ধিক নিজেকে। এত চমৎকার একটা টপিক চোখে পড়ল না?!!??
আমার অবস্থা অনেকটা শামীম ভাইয়ের মত। কিন্তু সত্যিকার অর্থে প্রেম করেছিলাম দেড়টা। দেড়টা!?? সে আবার কী জিনিস? তাহলে বলেই ফেলি।
কলেজ পাস করে দুই বন্ধু মিলে ভার্সিটি এডমিশন দিলাম। মোটামুটি মানের স্কোর করে পাশ করলাম, দুজনেই। ঠিক করলাম একই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হব। এর মাঝে আমাকে আবার ঢাকার বাইরে যেতে হল। ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। একদিন ইমাম - আমার সেই বন্ধু ফোন দিয়ে জানাল একটা মেয়ের সাথে ওর দেখা হয়েছে। মেয়েটা চমৎকার অকপট, সুশ্রী আর মেধাবীও বটে। যাইহোক, ঢাকায় যখন ফিরলাম তখন আবার ইমাম ঢাকায় নেই। কী আর করা, ভর্তি কাজ শুরু করলাম। একদিন ডিপার্টমেন্ট গেলাম ভর্তির কাজেই। কিন্তু হায়, আয়ের সনদপত্র নেই সাথে। এটা আবার কী জিনিস? দু’একজনকে জিজ্ঞাস করে জানলাম এটা আনতে কলা ভবন যেতে হবে। প্রচন্ড গরমে মেজাজ হল খারাপ। এরই মাঝে দেখি, একটা মেয়ে আমাকে বলছে, “তুমি কি কলা ভবন যাবে? আমার জন্য একটা আয়ের সনদপত্র আনতে পারবে? আমি টাকা দিয়ে দিব”। আহা! মেজাজটা যা খারাপ হল না, কি আর বলব। তাকিয়ে দেখি দেখতে বেশ সুশ্রী আর চোখটা কেমন জ্বলজ্বলে। বুঝলাম চেহারার দেমাগ, তাই আমাকে বয়-বেয়ারা বানাতে চায়। কোন উত্তর না দিয়ে নিজের রাস্তায় চলে গেলাম।
ভর্তি হয়ে ক্লাশ শুরু হতে দেরি তাই ঘুরতে গেলাম। ফিরে এসে প্রথম যেদিন ক্লাশ সেদিন ইমাম বলল, “তোকে যে মেয়েটার কথা বলেছিলাম, ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। আমরা কিন্তু খুব ভালে ‘দোস্ত’ হয়ে গেছি”। একি! এ দেখি সেই আয়ের সনদপত্রওয়ালা মেয়ে। কি আর করা। হল পরিচয়, করলাম দোস্তি। ক্লাশ চলছে, চুটিয়ে নোট করছি, গ্রুপ ডিসকাস করছি, লাইব্রেরী ঘাটছি। এরই মাঝে এল গ্রীষ্মের ছুটি। ঘুরতে গেলাম খুলনা। ইমামকে ফোন দেই, বেটা ফোন ধরে না। দিলাম জ্বলজ্বলে চোখের মেয়েটাকে। না, ফোনে কোন প্রেমালাপ হয়নি। ফোন, ইন্টারনেট, চ্যাট ইত্যাদি মাধ্যমে যে প্রেম তা আমার কাছে বড়ই ‘খ্যাত’।
ঢাকায় এলে ভার্সিটি চসে বেড়ানো শুরু করলাম বন্ধুরা সবাই মিলে। ঠিক করলাম, সোনারগাঁ বেড়াতে যাব। বিধি বাম! জ্বলজ্বলে চোখের মেয়েটার বাবা করল হার্ট এ্যাটাক। ফলে সামাজিকতার খাতিরে যোগাযোগ গেল বেড়ে। দেখা গেল মেয়েটা ইমামের যতটা না বন্ধু তার চেয়ে বেশি বন্ধু আমার। একদিন ঘটল বিচিত্র ঘটনা। দু’জনে মিলে আলাপ করছি। আলাপের বিষয় প্রেম-বিয়ে। আমি বললাম বিয়ে করব না। ডাস্ট এ্যালার্জি আছে – মোটামুটি খারাপ পর্যায়ের, আবার ডেঙ্গু হয়েছিল স্কুল পড়ার সময়। মোটকথা, আমি রোগ বালাইয়ের একটা আখড়া। তার মানে বিয়ে করে কিছু অসুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়া। এরচে’ বিয়ে না করাই ভাল (যদিও তিনটে সন্তানের খুব শখ)। বলে, “শোন, তুই বিয়ে করবি, ওকে? তুই যেমন স্বাস্থ্যবান মানুষ, মোটামুটি ধরে নেওয়া যায় তোর প্রথম দুইটা বাচ্চা সুস্থ-সবল হবে। আর তিন নাম্বারটা যদি অসুস্থ হয় তাহলে আমাকে দিয়ে দিস, আমার কাছে থাকবে”।
হায়রে, কী ডায়ালগ। এ যেন ত্রাতা। আমার জন্য অলিম্পাস পাহাড় থেকে প্রেরিত কোন ডিয়েটি। ডায়ালগগুলো মাথায় ঘুরতে লাগলো মাসখানেক ধরে। নিজের মনে তা জাবর কাটতে থাকি। একদিন কী মনে করে ভালবাসার কথা বললাম। খেল প্রচন্ড নাড়া। কিছুদিন পর স্বাভাবিকতার ধারায় হয়ে গেল প্রেম।
প্রেম! আমি!? যে কি না বিয়ে করবে না?! কি করব ভাই? এভাবেই হয়। তাকেই বিয়ে করেছি। তবে আরও কিছু গল্প আছে। সময় পেলে আর একদিন বলব।
কত কি শিখতে ইচ্ছা করে। এখনও শেখা হলো না কিছুই।