টপিকঃ আমার ন্যু স্কুল জীবন - ১
অনেকদিন লিখবো লিখবো করেও লিখা হচ্ছে না। প্রায় ৩ মাস হয়ে গেলো ফ্যমিলি থেকে দূরে এসেছি স্কুলের জন্যে। একা একা এই মিসৌরী স্টেইটে সম্পূর্ণ একটা অন্যরকম জীবন কাটালাম, তারই কিছুটা বিবরণ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আজ।
অনেক এক্সাইটমেন্ট নিয়ে নিউ-ইয়র্ক ছেড়েছিলাম। পুরো বিশ্বজোড়া খ্যাতি এম্রিকান স্কুল গুলোর, কেমন না কেমন হবে এই ভেবেই বিংহ্যমটনের শেষের কয়েকদিন কেটে গিয়েছিলো। পরে বিংহ্যমটন লোকাল এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাই করে সোজা এসে পড়লাম সেইন্ট লুইস ল্যম্বার্ড এয়ারপোর্টে। সেখানে প্রায় দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা ওয়েইট করা লেগেছিলো মাত্র ০,৩০ মিনিটের জার্ণি করার জন্য। তার উপরে আবার রোজা রেখেছিলাম সেদিন, সুতরাং আমার তো প্রায় জান আসে আর যায় অবস্থা। একা একা কি আর করবো এক ফ্রেন্ডের সাথে প্যচাল পাড়লাম সেলফোনে। তারপর কয়েকটা ম্যগাজিন নিয়ে দেখতে থাকলাম এই স্টেইটের সব খুটিনাটি তথ্য। এক জায়গায় এসে চোখ আটকে গেলো দেখে যে আমি এখন যেই সিটিতে আছি সেটি পৃথিবী বিখ্যত একটি শহর ক্রাইমের জন্য। হ্যা! এই সেইন্ট লুইসেই প্রতি মিনিটে বিভিন্ন জায়গায় খুন-খারাপি হয়। দেখে আমার শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো, এ আমি কোথায় এসে পড়লাম!
প্রথমে ইচ্ছা ছিলো বের হয়ে ট্যক্সি কল করে সিটিটা ঘুরে একটু দেখবো। কিন্তু পরবর্তী এই অবস্থায় এয়ারপোর্টের বাইরে একটু মাথা বের করে একটা সিগারেট খাওয়ার সাহসই শুধু জুটলো। আস্তে আস্তে সময় চলে এলো ফ্লাই করার, অন বোর্ডে গিয়ে প্লেনের সাইজ দেখে আমার চক্ষু কপালে উঠলো। এতো দেখি খেলনা প্লেন!! মাত্র ১০ জনের সিট বিশিষ্ট কেইপ এয়ারের এই প্লেনে আমার পাক্কা আধা ঘণ্টা বসে থাকতে হবে এই ভেবেই হার্ট বিট বেড়ে গেলো। উঠে একেবারে চালকের ব্যক সিটে বসলাম- এই প্রথম বারের মতো সুযোগ পেলাম প্লেনের ড্রাইভিং দেখার। চুপচাপ খেয়াল করলাম তার কাজ আর এভাবেই কেটে গেলো জার্ণির সময়টা।
এই সেই কেইপ এয়ার
প্লেনের ভিতরের একটা স্যম্পুল পিক - আশা করি বুঝতে পারছেন যে কোন সিটে আমি বসেছিলাম
সময়মতো নেমে গেলাম কেইপ গিরারড্যু সিটিতে, যেটা ব্যসিকেলি গড়ে উঠেছে আমাদের ইউনিভার্সিটিকে কেন্দ্র করেই। আমি ভেবেছিলাম সাবার্বন এরিয়া আর কতই জোস হবে, ওমা এখানেও দেখি সব কিছু ছবির মত করে সাজানো। প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যেতে না যেতে পেটের ভিতর ঢাক বাজা শুরু হলো। এমন খিদা পাচ্ছিলো কি আর বলবো, মাথার মধ্যে দুনিয়ার টেনশন কোথায় গিয়ে রোজা খুলবো? এখানে এক ফ্রেন্ডের সাথে আগেই কন্টাক্ট করা ছিলো সে আমাকে আমার বাসস্থানে নামিয়ে দিলো, আমি খুব খুশি হলাম এত্ত বড়ো একটা বাড়ি দেখে। আরো খুশি হলাম যখন সে আমাকে একটু সামনে হাটিয়ে সিটির ইসলামিক সেন্টারে নিয়ে আসলো এখানেই হবে আমাদের ইফতারী। ওয়াও এত মুসলিম এত বাংগালী স্টুডেন্ট আগে কল্পনাও করি নাই
খুব ভালো লাগলো এখানকার মুসলিম কম্যুনিটি দেখে, আমার বাসার মানুষ জন তো শুনে আমার থেকেও বেশী খুশি
কোনো মতে ইফতারী করেই হাটা ধরলাম ক্যম্পাসের উদ্দেশ্য। ক্যম্পাসের সামনে এসে আবারও ওয়াও! এতো বড়ো আর এতো জোস ক্যম্পাস আগে ভাবি নি। মনে মনে ততক্ষনে যদিও আমি ধরে নিয়েছি এটা বুঝি এশিয়ান কোনো কান্ট্রি, কারণ তখন সামার ভ্যকেশন প্রায় শেষ তাই যারাই ছিলো ক্যম্পাসে সবাই ইন্টারন্যশনাল। পরে ভ্যকেশন শেষে আস্তে আস্তে ওরিয়েন্টেশনের দিন সকাল থেকে দেখি ৯৮% ই এম্রিকান। আমি বলি যাক পাগল ছাগল গুলা তাহলে আসছে ছুটি শেষ করে। এক একটা এম্রিকান স্টুডেন্ট এর জন্য ২ টা করে ট্রাক আসছে উইথ তাদের মাল সামান। আমি তো মনে মনে ধরেই নিয়েছি এখানে বুঝি এরা সবাই সংসার করবে স্কুলে না পড়ে
সব ধরণের ফরম্যলিটিজ শেষ করতে না করতেই দেখি ক্লাস শুরু হয়ে গেলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রথম ক্লাস সাইকোলজিতে টিচার বলে দিলো একটা মেইল করতে টিচারকে জাস্ট বলতে - হাই আমি তোমার ক্লাসের স্টুডেন্ট। আমি একদিন পর এই মেইল না করাতে গ্রেড বুকে গিয়ে দেখি বিশাল এক জিরো! কে জানতো এই পাগলের দেশে সামান্য ইন্ট্রো মেইলের উপরও মার্ক আছে।
চলবে!!!
এটা আমাদের লাইব্রেরী
এটা আমাদের একাডেমিক হল
এটা হলো এনট্রান্স
এটা হলো সবচে এক্সপেন্সিভ হল
এটা রিভার ক্যম্পাস, মিসিসিপির তীরে
এটা পলিটেকনিক বিল্ডিং
এটা আমাদের একটা হল যেখানে ওরিয়েন্টেশন হয়েছিলো
এটা ড্যন্স বিল্ডিং
এটা ইনডোর জিমের একাংশ