টপিকঃ কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই!!
কয়েক মাস আগের কথা, করোনায় লকডাউন হলো ঢাকা শহর।
অপরিচিত এই নতুন শব্দ লকডাউন এর সাথে পরিচয় হলো মানুষের।
সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ যার যার যায়গায় থেকে টের পেলো বিচিত্র এক বিপদের।
একটু একটু করে সবাই ক্ষতির সম্মুখীন হলো।
লকডাউন উঠে গেলেও তার রেশ রয়ে গেলো, এখনো সেই রেশ চলছে।
ধনীদের লস হলেও জীবন ধারণে তেমন ব্যাঘত ঘটলো না।
মধ্যবিত্তরা ব্যাপক বিপাকে পরলো। প্রথমে শখের জিনিস বাদ দিলো, পরে সঞ্চয় খরচ করে চলতে হলো, শেষে প্রয়োজনের জিনিস কিনতেও হিমশিম খেলো। শহরের অনেকেই কাজ হারালো, ছোট ব্যবসায়ীরা ব্যাবসা বন্ধ করে দিয়ে গ্রামে চলে গেলো।
দরিদ্রদের, দিন-আনি-দিন খাই লোকেদের বিপদটা ধুম করে এসে পড়লো মাথার উপর। কাজ নেই, খাবার নেই। তবে কয়েকদিন পরেই তারা নানান ধরনের সাহায্য পেতে শুরু করলো। তাতে কোনো রকমে চলতে লাগলো তাদের জীবনযাত্র। এখন তারাই সবার আগে কাটিয়ে উঠেছে বিপদ।
আমার কিছু আধাপাকা ঘর ভাড়া দেয়া আছে। যেখানে নিম্ন আয়ের লোকেরাই ভাড়া থাকে। তাদের অনেকে রুম ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। বেশ কয়েকমাস সেগুলি আর ভাড়া হলো না। কেউ কেউ কিছু না জানিয়ে চুপচাপ পালিয়ে গেলো। কেউ কেউ গ্রামে যাচ্ছি, বেরাতে যাচ্ছি বলে বেরিয়ে গেলো, আর ফিরে এলো না।
পালিয়ে যাওয়া এইসব ভাড়াটিয়া তাদের ঘরে একটা চৌকি, কিছু থালা-বাসন আর জামা কাপর রেখে গেলো। বিশেষ করে শীতের জামা কাপর। মোটামুটি ৩ বস্তা হয়ে ছিলো।
বাসার ছেলেটা সেগুলি বিক্রি করে চা খাওয়ার পয়সা জোগাড়ের চেষ্টায় ছিলো। আমি ধমক দিয়ে বলেছি - "রেখে দে, শীতের সময় লোকজনকে দিয়ে দিবো।"
মনে মনে সন্দেহ ছিলো- "কেউ নিবে না এই পুরনো কাপড়'। তবুও কারো যদি লাগে।
এরমধ্যে এতো দিনে সেগুলির কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। বাসার ছেলেটা মনে করিয়ে দিলো। ওকে বললাম বাসার সামনে রাস্তায় একটা পাটি বিছিয়ে কাপড় গুলি বিছিয়ে দিতে। যদি কারো লাগে নিয়ে যাবে।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই লোকজড় হলো। প্রথমেই পাতলা কম্বলগুলি শেষ হয়ে গেলো চোখের নিমিশে। একেকজন ২-৩টি করে নিতে শুরু করলো। তখন বললাম "একই জিনিস কেউ একটার বেশী নিতে পারবে না।" যারা একাধিক কম্বল নিয়েছিলো, তারা সাথে সাথে অতিরিক্তটা রেখে দিলো। আমি সরে গেলাম অন্য দিকে। কিছুক্ষণ পরে এসে দেখি কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই।