টপিকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় ভুল!!!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় ভুল!!!
ঘটনার পেছনের ঘটনা!
বেশ কয়েক বছর আগের কথা। HSC পরীক্ষা দিয়েছি। বাবার চাকরীর সুবাদে রংপুরে থাকি। মাথায় কবিতার ভূত। তাই বলে আবার ভেবে বসবেন না, যে আমি কবি! কবিতা ভালো লাগে, কবিতা পড়ি। কবিতা যে খুব ভালো বুঝি তাও না। বিশেষ করে অনেক আধুনিক কবিদের কবিতা বুঝতেই পারি না। সহজ-সরল কবিতা গুলো ভালো লাগে। যে কবিতা গুলো ভালো লাগে সে গুলি একটি খাতায় তুলে রাখি। আপনাদের অনেক লজ্জার সাথে জানাচ্ছি, সেই খাতায় অনেক বিখ্যাত কবিদের নামের সাথে আস্তে আস্তে আমার নামও উঠতে থাকল। তবে আমি আগেই বলেছি আমি কবি না। কবিতার নামে আমার মত অশিক্ষিত একজন যে এলেবেলে লেখা গুলি লিখত সে গুলি যে একেবারেই অখাদ্য তাও বুঝতাম। কিন্তু ঐ যে মাথায় কবিতার ভূত। তবে আমার কবিতা ছিল একান্তই আমার। আমি আজ পর্যন্ত কখনই কাউকে নিজের লেখা কবিতা (!) পড়ে শুনায় নি। আমি যে কবিতা লিখি (!!) তাই কেউ জানে না। অবশ্য বিশেষ এক জন আছেন, যিনি ব্যাতিক্রম। যাই হোক, এটি ছিল ঘটনার পেছনের ঘটনা। এবার আসল ঘটনায় আসা যাক।
আসল ঘটনা!!
এই যখন আমার অবস্থা, এমন সময় খবর পেলাম আমার পাড়ার এক বড় ভাই (ধরি তার নাম সনি) যিনি ঢাকায় পড়ালেখা করেন- ঈদের ছুটিতে বাসায় এসেছেন; তিনি নাকি ঢাকায় দারুণ কবিতা লেখা শিখেছেন। সবাইকে তার লেখা কবিতা পড়ে শুনিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন। সাথে সাথে পাড়ায় বেশ কিছু নতুন কবির জন্ম হয়ে গেল। তারা নিয়মিত সনি ভাইয়ের কাছে যেতে লাগল। বিভিন্ন দিক নির্দেশনা এবং কবিতা বিষয়ক জ্ঞান লাভ করে ধন্য হতে লাগল। খবরটা শুনে খারাপ লাগল, কারন প্রতি এলাকায় এমন কিছু লোক থাকে না, যারা মুখের কথায় প্রায় সব পারে কিন্তু বাস্তবে প্রায় কিছুই পারে না। আমাদের সনি ভাই ছিলেন ঠিক তেমনি। যাই হোক, আসল অবস্থা জানতে একদিন নিজে গেলাম সনি ভাইয়ের আড্ডায়। গিয়ে দেখি অবস্থা ভয়াবহ। সনি ভাই নিজের ইচ্ছা মত, সঠিক, বেঠিক কবিতা সম্পর্কে বলে যাচ্ছেন, নতুন কবিরা খুব আগ্রহ নিয়ে তা শুনছে। শুধু তাই না, অনেকে কবিতা লিখে নিয়ে এসেছে, আর সনি ভাই সে গুলি ঠিক করে দিচ্ছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন। অনেক কবি এবং তাদের কবিতা সম্পর্কে মন্তব্য করছেন। তার মতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম ছাড়া অন্য কোন কবির কবিতা আসলে ঠিক মত কবিতাই হয় না। আমি আমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাসের কথা বলতেই এমন ভাবে উড়িয়ে দিলেন যে, খুব খারাপ লাগল। এদিকে আবার বড় ভাই, সরাসরি কিছু বলতেও পারছি না। মনে মনে বুদ্ধি ঠিক করলাম। তারপর নিরীহ ভাবে বললাম, 'ভাইয়া আমি একটি কবিতা লিখেছি, কালকে নিয়ে আসব, আপনি যদি একটু দয়া করে দেখে দিতেন..।' সনি ভাই উদার ভঙ্গিতে হাত নেড়ে বললেন- নিয়ে এসো।
পরের দিন একটি সাদা কাগজে নীচের কবিতা লিখলাম-
বলেছিনু ‘ভুলিব না’ যবে তব ছল ছল আখিঁ
নীরবে চাহিল মুখে। ক্ষমা কোরো যদি ভুলে থাকি।
সে যে বহু দিন হল। সেদিনের চুম্বনের’ পরে
কত নববসন্তের মাধবীমঞ্জুরী থরে থরে
শুকায়ে পড়িয়া গেছে, মধ্যাহ্নের কপোতকালিন
তারি’ পরে কান্ত ঘুম চাপা দিয়ে এল গেল চলি
কত কাল ফিরে ফিরে। তব কালো নয়নের দিঠি
লজ্জাভয়ে, তোমার সে হৃদয়ের স্বাক্ষরের’ পরে
চঞ্চল আলোক ছাড়া কতকাল প্রহরে প্রহরে
বলায়ে গিয়েছে তুলি, .............
বিকাল বেলা, ভরা মজিলসে, ভক্ত পরিবেষ্টিত অবস্থায় সনি ভাইয়ের হাতে কবিতাটি তুলে দিলাম, আর বললাম কবিতার একটা নাম দিয়ে দিতে। সনি ভাই কাগজটি হাতে নিয়ে কবিতা পড়লেন; ভ্রুটি একটু কুঁচকালেন, তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- ‘দেখ তুমি চেষ্টা করেছ ভালোই, তবে তোমার এটাকে কোন মতেই ঠিক কবিতা বলতে পারছি না। এখানে তো প্রথম লাইনেই ভুল- “যবে তব” কখনই হতে পারে না। আসলে তোমাদের সমস্যা কি জানো- তোমরা কবিতায় কিছু কঠিন কঠিন শব্দ ঢুকাতে পারলে, আর বাক্যের শেষ শব্দ গুলিতে মিল দিলেই মনে কর কাবিতা হয়ে গেল। আসলে কবিতা এত সহজ না। তোমার এটা কোন কবিতাই হয়নি। ইত্যাদি ইত্যাদি।’ সনি ভাইয়ার কথা শুনে হা হা করে হাসতে শুরু করলাম। আমার হসি শুনে সাবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকল, দু এক জন নতুন কুবি আমার উপর বেশ বিরক্ত তাদের গুরুর কথায় হাসার জন্য। এ দিকে আমি কোন মতে হাসি থামিয়ে বললাম ‘সনি ভাই, এটা আসলে আমার কবিতা না। এটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “কৃতজ্ঞতা” কবিতার প্রথম অংশ টুকু। আপনি আসলেই কবিতা বুঝেন কি না, তা পরীক্ষার করার জন্য নিজের নামে লিখে এনেছিলাম।’
এরপর আর সে দিনের আড্ডাটা আর জমলো না। সনি ভাইয়ের হঠাৎ মনে পড়ে গেল বাসায় তার জরুরি কাজ আছে। এরপর আমি খুব আশ্চর্যের সাথে দেখলাম এই ঘটনার পরে আমাদের পাড়ায় নতুন কবির সংখ্যা এবং কবিতা লেখার আগ্রহ দু’টাই দ্রুত কমে গেল।
লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। তবে একটা কথা আমি অবশ্যই শিকার করব যে, সনি ভাইকে সবার সামনে লজ্জিত করা ঠিক হয়নি। আসলে তখন বয়স কম ছিল, অনেক কিছুই বুঝতাম না। এখন হলে অবশ্যই এমন করতাম না। কারণ এখন জানি “শত্রুকেও অন্যের সামনে অপমান করতে নেই।”
বি.দ্র: আর একটা কথা আমার বানান খুব ভুল হয়, তারপর আবার বাংলা ভালো টাইপ করতে পারি না। হয়তো অনেক ভুল আছে, ভুল গুলিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।
মুক্ত কর ভয়। আপন মাঝে শক্তি ধর, নিজেরে কর জয়॥"