টপিকঃ বাংলার ফুল (শাপলা)
“জোটে যদি মোটে একটি পয়সা খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি
দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!”
একটি পয়সা থাকলে খাবার আর তার বেশী থাকলে ফুল কিনার কথা আমারা শুনেছি। শুনেছি যে ফুল ভালো না বাসে সে মানুষ খুন করতে পারে। নানাধরনের ফুল আছে আমাদের দেশে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাঠে-ঘাটে পথে-প্রান্তরে। এই সমস্ত গ্রাম-বাংলার ফুলের কথাই বলবো এবার, একটু একটু করে। এই প্রচেষ্ঠার শুরুটাই করতে যাচ্ছি আমাদের সকলের চেনা শাপলাকে নিয়ে।
শাপলা
শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল একথা সকলেই জানে, শাপলার কথা নতুন করে বলারও কিছু নেই। সারা বাংলাদেশের সমস্ত জলাশয়েই (শুধু নদী বাদে) জলজ ফুল শাপলাকে ফুটে থাকতে দেখা যায়। গ্রামবাংলার চিরায়ত দৃশ্য- “বিলের জলে কিশোর ছেলে ছোট্ট নৌকোয় তুলছে শাপলা।”
আমাদের বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী চোখে পরে সাদা শাপলা, যাকে সাধারণ ভাবে ইংরেজীতে বলা হয় “Water Lily”। এই সাদা শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম “Nymphaea nouchali”, এটি Nymphaeaceae পরিবারভুক্ত। প্রচীন যুগে গ্রীকরা এই জাতীয় ফুলকে Nymph বা জলপরীদের উৎসর্গ করত, সেখান থেকেই এই Nymphaea@ শব্দটি এসেছে। আর nouchali শব্দটি খুববেশী সম্ভব আমাদের নোয়াখালি থেকে এসেছে।
বাংলাদেশে কয়েক প্রজাতির শাপলা দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে শুধু মাত্র সাদা শাপলই আমাদের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে, অন্য কোনো রঙের শাপলা তা পায়নি।
এখানে উল্লেখ করা যায় সারা পৃথিবীতে মোটামুটি ৩৫ প্রজাতির মত শাপলা দেখতে পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের শাপলাদের রং সাধারণত সাদা, লাল, লালচেগোলাপী আর নীলচে সাদা হতেই বেশী দেখা যায়।
জলের উপর ভেসে থাকে শাপলা ফুল আর তার বড় সবুজ পাতা। পাতাগুলো দেখতে যেন একেকটা সুন্দর থালা। সাধারণত শাপলা ফুল পানির উপরে ছড়ানো অবস্থায় থাকে--কদাচিৎ পানির অল্প নীচে থাকতে পারে, কোথাও কোথাও এই অল্প ডুবে থাকা শাপলাকে “ডুবুরি শাপলা” বলে। শাপলা ফুলের এক-একটি রিংএ ৬টি পাপড়ি ও ৬টি পুংকেশর থাকে, তবে অনেক শাপলার আবার এর বেশিও হতে দেখা যায়। শাপলার পাতা আর ফুলের কান্ড বা ডাটি বা পুস্পদন্ড পানির নিচে মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে আর এই মূল যুক্ত থাকে মাটির সঙ্গে। এই মূল থেকই আবার নতুন শাপলা জন্ম নেয়।
শাপলার কান্ড বা ডাটা বা পুস্পদন্ড সবজী হিসেবেও খাওয়া হয়। আজকাল এই শাপলা ফুলের কান্ড বা ডাটা বা পুস্পদন্ড বাজারে বিক্রি হচ্ছে হরহামেসাই।
পূর্ণবিকশিত শাপল ফুলের গর্ভাশয়ে গুড়ি গুড়ি বীজ থাকে। আঠালো এই বীজ গ্রামের ছোটো ছোটো বাচ্চাদের খেতে দেখা যায়।
তাছাড়া এই বীজ ভেজে এধরনের খাবার তৈরী করা হয় যার নাম “ঢ্যাপের খৈ”। খেতে দারুন খুবই চমৎকার। কিন্তু উপযুক্ত সময়ে গর্ভাশয়ের এই বীজ সংগ্রহ না করা হলে শেষ পর্যায়ে তা শুষ্ক হয়ে যায়।
শাপলা সারা বছর ধরেই একটু-আকটু ফুতে দেখা যায় তবে বর্ষায় ও শরৎ কালে এদের ফুটার সিজন বলা যায়। তখন এরা ফুটে প্রচুর পরিমানে। সমস্ত বদ্ধ জলাসয়ে এরা তাদের রাজত্য কায়েম করে নেয়।
বাংলাদেশে সাধারণত যেসব শাপলা বেশী চোখে পরে....
সাদা শাপলাঃ
সাদা শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম “Nymphaea nouchali” বাংলাদেশের জলাসয়ে সবচেয়ে বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এটাই আ,মাদের জাতীয় ফুল।
গোলাপী শাপলাঃ
গোলাপী শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম “Nymphaea fabiola” সাদা শাপলার পরেই এর অবস্থান। প্রচুর পরিমানে দেখতে পাওয়া যায় আমাদের খালে বিলে।
লাল শাপলাঃ
লাল শাপলার আরেক নাম রক্ত কমল। বৈজ্ঞানিক নাম “ Nymphaea rubra” টকটকে লাল এই শাপলার রং। সাধারণত বড়বড় পুকুরে এদের দেখতে মেলে।
শালুকঃ
শালুকের বৈজ্ঞানিক নাম Nymphaea stellata চমৎকার সুগন্ধ থাকে এই ফুলে। দেখতে নীলচে সাদা। সাধারণত অল্পপানিতে হয়।
জায়ান্ট ওয়াটার লিলিঃ শাপলা ফুল পরিবারের আরেক সদস্যক। এটা মূলত আমাজন জঙ্গলের ফুল। তবে ঢাকার বলধা গার্ডেনে এর দেখা মিলবে। সাদা বা লাল দুরঙেরই হতে পারে।
সূত্রঃ ইন্টারনেট ও নিজস্ব অভিজ্ঞতা।
http://www.plantzafrica.com/plantnop/nymphnouch.htm
http://en.wikipedia.org/wiki/Nymphaea
http://prothom-aloblog.com/users/base/computer/190
http://www.karatoa.com.bd/details.php?p … ;menu_id=5