টপিকঃ একটা ছোট্ট সময়ের লম্বা জার্ণি
কাল রাত ১১ টায় হঠাৎ করেই আমাকে চিটাগং যাবার ডিসিশন নিতে হল। এক কাজিনের সামনে পরীক্ষা ওকে দিয়ে আসতে হবে বাসায় মেয়ে মানুষ কিনা তাই যেতে পারবে না যদিও আমি বলি "ক্লাস টেনে থাকতে আমি ঢাকা শহর চুষে খেতাম, আর তুই কিছু পারিস না"। এটা বললেই অবশ্য ও রেগে যায় তাই বেশী বলা যায় না। এই ফাযিল কে নিয়ে কালকে রাতের বাসে রওনা দিলাম ফকিরাপুল থেকে চিটাগং পাহাড়তলীর উদ্দেশ্যে। মনে মনে ভয় আমি একটা তার উপরে রাতের জার্নি সাথে আবার মেয়ে মানুষ। যাই হোক আমার একটা ফ্রেন্ড কেও নিয়ে নিলাম সাথে শেষের দিকে বাসের ৩টা সিট পাশা পাশি পেয়েই গেলাম ভাগ্যক্রমে। আফসোস জানালার পাশের সিট টা ঐ ফাযিল আগে গিয়ে দখল করে নিলো অগত্যা কি আর করা তার পাশের সিটে আমাকে বসতে হলো। বসে দেখি বাস ছাড়ার টাইম সময় পার হয়ে যায় কিন্তু বাস ছাড়ে না এইদিকে আমার মেজাজ চরম খারাপ মূল্যবান সিট হারিয়ে তর্কযুদ্ধ অবিরাম চলছে পরে বেলালের কল্যাণে মোটামুটি শান্ত হলাম আমরা।
রাত ১২,৩০ এ বাস ছাড়লো।
শুরু হলো তুমুল বাতাস আর বৃষ্টি এইবার আমি একটা দারুন সুযোগ নিলাম সামনে দেখি জানালার পাশের সিট খালী ব্যাস সেখানে গিয়ে মুখ বের করে ভিজালাম বৃষ্টির পানি দিয়ে অসাধারণ একটা আনন্দ পাচ্ছিলাম। ইশ কি যে ভালো লাগছিলো।
কথায় আছে না আনন্দ বেশীক্ষন স্থায়ী হয় না ঠিকই তাই হলো বাসা থেকে ফোন আসলো রিসিভ করলো কাজিন, আর কি বলবো দুনিয়ার অভিযোগ আমার নামে আমি পুরা শেষ ভাই। শিক্ষা হয়ে গেছে বৃষ্টিতে ভেজার টানা ১০ মিনিট আম্মুর ঝাড়ি খেয়ে। তখন মন চাচ্ছিলো বাস থেকে নেমে আমি, আমার ফ্রেন্ড চলে যাই। তখন পিচ্চি ঠেলা বুঝতো একা একা যাবার। শয়তানি বুদ্ধি আর কি! পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ণ করা হলো না আমাকে সেই সিটেই সেই ফাযিলের সাথেই বসতে হলো কারণ সামনের সিটে ততক্ষনে আরেক জন যাত্রী উঠে গেছে। সখের সিটখানা আমার মাঠে মারা গেল!
এরপরে ঘটলো জটিল মজার কান্ড আমার বৃষ্টিতে ভেজা বন্ধ করে ও শুরু করেছে জানালা দিয়ে ভেজা। আমি চিৎকার করতেই ফিরে তাকালো ততক্ষনে পুরো ভিজে গেছে, বেচারি। ভালোই হয়েছে অবশ্য আমার সাথে বেয়াদপি করার ফল হাতে নাতে পেয়েছে।
আমি সাথে ছিলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বেলাল শুরু করলাম গল্প হাসাহাসি চললো অনেকক্ষন। পাশে ফিরে দেখি ঘুমায়, এত শান্তির ঘুম থেকে আমারো চোখ জুড়ে ঘুম এল। দিলাম ঘুম.... এক ঘুমে কুমিল্লা।
বেলাল মনে হয় সামনের সিটে চলে গিয়েছিলো ড্রাইভারের ড্রাইভিং স্টাইল দেখতে আসলেই একটা মারাত্নক ড্রাইভার। বেলালের ভাষায় "দোস্ত ড্রাইভার টা জোস ছিলো একেবারে খায়া না খায়া টানছে"
কিছুটা অনুভব করতে পেরেছিলাম দ্বিতীয়ার্ধে কুমিল্লা থেকে রওনা দেবার পর, আমি মনে মনে আল্লাহ বিল্লাহ শুরু করেছি গাড়ির স্পিড আর ওভারটেকিং দেখে, ভাবছি আজকে বুঝি জান থাকবে না আর।
অবশেষে পৌঁছে গেলাম কাংখিত পাহাড়তলী সেখানে গিয়ে দেখি ভোর পাঁচটা। সবাই ঘুমের ঘোরে হেলেদুলে হাঁটতে হাঁটতে খালার বাসায় গিয়ে উপস্থিত হলাম। আমরাও সেই সাথে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম যাক এই ফাযিলটাকে সহীহ সালামতে বাসায় দিয়ে আসতে পেরেছি। নিজেদের উপর অর্পিত দ্বায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করতে পারায় গর্ববোধ করছিলাম। যদিও পথে ঝগড়া-ঝাটি কম হয় নাই। বাসের অন্য সবাই কম বেশী আমাদের উপর বিরক্ত ছিলো কিন্তু কিছু করার নাই গোলাম হোসেন !!!
খালার বাসায় গিয়ে নাস্তা করলাম খুব শর্টকাটে কয়েকটা ঘুম দিলাম। উঠে গেলাম কানের কাছে মৌমাছির ম,ম শব্দে উঠে তাকালাম উপরের দিকে মাথা খারাপ হবার জোগাড় হলো ভেন্টিলেটরের খোপে দেখি বিশাল এক মৌমাছির চাক শেষ পর্যন্ত ঘরে এই জিনিস?
সবার থেকে যেইসব ঘটনা শুনলা এই মৌমাছি নিয়ে তাতে বলা যায় বাকি সময়টা আমরা খালার বাসার গেস্টরুমে একটা আতংক নিয়ে অবস্থান করেছি। কখন কি হয়ে যায় পরে হাসপাতালে ভর্তি
এরপরে খাঁ-খাঁ রোদ মাথায় নিয়ে বের হলাম চট্টগ্রামে কনকর্ডের সী-ওয়ার্ল্ড দেখে আসার জন্য, ভাবছিলাম কিনা কি জিনিস হবে পরে দেখি ওয়াটার কিংডম এর থেকে অনেক ভালো এতটা ফালতু লেগেছে ওয়াটার রাইড গুলা। একটা জিনিস সবচেয়ে ভালো লেগেছে অসাধারন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যা চাইলেও ফ্যান্টাসির আশে পাশে সৃষ্টি করা সম্ভব না।
পেটে খিদা, টায়ার্ড আর কতক্ষনই বা লাফালাফি করা যায় বের হয়ে চলে আসলাম আসার সময় ভাবলাম ৫০০ টা টাকা শুধু শুধু নষ্ট না করলেও পারতাম কাজের কাজ কিছু হয় নাই আজাইড়া সি-ওয়ার্লড ঘুরলাম। এই কষ্ট মনে নিয়ে খালার বাসায় ফিরে এলাম, এসেই দেখি এলাহী কান্ড বিয়ে বাড়ির উৎসবের মত। কার বিয়ে খোঁজ নিতেই জানলাম পাশের বাসার কোন এক আপুর যেন। কাজিন সেই আপুর উপর বিস্তারিত লেকচার দিলো যা এখানে টাইপ করে কুলাতে পারবো না।
যাক চামে চামে বিয়ে বাড়ির খাবার খেলাম পরশেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ফিরের জন্য তৈরী হলাম। যেই ভাবা সেই কাজ রওনা করলাম বিকেল ৪ টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে। পথে দুইজনেই ক্লান্ত পথিক তাই মানুষকে হালকা পাতলা পঁচানো ছাড়া কাজের কাজ কিছু হয় নাই। তবে ঢাকার বাইরে সুন্দরীর বড় অভাব খুব মিস করেছিলাম। এখন ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন সেই ঢাকা সেই পথ সেই বাড়ি সেই রুম শুধু নতুন একটা ল্যাপটপ গত পরশু কিনেছি পরে লিখবো এটার কাহিনী।
সেই পর্যন্ত আল্লাহ হাফেয