টপিকঃ ৮৪টি পর্নোসাইট বন্ধে ৩ মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চায় বিটিআরসি
৮৪ পর্নোসাইট বন্ধে ৩ মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চায় বিটিআরসি
উদিসা ইসলাম | তারিখ: ২৫-১০-২০০৯
পর্নোগ্রাফির ৮৪টি ওয়েবসাইট বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হলেও কাজটি এখনই করছে না তারা। বিটিআরসি বলছে, ওয়েবসাইটগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কালক্ষেপণের অজুহাত ছাড়া আর কিছুই নয়। সদিচ্ছা থাকলে বিটিআরসি একাই কাজটি করতে পারে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ ৮৪টি ওয়েবসাইটের তালিকা পাঠিয়ে সেগুলো বন্ধের ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসিকে অনুরোধ করে। চিঠিতে বলা হয়, বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের বহু নর-নারীর আপত্তিকর স্থির ও ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বড়দের পাশাপাশি শিশুদের ছবিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। এসব পর্নোছবি আপলোড করার পেছনে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করা কঠিন হওয়ায় সাইটগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করছে তারা।
পুলিশের ওই সুপারিশের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণের জন্য সভায় বসতে ২১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বরাবর পাল্টা চিঠি দেয় বিটিআরসি। বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ দাবি করেন, বিটিআরসির একার পক্ষে ওই কাজ করা সম্ভব নয়। ওয়েবসাইটগুলো আজ বন্ধ করলে সামান্য নামের এদিক-সেদিক করে কালই আবার চালু হবে। এতে বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্কিত সব মন্ত্রণালয়কে এ কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে।
চেয়ারম্যানের এ দাবি নিছক দায়িত্ব এড়ানোর নামান্তর বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি মোস্তফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘আবারও অপরাধ ঘটার আশঙ্কায় বিদ্যমান অপরাধ দমনে উদ্যোগ না নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।’ তিনি অভিযোগ করেন, বিটিআরসির নিজস্ব যে যন্ত্রপাতি আছে, তা দিয়ে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব হলেও তারা তা করেনি। ‘এভাবে ওয়েবসাইট বন্ধ করার আইনগত ক্ষমতা তাদের নেই’—বিটিআরসির চেয়ারম্যানের এ দাবির বিপরীতে মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে (আইএসপি) ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জের আওতায় নিলেই এসব কাজ যারা করছে তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব।’
গত সেপ্টেম্বরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিটিআরসিকে সুপারিশ জানানোর পর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলো কি না, সে বিষয়ে চিঠি প্রেরণকারীরা কিছু জানেন কি না—এমন প্রশ্নে গত বুধবার স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান এবং বাংলাদেশ পুলিশের এডিশনাল কমিশনার আবুল কাসেম, যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা শাখা) অমূল্যভূষণ বড়ুয়া কিছু জানাতে পারেননি। বিষয়টি তাঁদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ায় এ প্রতিবেদককে তাঁরা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
শিশু পর্নোগ্রাফির ওপর শিশু অধিকার সম্মেলনে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি অনুযায়ী শরিক রাষ্ট্রগুলোর অবশ্যই তাদের শিশুদের পর্নোগ্রাফির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার কথা। চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো আইন না থাকলে তা প্রণয়ন করারও কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ চুক্তির ওই ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
পর্নোগ্রাফি বন্ধ এবং বাংলাদেশ পুলিশের সুপারিশকৃত ৮৪টি পর্নো ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করতে উদ্যোগ নিতে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ৫ অক্টোবর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব সুনীল কান্তি বোসের বরাবর চিঠি পাঠায়। এ বিষয়ে সচিব বলেন, ‘এটা বাস্তবায়নের এখতিয়ার আমার নেই। করণীয় বিটিআরসি দেখবে। আর এ ধরনের কোনো চিঠিও আমার কাছে আসেনি।’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ঢাকা শহরের সুবিধাভোগী এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ওপর গবেষণা করে দেখেছে, ৭৭ শতাংশ শিশু পর্নো ছবির দর্শক। এ প্রসঙ্গে ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জনগণকে পর্নোভোক্তা এবং এ ধরনের অভ্যস্ততা থেকে রক্ষা করা সরকার এবং তাঁর দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান বিটিআরসির নৈতিক দায়িত্ব।