টপিকঃ লিউকেমিয়া

লিউকেমিয়া হচ্ছে রক্ত ও অস্থিমজ্জার এক ধরনের ক্যান্সার (অস্থিমজ্জা হলো অস্থির ভেতরের অংশ, যেখানে রক্ত কণিকা তৈরি হয়)৷ একজন ব্যক্তির সুস্থ অবস্থায় প্রাপ্ত নির্দেশনা (সিগনাল) দেহকে নতুন রক্ত কণিকা তৈরি করতে বলে৷ এই নির্দেশনা আদি রক্তকোষে পেঁৗছায়, যাকে বলে স্টেম কোষ৷ দেহের প্রয়োজনীয় রক্ত কণিকা তৈরির জন্যে নির্দেশনাগুলো স্টেম কোষকে সক্রিয় অথবা নিষ্ক্রিয় করে৷ একজন ব্যক্তির সিএমএল (ক্রনিক মাইলয়েড লিউকেমিয়া) হলে, তার ডিএনএ-তে একটি পরিবর্তন ঘটে, এর ফলে এই নির্দেশনা সব সময় সক্রিয় থাকে৷ নির্দেশনার এই সার্বক্ষণিক সক্রিয়তার জন্যে দেহ আরও অধিক পরিমাণে লিউকেমিয়া কোষ তৈরি করে৷লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে দুটো জিনিস ঘটে থাকে৷ প্রথমত, কিছু রক্ত কণিকা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে, দ্বিতীয়ত, আমাদের দেহ প্রচুর পরিমাণে এ সকল অস্বাভাবিক কোষ তৈরি করতে থাকে৷সিএমএল (ক্রনিক মাইলয়েড লিউকেমিয়া) হচ্ছে এক ধরনের লিউকেমিয়া৷ ক্রনিক বলতে বোঝায় এটি একটি ধীর গতির ক্যান্সার, যা পূর্ণতা লাভ করতে অনেক বছর সময় নেয়৷ মাইলয়েড হচ্ছে মাইলয়েড কোষ নামক এক ধরনের শ্বেত কণিকা হতে ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অস্বাভাবিক রক্ত কণিকা৷ সুতরাং ক্রনিক মাইলয়েড লিউকেমিয়া হচ্ছে একটি ধীর গতির ক্যান্সার, যার ফলে দেহে প্রচুর পরিমাণে ক্যান্সার আক্রান্ত মাইলয়েড শ্বেত কণিকা তৈরি হয়৷ সিএমএল-এর তিনটি পর্যায় বা ধাপ রয়েছে৷ যেমন: ক্রনিক পর্যায়, একসিলারেটেড পর্যায় এবং বাস্ট ক্রাইসিস পর্যায়৷ রোগীরা এসকল ধাপ ক্রমান্বয়ে অতিক্রম করার সাথে সাথে তাদের রোগের মাত্রা বাড়তে থাকে এবং শরীরে নানাবিধ উপসর্গ দেখা দেয়৷

রোগের উপসর্গ ও লক্ষণসমূহ:

    * লিউকেমিয়ার রোগীরা সাধারণত দুর্বলতা, রাতে ঘামানো, হালকা জ্বর নিয়ে চিকিত্‌সকের শরণাপন্ন হয়ে থাকে৷ এ সকল উপসর্গ অতিরিক্ত শ্বেত কণিকা তৈরি হওয়ার কারণে হয়ে থাকে৷
    * প্লীহার আকার বৃদ্ধির ফলে রোগী পেটে ভার ভার বোধ করে৷ এছাড়া ঘটনাক্রমে শ্বেত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি ধরা পড়ে৷
    * কিছু ক্ষেত্রে রোগীর শ্বাসকষ্ট ও ঝাপসা দৃষ্টির সমস্যা হয়৷ এ রোগের মাত্রা বৃদ্ধি (একসিলারেটেড পর্যায়ে) পেলে জ্বর হয়, তবে সংক্রমণ, অস্থিতে ব্যথা বা প্লীহার বৃদ্ধি হয়

চিকিত্‌সাপদ্ধতি:
সিএমএল সাধারণত অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন বা ওষুধের মাধ্যমে চিকিত্‌সা অথবা উভয়ের সমন্বয়ে চিকিত্‌সা করা হয়৷বি এমটি স্টেম কোষ ট্র্যান্সপ্ল­্যান্ট (এসসিটি) হিসেবেও পরিচিত৷ এ ধরনের চিকিত্‌সা পদ্ধতির দুটো ধাপ রয়েছে৷ প্রথমত, রোগীকে উচ্চমাত্রার ওষুধ দেয়া হয়, যা অস্থিমজ্জার অধিকাংশ কোষকে নিমূ©ল করে (ক্যান্সার কোষ ও স্বাভাবিক কোষ)৷ দ্বিতীয়ত, ধ্বংসকৃত সকল স্টেম কোষকে কেবলমাত্র সুস্থ কোষ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়৷ এ পুনঃস্থাপিত কোষগুলো অন্য কোনো ব্যক্তি থেকে নেয়া হয় (এটি অ্যালোজেনিক ট্র্যান্সপ্লযান্ট নামে পরিচিত) এবং কখনও কখনও রোগীর নিজের দেহ থেকে নেয়া হয়ে থাকে (যা অটোলোগাস ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট নামে পরিচিত)৷একজন রোগীকে অ্যালোজেনিক ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট অথবা অটোলোগাস ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট, যাই দেয়া হোক না কেন, একবার স্টেম সেল প্রতিস্থাপিত হলে তা রোগীর অস্থিমজ্জায় আশ্রয় নেয় এবং বৃদ্ধি পেয়ে রক্ত কণিকা তৈরি করে৷ কেবল বিএমটি চিকিত্‌সার মাধ্যমেই কিছু ব্যক্তি সিএমএল হতে নিরাময় লাভ করতে পেরেছে৷ তাই চিকিত্‌সকরা তাদের রোগীর ক্ষেত্রে এটি প্রথম চিকিত্‌সা হিসাবে বিবেচনা করেন৷ দুর্ভাগ্যবশত এ পদ্ধতিতে অনেক ঝুঁকি রয়েছে এবং কেবল অল্প কিছু সংখ্যক রোগী এর জন্যে উপযুক্ত প্রাথী হতে পারে৷

যে সব রোগীর বিএমটি চিকিত্‌সা করা যায় না তাদেরকে ওষুধের মাধ্যমে চিকিত্‌সা দেয়া হয়৷ সিএমএল চিকিত্‌সায় যেসব ওষুধ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় তার তালিকা নিচে দেয়া হলো:

১. ইন্টারফেরন আলফা (আইএফএন-আলফা): ইন্টারফেরন হচ্ছে দেহে উত্‌পাদিত প্রাকৃতিক জিনিস৷ রোগীর দেহে বাড়তি ইন্টারফেরন ইনজেকশান দেয়ার ফলে লিউকেমিয়া কোষগুলোর বৃদ্ধি হ্রাস পায় (এবং তা আয়ু বৃদ্ধি করে) কিন্তু এর ফলে সিএমএল হতে সম্পূূর্ণ নিরাময় হয় না৷ আইএফএন-আলফা অনেক ক্ষেত্রে শুধু এককভাবে দেয়া হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে সাইটারবিন (আরা-সি নামে পরিচিত) সহযোগে দেয়া হয়৷ এই চিকিত্‌সার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো সহনীয়তা৷ অনেক ব্যক্তিই আইএফএন-আলফা চিকিত্‌সার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ্য করতে পারেন না৷ সে জন্যে উন্নত সংস্করণ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে যার মাধ্যমে রোগীরা আইএফএন-আলফা চিকিত্‌সা সহ্য করতে পারে৷

২. সিএমএল রোগের চিকিত্‌সা নতুন ওষুধ গিভেক আবিষ্কারের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে৷

গিভেক কীভাবে কাজ করে -

গিভেক একটি কার্যকর থেরাপি যা সিএমএল রোগের কারণকে সুনির্দিষ্টভাবে স্থির করে৷ ইতিমধ্যে বলা হয়েছে যে সিএমএল রোগে একটি সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দেহকে অব্যাহতভাবে অস্বাভাবিক শ্বেত রক্ত কণিকা তৈরি করে যেতে বলে৷ গিভেক এই নির্দেশনাকে বন্ধ করে দেয়৷ যার ফলে অতিরিক্ত শ্বেত কণিকা আর তৈরি হয় না৷ এই প্রথমবারের মতো সিএমএল রোগের কারণকে লক্ষ করে চিকিত্‌সা পদ্ধতি তৈরি হয়েছে৷ অন্যান্য চিকিত্‌সা পদ্ধতির তুলনায় এটির একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে৷ বিএমটি চিকিত্‌সায় রোগীর অস্থিমজ্জার অধিকাংশ কোষ (ক্যান্সার কোষ ও সুস্থ কোষ) ধ্বংস হয়৷ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রকট হতে পারে৷ কেমোথেরাপিতে ওষুধ রক্তে পেঁৗছে এবং যত বেশি সম্ভব কোষকে ধ্বংস করে৷ এক্ষেত্রেও ক্যান্সার কোষ ও সুস্থ কোষ উভয়ই ধ্বংস হয়৷ কিছু ধরনের ওষুধ গ্রহণের ফলে রোগীদের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং অনেক সময় তারা চিকিত্‌সা বন্ধ করতে বাধ্য হয়৷অন্যদিকে গিভেক ইউনিট লিউকেমিয়া কোষ উত্‌পন্নকারী সিগনাল বা নির্দেশনাকে লক্ষ্য করে কাজ করে৷ ফলে অধিকাংশ সুস্থ কোষ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়৷ গিভেক সেবনকারী অধিকাংশ রোগীর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াজনিত সমস্যা দেখা দেয় না৷এ চিকিত্‌সার লক্ষ্য হচ্ছে দুটি৷ প্রথম লক্ষ্য, রক্তে অস্বাভাবিক শ্বেত কণিকার সংখ্যা, দ্বিতীয় লক্ষ্য এ রোগের অবস্থার অবনতি রোধ করা বা একে একটি কম ক্ষতিকর অবস্থায় রূপান্তর করা৷ একটি নতুন চিকিত্‌সা পদ্ধতি হিসাবে গিভেক সেবনে এই দুটো লক্ষ্যই অর্জন হতে পারে৷ গি­ভেক-এর উপর ক্লিনিক্যাল সমীক্ষায় দেখা যায় যে, অধিকাংশ রোগীর রক্তে শ্বেত কণিকার সংখ্যা হ্রাস পায়৷ অল্প কিছু সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে রোগের অবনতি রোধ হয়৷ প্রকৃত পক্ষে এসব রোগীর একটি অংশ সিএমএল রোগের শেষ অবস্থা হতে ক্রনিক পর্যায়ে রূপান্তর হয়৷

রোগের ফলাফল:
পূর্বে মধ্যবতী বেঁচে থাকার হার ছিল ৩-৪ বছর৷ ইন্টারফেরন চিকিত্‌সার মাধ্যমে মধ্যবতী বেঁচে থাকার হার বেড়ে ৫-৬ বছর হয়৷ গিভেক সেবনে বেঁচে থাকার হারের ক্ষেত্রে উলে­খযোগ্য উন্নতি ঘটবে এবং এটি অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জায়গা দখল করবে বলে আশা করা যায়৷ এই ওষুধের মাধ্যমে প্রথম অবস্থার ক্রনিক পর্যায়ের কম বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে নিরাময় হার এই ওষুধের মাধ্যমে ৭০-৮০% হবে বলে আশা করা যায়৷

***ঔষুধ সেবন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷

Re: লিউকেমিয়া

উপকারী প্রবন্ধ। thumbs_up
পোস্টে সূত্র উল্লেখ করা উচিৎ ছিল।

Re: লিউকেমিয়া

সোর্স নাই বলেই রেপু দিতে গিয়েও দিলাম না।b-(

সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন khokongeo (২৩-১১-২০০৮ ২২:১৪)

Re: লিউকেমিয়া