date.
রেজাল্টটা যখন হাতে আসল , দেখলাম অংকে ডাবল জিরো।
অংকে আমি সারা জীবনই ফেল করেছি, কিন্তু ডাবল জিরো কোনদিন অন্তত পাইনি। পেলেও অন্তত জানিনি( কারণ রেজাল্টের দিন তো আর স্কুলে যেতাম না।)।
শুন্য দুইটা দেখে বুকের মধ্যে ধক করে উঠল।
লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছিল। আর শুধু ভাবছিলাম এ রেজাল্ট আমি বাড়ির সবাইকে দেখাবো কেমন করে!!
রেজাল্ট সিট টা হাতে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটছি আর কল্পনা করছি কি কি হবে।
আমার আব্বার স্বভাব ছিল এরকম, উনি সবসময় রেজাল্টটা নিয়ে এমন এক জায়গায় বসতেন যাতে বাড়ির সবাই শুনতে পায়।
তারপর উনার মোরগের গলা নিয়ে চিল্লায়ে এভাবে বলতেন : “ বাংলায় সর্বোচ্চ নাম্বার ৮২। আর উনি পেয়েছেন ৩৩ ।
সমাজে সর্বোচ্চ নাম্বার ৮৮ । আর উনি পেয়েছেন ৩৮ । ইংরেজীতে সর্বোচ্চ নাম্বার ৯৪। আর উনি পেয়েছেন ১৩।
অংকে সর্বোচ্চ নাম্বার ১০০। আর উনি পেয়েছেন ৫।”
আমার চোখের সামনে শুধু ওই sceneটাই ভাসছিল।
আমার সারা শরীরের রক্ত যেন হিম হয়ে আসছিল। আর কিছুতেই যেন পা চলছিল না।
মনে হচ্ছিল বাড়ি যেন কত কাছে!!
ফেল নিয়ে আমার কোন চিন্তা ছিল না। কিন্তু টেনশন ছিল ওই জিরো দুইটা নিয়ে।
আর কিছুনা জিরো!! এক পেলেও বলা যেত কিছু একটা তো পেয়েছি।
এটা নিয়ে তো সবাই সারা জীবন আমাকে খ্যাপাবে!
চট করে একটা বুদ্ধি মাথায় আসলো। ভাবলাম এই জিরো দুইটাকে তো ৪০এ কনভার্ট করা যায়।
কিন্তু ওটা করার সাহস হলো না। কারণ আমি ৪০ পেয়েছি এটা কেউ কস্মিনকালেও বিশ্বাষ করবে না।
পরে এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি হবে আর আমি ধরা খেয়ে যাব। আর ফলাফল হবে আরো ভয়াবহ।
তাই ৪০ না বানিয়ে ০৪ বানানো যাক। এটা অন্তত সবাই বিশ্বাষ করবে আর এ নিয়ে ঘাটাঘাটিও হবেনা।
০৪ ও ফেল তবে শুন্য পাওয়ার কলঙ্ক তো হবেনা!
ফেল তো আমি সবসময় ই করি। ওটা আবার এমন কি?
ডিসিশন নেয়া হয়ে গেলো। এখানে দুইটা শূন্য। পরের শূন্যটার উপর আরেকটা শূন্য বসিয়ে দিলেই কেল্লা
ফতে।
কাঁপা কাঁপা হাতে কলমটা নিলাম ।
উত্তেজনায় সারা শরীর কাঁপছে। সুন্দর করে পরের শূন্যটার উপর একটা শূন্য বসিয়ে সস্তির নি:শ্বাষ ছাড়লাম।
কিন্তু একি হলো!!!!!!!!!
নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছি না।
এ আমি কি করলাম !!! হায় হায় হায়। মাথার উপর বাঁশ পড়ল।
৩য় শূন্যটা ২য় শূন্যের উপর না পরে পড়ল দুইটার মাঝখানে।
হয়ে গেল তিন শূন্যের পিরামিড!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
এরচেয়ে তো আগেরটাই ভাল ছিল।
শূন্য দুইটার মাঝখানে গ্যাপ ছিল না(মানে এরকম ছিল না: ০০)।
একেবারে গায়ের সাথে লাগানো ছিল। ৩য় টা যোগ হওয়ায় ওটা পিরামিড হয়ে যায়।
বাড়িতে এরপর অট্টহাসির রোল পরে গেল। আমি যেন একটা সার্কাসের জানোয়ার। সবাই আমাকে নিয়ে
মজায় লেগে গেলো।
আমার ছোটভাই আজও আমাকে এটা নিয়ে খ্যাপায়।
ও বলে , “মানুষতো অংকে ডাবল জিরো পায়। তুই তো ডাবল জিরোর ও যোগ্য না। তুই পেয়েছিস তিন
জিরো!”
আমরা প্রত্যেকেই ম্যাচের কাঠির মতো।
আগুনটা বের করতে শুধু একটা ঘষা দরকার।