টপিকঃ লজিক-৭
অনেকের ভিন্নমত থাকতে পারে, কিন্তু আমার মতে পৃথিবীর সবচে পরিস্কার লজিকের জীব হলো কাক। কারন কাক যখন খাবার লুকায় তখন নিজের চোখ বন্ধ করে রাখে এবং মনে করে যে অন্য কোন পাখি তাকে দেখছেনা। তবে আমার আর অর্নবের গল্প শোনার পর আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি যে আপনারা বলতে বাধ্য হবেন, “তোমাগো কাহিনী হুনলেতো, হালার কাউয়ারাও ফলিত পদার্থে পড়ার কনফিডেন্স পায়া যাইবো।”
কাহিনীটা ঘটেছিলো অর্নব, তুষার, সেতু আর আমার কক্সবাজার টুর এর সময়। টুরের প্রথম দিনেই ঘটলো অঘটন। সৈকতে গিয়ে সেতু আর তুষার(বেবী) এর ফট করে কারিনা কাপুর হওয়ার সাধ জন্মালো। তারা পরিনা কাপড় স্টাইল এ (ইউভা ছবির খুদা-হাফিজ এক্সক্লুসিভ) সৈকতে গোসল করার সময় অর্নবের মানিব্যাগ ছিলো বেবীর কাছে। সমুদ্র, বিবেগ(অর্নব) আর কারিনাদের ছেড়ে দিলেও রেখে দিলো বিবেগের, থুক্কু অর্নবের মানিব্যাগ। মানিব্যাগ হারিয়ে অর্নবের মনমেজাজ চরম খারাপ। বউ হারালেও মনেহয় মানুষের মন এতো খারাপ হয় না।
হোটেল এ ফিরে তাস পিটায় আর আড্ডা মেরে আমরা ঘুমাতাম গভীর রাতে। প্রথম দিন ঘুম থেকে উঠে দেখি বেবী নাই আর রুম এর দরজা হাট করে খোলা। অর্নবকে ঘুম থেকে জাগালাম। ও এই হাল দেখে ব্যাপক উত্তেজিত। একটু পর হেলিতে দুলিতে গান (ভালোবাসো কিনা বাসো বন্ধু... এই গানটা )গাইতে গাইতে বেবীর আগমন।
অর্নবঃ ‘কি ব্যপার বেবী? কোথায় গেসিলি?’
বেবীঃ ‘এই একটু হটেলের আশপাশ থেইকা ঘুইরা আসলাম।’
অর্নবঃ ‘দরজা খুলে রেখে গেসিস কেন? লাগায় রেখে যাবিনা? (অইত্তেন্ত বিরক্ত)’
বেবীঃ ‘(মুখ দিয়ে একটা অদ্ভুত আওয়াজ করে) ওওওও......আমি ভাবসি যে দরজা লক হইসে। ’
এই ঘটনার (পড়ুন দুর্ঘটনা) পর আমি আর অর্নব খুবি চিন্তিত হয়ে পরলাম। এইভাবে যদি বেবী দরজা খুলে রেখে বাইরে যাওয়া শুরু করে তাহলে বাকি যা আছে তাও হারাতে হবে। সেইদিন রাতে বেবী ঘুমানোর পর আমি আর অর্নব আধা ঘন্টা ধরে প্ল্যান করলাম। তারপর বেবীকে রুখতে, রুম এর চাবি নিজেদের বালিশ এর তলে নিয়ে ঘুমালাম। ফুল-প্রুফ প্ল্যান। এইবার বেবীর সাধ্য নাই যে, দরজা খুলে সাত সকালে পাড়া বেড়াইতে যেতে পারে। নিজেদেরকে ঘুমের মধ্যেও প্রচুর বাহবা দিলাম আমাদের এই অসাধারণ প্ল্যানের জন্য।
পরদিন সকাল বেলা। উঠে দেখি যে, আমাদের ফুল-প্রুফ প্ল্যান সাক্সেসফুল। বেবী বাইরে বের হতে না পারায় আবার শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। সেই যাত্রায় আর কিছু না হারিয়ে আমরা ঢাকায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিলাম।
এই ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর আমরা গেলাম বান্দরবান টুরে। এবার দলে সদস্য আরো বেশি। ছয় জন। গতবারের টুরে যারা ছিলো না , তাদেরকে আমি আর অর্নব, আমাদের বেবীকে আটকে রাখার জন্য যে দূর্ধষ্য প্ল্যান করেছিলাম, সেই ঘটনাটা বলছিলাম। আমাদের গল্প শেষ হলে বন্ধুবর শুভ্র হাসতে হাসতে আমাদের বললো, ‘দরজার লকতো ভিতর থেকে চাবি ছাড়াই খোলা যায়।’ এই কথা শুনে বেবীর মুখ ঝুলে গেলো, ‘আয় হায়, এই কথাটা আমার মাথার আসে নাই ক্যান?’ আমার আর অর্নবেরও মুখ ঝুলে গেলো। আমি অর্নবকে বললাম, “ আসলেইতো। আমরা কক্সবাজারে রুমের চাবি নিয়া ঘুমাইসিলাম ক্যানো? দরজার ফিক্সড লকতো রুমের ভিতর থেইকা সবসময় চাবি ছাড়াই খোলা যায়। ”
আমাদের ভাগ্য অত্যন্ত সুপ্রসন্ন যে, বেবী লজিকালি আমাদের চেয়েও অনেক বেশী সাউন্ড(??!!)। বেবীর সাউন্ড লজিকের কারণে, আমি আর অর্নব, আমাদের দুর্ধষ্য ফুলপ্রুফ প্ল্যান(!!) থাকা সত্ত্বেও সে যাত্রা কোন কিছু না খুইয়ে সহিসালামত ঢাকায় ফেরত আসতে পেরেছিলাম।