টপিকঃ আমি যেখানে থাকি : পর্ব ৩ : অতিথি: শান্ত বালক
পূর্বকথা: "আমি যেখানে থাকি" একটি নতুন সিরিজ যেখানে আমি একেক পর্বে একেকজন অতিথি যেখানে/যে এলাকায় থাকেন, সেই জায়গাটি সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। আজকেরটা পর্ব ৩ : অতিথি আমাদের সবার পরিচিত শান্ত বালক যার ভাল নাম মো: আসিফ চৌধুরী । যারা ১ম ও ২য় পর্ব পড়েন নাই, তারা নিচের লিংকে যেয়ে পড়ে নিতে পারেন:
আমি যেখানে থাকি : পর্ব ১ : অতিথি: ইলিয়াস ভাই
আমি যেখানে থাকি : পর্ব ২ : অতিথি: আজাইরা সাজ্জাদ
আজকের পর্ব কথা:
শান্ত বালক কে বলতেই রাজি হয়ে গেলেন। উনি যেখানে থাকেন সে সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহ বেশ আগে থেকেই ছিল। তাই ভাবলাম ৩য় পর্বে উনাকে নিয়ে আসি। উনাকে বেশ আগে থেকেই সব প্রশ্ন জানিয়ে দিয়ে উত্তর আস্তে আস্তে ডেভেলপ করতে বলা হয়েছে আর ছবিও তুলতে বলা হয়েছে। আমাকে ছবিগুলো দেখালেন, আমি বললাম সব ঠিক আছে। তারপর আজকে পাবলিশ করব এটা জানালাম।
শান্ত বালক বেশ অভিজ্ঞ লোক, বেশি কিছু বলে দিতে হয়নি, উনি বেশ গুছিয়েই সব কিছু এনে দিয়েছেন। বেশ কষ্ট করে ছবিগুলো তুলেছেন ও উত্তর দিয়েছেন- সেজন্য উনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
তো চলুন জেনে নেই আজকে শান্ত বালক ও উনার এলাকা সম্পর্কে......
আপনি যেখানে থাকেন, সেটি সম্পর্কে কিছু কথা........
- কুষ্টিয়া জেলার কেন্দ্রবিন্দু মজমপুর গেটে আমার বাড়ি। আমার জন্ম এখানেই। ছোটকাল থেকে এখন পর্যন্ত এই এলাকাতেই নিজ বাড়িতে বাস করে আসছি। আমার এলাকাটি কুষ্টিয়া শহরের অন্যতম ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা। বাণিজ্যিক এলাকা হলেও এরই সাথে গড়ে উঠেছে আবাসন। প্রধান সড়কের পাশে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও দোকান বাদে এর পেছনে সবই পাড়া-মহল্লা।
বিভিন্ন সড়ক বাদেও এই এলাকার মধ্য দিয়ে স্হাপিত হয়েছে রেল যোগাযোগ ব্যবস্হা। আর গড়াই নদী আমার বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে না। কুষ্টিয়ার গুরুত্বপূর্ন এলাকা হওয়ায় বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা, পৌরসভা অফিস, কোর্ট ভবন, পুলিশ লাইন, উপজেলা ভবন, জেলা স্কুল, টেলিফোন অফিস, সার্কিট হাউস, শিশুপার্ক - সবই আমার এলাকায় অবস্হিত।
আপনার এলাকায় যেভাবে যেতে হবে ( ঢাকা থেকে) .........
- ঢাকা থেকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কুষ্টিয়া যাওয়া-আসার ভাল মানের বাস রয়েছে। কল্যানপুর ও গাবতলী থেকে বাসে উঠতে হবে। এছাড়াও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ভোরে ও সন্ধ্যায় একটি করে ট্রেন রয়েছে। ট্রেনে আসলে ভেড়ামারা কিংবা পোরাদহ স্টেশনে নেমে সেখান থেকে বাস যোগে শহরে আসতে হবে। আর মূল শহরে যেখানে বাস থামে, সেই জায়গাটিই হচ্ছে আমার এলাকা “মজমপুর”।
সেখানে যাদের সাথে আপনার বেশির ভাগ সময় কাটে......
- এলাকার বেশীরভাগ মানুষের সাথেই আমার পরিচয় ও সুসম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ কোন উদ্দেশ্য ও সমস্যা ছাড়া একত্রে সবাই খুব একটা বসা হয় না। তবে দিনে বেশীরভাগ সময় গল্প ও আলাপ হয় একদম বাড়ির আশেপাশের লোকজনের সাথে, তাদের বেশীরভাগই ব্যবসায়ী। আর পথে চলতে গিয়ে অনেকের সাথেই প্রতিদিন শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেব এবং বিশেষ করে মোয়াজ্জিন সাহেবকে আমি খুব পছন্দ করি। যেকোন পরামর্শে তাদের সাথে যেকোন সময় আলাপ করতে চাইলে তারা আন্তরিকতার সাথে আলোচনায় বসেন।
এলাকায় আপনার সারাটা দিন যেভাবে কাটে ......
- আমার কর্মস্থল প্রধানত আমার বাড়িতে এবং নিজের মার্কেটের অফিসে। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই কম্পিউটার অন করি। তারপর কাজ সেরে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করি। যেহেতু শেয়ার ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত, তাই আবারও কম্পিউটারে বসি। কাজ থাকলে মার্কেট ও অন্যান্য অফিসে যাই। বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমেই আশেপাশের খোঁজ খবর নিই। কোন নতুন ঘটনা থাকলে সেখানে যাই। তা না হলে কাজে অন্যত্র চলে যাই। সন্ধ্যার পরের সময়টা হচ্ছে এলাকার ও অন্যান্য মানুষের সাথে বসার নির্ধারিত সময়। আমার নিয়মিত একটা কাজের মধ্যে কবরস্থানে যাওয়া অন্যতম। প্রতিদিনই কোন এক সময় সুযোগমতো সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করি এবং কিছুটা সময় অতিবাহিত করি। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারনে প্রতি ওয়াক্তে নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাওয়া না গেলেও নামাজ আদায় করি।
এলাকায় প্রথম যখন এসেছিলেন তখনকার সময়ের সাথে এখনকার পার্থক্য .......
- ছোটকাল থেকে এখানেই আছি। অনেক পার্থক্য চোখে পড়ে। এখন রাস্তাগুলো অনেক প্রশস্থ করা হয়েছে। রাস্তার দু’ধার দিয়ে অনেক দোকান ও প্রতিষ্ঠান। আধুনিক আবাসিক/অনাবাসিক দালানে মাঠ থেকে শুরু করে পুকুর পর্যন্ত ভরাট হয়ে গেছে। এটা উন্নয়নের লক্ষ্য। তারপরও ছোটকালে দেখা খেলার মাঠ ও পুকুরগুলো এখন আর নাই - দেখলে খারাপই লাগে।
এলাকায় ঘটা বিশেষ কোন মজার / উল্লেখযোগ্য ঘটনা...........
- এলাকায় ঘটে যাওয়া মজার অনেক ঘটনাই রয়েছে। তার মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য একটা ঘটনা বলি। দেশে যখন প্রথম আফ্রিকান মাগুরের চাষ শুরু হয়েছিল, তখন আমার এলাকাতেও একজন এই মাছের চাষ শুরু করেন। নতুন অবস্থায় তার অভিজ্ঞতা ছিল কম। তাই বড় একটা খোলা পুকুরেই তিনি চাষ শুরু করেন। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সবার মুখে একই কথা। ঐ পুকুরে আগের রাতে একটা শিয়াল পানি খেতে গেলে, আফ্রিকান মাগুর ঐ শিয়ালটিকে খেয়ে ফেলেছে। ঘটনা এক মুখ দুই মুখ হতে হতে শেষ পর্যন্ত জাতীয় দৈনিক পত্রিকাতেও ছাপানো হয়ে গেল। ভোরবেলা প্রচুর মানুষ ভিড় করেছিল ঐ পুকুরের পাশে। কিন্তু পরে শিয়ালের দেহাবশেষও আর অবশিষ্ট ছিল না। এই ঘটনার পর থেকে আফ্রিকান মাগুরের ভয়াবহতা সকলের দৃষ্টিগোচর হয় এবং লোকালয়ে এই মাছ চাষ না করার ব্যাপারে মানুষ সচেতন হয়।
এলাকার যে দিকগুলো সবচে বেশি ভাল লাগে.........
- এক্ষেত্রে প্রথমেই বলবো এলাকাবাসীর কথা। ছোট-বড় সবাই এখানে অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র। এখানে সুখ-দু:খে একে অন্যের জন্য এগিয়ে আসেন। এরকম সম্প্রীতি খুব কম এলাকাতেই দেখা যায়।
এলাকার যে দিকগুলো একদমই ভাল লাগে না..........
- আমার এলাকাটা ছিমছাম পরিস্কার হলেও অনেকেই যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে নোংরা করে রাখে যা আমার খুব অপছন্দের। আর আমার এলাকায় চোরের উৎপাত একটু বেশী।
বর্তমান এলাকার উন্নতিতে কোন মতামত বা পরামর্শ.......
- আমার এলাকা কুষ্টিয়ার প্রধান ও উন্নত একটি জায়গা। তারপরও বেশ কিছু অপ্রাপ্তি রয়ে গেছে। প্রধান সড়কে বিভিন্ন জাযগায় ল্যাম্পপোস্ট নাই। মান উন্নয়নে সব রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করলে এলাকাবাসী উপকৃত হবেন। আর এলাকার প্রধান সড়কের একাংশে এখন পর্যন্ত ফুটপাত তৈরী করা হয়নি। নিরাপদে চলাচলের জন্য এটা অতি জরুরী বলে মনে করি।
এই ছিল আজকের পর্ব। কেমন লাগল আজকের পর্বটি তা এখানে অবশ্যই জানাবেন। আপনাদের মতামতটুকু এই সিরিজের এগিয়ে চলায় অনেক অবদান রাখবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।