অয়নবাংলা লিখেছেন:যে সকল মানুষের দুই বেলা খাওয়ার যোগ হয় না তাদের জন্য সাধারনত আপনি বা আমি একা তেমন কিছু করতে পারব না। এটা করতে হবে গভমের্ন্টকে, তারা এই সকল মানুষদের উপযুক্ত শিখ্খা, কাজের ব্যাবস্থা, ইত্যাদি নিশ্চয় করবে আর তার জন্য দরকার টাকা। তারা এটার জন্য টাকা পাবে কই? আপনি বা আমি এমনি এমনি দিব না। আপনার নিশ্চয় জানা আছে গভমের্ন্টের ফাইনেন্স হচ্ছে ট্যাক্স। কম্পিউটারের উপর ট্যাক্স উঠায় দেওয়া মানে একটা বড় ট্যাক্সের % কমে যাওয়া। মানে এদের বন্চিত করা।
প্রথমত:
আসলে ডেটা দরকার। তুলনামূলক ডেটা .... গত কয়েকবছরে মোট কতটাকার কম্পিউটার সামগ্রী বিক্রয় হয়েছে --> তারপর এর সাথে একটা কাল্পনিক ১০% ট্যাক্স যুক্ত করে তারপর দেখা মোট কত টাকা ট্যাক্স হিসেবে সরকার পেত (যদিও বাস্তবে করারোপ করলে বিক্রয় কমে যেত কিছু অংশ)। এরপর সেটাকে তুলনা করতে হবে, সরকারের মোট রাজস্ব আয়ের সাথে ... সেটা মোট রাজস্ব আয়ের কত অংশ হতে পারত।
এরপরে আরও তুলনা করতে হবে, সেই রাজস্ব মোট রাজস্ব ফাকির কত অংশ। যদি এমন হয়, দূর্নীতির কারণে রাজস্ব ফাঁকির পরিমান এর চেয়ে বেশি, তাহলে নতুন ও অজনপ্রিয় করারোপ না করে জনপ্রিয় দূর্নীতি দমন করাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত হবে।
যদি দেখা যায়, আসলেই কম্পিউটার সামগ্রী থেকে আসা রাজস্ব দূর্নীতির কারণে হারানো রাজস্ব থেকে অনেক বেশি, শুধু তবেই আপনার সাথে একমত। দ্বিমত হওয়ার কারণ, আমার শক্ত ধারণা, তুলনাটা উল্টা হবে।
দ্বিতীয়ত:
কম্পিউটার ব্যবহার করে মানুষের যে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, তার ফলে সেই দক্ষ মানুষ সরকারের রাজস্ব উপার্জনে অনেক বেশি অবদান রাখবে। ... কম্পিউটারের উপরে শুল্ক মওকুফ করার পেছনে এটাকেই প্রধান কারণ ধরা হয়।
তৃতীয়ত:
রাজস্ব যে দারিদ্র বিমোচনেই সরকার লাগাবে তার নিশ্চয়তা কোথায়? হয়ত নৌবাহিনীর জন্য আরেকটা ফ্রিগ্রেট কিনবে। লক্ষ্য করুন, এ বছর সেনাবাহিনীর বাজেট প্রায় ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই.. ঐ লাইনের চিন্তাটা একটু ব্যাপক হয়ে যাবে।
দারিদ্রের মূল কারণ কি টাকার অভাব? মনে হয় না... সীমাহীন দূর্নীতিই এর কারণ। নতুবা, এ পর্যন্ত যতগুলো দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচী নেয়া হয়েছে তাতে দেশে দারিদ্রের গ্রেট গ্রান্ডফাদারও থাকার কথা না।
অয়নবাংলা লিখেছেন:আবার গভমের্ন্টে যদি এই ট্যাক্স ব্যবহার করে কলেজ, উইনিভার্সিটি গুলো কে কমপিউটার দেয় উপকারটা কয়জনের হবে? বাসায় হয়ত একজন চ্যাট করত, তার বদলে আনেকজন শিখতে পারবে।
ইউনিআর্সিটির ছেলেরাই খালি শিখবে? অন্যরা কি দোষ করল?
আমার যে ফিল্ড ওয়র্কর আছে, মাঝে মাঝে অফিস/সেন্টারে বা অন্য কোন বাসায় গিয়ে চেয়ে চিন্তে কম্পিউটারে কাজ করা শেখে, তাঁর মত লোকগুলো কোথায় যাবে?
সামান্য এস.এস.সি/এইচ.এস.সি/ ডিগ্রি পাশ একটা কর্মোদ্যম ছেলে (মেজরিটি কি ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা নাকি এরা... ভেবে দেখার অনুরোধ রইল) আগে স্বপ্ন দেখতে পারত কোন রকমে একটা কিছু শিখে স্বাধীন ব্যবসা করবে (শেষ পর্যন্ত করদাতা হবে!!) ....সেটাতে উৎসাহিত হওয়ার কিছু কি অবশিষ্ট থাকলো?
অয়নবাংলা লিখেছেন:শামীম লিখেছেন:আপনি কম্পিউটার সায়েন্সে লেখাপড়া করছেন.... নিশ্চয়ই ব্যাপারটা আপনার অজানা নয়। তুলনামূলক চিত্রটা অনেকটা এরকম...........
যদি ও আমি কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ছি না তবু আপনার দুইটা চিত্র ই বুঝতে পারলাম। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। ২ টা চিত্রের(হাই-স্পেসিফিকেশন,লো-স্পেসিফিকেশন) বেশিরভাগ মানুষ এটা বিলাসীতা হিসাবে ব্যাবহার করছে। হাতেগোনা কয়েকজন প্রোগরামিং করছে। কাজেই আপনার সাথে দ্বিমত পোষন করতে বাধ্য হচ্ছি।
আপনার সাথে একমত। হাতে গোনা কয়েকজন প্রোগ্রামিং করছে। এটাই তো হওয়া উচিৎ। কয়েকলক্ষ কম্পিউটার ব্যবহারকারীর জন্য কয়েকজন প্রোগ্রামার থাকবে সেটাই তো স্বাভাবিক। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ছাড়াও কত যে ক্ষেত্র আছে ... সায়েন্স ছাড়াও অনেক প্রায়োগিক দিক আছে। আর ঐ প্রায়োগিক ব্যবহারকারীগণের কথাই হচ্ছে এখানে -- ওরাই মেজরিটি।
একটা বড় ক্ষেত্র কম্পোজিং ও পাবলিশিং। এটার জন্য প্রোগ্রামার দরকার নাই... প্রাপ্ত সফটওয়্যার দিয়েই করা যায়।
আমার ফিল্ডের একটি ছেলে ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়ে গেল কম্পিউটার শিখতে (!!)। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি কম্পিউটার শিখবা (!!)? বলে কি কি প্রোগ্রামিং ইত্যাদি। আমি বলেছিলাম... এখনই ভর্তি পাল্টাও। শুধু ওয়র্ড আর এক্সেল চালানো শিখো। --- এটাই বাস্তবতা। ছেলেটি এখন অফিস এসিস্টেন্টের চাকরী করছে
।
মেজরিটি কাজের জন্য অফিস ইউটিলিটি চালানো জানাই যথেষ্ট। প্রোগ্রামিং খুব জরুরী একটা বিষয় হলেও এটা সীমিত লোকজনের মধেই সীমাবদ্ধ।
অয়নবাংলা লিখেছেন:শামীম লিখেছেন:সরকারের কাজ হল, জনগণের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা বা তেমন ক্ষেত্র সৃষ্টি করা................
খুব ভাল একটা কথা বলেছেন। এটা ম্যাস পোপুলেশন এ করতে হবে। এই জন্য কলেজ, উনিভার্সিটিতে কম্পিউটার বাড়াতে হবে। যাতে অনেক মানুষ একসাথে উপক্রিত হয়।
মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কিভাবে মানুষ উপকৃত হয়েছে? বেশিরভাগ মানুষই তো গ্যাজায়.. তাই না? -- সেটাও সামাজিকতার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমান পর্যন্ত জরুরী। তারপরেও এই তথ্য প্রবাহের ফলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি কিভাবে হয়েছে তা বিশ্লেষন করতে হলে একটা কয়েক ভল্যূয়মের বই লেখতে হবে।
একই ভাবে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার দ্বারা যে কত কিছু করা সম্ভব তা উদাহরণ সহ বলতে গেলে বই রচনা করতে হবে। দেখি, আপনার জন্য কিছু উদাহরণ দেই ....
ই-গভর্নেন্স একটা ছোট্ট কথা কিন্তু অর্থটা ব্যাপক।
এখন পরীক্ষার ফলাফল জানার জন্য অনেক কর্মঘন্টা ব্যয় করে রাস্তার ট্রাফিক জ্যাম বাড়িয়ে দিয়ে কোথাও যেতে হচ্ছে না। ইন্টারনেটে কয়েক ক্লিকেই ৫/১০ মিনিটে সব জানা যাচ্ছে। --- এই ধরনের উপকার কি কম্পিউটারের ব্যাপক প্রসার ছাড়া সম্ভব? (-- প্রোগ্রামিং জানার দরকার নেই এজন্য।)
যদি সমস্ত জমির ডকুমেন্ট অনলাইন হয়। তারপর কয়েক ক্লিকেই আপনার জমির পর্চা, রেকর্ডস সব পেয়ে যান... আর ওটার প্রিন্টআউট দিয়ে কাজ চালানো যায়। তবে তহশীল অফিসের লোকজন পয়সা খাবে কিভাবে। এক কাজের জন্য ১০ দিন দৌড়াতেও হবে না। সব মিলিয়ে অনেক কর্মঘন্টা বাঁচবে, যা ট্যাক্স-এ প্রাপ্ত সামান্য কয়েকটাকার চেয়ে অনেক বেশি উপকার করবে দেশের। (-- প্রোগ্রামিং জানার দরকার নেই এজন্য।)
টেন্ডার ডকুমেন্টস সবই অনলাইন। যদি জমার প্রক্রিয়াও অনলাইন হয়... তবে টেন্ডারবাজদের ক্ষেত্র কমে যাবে। আর টেন্ডারবাজি না করলে অস্ত্র কেনার পয়সার সোর্সও কিছুটা বন্ধ। এজন্যও কম্পিউটারের এবং এটার ব্যবহারকারীর প্রসারের দরকার রয়েছে।(-- প্রোগ্রামিং জানার দরকার নেই এজন্য।)
কোন জায়গায় যাওয়ার আগে, অনলাইন থেকে ম্যাপটা দেখে নিলাম। ভোগান্তি কমে গেল। (সবসময় জাপানে কাজে লাগছে) (-- প্রোগ্রামিং জানার দরকার নেই এজন্য।)
কোন একটা অফিসিয়াল ব্যাপারে জানতে, সেখানকার ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ফর্ম সব ডাউনলোড করে নিলাম। পরবর্তীতে কাজ অনেক সহজ হয়ে গেল। (-- প্রোগ্রামিং জানার দরকার নেই এজন্য।)
একটা নতুন কসমেটিকস/ঔষধ/সেচযন্ত্র কিনবেন। কোনটা ভাল? তুলনামূলক ভাবে উপযুক্ত? স্পেসিফিকেশন? দাম? .... সবই জানলেন। নবাবপুরে ঘুরাঘুরি করে চান্দি গরম করার দরকার নাই। ইন্টারনেটেই অর্ডার দেন। (-- প্রোগ্রামিং জানার দরকার নেই এজন্য।)
....
...
..
বললামই তো একটা বই রচনা করা যাবে। যা অনুমান নির্ভর নয়.... অন্য অনেক জায়গার উদাহরণ দেয়া যাবে।
কাজেই এসকল ব্যাপারে অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসবে। যা এখন দেয়া কর ছাড়ের সুফল হিসেবেই আসবে। করারোপ করা এই প্রক্রিয়াগুলোকেই পিছিয়ে দেবে।
(মূল ইস্যূ যদি বিলাসী সামগ্রী হয়... তাহলে শুধু হাই-স্পেসিফিকেশন ওয়ালা পেরিফেরিয়ালস.. যেগুলো গেমিং ছাড়া অন্য কাজে লাগে না - ওগুলোতেই উচ্চহারে ট্যাক্স দেয়া যেতে পারে; কোনক্রমেই ঢালাও ভাবে কম্পিউটারের উপরে নয়।)