টপিকঃ অমর্যাদা!
কেন জানি হিসেবটা আর মেলাতে পারি না আজ-কাল! একপেশে, আজগুবী সব নীতি! টেকনোলজির উন্নতির দোহাই দিয়ে পশ্চিমা সংস্কৃতির নগ্ন অনুকরণ! মাঝে মাঝে আজকের এই বাংলাদেশে, নিজের চিরচেনা বাংলাদেশটাকেই কেন জানি কিছুতেই খুজে বের করতে পারি না।
আমি ত ক'দিন আগেও মানুষকে দেখেছি অন্যের অনুভূতির মূল্য দিতে! এই ত কিছুদিন আগেও চায়ের কাপে ঝড় উঠত চমৎকার বুদ্ধিদীপ্ত সব বিষয় নিয়ে। গালাগালি, গলাবাজি না, চমৎকার বিতর্ক! উপভোগ্য! আরও কতই না ভালো ভালো জিনিস দেখেছি, এই দেশেই ত।
মনেহয় বাইরের সবুজের সাথে সাথে মানুষের মনের সবুজও হারিয়ে গেছে এখন! সবুজ নাই বলেই, ঝিরিঝিরি বাতাস আর শুভ্রতার সাথে সাথে মনের গুনগুলোও হারিয়ে যেতে বসেছে... দূষিত বাতাসে কুলষিত হচ্ছে।
আজ-কাল আত্নীয়তার বন্ধন ত চোখেই পড়ে না। এমন কি ভাই-বোন, মা-বাবার সাথেও দূরত্ব আর স্বার্থের প্রয়োজনে সম্পর্কের নাজুক সুতা...।
আগের সেই মাঝরাত জেগে বা লুকিয়ে বই পড়ার রোমাঞ্চকর অনুভূতিগুলো ত এখন বোরিং হয়ে গেছে। এখন ত, হয় ইংরেজী ছবির রংচঙে উদ্যমতায় চক্ষুলজ্জ্বা একবারে গেছে নতুবা সিরিয়ালের আগ্রাসনে সুকুমার বৃত্তিগুলো একেবার পটল তুলেছে। প্রজন্মে ফোরামেই এখন যতটুকু দেখি, মাত্র ২/৩ বছর আগে এগুলো ছিল অকল্পনীয়!
আমি ত আমার পুরো শিক্ষাজীবনে হিন্দু-মুসলমান সম্পৃতিই দেখে এসেছি। আর কেউ যদি পর্দা করত, তাকে কেউ অমর্যাদা কখনই করত না! বরং মুরুব্বীদের সামনে শ্রদ্ধা দেখাতে এটা ছিল প্রশংসনীয় বাঙালি সংস্কৃতি।
আজকে এই পর্দা করাটাই কতটা গাত্রদাহের কারন হয়ে গেছে, আমাদের সেই কনজারভেটিভ বাংলাদেশে দেখে আমার সত্যি মরে যেতে ইচ্ছে করছে। অনেকদিন ত বাঁচলাম। আর কতদিন এই দোজখে থাকতে হবে?
আজকে গিয়েছিলাম পাসপোর্ট অফিসে। আমি আজকে যা যা দেখেছি বা শুনেছি তা বলার হিম্মতও হয়ত জোটাতে পারব না। তবু কিছু বলি।
- ছেলে মেয়ে আলাদা কোন লাইন নেই! তার উপর কেউ যদি ধাক্কা-ধাক্কি করে আগে চলে যেতে পারে ত সেই জিতবে!
- আমার সামনেই একজন ছেলে প্যান্ট এতোটাই নিচে পড়ছে যে আমি মরমে মারা যাচ্ছি কেন এই দৃশ্য পলকের জন্যও আমার চোখের সামনে আসল! হে ধরনী দ্বিধা হও...।
- পাসপোর্টের নতুন নিয়ম, কান খোলা রেখে ছবি তুলতে হবে। (এক্ষেত্রে অন্তত কিছু চুল বের হবেই হবে। যারা ভালবেসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর প্রদত্ত নিয়মাবলীর মধ্যে থেকে পর্দা করতে চায় তারা ধিকৃত। ব্যাকডেটেড। ইউরোপীয়ান কান্ট্রিগুলোতে হয়ত এগুলো ভিসার রিকয়ারমেন্ট। কিন্তু কেউ হজ্জ্বে যেতে চাইলেও তাকে বাংলাদেশে এখন এভাবে পাসপোর্ট করাতে হবে। সকলের অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি, ন্যাশনাল আইডি কার্ড করার সময় এরকম একটা নিয়ম করতে চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু পরে অনেক লেখালিখি ও আন্দোলনের কারনে এই পদ্ধতি বাতিল হয়, আমরা অন্তত কান,চুল ঢেকেই ছবি তুলতে পেরেছিলাম।)
- ছেলেরাই মেয়েদেরও ছবি তুলছিল একেবারে ওপেনলী, মানে বাইরে থেকে আমরা যে কেউ ভেতরের সবকিছু দেখতে পাচ্ছিলাম। তো নিজের মায়ের বয়েসী একজন মোটামুটি সুন্দরী বোরকাবৃতা মহিলাকে পুরো চুল এমনকি গলা পর্যন্ত খুলিয়েছে। নিজে কানে শুনছি, নিজে চোখে দেখছি। তারপর আবার ৩/৪ বার করে তার মাথায়, মুখে, গায়ে হাত দিয়েছে।
- আমি এতোটুকু দেখেই মাটির সাথে মিশে গেছি। আর যখন নিজে ছবি তুলতে গেছি এবং পর্দা খোলার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানিয়েছি, তখন যতটুকু বাঁকা সুরে কথা বলছে তাতে নিজের আত্মসম্মানবোধ নিয়ে ছবি না তুলেই ভেগে গেছি। ৬০০০/- জলাঞ্জলিই গেল কিনা আল্লাহ মালুম।
আমাকে নিয়ে কেউ হাসি-ঠাট্টা বিদ্রুপও করতে পারেন। কি বোকা, ব্যাকডেটেপ, আনকালচার্ড, নন-টেকনিক্যাল। এগুলোরই এখন চল। কিন্তু তখন, ঐ সময় আমি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হই নি। এখনও ভরসা করে আছি একমাত্র আল্লাহরই উপর।
তুহীব্বুল য়াফওয়া - (আপনি মাফ করতে ভালবাসেন)
ফা' ফু আন্নী - (আমাকে মাফ করে দিন।)