টপিকঃ ২০টি সেঞ্চুরীর অপমৃত্যু
১৯৯৯ বিশ্বকাপ। সুপার সিক্সে উঠতে হলে জিততেই হবে। প্রতিপক্ষ কেনিয়া। খর্বশক্তির, কিন্তু অগ্রাহ্য করা যাচ্ছে না। ১৯৯৮ সালে নিজেদের মাটিতে কেনিয়ার বিপক্ষে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদও আছে ভারতীয় দলের। তা ছাড়া আগের ম্যাচেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ রানে হেরে যাওয়ার ক্ষত তখনো দগদগে। প্রথম রাউন্ডেই বিদায়ের আশঙ্কায় কাঁপছে পুরো দেশ।
পিতৃশোকাতুর শচীন টেন্ডুলকার যখন মাঠে নামলেন, চেহারায় শোকের রেশ। শোককে শক্তিতে পরিণত করে কী দুর্দান্ত ইনিংসটাই না খেললেন! ১০১ বলে ১৪০! ১৬ চার, ৩টি ছਆা। ক্যারিয়ারের ২২তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ব্যাট উঁচিয়ে তাকালেন আকাশে। স্বর্গীয় পিতার উদ্দেশে উৎসর্গ করলেন সেঞ্চুরি।
ব্রিস্টলের কাউন্টি গ্রাউন্ডের মাঠে খেলতে নামলে ওই স্নৃতি টেন্ডুলকারকে নাড়া না দিয়ে পারে? শোকে কাতর এক পুত্রের প্রয়াত পিতার জন্য কিছু করে দেখানোর তাড়না থেকে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি! এ তো ক্রিকেটীয় রৃপকথা! ওটাই ছিল এ মাঠে টেন্ডুলকারের প্রথম ওয়ানডে, পরশুরটি ছিল সম্ভবত এ মাঠের শেষ। এর মাঝে আরও একটি ওয়ানডে খেলেছেন এখানে। ২০০২ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই ম্যাচে করেছিলেন ১১৩ রান।
ব্রিস্টল দুহাত ভরে দিয়েছে। এবার দিল না। কেড়ে নিল নির্মমভাবে। অথচ কী দুর্দান্তই না খেলছিলেন! প্রথম ওয়ানডেতে ব্যর্থ হওয়ার পর রানক্ষুধা আরও তীব্র হবে, জানাই ছিল। শুরু থেকেই চড়াও হলেন। কিন্তু নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছেই অস্থির। ৯৩ রানে কলিংউডের অফ স্টাম্পের একটি ডেলিভারি লেগে পাঞ্চ করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড়। পরের বলেই প্যাডেল করতে গিয়ে আবারও মিস। ৯৬ রানে ওই কলিংউডের বলে উড়িয়ে মারতে চাইলেন। বল উঠে গেল আকাশে। ভাগ্য ভালো, পড়ল নো-ম্যানস ল্যান্ডেই।
৯৯ রানে টেন্ডুলকার। প্রস্তুত দর্শক। ৪২তম ওয়ানডে সেঞ্চুরির প্রত্যক্ষদর্শী হতে। ফ্লিনটফের বাউন্সার। ডাক করতে চাইলেন। গ্লাভসে লাগল নাকি আর্ম-গার্ডে, বোঝা গেল না। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে বল লুফে নিলেন উইকেটকিপার প্রিয়র। জোরালো আপিল। আম্পায়ারের ঘাতক তর্জনী ঘোষণা করল মৃত্যুদন্ড। টেন্ডুলকারের যেন বিশ্বাসই হতে চাইল না! রিপ্লে থেকেও পরিষ্ককার হলো না−বল লেগেছে কোথায়। এ ক্ষেত্রে সংশয়ের সুবিধা ব্যাটসম্যানের পক্ষেই যাওয়ার কথা। আইন তা-ই বলে। গেল না। ট্রেন্টব্রিজ টেস্টেও ৯১ রানে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের বলি হয়েছিলেন। এখানেও হলেন কি না−সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
সেঞ্চুরির সংখ্যা না বাড়লেও নার্ভাস নাইনটিজে আউট হওয়ার রেকর্ডটিকে কিন্তু এক ধাপ এগিয়ে নিলেন তিনি। সব মিলে ১৩ বার। সেঞ্চুরির মতোই এখানেও নিকটতম ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ কেউ নেই! ৭৮টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির মালিক কদিন আগেই বেলফাস্টে নব্বইয়ের ঘরে আউট দুবার। এর একবার ছিল ওই ৯৯-ই! ওয়ানডেতে ৯৯-এ দুবার আউট হওয়ার রেকর্ড আছে জয়াসুরিয়ারও। কিন্তু এত কম সময়ের ব্যবধানে তা নয়।
ওয়ানডেতে নার্ভাস নাইনটিজের সংখ্যাটি যেমন ‘আনলাকি’তে গিয়ে ঠেকল, টেস্টে তা কিন্তু ‘লাকি’ই! সাত। এটা জানা থাকলে সবচেয়ে বেশি আফসোস সুনীল গাভাস্কারেরই হওয়ার কথা। টেন্ডুলকারের ১০০টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখছেন যিনি, ২০টি সেঞ্চুরির অপমৃত্যু তাঁকে তো পীড়া দেবেই!
উৎসঃ প্রথম আলো
কৃতজ্ঞতাঃ এস এম মাহবুব মুর্শেদ, অরূপ কামাল