টপিকঃ পরির্পূণ জীবন ব্যবস্থা ইসলাম : আমাদের ভিশন ও মিশন
পরির্পূণ জীবন ব্যবস্থা ইসলাম : আমাদের ভিশন ও মিশন
আমরা অনেকেই ভাবিনা কেন আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি। কেন প্রভু আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব করে পৃথিবীতে পাঠালেন? আমাদের ভিশন ও মিশন কি? মূলতঃ মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে পাঠিয়েছেন তার ইবাদতের জন্যে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা ও সম্পর্কে বলেন-
# আমি মানুষ এবং জ্বীন জাতিকে আমার ইবাদত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি। {সূরা আয যারিয়াত, আয়াত-৫৬}
# (হে নবী) যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার কাছে নিশ্চিত (মৃত্যুজনিত) ঘটনা না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার মালিকের ইবাদত করতে থাকো। {সূরা আল হেজর, আয়াত-৯৯}
# এছাড়াও দেখতে পারেন- {সূরা আনকাবুত, আয়াত-৫৬}
তাহলে উপরোক্ত আয়াতসমূহ অনুযায়ী দুনিয়াতে আমাদের একমাত্র প্রধান কাজ তথা মিশন হওয়া উচিত মহান আল্লাহ তা'য়ালার ইবাদত করা অর্থাৎ তার আদেশ নিষেধসমূহ মেনে চলা। তাহলেই আমাদের জীবন হয়ে উঠবে শান্তিময়, ও কল্যাণময়। তবে আমদের মধ্যে এমন সংখ্যাই বেশী, যারা ইসলামের বিধানসমূহ পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে চলিনা। কিছু অংশ মানি, কিছু অংশ মানিনা। এটি ঠিক নয় যে, আমরা দুনিয়ার মোহে পড়ে পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামকে মেনে চলবো না। কারণ মহান প্রভু পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন-
#হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা পুরোপুরিই ইসলামে (-র ছায়াতলে) এসে যাও এবং কোন অবস্থায়ই (অভিশপ্ত) শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা; কেননা শয়তান হচ্ছে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত-২০৮}
আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা সত্য প্রকাশে ভীত হয়। মহান প্রভু ও তার রাসূল (সাঃ) এর বাণী প্রকাশে ভীত হয় অথবা সত্যের বিরোধীতা করে থাকে এবং সত্যের বাণী প্রকাশে বাঁধা সৃষ্টি করে ; তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
# "আর তার চেয়ে অধিক জালিম আর কে হতে পারে? যে গোপন করে সেই সত্যের সাক্ষ্যকে, যা তার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, আর তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালা অজানা নন। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৪০)
# হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা আল্লাহ তা'য়ালাকে ভয় করো এবং (হামেশা) সত্যবাদীদের সাথে থেকো। (সূরা আত-তওবা, আয়াত-১১৯)
# তোমরা মিথ্যা দিয়ে সত্যকে পোষাক পরিয়ে দিওনা এবং সত্যকে জেনে বুঝে লুকিয়ে রেখো না। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-৪২)
ইসলাম হলো সার্বজনীন ধর্ম। সমগ্র মানবজীবনের পরিচালনার জন্যেই মহান আল্লাহ তায়ালা ইসলামকে জীবন বিধান হিসেবে প্রেরণ করেছেন। বিভিন্ন সময় ও যুগের পরীক্ষায় ইসলাম সর্বদাই মানবজাতির জীবন পরিচালনার শ্রেষ্ঠ জীবন বিধান হিসেবে উত্তীর্ণ। কিছু মুসলিম বলেন, সব জায়গায় ইসলাম কে ডেকে আনবেন না, তার মানে তারা কি বুঝাতে চাচ্ছে? ইসলাম আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়! জীবনের সকল প্রয়োজন ফুরাতে ইসলাম ব্যর্থ...!! অথচ মহান আল্লাহ তায়ালার পরিষ্কার পরিষ্কার ঘোষণা—-
# আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের উপর আমার (প্রতিশ্রুত) নেয়ামতও আমি পূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের জন্য জীবন বিধান হিসেবে আমি ইসলামকেই মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা, আয়াত-০৩)
# নিঃসন্দেহে মানুষের জীবন বিধান হিসেবে আল্লাহ তা'য়ালার কাছে ইসলামই একমাত্র (গ্রহনযোগ্য) ব্যবস্থা। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১৯)
যেখানে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে (সামাজিক, রাজনৈতিক,ধর্মীয়,অর্থনৈতিক...ইত্যাদি ক্ষেত্রে) ইসলামকে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন; সেখানে কিছু মুসলিমদের মুখ থেকে কথা- "আর সবকিছুতেই এরকম ভাবে ইসলাম'কে টেনে আনা কতটুকু যুক্তিযুক্ত" কথাটি শোনা বড়ই বিষ্ময়কর...!! বড়োই দুঃখের....!! আফসোস তাদের জন্য, যারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চলার জন্য ইসলামকে যথেষ্ঠ মনে করেনা..........।
আমাদের সমাজে কেউ কেউ নিজেদের প্রগতিশীল বলে পরিচয় দেন। তথাকথিত কতিপয় প্রগতিশীলদের কাছে ইসলামের কথা সহ্য হয় না। যারা সঠিকভাবে ইসলাম মেনে চলে বা মেনে চলার চেষ্টা করে, তাদেরকে এরা হেয়-প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে থাকে। ধর্মান্ধ, গোঁড়া, চরমপন্থী, মৌলবাদীসহ নানা উপাধিতে ভূষিত করে সৎকর্মশীলদের বা সত্যের পথে অনুসারীদের। অথচ এই সকল প্রগতিশীলরা নিজেরাই জানেনা যে, তারা কতটুকু ভ্রান্ত ধারণায় নিমজ্জিত। তারাতো শুধুমাত্র নিজেদেরকেই ধোঁকা দিচ্ছে, সত্যের পথ অনুসরণ না করে তারা নিজেরাই নিজেদেরকে বোকা বানিয়ে রাখছে। এসকল আল্ট্রা-মর্ডার্ণ প্রগতিশীলরা জীবন বিধান হিসেবে ইসলামকে মেনে নিতে চায় না। দুনিয়ার লোভ, মোহ, নারী, গান-বাদ্য, চাক-চিক্য এদের চোখের উপর আঁধারের পর্দা সৃষ্টি করে রেখেছে। কাউকে একটি নিদশর্ণ বললেই বুঝতে পারে সত্যের পথকে, আবার কাউকে হাজারটা নিদর্শণ দিলেও বুঝতে চায় না। প্রগতিশীলগণ এদলেরই একটি বিরাট অংশ। প্রগতিশীলতার নামে এরা বেহায়াপনা, নারী-পুরুষের অবাধ মিলন, মদ্যপান, নৃত্য ইত্যাদি অশ্লীর কুরূচিপুর্ণ কাজে ব্যস্ত। এরা সত্যের বাণীকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনা, বরং উপহাস করে থাকে সত্যের বাণীকে। এদের অন্ধত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
# (এদের অবস্থা হচ্ছে) এরা (কানেও) শোনেনা, (চোখেও) দেখেনা, (মুখ দিয়ে) কথাও বলতে পারে না, অতএব এসব লোক (সঠিক পথের দিকে) ফিরে আসবে না। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮}
এধরণের প্রগতিশীলরা দুনিয়াবী স্বার্থে নিজেদের মনগড়া মতামত দিয়ে কোরআন-হাদীসের বিরোধীতা করতে চায়। এদের সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
# মনগড়া মত ও ভিত্তিহীন কিয়াস নিন্দনীয়। {সহীহ আল-বুখারী, অনুচ্ছেদ-৩০৭৫}
# দ্বীনের ব্যপারে তোমাদের মনগড়া মতামতকে নির্ভরযোগ্য মনে করো না। {সহীহ আল-বুখারী/ ৬৭৯৭, আনাস (রাঃ)}
এদের অনেকেই ভিত্তিহীন দুনিয়াবী মত দ্বারা গান-বাজনা-বাদ্যযন্ত্র, ব্যভিচার, মদকে হালাল মনে করে। এ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
# আমার উম্মতের মাঝে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্য যন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। {সহীহ আল-বুখারী/ ৫১৭৬- আ, র, ই, গা, আশ'আরী (রাঃ)}
পরিশেষে বলতে চাই, হে মুসলিম সম্প্রদায়, এসো সত্যের পথে; এসো আলোর পথে। আর কতকাল ঘুরবে তুমি আঁধারের পিছে। এসো ভাই জীবনকে সাজাই সুন্দরভাবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামকে মেনে চলি পূর্ণাঙ্গভাবে। আমাদের ভিশন হোক ইসলাম, আমাদের মিশন হোক প্রভুর ইবাদত ও সত্যের পথে আহ্বান। কেননা মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন-
# তুমি বলো সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা (চিরতরে) বিলুপ্ত হয়ে গেছে; অবশ্যই মিথ্যাকে বিলুপ্ত হতে হবে। {সূরা বনী-ঈসরাইল, আয়াত-৮১}
মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবাইকে সত্যের পথে পরিচালিত করুন। আমীন।
>> অট- টপিকটি যে কেউ যে কোন ফোরাম/ব্লগ/ অলাভজনক প্রকাশনায় দিতে পারেন, অনুমতি বা লেখকের নাম উল্লেখের কোন প্রয়োজন নেই। মহান আল্লাহ তা'য়ালা জানেন আমরা কে কি করছি।