টপিকঃ লিনাক্স পুরা ফালতু - ব্যবহার করে দিনকে দিন হতাশ হচ্ছি
দিনকে দিন লিনাক্স ব্যবহার করে হতাশ হচ্ছি। কেন জানতে হলে সচলায়তনের এই পোস্টটা দেখতে পারেন। সচলায়তনের পোস্ট করার নীতিমালা মেনে আপাতত এখানে পোস্ট করতে পারছি না। ৭২ ঘন্টা পরে এখানে দিবো।
Update:
লিনাক্স পুরা ফালতু - ব্যবহার করে দিনকে দিন হতাশ হচ্ছি
উইন্ডোজে খেলার জন্য নিড ফর স্পীড বলে একটা গেম আছে। কঠিন লড়াই করে গাড়ীর দৌড় প্রতিযোগীতায় জিততে হয়। ওটা খেলতে কঠিন মজা পেতাম। প্রতিটা চ্যালেঞ্জ জিততে দারুন মজা। কয়েকদিন পরেই কম্পিউটারের প্রতিযোগীগুলো কোনক্রমেই পেরে উঠতো না। বন্ধু বান্ধবের যারা খেলতো তারা তো কম্পিউটারের সাথেই পারে না। আমার সাথে পেরে ওঠার প্রশ্নই ওঠে না ... ... তাই ওদের সাথে খেললে মজা নষ্ট হয়ে যায়। আমার ছোট দুই ভাইও কঠিন গেমার ছিল ... ওদের সাথে তাই জমতো। এছাড়া কল অব ডিউটি বা সিমসিটি টাইপের স্ট্রাটেজি গেমগুলোও চরম আকর্ষনীয় ছিল। সবসময়ই টানটান উত্তেজনা আর চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ না থাকলে যে কোনো গেমই ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়।
লিনাক্স ব্যবহার শুরু করে ভেবেছিলাম কঠিন একটা বিষয় আয়ত্তে আনছি ... চ্যালেঞ্জ জয় করছি .... কঠিন ভাব নেয়া যাবে। লোকজন ইমপ্রেস হবে। আজ এটা সমস্যা, কাল ওটা সমস্যা .... রাতে চিন্তায় ঘুম হবে না, চোখের নিচে কালি পড়বে। এই করতে হবে, সেই করতে হবে .. ... দুশ্চিন্তায় ডায়বেটিস হয়ে যাবে, হার্টের সমস্যা দেখা দিবে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে ..... .... লোকজন জিজ্ঞেস করলে মুখ ঝামটা দিয়ে বলা যাবে ... "ধুর মিয়া অফ যান - জানেন নাতো কী রকম দৌড়ানীর উপরে আছি"। আহ .... কী চরম চ্যালেঞ্জ আর উত্তেজনা।
আমার সে আশায় গুড়ে বালি। লিনাক্সে কোন চ্যালেঞ্জই নাই। একেই তো বিনামূল্যে দেয় সেজন্য জুয়া খেলে টাকা হারাবার মত উত্তেজনা নাই, তার উপর চৌর্যবৃত্তির দারুন থ্রীল পুরাটাই মিস ....... অথচ পাইরেটেড উইন্ডোজে কত্ত উত্তেজনা; আজকে জেনুইনিটি টেস্ট কালকে ম্যালওয়্যার, পরশু ভাইরাস .... চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ ... কখনই ম্যাড়মেড়ে ভাব নাই।
জেনুইনিটি টেস্টের সেই উইজেটটা নিউট্রাল করা দারুন উত্তেজনাকর .... বিল কাকুর মাইক্রোসফটকে টেক্কা দেয়া বলে কথা! ইন্টারনেট ঘেটে পদ্ধতি বের করে তারপর প্রসেস বন্ধ করতে হয়, ফাইল মুছতে হয়, রেজিস্ট্রি এন্ট্রি মুছতে হয় .... এজন্য ব্যাকআপ নিতে হয় কারণ ভুল ভাল হয়ে গেলে মেশিন বসে যাবে ---- ওয়াও!! এরকম টান টান উত্তেজনা না থাকলে জীবন চলে! অবশ্য, অরিজিনাল উইন্ডোজ ব্যবহার করলে এইসব করা লাগবে না - অন্তত তাই হওয়ার কথা। অবশ্য চুপি চুপি জানিয়ে রাখি, অরিজিনাল উইন্ডোজ ব্যবহারকারীগণ হতাশ হবেন না ... ... বিল কাকুর এই উইজেট আপনাদের জীবনেও উত্তেজনার আনন্দ দিতে পারে ... অনেক অরিজিনাল / জেনুইন ব্যবহারকারীকেও এই উইজেট পাইরেটেড বলেছে বলে শোনা যায় --- অবশ্য এতে উত্তেজিত হয়ে কারো হার্ট এ্যাটাক হয়েছে বলে শুনিনি।
তারপর ধরুন নতুন নতুন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমগুলো হাইফাই হার্ডওয়্যার ছাড়া চলে না। অনেক ড়্যাম, অনেক বড় হার্ডডিস্ক, উচ্চমার্গীয় প্রসেসর এই সব লাগেই। এ্যাতসব হাইফাই হার্ডওয়্যার কিনলে কত ভাব নেয়া যায়, বলা যায় যে ঐসব বড় বড় হার্ডওয়্যার কম্পানিকে আমরা বাঁচিয়ে রেখেছি -- অথচ ব্যাটা ফাউল লিনাক্স, কম শক্তির পিসিতেও নাকি অনায়েসে চলে। শালার ... টাকা খরচের উপায়ই নাই।
তারপর ধরেন, ভাইরাস ভাইদের কথা। সবসময় কত উত্তেজনার মধ্যে রাখে - এই মারলো রে তো সেই মারলো করে সবসময় হৈ হুল্লোরের মধ্যে থাকা যায়। একবার দেখা গেল সকলের স্ক্রীনে ছোট ব্যানারে কী জানি হ্যাক ডে লেখা দুইটা আস্তে আস্তে ইতস্তত ঘুরাঘুরি করছে। যত ক্লিক করা হয় তত বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে। ইন্টারনেট ঘেটে ঐটা দুর করার পদ্ধতি দেখে খুঁজে খুঁজে ওগুলো মোছা হল .... .... বলেন তো, একঘেয়ে জীবনের মধ্যে এমন ব্যতিক্রম না থাকলে ভাল লাগে! অথচ আমার কম্পিউটারে এমন কিছুই নাই। ভাইরাস নাকি বানানোরও কোন রাস্তা খোলা রাখে নাই।
আগে লিনাক্সে ভাল কোনো গেম ছিল না। তাই বড় হয়ে গিয়েছি এমন একটা ভাব আসতো। কিন্তু দেখেন কারবার, এখন দূর্দান্ত থ্রী-ডি গেমও চলে এসেছে। বড় বড় ভাব নেয়ার উপায় নাই।
আগে দেখতাম বড় ভাইরা কালো স্ক্রিনে কাজ করে ভাব নিত... ডসের মত কালো স্ক্রীনে কী কী হিজিবিজি লেখা উঠতো সেগুলো দেখে বিজ্ঞের মত মাথা নাড়াতো। ভাবলাম লিনাক্স ব্যবহার করলে তেমন ভাব নেয়ার সুযোগ হবে। কিন্তু সেই আশাও পুরা হওয়ার কোনো উপায় নাই। লিনাক্সে গ্রাফিকালি ক্লিক করেই সব করা যায় - ধ্যা-এ্যা-ত্ ।
অনেক আগে ১০ গ্রাম ঘুরে একজন মেট্রিক পাশ লোক পাওয়া যেত। একনামে সকলেই তাদেরকে চিনতো। কিন্তু এখন সেইরকম অবস্থা নাই। আমার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বলেছিল তাঁদের সমস্ত গ্রাহকদের মধ্যে আমি আর একজন - এই দুইজনই শুধু লিনাক্স ব্যবহার করে। তাই আলাদা ভাবে আমাদের কথা মনে থাকে। কিন্তু ইদানিং যে দ্রুত হারে ব্যবহারকারী বাড়ছে ... তাতে সেই রেয়ার স্পিশিজ বলে ভাব নেয়ারও উপায় দুর হয়ে যাচ্ছে --- নাহ্ লিনাক্সটা আসলেই যাচ্ছেতাই হয়ে গেল।
"জানিস আমার পিসি না হ্যাক হয়ে গিয়েছিলো ... যখন বুঝতে পারলাম তখন তো সাথে সাথে ইন্টারনেট ডিসকানেক্ট করলাম। তারপর সব রিইনস্টল দিয়ে ফায়ারওয়াল দিয়ে কত কি করে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসলাম।" ইত্যাদি ইত্যাদি কত গল্প করার বিষয় তৈরী হয় যেগুলো লিনাক্সে হওয়ার সুযোগই নাই --- হতচ্ছাড়া লিনাক্সের কারণে বন্ধু বান্ধবের সাথে আলাপ করার বিষয়বস্তু কমে যাচ্ছে।
সুতরাং হে রক্ত গরম যুবা, চ্যালেঞ্জিং জীবন চাইলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিন, সেটা সম্ভব না হলে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করুন; ভুলেও লিনাক্স চালানোর কথা ভাববেন না।
===
কপিরাইট (!): CC-BY-NC-SA লাইসেন্সের অধীনে প্রকাশিত।