টপিকঃ রম্যঃ ডাক্তার নাকিবের চেম্বার! - পর্ব ১
সংবিধিবদ্ধ সতর্কবানীঃ নিম্নোক্ত গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক ধুরো মানে কিনা এই কাহিনী সম্পূর্ন কাল্পনিক, চরিত্রগুলো থাকা না থাকা কোন ব্যাপার না! কারো সংগে কোনভাবে কোন অংশ মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র!
নাকিবের অবস্থা বেশ ডাইল, যাকে বলে একেবারে ত্রাহি মধুসুদন অবস্থা আর কি!
ভাবছে, উশ! কেন যে ডাক্তারী পড়ল, জীবনে শান্তি বলে আর কিছু রইল না!
কতকিছুই ত করা যেত।
তা না, সর্বসুখ বিসর্জন দিয়ে ডাক্তারী পড়ে এখন হাফ পাগল হওয়ার অবস্থা!
এখনকার কাহিনী অবশ্য খানিকটা ভিন্ন! প্রজন্মে তার শুরুটা বেশ ভালোই ছিল! আড্ডাবাজি, ছড়াবাজি, মুভিজ, গেইমস, রেপু, জনপ্রিয়তা, সব মিলিয়ে বেশ মধুর অবসর সময় কাটাতো প্রজন্মে! হালকা পাতলা স্বাস্থ্য বিষয়ক পক-পকানি যা করত তা বিনোদনের ভেতরেই ছিল! খোলা মনেই সদস্যদের অনুরোধে চেম্বারটা খুলে বসে নাকিব! জনপ্রিয় হতে কার না ভালোলাগে?
তখনও কি জানত, আপাতদৃষ্টিতে শান্তশিষ্ট মিষ্টি ফোরামটা আসলে একঝাক পাগলের আখড়া!
শুরুর দিকে অবশ্য এক-আধটা ছোট-খাট টিপস! ব্যাস, এই ত! আস্তে আস্তে পসার জমে!
এই যেমন, ইলিয়াস ভাই, একদম মাটির মানুষ। একবার চেম্বারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা নাকিব, "দেখো ত, কেমন বুড়িয়ে যাচ্ছি মনে হয়, আজ-কাল কানে তেমন ভালো শুনতে পাইনা! কি করা যায় বলো ত?"
- ও কিছু না ভাইজান, এরকম এক-আধটু হয়ই, আপনি একদম টেনশন করবেন না।
- কি বললা? কিসের টান? দেখ ভাই, আমি মানুষটা একদম সহজ-সরল, কোন কিছু টানাটানিতে আমি কখনই নেই! এ কিন্তু তোমার বাড়াবাড়ি দোষ ধরা...।
পলাশ ছেলেটা অবশ্য বেশ জ্বালিয়েছিল! ওর কিছুটা মাইগ্রেন প্রবলেম আছে, তেমন মারাত্মক কিছু না, এটা থাকতেই পারে! সেবার নাকিব ডায়াগনোসিস করতে গেল, ছেলেটা ত পুরা কান্নাকাটি করে অবস্থা খারাপ।
কত সান্তনা দিল,
= পলাশ, তুমি না বড়ো বাবু, সুন্নাতে খৎনার সময় কাঁদো নাই, খামোখা এখন কেন কাঁদছ?
- ডাক্তার, আমি মনে হয় আর বাচুম না। এ আমার কি রোগ হইল!
= মাইগ্রেনে আজ পর্যন্ত কোন মানুষ মরা ত দূরে থাক, হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি হয় নাই।
- ডাক্তার সাব, আপনি মিছা কথা বলে আমাকে সান্তনা দিচ্ছেন, আমি হইলাম প্রজন্মে সেরা চাপাবাজ, কেউ চাপা মারলে আমি মূহুর্তের মধ্যে ধরে ফেলতে পারি!
= আহা, আমি চাপাবাজি করব কেন, আমি ত ডাক্তার! বিশ্বাস করো, আমি মোটেই চাপাবাজি, গল্পবাজি পারি না।
- আমার এখনও বিয়াই হয় নাই। আমি কতো স্বপ্ন দেখছি একটা বিয়া করনের! ভাবী ত সেই যে আমার উপর চইটা আছে, এহন আর বিয়ার নামই নেয় না। আমার মাও ছেলেদের চেয়ে ক্যান জানি ভাবীরেই বেশি আদর করে। ...
যাহোক, শেষ পর্যন্ত কিভাবে কান্না থামিয়েছিল, আদৌ থামানো গেছিল কিনা, সে সব এখন অতীত। বাপরে, ছেলেটা পারেও। মাইগ্রেন মূলত মেয়েদের অসুখ। পলাশের কেন হল সেদিন হাড়ে-হাড্ডিতে টের পেয়েছিল নাকিব। কেমন মেয়ে মেয়ে টাইপ। মেয়েদের মতো অযথা কান্নাকাটি। উফ!
প্রজন্মে সবাই জ্ঞানীগুনি মানুষ! সাধারন তর্কবাজি, আড্ডাবাজি ত সেখানে হয়্ই না বলা যায়,
হয় একদম হাই-ফাই টেকনোলজি নিয়ে প্রগাঢ় জ্ঞানের সব কথাবার্তা!
ওগুলো নাকিবের কাছে চাইনিজ ভাষা থেকেও কঠিন মনে হয় কিনা, তাই ওসব থেকে পারতপক্ষে দূরে থাকে সে!
সেরকমই একজন বিশাল জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব হলেন শামীম ভাই! খুবই ভালো মানুষ!
তায় আবার শিক্ষক! তিনি যখন আমার চেম্বারে এসে টুকিটাকি স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস চাইলেন, তখন ত নাকিব পুরাই হাওয়ায় ভাসছিল...।
তিনি এসে বললেন,
-দেখ নাকিব, বেয়ারা শরীরটা ত মোটেই কথা শুনছে না, আগে কেমন পেটানো স্লীম ফিগার ছিল, অথচ এখন কেমন ডাম্বেল হয়ে যাচ্ছি! তাই বলে, খাওয়ার জন্য বেঁচে থাকা। খাওয়া দাওয়া ত কমানো যায় না। একটু লম্বা হওয়ার তরিকা যদি বাতলে দিতে। আগে ত শাহবাগের বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে ঝুলে প্রায় হাফ ন্যানো মিটার লম্বা হয়েই গিয়েছিলাম। বেশি না, আপাতত ডাবল লম্বা হলেই চলবে। তাহলেই তোমার ভাবীর খাওয়া দাওয়ার রেস্ট্রিকশন থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। বলো এইসব ঘাস পাতা খেয়ে কি থাকা যায়?
স্বাধে কি আর বলে, বড় বড় বিজ্ঞানীরা যেমন নিজ নিজ ক্ষেত্রে জ্ঞানের সাগর মহাসাগর ছিলেন, তেমনি জেনারেল নলেজে ছিলেন অকাট মূর্খ! শামীম ভাইয়ের মতো এতো বড় পন্ডিত ব্যক্তিই যদি না জানেন যে একটা বয়সের পর আর লম্বা হওয়া যায় না, তাহলে আর প্রজন্মের পাতি পাবলিকগুলা কি দোষ দেই।
চলবে... ... ...
তুহীব্বুল য়াফওয়া - (আপনি মাফ করতে ভালবাসেন)
ফা' ফু আন্নী - (আমাকে মাফ করে দিন।)