টপিকঃ চুপি চুপি পর্ব-১
আমি আগেই বলে রাখছি আমি এগুলো ভালো পারি না তবুও গল্পের জোয়ার বইতে দেখে আমারো লোভ হলো। ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।
পর্ব-১
দাঁড়ান বলছি। এত তাড়া দিলে কি চলে? ঘটনাগুলি ঝটপট ঘটে গেলো। চশমা কিনতে যাবে-এ উপলক্ষ্যে যে আমার ডাক পড়বে...কোনোদিনই ভাবি নাই! জীবনে বোধহয় এই প্রথম নাকের কাঁধে পাকাপাকি চেপে বসা দৈত্যটিকে বেশ ভালো লাগতে থাকল। সম্মতি জানাতে গিয়ে প্রায় তোতলা হয়ে গেলাম। হা ঈশ্বর, এসব কী হচ্ছে? মেয়েটি যদি বুঝে যায়? কোনোমতে বললাম: 'ফ্রাইডে আফটারনুন –এ যাওয়া যেতে পারে'। হ্যাঁ সূচক একটা মাথা নাড়িয়ে মেইজিন চলে গেলো। আমার ভুলও হতে পারে...একটা অস্পষ্ট হাসির রেখা কি ছিল না ওর ঠোঁটে? বুকের কোথায় যেন কিছু একটা ভাংচুর আবার শুরু হল? এরকমই হয়ে আসছে বেশ ক’টি বছর। হ্যাঁ, আপনারা যা অনুমান করেছেন তাই হয়তো ঠিক। আমি এই মেয়েটিকে একান্ত চাই...অবশ্যি একতরফা...এটাও নিশ্চয় বলে দিতে হবে না! নাকি অন্য কিছু একটা আছে, প্রচন্ড চাপা স্বভাবের মেয়েটিকে বোঝাই দায়...সত্য বলতে গেলে কথাটা আমার জন্যও খাটে বৈকি!
মেইজিন কে প্রথম দেখাতেই ভাললেগে গিয়েছিলো। আমার সহকর্মী ছিল। কিন্তু অনেকদিন পাশাপাশি কাজ করেও ঐ যে আপনারা যেটা ভালো জানেন, সেটা আর বলা হয়ে ওঠে নি। ইনফ্যাক্ট, কেউই বলতে পারে নি। সহজ ব্যবহারের মোড়কে একধরণের দুর্ভেদ্য দেয়াল ছিলো যেটার ভাঙ্গাটা অসম্ভবের নামান্তর ছিল। আপনারা হয়তো বলবেনঃ ‘এ আর এমন কী? ওরকম হয়েই থাকে। তোমার সাহসে কুলোয় নি!’ হবে হয়তো...কিন্তু বুঝতে বুঝতে বিচ্ছেদটা হয়েই গেলো। মনে থেকে গেলেও ব্যস্ততার কারণে আর যোগাযোগ হয়ে ওঠেনি। সেদিন হঠাত করেই স্টেশানে দেখা হয়ে গেলো। কথায় কথায় জানলাম চোখে ভালো দেখছে না; আমি যদি সময় করে ওকে নিয়ে যাই? আপনারাই বলেন, আমি ওর জন্য সময় বের করতে পারবো না? এও কি হয়? টানা টানা চোখের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যাওয়া কী যেন একটা খুঁজছিলাম, নিজেও ভালো জানি না।
তারপর মাঝের দিনগুলি কীভাবে যে কেটে গেলো...ভয়ানক অস্থিরতা...কী পরবো, কী বলব...এইসব হাবিজাবি। একটু হাসিও পেলো। নিজেকে বললামঃ ওহে প্রেমের মরা, শপিং –এ সাহায্য করতে তোমায় ডেকেছে। আর তুমি কিনা...ছিঃ ছিঃ! সে যাই হোক, শুক্রবারের সকাল-দুপুরটা অফিসে যেন কাটতেই চাইছিল না। তার উপর সহকর্মী মহিলা জেমস বন্ড মেয়েটির অনুসন্ধিতসু চোখ নাচানিঃ ‘কি হে! আজকাল দেখতেই পাচ্ছো না বুঝি? তা, মেয়েটি কে শুনি, ওই যে আজ বিকেলে যাওয়ার জন্য হেঁদিয়ে মরছ?’ নিঁখুত অভিনয়ে আকাশ থেকে পড়ে বললাম, ‘ কি যা তা বলছ কারমেন, কোথায় আবার যাব?’
-থাক, আর জঘণ্যতম অভিনয় করতে হবে না। ইয়েলো স্টিকি নোট এ নাম আর সময় লিখে মনিটরে সাঁটিয়ে পূজো করছো আর বলছো কিনা কী যা-তা বলছি হা হা হা। সত্যিই তাই তো! ভুলোমনের মাশুল আর কী! জিভ কেটে ২০ মিনিট হাওয়া হয়ে যেতে হলো। নইলে কারমেন কী জিনিস যে বুঝবে সে আজীবন মনে রাখবে।
মোবাইলে নক নক শুনে তাকিয়ে দেখি একটা মেসেজ এসেছে। মেইজিন। সে নাকি আমার জন্য স্টেশানে অপেক্ষায় আছে। হাউ সুইট! তড়িঘড়ি করতে গিয়ে টেবলে হোঁচট খেয়ে গেলাম। অট্টহাসি শুনে কারমেন কে জায়গামত একটা রাম-চিমটির অবশ্য পালনীয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেরিয়ে গেলাম।
বিশাল স্টেশানে ঘরফেরতা গিজগিজে মানুষের ভীড়ে কাউকে খুঁজে বের করাটা বিরাট ঝামেলার। মোবাইল করা যেতে পারে, কিন্তু করতে ইচ্ছে হলো না। অনুমানের উপর ভিত্তি করে গেইটের বাইরে কস্টা কফি’র আশেপাশে চোখ বুলালাম। আর তাতেই সুন্দরী চোখের ফ্রেমে বন্দী হয়ে গেলো। একধরণের ছেলেমানুষি পেয়ে বসল; প্রতীক্ষায় ওকে কেমন দেখা যায় আর কী! আর সে দৃশ্য...একবার মোবাইল, একবার গেইটে। সুন্দর মুখখানায় বহু আকাঙ্খিত কাউকে স্পট করার শিশুসুলভ চাঞ্চল্য-বিরলই বটে! মনের ভেতর দুর্মুখ আমিটি বলে উঠলোঃ আবে গাধা, চশমা কেনা কীভাবে হবে এই চিন্তায় ব্যাকুল হয়েছে আর তুই কিনা ছিঃ ছিঃ! ‘ইয়্যু’ড নট বিলিইভ ইয়্যর আইজ, ইফ টেন মিলিয়ন ফায়ারফ্লাইস...’ মোবাইলের রিংটোনে সম্বিৎ ফিরে দেখি কল করেছে। আমাকে ওদিকটায় ডাকছে। আমার যা স্বভাব, ভাবনায় হারিয়ে গেলে তো খেয়াল থাকে না..দেখেই ফেললো নাকি?
চলবে...
চুপি চুপি পর্ব-২
চুপি চুপি শেষ পর্ব
তৃষ্ণা হয়ে থাক কান্না-গভীর ঘুমে মাখা।