টপিকঃ আমি যেখানে থাকি : পর্ব ২ : অতিথি: আজাইরা সাজ্জাদ
পূর্বকথা: "আমি যেখানে থাকি" একটি নতুন সিরিজ যেখানে আমি একেক পর্বে একেকজন অতিথি যেখানে/যে এলাকায় থাকেন, সেই জায়গাটি সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। আজকেরটা পর্ব ২ : অতিথি আমাদের আজাইরা সাজ্জাদ। যারা ১ম পর্ব পড়েন নাই, তারা নিচের লিংকে যেয়ে পড়ে নিতে পারেন:
আমি যেখানে থাকি : পর্ব ১ : অতিথি: ইলিয়াস ভাই
আজকের পর্ব কথা:
আজাইরা সাজ্জাদ কে বেশ আগে থেকেই সব প্রশ্ন জানিয়ে দিয়ে উত্তর আস্তে আস্তে ডেভেলপ করতে বলা হয়েছে। প্রথম পর্বের মত চ্যাটে কোনো ইন্টারভিউ হয়নি, তবে আলাপ আলোচনা হয়েছে বেশ কদিন ধরেই। সাজ্জাদের মূল সমস্যা হচ্ছে সে চ্যাটে খুব একটা থাকে না, হঠাৎ হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। তাই তার সাথে যোগাযোগ করে সবকিছু যোগার করা, তাকে কি কি ভুল হয়েছে তা ধরিয়ে দিয়ে সেগুলো সংশোধন করতে বলা- খুবই কঠিন একটা কাজ ছিল। চ্যাটে তার কাছ থেকে রিসপন্স পেতে প্রায়ই অনেক সময় লেগে যেত, মাঝে মাঝে তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে হাল ছেড়ে দিতাম, তখন সে হঠাৎ ফিরে আসত। এভাবে একটু একটু করে সবকিছু শেষ করাটা আসলে বেশ কঠিন, ধৈর্য্যও থাকে না অনেক সময়।
আমি একেবারে আঠার মত গত ৮-১০ দিন ধরে সাজ্জাদের পিছে লেগে থেকে তাকে বার বার তাগাদা দিয়েছি। বেচারা বার বার তাগাদায় বোধহয় বেশ বিরক্তই হয়ে গেছে। অবশেষে আজকে গোপন বার্তায় সব উত্তর জানালো আর ছবিগুলো গতকালকেই দেখেছি। চমৎকার হয়েছে সবকিছু। সাজ্জাদ বেশ কষ্ট করেছে, ঘুরে ঘুরে ছবিগুলো তুলেছে- বাংলায় এত কিছু লেখা আর স্লো নেট স্পিডে সবকিছু করা তার জন্য বেশ কঠিন ছিল বলে জানালো - এজন্য তাকে প্রথমেই অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে রাখছি।
তুমি যেখানে থাকো, সেটি সম্পর্কে কিছু কথা........
- আমি থাকি ঢাকার ক্ষিলখেত এলাকায়। পড়াশুনা করছি একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে। সেই সুবাদে আমি ক্ষিলখেত এলাকায় একটা মেস এ থাকি। ক্ষিলখেত এলাকাটা মধ্যবিত্তদের আবাসিক এলাকা। এখানে উচ্চবিত্ত খুব একটা নেই। এখানে একটা স্যাটেলাইট শহর আছে যেটার নাম লেকসিটি। আমি আর আমার কয়েকটি বন্ধু এই লেকসিটিতেই থাকি। এই এলাকার তেমন কোন বিশেষত্ব নেই। তবে লেকসিটি আমার কাছে খুব ভালো লাগে, কারন এটা খুব নির্জন। ঢাকা শহরের কোলাহল এখানে একেবারে নেই। এর আশেপাশে কয়েকটি আবাসিক এলাকা রয়েছে যেখানে মানুষজন তেমনভাবে বসবাস করা শুরু করে নাই।
তোমার এলাকায় যেভাবে যেতে হবে .........
- লেকসিটিতে আসার জন্য আগে ক্ষিলখেত আসতে হবে। ঢাকার যেকোন জায়গা থেকে এয়ারপোর্ট রোডের এই ক্ষিলখেতে আসা যাবে। আর ক্ষিলখেত থেকে রিস্কা করে গেলেই লেকসিটি নিয়ে আসবে।
সেখানে যাদের সাথে তোমার বেশির ভাগ সময় কাটে......
- সারাদিনতো খুব একটা এই এলাকায় থাকা হয় না। তবে বিকালে বেশিভাগ সময়ে এদিকে ভালোই থাকা হয়। ওই সময় ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে চলে যায়।
এলাকায় তোমার সারাটা দিন যেভাবে কাটে ......
- আমি আমার দিনের বেশিভাগ সময় পিসির সামনে বসে থাকি। তবে মাঝে মাঝে এলাকায় কোন কারন ছাড়াই ঘুরি। ঘুরাফিরা শুরু হয় একটা চায়ের দোকান থেকে, শেষও হয় ওই চায়ের দোকানে। আমি ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠতে পারি না। কোন কাজ না থাকলে ১২ টার দিকে উঠি। যেদিন ক্লাস থাকে সেদিন তো মাথা নষ্টের জোগার হয়। ক্লাস শেষে আসি দুপুর চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে। বিকালে সময় পেলে বনরুপা যাই আর না পেলে চায়ের দোকানে চলে আড্ডা। আমাদের আড্ডা দেওয়ার জন্য ওই চায়ের দোকানটা খুব প্রিয়। আর বাসায় থাকলে তো পিসিটা অন করে বসে থাকি। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আমি প্রায়ই বাইরে বের হই। ১২ টা থেকে সাধারনত, চলে যতক্ষন মন চায়। আবার ঘুম.........আবার আরেকটা দিন............
এলাকায় যে অংশে সবচে বেশি যাওয়া হয় ......
- সবচেয়ে বেশি যেখানে যাই সেটা হলো বনরুপা আবাসিক এলাকা। এটা একটা প্রস্তাবিত আবাসিক এলাকা। খুব বড় নয়, ৩০০ একর। লেকসিটির আশেপাশে বেশ কয়েকটি এরকম আবাসিক এলাকা আছে যেখানে এখনও মানুষ বসবাস করা শুরু করে নাই। আর এজন্যই এ এলাকায় কোন কোলাহল নাই। যেদিন বিকালে সময় পাই চলে যাই বনরুপাতে। বিশাল একটা মাঠের মধ্যে হাটতে আমার কেন জানি খুব ভালো লাগে। এখানে উল্লেখ্য ক্ষিলখেতের এই জায়গার পরে ঢাকার আর কোন খবরদারি নাই, শুরু হয় আরেকটা জেলা। আমি যখন ওই বনরুপাতে যাই, প্রায় সময়ই প্রচন্ড বাতাস থাকে। মনে হয় যেন সেই বাতাসে শুদ্ধ হই আমি, আমার আত্মা।
এলাকায় প্রথম যখন এসেছিলে তখনকার সময়ের সাথে এখনকার পার্থক্য .......
- আমি এই এলাকাতে আছি প্রায় আড়াই বছর ধরে। এখানে আসার পর খুব একটা পরিবর্তন হয় নাই, শুধুমাত্র মানুষ আর বিল্ডিং এর সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়া। এই বৃদ্ধি অবশ্য পুরো ঢাকা শহর জুড়েই হয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে এই মানুষ আর সেই সাথে দালানকোঠা।
এলাকার যে দিকগুলো সবচে বেশি ভাল লাগে.........
- এটা খুব নির্জন আর এখানে আমি ইচ্ছা মতো গভীর রাতে ঘুরাফেরা করি, কোন অসুবিধা ছাড়া (পুলিশ এবং অসাধু কতিপয় বন্ধু থেকে)। আমার রাতে ঘুরাফেরা করতে খুব ভালো লাগে। আমার এমন অনেক রাত গেছে যে রাতে সারারাত উল্টা-পাল্টা ঘুরছি, ভোরে বাসায় আসছি।
যে দিকগুলো একদমই ভাল লাগে না..........
- ক্ষিলখেত এলাকাটা খুব নোংরা হয়ে যায় কিছু পরিমান বৃষ্টি হলেই। তখন মনে হয় এই ক্ষিলখেত ছেড়ে পালাই।