টপিকঃ মাহে রমজান : তাৎপর্য ও করনীয়
আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামী মঙ্গলবার ১লা রমজান। শুরু হচ্ছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ন ও ফজিলতময় রমজান মাস। সিয়াম-সাধনা ও ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মাস এটি। তাই প্রতিটা মুহূর্তকে আমাদের সঠিক ইবাদতের মাধ্যমে কাটাতে হবে। এবং সেই সাথে পবিত্র রমজান মাসের শিক্ষা সারা বছর ধরে রেখে সঠিকভাবে ইসলামের পথে প্রতিটা দিন চলতে হবে।
ইসলামের পঞ্চভিত্তির তৃতীয় ভিত্তি হলো রোজা, প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান নর-নারীর প্রতি মাহে রমজানের রোজা পালন করা ফরজ। একজন মুসলমানের জন্য নামাজ যেমন ফরজ, ঠিক তেমনিভাবে রমজান মাসের রোজা পালন করাও ফরজ।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা তোমাদের প্রতি আমি মাহে রমজানের রোজাকে ফরজ করেছি। যেমন ফরজ করেছিলাম তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতি। এতে আশা করা যায় যে, তোমরা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করতে পারবে।’ (আল-কুরআন)
রমজান মাসে পবিত্র আল-কুরআন নাজিল হয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কুরআন, যা মানুষের দিশারী এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। (সূরা বাকারা : ১৮৪)
একটি সহি হাদিস থেকে তাৎপর্যপূর্ন রমজান মাসের গুরুত্ব অত্যন্ত ভালভাবে উপলব্ধি করা যায়।
যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে করিম (সাঃ) অতিশয় আনন্দিত হতেন, তাঁর সাহাবাদের বলতেন, তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফযিলত বর্ণনা করে বলতেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। (নাসায়ী)
রোজা রাখার প্রথম বা পূর্বশর্ত হচ্ছে নিয়ত। সহি নিয়ত ছাড়া রোজা কবুল হয় না। ইসলামে সৎকাজে নিয়ত করাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নিয়তকে গুরুত্ব দেয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিটি কাজে দেহ ও আত্মার সমন্বয় সাধন করে কাজটিকে সর্বাধিক বাঞ্ছিত মানে উত্তীর্ণ করা। তাই রোজা রাখার পূর্বে অন্তরের অন্তস্হল থেকে নিয়ত করা অবশ্যই করনীয়।
মানব জীবনে নিয়তের গুরুত্ব অনেক। রাসূল (সা:) বলেন,
إﻧﻤﺎ اﻷﻋﻤﺎل ﺑﺎﻟﻨﻴﺎ ت
প্রত্যেকটি আমল(কর্ম) নিয়তের উপর নির্ভরশীল বা সকল কাজের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী পাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
রোজার নিয়ত:
নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিনশাহরি রামাদ্বনাল মুবারাকি ফারদ্বাল্লাকা ইয়া আল্লাহ ফাতাক্বাববাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামীয়ু'ল আ'লীম।
ইফতারের দোয়া:
আল্লাহুম্মা ছুমতুলাকা ওয়া তাওয়াক্কালতু আ'লা রিজক্বিকা ওয়া আফতারতু বি রাহমাতিকা ইয়া আর্ হামার রাহিমীন।
যাদের উপর রোজা রাখা ফরজ:
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক (বালেক) সুস্হ মস্তিষ্কের অধিকারী মুসলমান নর-নারীর উপর মাহে রমজানে রোজা রাখা ফরজ। তবে যারা প্রচন্ড অসুস্হ অর্থাৎ রোজা রাখলে কষ্টকর হয় তাদের উপর কিছুটা শিথীল করা হয়েছে। অর্থাৎ তারা পরবর্তীতে ছেড়ে দেয়া রোজাগুলি আদায় করে নিবেন। আর কেহ যদি একেবারে বৃদ্ধ হয়ে যায় যে, তারপক্ষে রোজা রাখা সম্ভব নয় তার উপর অর্পিত রোজার পরিবর্তে নির্দিষ্ট নিয়মে কাফফারা আদায় করলেও চলবে।
অনেকে ইতিমধ্যে মানসিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আর যারা এখন করেননি, আসুন এখনই আমরা মানসিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করি।
রহমতের এই মাস রমজানে সহি নিয়তে রোজা রাখার পাশাপাশি আমাদের সকলেরই উচিত বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা ও মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করা।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সহি নিয়তে রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন
গত বছর মাহে রমজানে প্রজন্মে দুইটা টপিক করেছিলাম। সেখানে কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
মাহে রমজান : জ্ঞাতব্য বিষয়
এখানে বিস্তারিত পাবেন : রোজা ভঙ্গের কারন সমুহ, যে সকল কাজ রোজা ভঙ্গের কারন না, যে যে পরিস্হিতিতে রোজা ভাঙ্গা জায়েজ আছে, রোজার সুন্নত সমুহ, সহি হাদিস, সদকায়ে ফিতরা।
মাহে রমজান, পবিত্র আল-কুরআন নাজিলের মাস : রহমত ও বরকতের মাস
এখানে বিস্তারিত পাবেন : সহি হাদিস - পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা পাঠের ফজিলত বর্ননা করে মহানবী (সাঃ) এর বানী, এবং রহমতের মাস রমজানে মহান আল্লাহ
তায়ালার দরবারে বেশী বেশী দোয়া করতে হবে।