টপিকঃ সীরাতুন্নবী (সাঃ)-১৭
দাওয়াতের বিভিন্ন পর্যায় রেসালাতের ছায়ায় হেরাগুহায় অভ্যন্তরে
মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বয়স চল্লিশ বছরের কাছাকাছি হলো। তাঁর পরিচ্ছন্ন অনমনীয় ব্যক্তিত্বের কারণে স্বজাতীয়দের সাথে তাঁর মানসিক ও চিন্তার দূরত্ব অনেক বেড়ে গেলো। এ অবস্থায় রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিঃসঙ্গপ্রিয় হয়ে উঠলেন। ছাত এবং পানি নিয়ে তিনি মক্কা থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত হেরা পাহাড়ের গুহায় গিয়ে সময় কাটাতে লাগলেন। এটি একটি ছোট গুহা, এর দৈর্ঘ চার গজ এবং প্রস্ত পৌনে দুই গজ। নীচ দিকে গভীর নয়। ছোট একটি পথের পাশে ওপরের প্রান্তরের সঙ্গমস্থলে এ গুহা অবস্থিত। রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই গুহায় যাওয়ার পর বিবি খাদিজাও সঙ্গে যেতেন এবং নিকটবর্তী কোন জায়গায় অবস্থান করতেন। রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো রমযান মাস এই গুহায় কাটাতেন। পথচারী মিসকিনদের খাবার খাওয়াতেন এবং বাকি সময় আল্লাহর এবাদাতে কাটাতেন। জগতের দৃশ্যমান এবং এর পেছনে কার্যকর কুদরতের কারিশমা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। স্বজাতির লোকদের মূর্তি পূজা এবং নোংরা জীবন যাপন দেখে তিনি শান্তি পেতেন না। কিন্তু তাঁর সামনে সুস্পষ্ট কোন পথ, পদ্ধতি অথবা প্রচলিত অবস্থায় বিপরীত কোন কর্মচারীও ছিলো না, যার ওপর জীবন কাটিয়ে তিনি মানসিক স্বস্তি ও শান্তি পেতে পারেন।
রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ নিৎসঙ্গপ্রিয়তা ছিলো প্রকৃতপক্ষো আল্লাহর হেকমতের একটি অংশবিশেষ। এমনি করে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ভবিষ্যতের গুরুদায়িত্বের জন্য তৈরী করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে মানব জীবনের বাস্তব সমস্যার সমাধান দিয়ে যিরা জীবনধারায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হবেন, তিনি পারিপার্শ্বিক হৈ চৈ হট্টগোল দূরে নির্জনতায় কোলাহলমুক্ত পরিবেশ কিছুকাল থাকবেন এটাইতো স্বাভাবিক।
এই নিয়ম অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালা ধীরে ধীরে তাঁর প্রিয় রসূলকে আমানতের বিরাট বোঝা বহন এবং বিশ্ব মানবের জীবনধারায় পরিবর্তনের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্যে তৈরী করছিলেন। তাঁকে আমানতের জিম্মাদারী অর্পণের তিন বছর আগে নির্জনে ধ্যান করার জন্য তাঁর জন্যে আগেই নিধারণ করে রেখেছিলেন। এই নির্জনতায় কখনো কখনো একমাস পর্যন্ত তিনি ধ্যানমগ্ন থাকতেন। আধ্যাত্নিক রূহানী সফরে তিনি সৃষ্টরহস্য সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা ও গবেষণা করতেন যাতে, প্রয়োজনীয় নির্দেশ পেলে যথাযথভাবে সেই দায়িত্ব পালনে সক্ষম হন।
ওহী নিয়ে জিবরাইলের আগমন
চল্লিশ বছর বয়স হচ্ছে মানুষের পূর্ণতা ওপরিপক্কতার বয়স। পয়গম্বররা বয়সেই ওহী লাভ করে থাকেন। রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বয়স চল্লিশ হওয়ার পর তার জীবনের দিগন্তে নবু্ওয়তে নির্দশন চমকাতে লাগলো। এই নির্দশন প্রকাশ পাচ্ছিলো স্বপ্নের মাধ্যমে। এ সময় রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে স্বপ্নই দেখতেন,সই স্বপ্ন শুভ্র সকালের মতো প্রকাশ পেতো। এ অবস্থায় ছয় মাস কেটে কেটে গেলো। এ সময়টুকু নবুওয়তের সময়ের ৪৬তম অংশ এবং নবুওয়তের মোট মেয়াদ হচ্ছে তেইশ বছর। হেরা গুহার নির্জনাবাসের তৃতীয় বছরে আল্লাহ তায়ালা জগতবাসীকে তাঁর করুণাধারায় সিঞ্ঝিত করতে চাইলেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর তখন রসূলকে নবুয়ত দান করলেন। হযরত জিবরাইল(আ) কয়েকটি আয়াত নিয়ে হাযির হলেন।
ইতিহাসে যুক্তি-প্রমাণ এবং কোরআনসহ বিভিন্ন গ্রন্থ অধ্যয়ন করে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জানা যায় যে, প্রথম ওহী এসেছিলো রমযান মাসের ২১ তারিখ সোমবার রাতে। চন্দ্র মাসের হিসাব মোতাবেক সে সময় রসূলে করিম হযরত মোহাম্মদ মোস্তাফা আহমদ মুজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বয়স হয়েছিলো ৪০ বছর ৬ মাস ১২ দিন।
[................................চলবে.....................................]