টপিকঃ তামাকচাষ পরিবেশের জন্য ভালোঃ পরিবেশ অধিদপ্তর গবেষণা প্রতিবেদন
পরিবেশ অধিদপ্তরের এক গবেষণা প্রতিবেদন হতে দেখা গেছেঃ
তামাক চাষের কারণে অনেক অনাবাদি
জমি চাষের আওতায় এসেছে।... এটি চাষাবাদের একটি প্রচলিত পদ্ধতি এবং তামাক চাষ এলাকায় জনপ্রিয় হচ্ছে। 'প্রতিকেজি তামাক উৎপাদনের জন্য প্রায় ৭০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। অপর দিকে প্রতিকেজি ধান উৎপাদনে প্রায় ৩৫০০ লিটার পানি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। সার ও কীটনাশক কম লাগে দাবি করেও তামাক চাষের পক্ষে প্রতিবেদনে তথ্য দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, অন্যান্য কৃষি ফসলের মতো তামাক চাষে কম পরিমাণ সার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে।... তবে তা ধান, সবজি বা অনেক ফসলের অনুপাতে কম।কীটনাশক প্রসঙ্গে বলা হয়, 'তামাকের জন্য আলাদা কোনো মানের বা অধিক বিষাক্ততার কীটনাশক ব্যবহারের বিষয়টির ওপর কোনো তথ্য পরিদর্শনকালে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া তথ্য পাওয়া গেছে, তামাকের তুলনায় অন্যান্য সবজিতে ৭ গুণ, ধানে প্রায় ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি কীটনাশক ব্যবহার হয়।'
তামাক চাষের জন্য স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা হয় না উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, 'পরিদর্শনকালে পুরুষ ও নারী কৃষকদের সমানভাবে তামাক পাতা ওঠানো, জমা করা, সাজানো, শুকানোর কাজ তদারকি করাসহ সার্বিক কাজ করতে দেখা গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে কাউকেই মারাত্মক কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যার বিষয়ে অভিযোগ করতে দেখা যায়নি। তামাক চাষ গড়ে ১২০ দিনব্যাপী হয়ে থাকে। এর মধ্যে পাতা পরিপক্ব হয়ে গাছ থেকে আহরণের সময় হেক্টরপ্রতি পাঁচ দিন এবং প্রতিদিন চার-পাঁচ ঘণ্টা। এই সময়ে সবুজপাতা আহরণকালে হাতে পাতার কষ লেগে হাতে কালো দাগ হয়। এই দাগ সাবান বা স্থানীয়ভাবে সোডা/মাটি দিয়ে ধুলে উঠে যায়। এ ছাড়া পাতার ওপরে থাকা রোঁয়াতে অনেক সময় এলার্জিক সিমটম দেখা যায় বলে তামাকচাষিরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো শারীরিক সমস্যা বা রোগব্যাধির বিষয়ে কোনো চাষি বা শ্রমিকের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বার্জাস বা গ্রিন টোব্যাকো সিকনেস জাতীয় কোনো রোগের বিষয়ে কোনো চাষি বা শ্রমিকের কাছ থেকেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।'
প্রতিবেদনের আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, 'তামাক কোম্পানিগুলো চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কাঁচামাল ক্রয় করে এবং উৎপাদন খরচ বিবেচনায় লাভ নিশ্চিত করে। বিধায় চাষিরা অর্থকরী ফসল হিসেবে তামাক চাষের প্রতি আগ্রহী হয়।'
http://www.dailykalerkantho.com/?view=d … mp;index=0
এর বিরুদ্ধে কিছু লোক বলেছে যেঃ
তামাক উৎপাদন ও এর ব্যবহার দুটোই স্বাস্থ্য ও পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনে। তামাক চাষে জমির উর্বরাশক্তি হ্রাস পায়। কমে আসে ফসলি জমি। প্রত্যক্ষ ধূমপানে তো বটেই, পরোক্ষ ধূমপানেও শিশুসহ বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ধূমপান ও তামাক চাষ দুটোই বন্ধ করা দরকার। দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তামাকের চাষ বাড়ায় তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ও কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. জহুরুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ধান, গম ও সবজির তুলনায় তামাক মাটির অনেক
গভীর থেকে খাদ্য নেয়। ফলে মাটির উর্বরাশক্তি দ্রুত দুর্বল হয়ে যায়। পরে এ মাটিতে অন্য ফসল চাষ করতে হলে অধিক মাত্রায় সার ও খাবার দিতে হয়। তিনি গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, অপরিকল্পিত ও নিবিড় চাষাবাদের কারণে এরই মধ্যে দেশের মাটিতে ছয় হাজার কোটি টন জৈব সারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ৩৩ হাজার হেক্টর জমির স্বাস্থ্যে দেখা দিয়েছে নানা রোগ।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান বলেন, 'তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য দুইভাবে ক্ষতি করে। ধূমপানে ফুসফুসের ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি রোগ হতে পারে। যারা গুল, জর্দা বা খৈনি ব্যবহার করেন, তাদের মুখ ও খাদ্যনালির ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। এ ছাড়া তামাক শুকানোর জন্য আগুন জ্বালালে যে ধোঁয়া উৎপন্ন হয়, তা গ্রহণেও মানবস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে।' তিনি আরো বলেন, নারী ও শিশুরা পরোক্ষভাবে ধূমপানের কুফলের শিকার হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ সাঈদ আলী বলেন, 'আমরা কখনোই কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করি না_বরং সব সময়ই নিষেধ করি।' তিনি বলেন, তামাক চাষের কারণে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি হয়। ভর্তুকিমূল্যে তামাকচাষিদের সার দেওয়া হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, 'আমরা তামাক চাষে সার দিই না। তবে অসৎ কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তারা (তামাকচাষিরা) সার সংগ্রহ করলেও করতে পারেন।'
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের অভিযোগ, তামাক চাষকে উৎসাহিত করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে তামাক চাষের ক্ষতির বিষয়ে না লিখে পজিটিভলি লেখা হয়েছে, যা পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্ষমতার অপব্যবহারের শামিল। তিনি অভিযোগ করেন, 'গবেষণা প্রতিবেদনটি পড়লে পরিষ্কার বোঝা যায়, তারা কারো স্বার্থে কাজ করছে। বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যখন তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে সোচ্চার, তখন বাংলাদেশে চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে। বিষয়টি রহস্যজনক।
একইভাবে কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায় বলেন, 'পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি করছে তামাক। জনসংখ্যাবহুল এ দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টাকে প্রতিহত করে কোনোভাবেই তামাক চাষকে উৎসাহিত করা উচিত নয়।'
উবিনীগের (উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালক ও তামাকবিরোধী নারী জোটের সংগঠক ফরিদা আখতার বলেন, 'সরকারের পাশাপাশি যখন সামাজিক সংগঠনগুলো তামাক চাষের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তখন তামাক চাষের পক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাফাই সত্যিই প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। খাদ্য ঘাটতির এ দেশের ফসলি জমিতে তামাক চাষ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অত্যাবশ্যক।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আগে শুধু চরাঞ্চলে তামাকের চাষ হতো। কিন্তু এখন তা কুষ্টিয়াসহ দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে। তিনি ফসলি মাটির সুরক্ষায় তামাক চাষ বন্ধের দাবি জানান।
এদিকে ডাবি্লউবিবি (ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ) ট্রাস্টের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৪ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৩৭ ভাগ মানুষ তামাক সেবন করে। আর তামাকদ্রব্য সেবনজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় বছরে অন্তত ৫৭ হাজার মানুষ। এ ছাড়া বছরে তিন লাখ ৮২ হাজার মানুষ শারীরিকভাবে অক্ষম হয়। তিনি জানান, ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে 'হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার' ২০০৭ সালে আরেকটি গবেষণা চালায়। গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, তামাক সেবনকারী ব্যক্তিদের ২৫ শতাংশও যদি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সুস্থভাবে বাঁচতে চায়; তাহলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের খরচ হবে বছরে ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
'গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০০৯'-এর উদ্ধৃতি দিয়ে সুজন জানায়, বাংলাদেশের ৪৩ ভাগ মানুষ তামাক সেবন করে এবং এ হার বাড়ছে। সে হিসাবে শুধু চিকিৎসা খাতেই আর্থিক খরচের পরিমাণ আরো বাড়ে। তিনি চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তামাক সেবনজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। তিনি এনবিআরসহ সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি সংস্থার তথ্য তুলে ধরে দাবি করেন, তামাকজাত পণ্য থেকে সরকার বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা আয় করলেও বর্তমানে এ খাতে ক্ষতি পঁচিশ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
http://www.dailykalerkantho.com/?view=d … mp;index=1
তাই এখন হতে ভাত খাওয়া ছেড়ে দিয়ে খাই তামাক , আর বাচাই পরিবেশকে