টপিকঃ বাংলার ফুল "মান্দার"
“মান্দার”
মান্দারের ইংরেজী নাম Indian coral tree আর এর বৈজ্ঞানিক নাম Erythrina variegeta বা erythrina orientalis. বইয়ের ভাষায় এর নাম পরিজাত আর আঞ্চলিক বা স্থানবেধে এর নাম মাদার, মান্দর, মন্দার, পালতে মান্দার, রক্তমান্দার ইত্যাদি বলতে শোনা যায়। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, গাছ কিন্তু সেই একটাই।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা তার “ফুলগুলি যেন কথা” বইতে এই মান্দার সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন:- “ইরিত্রিনা ইণ্ডিকা ( Erythina Indica ) বা পরিজাত মাঝারি আকারের দেশী গাছ। গায়ে কাঁটা থাকে। পত্রমোচী। বসন্তে ফুল ফোটে। মঞ্জরীতে অনেকগুলি ফুল থাকে। ফুল শিমফুলের মতো, ১০ সে.মি. লম্বা, গাঢ় লাল। বীজ থেকে সহজেই চারা জন্মে। ডাল কেটে লাগালেও বাঁচে।”
মাঝারি আকারের আকারের এই গাছটি সাধারণত ১৫ মিটারের মত উঁচু হতে দেখা যায়। গাছের গায়ে কালো-কালো গোটা-গোটা কাঁটা থাকে। গাছের গোঢ়ারদিকের কাঁটাগুলি গাছ বড় হলে ঝরে যেতে দেখা যায় অনেক সময়। অনেকটাই পলাশ ফুলের মত দেখতে এই ফুলগুলি টকটকে লাল। আজ পর্যন্ত কোথাও এই গাছ বাগানে কেউ লাগিয়েছে বলে শুনুনি, কিন্তু পৌরানীক কাহিনীতে জানা যায় “মান্দার স্বর্গের ফুল, মর্ত্যের রাজা শ্রীকৃষ্ণ স্বর্গের রাজা ইন্দ্রের কাছ থেকে অনেকটা জোরজবরদস্তি করেই এই পরিজাতকে তার মর্ত্যের বাগানে এনে লাগান।"
দেখতে যেমন পলাশের মত তেমনি ফাগুন হাওয়ার পলাশ যখন ডালে ডালে আগুন ঝরায় তখন পরিজাতও ফুটতে শুরু করে অবহেলা গায়ে না মেখে। গাছের পাতা ঝরে যায় ফুলফোটার সময় হলেই। পাতাহীন গাছে অবহেলায় ফোটে টকটকে লাল পরিজাত। কি যায় আসে যদি তুমি আদর করে না রাখলে বাগানের পার্শে। রবীন্দ্রনাথ কিন্তু আদর করে বলেছেন:
“ফাগুন হাওয়ায় রঙে রঙে
পাগল ঝোরা লুকিয়ে ঝরে
গোলাপ জবা পারুল পলাশ
পরিজাতের বুকের পরে।”
অবহেলায় বেড়ে উঠা কাঁটাযুক্ত এই গাছটি গ্রাম অঞ্চলে আজো যত্রতত্র চোখে পরে। আর আমাদের ঢাকা শহরে একে খুঁজে পাওয়া দুঃষ্কর। অবশ্য গতবছর রামপুরা টিভি সেন্টারে দুটি মান্দার গাছে ফুল ফুটতে দেখেছি, সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়। কিছুদিন আগে তেঁজগায়ের ভূমিরেজেস্ট্রি অফিসের গেটে বিশাল একটি পরিজাত গাছে প্রচুর ফুল ফুটতে দেখছি। তাছাড়া আমেরিকান এম্বাসির সামনে কয়েকটি মান্দার গাছে প্রতিবছরের মত এবছরও ফুলফুটেছে।
মান্দারের বিচি দেখতে অনেকটাই তেঁতুলের মতোই। তেঁতুলের চেয়ে একটু বড় আর গোটা গোটা।
পরিজাত খুই নরম কাঠের গাছে হওয়াতে তেমন ভাবে কোথাও এর কাঠের ব্যবহার নেই। ইদানিং গাছের নরম অংশ কাগজ তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে।
সমস্ত প্রকার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে জানাচ্ছি কৃতজ্ঞতা দ্বিজেন শর্মার “ফুলগুলি যেন কথা” কে। ছবির খঁজে পেয়েঠি google এর সাহায্যে।