টপিকঃ "কাতারের দুঃস্বপ্ন"
সারা দিন অফিসের কাজ কর্ম সেরে রাতে ক্লান্ত শরীরে বিছানায় শুয়ে কাতার ভাবতে থাকে,কত বসন্ত পার হয়ে গেলো তার জীবনে এখনো কোকিল ডাকলো না,বাগানে কোন ফুলও ফুটলো না। হায়!হায়!তার জীবনটা কি এই মরুভুমির দেশে থেকে থেকে মরুভুমির খুরমা খেজুর হয়ে গেলো না তো? নাহ!সে কিছুতেই তার জীবনটা এরকম হতে দিবেনা। এবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে গিয়ে নিজেকেই একটা উদ্যেগ নিতে হবে। কারোও উপর আর অত ভরসা করা যাবে না। কতজন তো কত পাত্রী দেখলো,কাজের কাজ কিছুই হলোনা। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়েছে,স্বপ্নে দেখে---
একটা অপুর্ব সুন্দরী মেয়ে এবং সে একটা খেঁজুর গাছের নীচে পাশাপাশি বসে আছে। কাতার কিছুটা লজ্জাবনত ভাবে একটা খেঁজুরের কাঁটা নিয়ে দাঁত খুঁচাইতেছে। মেয়েটি হঠাৎ প্রশ্ন করে--তুমি এতদিন নিজেকে মরুভুমির মত করে রেখেছিলে কেন?
কাতারঃ এতদিন তোমাকে খুঁজে পাইনি বলে।
মেয়েঃ আচ্ছা তুমি আমাকে কতটা ভালোবাস।
কাতারঃ আমি ঠিক তোমাকে বুঝাতে পারবনা। জানো তোমার কথা ভাবলে আমার,খাইলে ক্ষুধা লাগে না,ঘুমাইলে চোখে দেখিনা।
মেয়েঃ খুঁশি হয়ে কিছুটা আহ্লাদি কন্ঠে তবুও আবার বলে,আহা বলোনা গো কতটা।
কাতারঃ কি বলবে বুঝতে পারে না। হঠাৎ দুহাত দুদিকে প্রসারিত করে যেইনা বলতে গেছে এই এতটা-- অমনি হাতের খেঁজুরের কাঁটাটি গিয়ে লাগে মেয়েটির কপালে। দেখে কাঁটার আঘাতে মেয়েটির কপালের মাঝখানে একটু কেঁটে গেছে। কাতার তখন নিরুপায় হয়ে করুন সুরে বলে সরি,আমি ঠিক ভাবিনি এরকমটা হবে।
মেয়েঃ ঠিক আছে,তুমিতো ইচ্ছে করে করোনি। ভালই হলো তোমার দেয়া ভালোবাসার আঘাতের চিহ্ন সারা জীবন আমার কপালে আঁকা থাকবে।
কাতারঃ খুঁশিতে গদ গদ হয়ে বলে,তোমার আর কখনো টিপ পড়া লাগবে না। এই দাগটাই পারমানেন্ট টিপ হয়ে গেলো। জানো দেবদাস পার্বতীর কপালে এরকম একটি দাগ দিয়েছিল। তাই আজ থেকে আমি দেবদাস আর তুমি পার্বতী। আমার পারু।
মেয়েঃ কিন্তু দেবদাস তো রাগ করে ওরকম দাগ দিয়ে দিয়েছিল ,পার্বতী ওকে পরে আর বিয়ে করতে চায়নি বলে।
কাতারঃ হাঁ তুমিও যখন আমার দেওয়া এই দাগ নিয়ে আমাকে ছেড়ে অন্যের ঘরে যাবে,তখন আমি মজনু হয়ে লাইলির কাছে যাব।
মেয়েঃ কি?তুমি আমাকে ছেড়ে লাইলির কাছে যাবে?
কাতারঃ আহা!আমি কি তাই বলেছি?আমাকে না পেয়ে তুমি যখন আত্মহত্যা করবে,তখন তোমার অতৃপ্ত আত্মা আর একটি মেয়ের রুপ ধরে লাইলি হয়ে বলবে-
লাইলি তোমার এসেছে ফিরে আজ-- মজনু গো আখিঁ খোল ।
মেয়েঃ কি?আমি তোমার জন্য আত্মহত্যা করবো?তবে রে-বলে একটা খেঁজুরের ডাল নিয়ে কাতারকে তাঁড়িয়ে মারতে আসে। কাতার নিরুপায় হয়ে ভয়ে খেঁজুরের গাছের আগায় উঠে বলে,না-না তুমিই আমার সব। তোমাকে ছেরে আমি আর কোন লাইলি ফাইলির কাছে যাবনা। বিশ্বাস কর।
মেয়েঃ বিশ্বাস তোমাকে আর করিনা।তুমি সব পারবে। এই আমি চললাম।
কাতারঃ তখন চিৎকার করে বলে পারু তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা (দুহাত ভুলে ছেড়ে দিয়ে)পারুউউউউউউউউউউউউউউউউ
অমনি গাছ থেকে নিচে মাটিতে ধপাস!
ঘুম ভেঙ্গে দেখে কোলবালিশ সহ খাট থেকে পড়ে গিয়ে নিচে পারু বলে চিৎকার করছে সে। মনে পড়ে এতক্ষন সে ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছিল। আহা মেয়েটি কি সুন্দর। এরকম মেয়ে হলে তো আমি আর কিছু চাইনা। উঠে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে ফুরফুরে মেজাজে কাতার অফিসে আসে। কিন্তু অফিসে এসে কোনও কাজে মন বসাতে পারে না। বারে বারে স্বপ্নে দেখা মেয়েটির কথাই ভাবতে থাকে।
ভাবতে ভাবতে আনমনে কম্পিউটারে একটা কবিতা লিখে-------
ঘুম ভেঙ্গে গেলে টুথব্রাসে টুথপেষ্ট লাগাতে গিয়ে
মনে পড়ে তোমার কথা
তোমার দাঁতগুলি বড় ঝকঝকে
মুক্তার মত।
রাত্রির ক্লান্তি মুছে ফেলতে বাথরুমে গিয়ে
কাপর ছাড়তে ছাড়তে
নির্লজ্জের মত মনে পড়ে তোমাকে
তুমি নাকি খুব ধবধবে
দুধে আলতা মেশানো।
আয়নার সামনে আমার হতশ্রী মুখটা দেখে
মনে পড়ে তোমাকে
শ্লোকের মত দু ভ্রুর নিচে
একজোড়া ক্লান্ত মায়াবী চোখ
কপালের মাঝখানে কারুকার্য খচিত
আমার দেওয়া আজন্ম টিপ পরা
তোমার মুখখানি
কতনা সুন্দর।
গোধুলী আলো জানালা গলিয়ে
যখন আমার বিছানায় এসে
দীপাবলী সাজায়
তখন মনে পড়ে তোমাকে ।
আমার নিঃস্ব ঘরটিতে
তুমি শেষ বিকেলের
সুর্যস্নান রত
আমার সুর্যমুখী দেবী।
কবিতা লিখা হলে কাতার ভাবে কি নাম দিব কবিতার। খুঁজে না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেয় থাকনা শিরোনামহীন হয়ে কবিতাটি।
এদিকে কাতারের বস মিঃ হাঙ্গরিকোডার(ফরেনার) অনেক ক্ষন থেকে কাতারকে পর্যবেক্ষন করে শেষপর্যন্ত এসে জিগ্যেস করে--- হোয়াট হাপেন মিঃ কাটার। হঠাৎ বসকে সামনে দেখে দাঁড়াতে গিয়ে যন্ত্রনায় চেঁচিয়ে উঠে-- উঁউঁউঁউঁ
বসঃ হোয়াট উঁউঁউঁউঁ
কাতারঃ এতক্ষনে বুঁজতে পারে স্বপ্নে বিছানা থেকে সকালে পড়ে গিয়ে কতটা ব্যাথা পেয়েছে কোমরে। কোনরকমে বস কে বলে--- ইয়ে মানে- স্যার- আজ স্বপ্নে (ড্রীম)-মানে -বিছানা থেকে নিচে ধপাস মানে পড়ে গিয়েছি। মানে- ড্রীম এ্যান্ড বেড টু আন্ডার ফ্লোর ধপাস।
এক কথায় ড্রীম পলিউশন স্যার।
আন্ডাস্ট্যান স্যার।
বসঃ হুমম---?
কাতারঃ হোয়াট স্যার?
বসঃ ধপাস!!!
বিঃদ্রঃ সম্পাদনা করার অনুমতি থাকলো।
(মা,খা,ই,ন--বিখ্যাত উক্তিবীদ -আল জুলু)
***অবশেষে সেই থেকে আল-কাতার খেঁজুর গাছে উঠতে ভয় পায়।
দুরে,বহুদুরে
নক্ষত্রের ওপারে