এখন প্রশ্ন আসে, তাহলে আমি কেন ম্যাক ব্যবহার করি?
প্রথমত, হার্ডওয়্যার ডিজাইন। ম্যাকের হার্ডওয়্যার তো অন্যান্য পিসির মতই, অন্য জগতের কিছু না। কিন্তু এর যথাযথ কম্বিনেশন, অসাধারণ ডিজাইন আর কোন ব্র্যান্ডে নাই। সবচেয়ে বেশি ভাল লাগার ব্যাপারটা হচ্ছে কোনপ্রকার বাহুল্য নাই প্রোডাক্টে। স্মুথ, প্লেইন সারফেস। এদিকে বাঁকা, ওদিকে ত্যাড়া, নাক থ্যাবড়ানো নাই। ল্যাপটপের উপর-নীচ দুটোই একই জিনিস দিয়ে মোড়ানা, একই ডিজাইনে। শুধু বাহ্যিক রূপেই নয়, ভেতরের কম্পোনেন্টস সিলেকশনেও একই রকম সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। বাজারের হট ডিভাইস, টেকনোলজি যেখানে সেখানে যোগ করে দেয় না। একটা কম্পিউটার যতটুকু হ্যান্ডল করতে পারবে, ঠিক ততটুকুই দেয়। এটা দেখে বাইরে থেকে মনে হয় যে, আরে এর চাইতে কম দামে ঐ ল্যাপটপে আরও কতকিছু পাই, তাহলে ম্যাকে কেন নাই? কারণ এতকিছু যোগ করলে পারফরম্যান্সের ঘাটতি থাকে। একটা মাদারবোর্ডের ডিভাইস হ্যান্ডল করারও একটা সীমা থাকে।
আই-ক্যান্ডি সম্পর্কে বলার কোনই প্রয়োজন নাই। সিম্পল ইজ দ্যা বেস্ট। এটাই এ্যপলের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। অনেক সময় মনে হয়, সবার সাথে আমারটাও এই একই চেহারার কেন থাকবে। একটু বদলাই। কিন্তু বদলাতে গেলেই বোঝা যায়, কতটা যত্ন সহকারে একটা এলিমেন্টের সাথে আরেকটার সামঞ্জস্য এরা বজায় রাখে।
এ্যপল অনেক ওপেনসোর্স প্রজেক্টের সাথে জড়িত, যেগুলো আমি প্রতিনিয়ত ব্যবহার করি। যেমন - ওয়েবকিট, এলএলভিএম (জিসিসি-এর বিকল্প), ম্যাকপোর্টস, বিএসডি কার্ণেল (ওএস টেনের কার্নেল), ম্যাকরুবি ইত্যাদি। যদিও এ্যপল ওপেনসোর্স থেকে যতটুকু নেয় তার চাইতে অনেক অনেক কম পরিমাণে ফেরত দেয়, অন্ততপক্ষে তারা ওপেনসোর্সের সাথে আছে। ২০০০ সালে এ্যপলের পূনর্জন্মই হয়েছে ওপেনসোর্সের কল্যাণে। তবে তাদের আইওএস প্লাটফরমটা সম্পূর্ণ রূপে ক্লোজড করে দিয়েছে। এই ব্যাপারটা আমার মানতে খুব কষ্ট হয়। ওএস টেন ক্লোজড হলেও এতে যা খুশি করা যায়। কিন্তু আইওএসে করা যায় না। এ্যপল যতটুকু করতে দেয়, শুধু ততটুকুই করা যায়। জেইলব্রেক করে অবশ্য আরও কিছু করা যায়।
ইউনিভার্সাল বাইনারি - একমাত্র ওএস টেনেই এটা সম্ভব। একই সাথে ৩২ বিট ও ৬৪ বিট বাইনারি বানানো এবং এটা দুটোর যেকোন প্লাটফরমে কোনরকম পারফরম্যান্স ইস্যু ছাড়াই চালানো কেবল ওএস টেনোই সম্ভব। শুধু তাই না, ইন্টেল ও পিপিসি দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসেসরের জন্যও একটা বাইনারি বানানো যয়। অবশ্য এটা এখন আর কেউ করে না। পিপিসি-কে মোটামুটি মৃত ধরা হয়েছে। (এটা একটা অন্যতম কারণ আমার নষ্ট আইম্যাক জি৫ টা মেরামত না করার)
টাইম মেশিন - এটা আমি ব্যবহার করি না। আমি ম্যানুয়াল ব্যাকআপ রাখি - কারণ আমি মাল্টিপ্লাটফরম ইউজার। তবে এটা অসাধারণ টেকনোলজি না হলেও সাধারণ ব্যবহারকারীদের ব্যাকআপ রাখা শিখিয়েছে। সেটা একটা বিরাট সাফল্য।
স্পটলাইট। এর ধারে কাছে কেউ নাই। হ্যান্ডস ডাউন। আর এটার উপর ভিত্তি করে তৈরী কুইকসিলভার, আলফ্রেডের তুলনা কোথাও নাই। নোম-ডু এর খুব কাছাকাছি।
পাইথন, রুবি ইত্যাদি প্রোগ্রামিংয়ের সাপোর্ট। ওএস টেন ইনস্টল করেই প্রোগ্রামিং শুরু করা যায় লিনাক্সের মতই। আলাদা করে ডাউনলোড, ইনস্টল করতে হয় না।
ইউনিক্স সাপোর্ট - সম্পূর্ণ কমান্ডলাইন ইন্টারফেস। টার্মিনালেই জীবন আমার। কেবলমাত্র ওয়েব ব্রাউজারেই মাউস ব্যবহার করাটা যুক্তিযুক্ত মনে হয় আমার কাছে। উইন্ডোজে কাজ করতে পারি না, মূলত এই কারণেই। তবে একেবারেই মাউস ব্যবহার করি না, তা নয়। যেখানে মাউসের সুবিধা আছে সেখানে করি।
মেনুবার - ম্যাকের এই একটি মেনুবার যে কত প্রয়োজনীয় একটা ডিজাইন ব্যবহার না করলে বোঝা যাবে না। একটা ১৩.৩" মনিটরে প্রতিটা উইনড্োর যদি নিজস্ব মেনুবার থাকে তাহলে সেটা এত সমস্যা করে বলার মত না। এছাড়াও উইন্ডো ক্লেজ করলেই পুরো প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে যায় না। এটাও খুবই প্রয়োজনীয় একটা ফিচার। অফিস, আইটিউনস ইত্যাদি যেসব ভারী ভারী সফটওয়্যার চালু হতেই বছরখানেক সময় লাগায়। সেগুলোক একবার চালু করে রাখলেই হয়। তারপর উইন্ডোগুলো যদি বেশি ক্লাটার্ড মনে হয়, তবে শুধু উইন্ডো গুলো ক্লোজ করে দিলেই হয়। মিনিমাইজ করে ডকের জায়গা নষ্ট করতে হয় না।
আর লায়নের কথা আগে থেকেই বলার কিছু নাই। যদি কিনতে পারি, ব্যবহার করে দেখা যাবে নতুন ফিচারগুলো কতটুকু ব্যবহারযোগ্য।