টপিকঃ মাহমুদউল্লাহ কেন আটে?
মাহমুদউল্লাহ কেন ৮ নম্বরে ব্যাট করেন—এটা বিশ্ব ক্রিকেটে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠল বলে! নাকি কালকের অনবদ্য সেঞ্চুরির পর তা হয়েই গেছে?
নিউজিল্যান্ডের সাংবাদিকেরা তো ভারতের বিপক্ষে আগের টেস্টে অপরাজিত ৯৬ দেখার পর থেকেই এ নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেছিলেন। ১৯৬ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর নেমে মাহমুদউল্লাহ যখন একের পর এক চোখ ধাঁধানো শট খেলতে শুরু করলেন, তাঁদের বিস্ময়টা আরও চরমে উঠল।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নও হলো এটা নিয়ে। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে যা বলে এসেছেন, মাহমুদউল্লাহর সেই একই উত্তর, তাঁর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, দল যা ভালো মনে করে তাই। যেখানেই ব্যাট করেন না কেন, দলে অবদান রাখতে পারলেই তিনি খুশি।
অবদান এর চেয়ে বেশি আর কী রাখবেন? অমোঘ নিয়তির মতো ধেয়ে আসছে ফলোঅন, দাঁড়িয়ে গেলেন বুক চিতিয়ে। ‘চিতিয়ে-টিতিয়ে’ শব্দগুলো মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ের সঙ্গে একেবারেই যায় না। একটু আগে ব্যবহূত ‘চোখ ধাঁধানো’ শব্দটাও যেমন তাঁর ব্যাট চালানোর সঙ্গে বেমানান মনে হচ্ছে। মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং চোখ ধাঁধিয়ে দেয় না, চোখে মায়াঞ্জন বুলিয়ে দেয়। তাঁর প্রিয় ব্যাটসম্যান মহেন্দ্র সিং ধোনি। ভেঙ্কট লক্ষ্মণ হলে বেশি মানাত। অফ সাইডে যতবার ড্রাইভ করলেন, তাঁকে তো ‘লক্ষ্মণ’ বলেই মনে হলো ততবার! অলক কাপালির পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন দৃষ্টিনন্দন ব্যাটসম্যান আর আসেনি।
কাজটা খুব কঠিন ছিল। দৃষ্টিনন্দন ৩০-৪০ রানে হতো না। করতে হতো বড় কিছু। সেঞ্চুরির চেয়ে বড় আর কী হয়! হয়, ডাবল সেঞ্চুরি হয়। মাহমুদউল্লাহ বলতেই পারেন, ওপরে ব্যাটিং করলে হয়েও যেতে পারত। টেলএন্ডাররা এসে গেছে, আমাকে তো একটু বেশি ঝুঁকি নিতেই হতো।
বলবেন না। আদ্যন্ত টিমম্যান বলতে যা বোঝায়, তা-ই। যে কারণে আগের টেস্টের ওই তিক্ত অভিজ্ঞতার পরও বলতে পারেন, ‘সেঞ্চুরি পাব না, এটা মনে হয়নি। টেলএন্ডারদের ওপর আমার আস্থা ছিল।’
আস্থা ছিল নিজের ওপরও। নইলে হাতে ৪ উইকেট বাকি, ফলোঅন এড়াতে প্রয়োজন আরও ১৫৮ রান—এ অবস্থায় নামার সময় ও কথা ভাবেন কীভাবে? ‘সত্যি বলছি, ফলোঅন এড়াতে পারব বলে আমার বিশ্বাস ছিল। সাকিব ভালো ব্যাটিং করছিল। ওর সবচেয়ে বড় গুণ, ও সব সময় পজিটিভ খেলে। আমিও পজিটিভ থাকতে চেয়েছি। ঠিক করে নেমেছি, লুজ বল পেলেই মারব।’
মেরেছেনও। ১৭৭ বলে ১১৫ রানের ইনিংসে ১৭টি চার ও ২টি ছয়। সাকিবের ৮৭ রানের ইনিংসে চার ১৫টি। স্ট্রোক-ঝলমল ১৪৫ রানের জুটিটি উজ্জ্বল এক বিজ্ঞাপন হয়ে থাকল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের। এতটাই যে, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি পর্যন্ত মুগ্ধ! ‘ওরা অসাধারণ ব্যাটিং করেছে। দুজনই ছিল আগ্রাসী, দেখতে খুব ভালো লেগেছে।’
ভেট্টোরির তো ভালো লাগার কথা নয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে বাংলাদেশ আগে কখনো ২৬২-এর বেশি করতে পারেনি, তারাই ৪০৮। এই প্রথম তাঁর দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি। ১৯৬ রানে ৬ উইকেট ফেলে দেওয়ার পর বাংলাদেশকে ফলোঅন করানো যখন একরকম নিশ্চিত, তখনই এমন প্রত্যাঘাত! ভেট্টোরির তো হকচকিত হয়ে পড়ার কথা।
অথচ নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক দাবি করছেন, এটা তাঁর কাছে অভাবনীয় কিছু বলে দেখা দেয়নি, ‘সাকিব কেমন প্লেয়ার, এটা আমার জানা ছিল। মাহমুদউল্লাহও যে টিপিক্যাল নাম্বার এইট নয়, এটাও জানতাম। ও ভালো ব্যাটসম্যান। ভারতের বিপক্ষে আগের টেস্টেই ও ৯৬ করে এসেছে।’ অকপটে স্বীকার করছেন, এই দুজনের জুটি কেমন চাপে ফেলে দিয়েছিল তাঁকে, ‘আমাদের বোলিং খুব ভালো হয়নি। তবে ওদের ওই জুটিতে খারাপ বোলিংয়ের চেয়েও ভালো ব্যাটিংয়ের বেশি ভূমিকা। খুব ভালো খেলেছে ওরা। লুজ বল মারতে ছাড়েনি। চাপটা আমাদের ওপর ফিরিয়ে দিয়েছে ওরা দুজন।’
খেলায় একচুল ছাড় দিতে রাজি নন, তবে খেলাটাকে খেলা হিসেবেই দেখেন। মাঠে ও মাঠের বাইরে নিপাট ভদ্রলোক ভেট্টোরি জানেন প্রতিপক্ষকেও প্রাপ্য প্রশংসা দিতেও। সেঞ্চুরি হওয়ার পর মাঠেই মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে হাত মিলিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ যখন সংবাদ সম্মেলন শেষ করে উঠে যাচ্ছেন, হাত মেলালেন আবারও। সাকিবের বিতর্কিত আউটটির ব্যাপারেও পরিষ্কার তাঁর অবস্থান, ‘ব্রেন্ডন (ম্যাককালাম) পুরো নিশ্চিত নয় বলার পর আমি আম্পায়ারকে তা জানিয়েছিলাম। আর কী করার ছিল আমার?’ সাকিব যে চাইলে টিভি আম্পায়ারের কাছে রেফারেল চাইতে পারতেন, মনে করিয়ে দিলেন সেটাও।
সাকিব চাননি, কারণ সন্দেহই হয়নি তাঁর। নন-স্ট্রাইকার মাহমুদউল্লাহরও না, ‘আমার মনে হয়েছিল, ম্যাককালাম ঠিকভাবেই ক্যাচটা নিয়েছে। ড্রেসিংরুমে ফিরে জানতে পারলাম ঘটনা। সাকিবের জন্য খুব খারাপ লেগেছে। সেঞ্চুরিটা পেল না!’
যে টেস্টের পঞ্চম দিনটা অব্যবহূত থাকার জোর সম্ভাবনা জেগেছিল, সেই টেস্টেই এখন একটু হলেও নাটকীয়তার আভাস। বিকেলে নিউজিল্যান্ডের ৫ ওভার ব্যাটিংয়ের সময়ই সাকিবের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে রানআউট হয়ে গেছেন এক ওপেনার। হাতে ৯ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ড এগিয়ে ১৮৪ রানে। মাহমুদউল্লাহ, কী হবে এই টেস্টে? ইতিবাচকতা যেন তাঁর নামের প্রতিশব্দ, ‘কাল বিগ ডে। সকালে দ্রুত ২-৩টা উইকেট তুলে নিতে পারলে আমাদের সুযোগ আছে।’সুযোগ যদি আসেই, দ্বিতীয় ইনিংসেও কিন্তু আপনার ব্যাটিংটা লাগবে মাহমুদউল্লাহ!
সুত্র: http://www.prothom-alo.com/detail/date/ … news/43224
আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে:
আশরাফুলকে কেন দলে রাখা হয়েছে!!! খোদ কোচের বক্তব্য তার সম্পর্কে:
"সে অন্তত ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ"