টপিকঃ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট
মহাকাশ যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট হল 'স্যাটার্ন ৫'। এতে করেই মার্কিন অভিযাত্রীরা চন্দ্রলোকে পাড়ি দিয়েছিলেন। এই রকেট নিম্ন পার্থিব কক্ষপথে ১৪০ টন ভার বহন করে নিয়ে যেতে পারত।
ঐতিহাসিকভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে 'N1' রকেট। সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজেরাও চন্দ্রে মানব অভিযানের লক্ষ্যে এই রকেট তৈরি করেছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে রকেটটি পরপর ৪ বার ব্যর্থ হয়। তাত্ত্বিকভাবে এই রকেটের ৯৫ টন ভার নিম্ন পার্থিব কক্ষপথে বহন করার ক্ষমতা ছিল।
এছাড়া আরও দুটি উৎক্ষেপণযানের কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যারা অনেকটা কম ভারবহন করলেও একটি বিশেষ কারণে এদের পাশে স্থান পাওয়ার যোগ্য। এরা হলঃ আমেরিকার 'স্পেস শাটল' এবং সোভিয়েতের 'এনার্জিয়া-বুরান'। এদের বৈশিষ্ট্য হল, এদের রকেটটি একটি 'স্পেসপ্লেন' কে মহাকাশে তুলে দিতে পারত যেটির মধ্যে মহাকাশচারীরা থাকবেন। এই স্পেসপ্লেন আবার পরে অনেকটা সাধারণ বিমানের মতই পৃথিবীতে নেমেও আসতে পারত। যদি শুধুমাত্র সামগ্রিক যানের অর্থাৎ রকেট+স্পেসপ্লেনের কার্যকরী ভারবহনক্ষমতা বিচার করা যায় তাহলে এদের ভারবহন ক্ষমতা হয় প্রায় ৩০ টন। কিন্তু যদি স্পেসপ্লেনটিকেও বাহিত ভার অর্থাৎ পে-লোডের মধ্যে গণনা করা হয় (কারণ এটি নিজেও কক্ষে পৌঁছাত) তাহলে রকেট অংশের মোট ভারবহন ক্ষমতা হয়ে যায় অন্তত ১০০ টন। এই হিসেবে এনার্জিয়া স্পেস শাটলের রকেটের চেয়েও অনেক বেশী শক্তিশালী ছিল কারণ এনার্জিয়ার স্পেসপ্লেন বুরানের নিজের তেমন কোনও শক্তিশালী ইঞ্জিন ছিল না শাটলের স্পেসপ্লেনের মত ফলে কক্ষে পৌঁছানোর জন্য বুরান পুরোপুরি এনার্জিয়ার ওপর নির্ভর করত। এনার্জিয়া প্রকৃতপক্ষে N1 এর চেয়েও বেশী শক্তিশালী ছিল অর্থাৎ ঐতিহাসিকভাবে এনার্জিয়া দ্বিতীয় স্থান পাওয়ার দাবী রাখে।
বর্তমানে সক্রিয় উৎক্ষেপণ যানগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হল ইলন মাস্কের স্পেসএক্স কোম্পানির 'ফ্যালকন হেভী' রকেট। এর বৈশিষ্ট্য হল এর তিনটি রকেট বুস্টার আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে এবং তাদের বারবার ব্যবহার করা যায়- যদিও তাতে রকেটটির ভারবহন ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পায়। এই রি-ইউজেবল কনফিগারেশনে এর ভারবহন ক্ষমতা ৫৭ টন যদিও রি-ইউজ না করলে ক্ষমতা বেড়ে প্রায় ৬৪ টন হয়ে যায়।
এছাড়া ২০২১ সালের মধ্যেই প্রস্তুত হয়ে উড়ান হতে চলেছে আরও দুই মহাশক্তিশালী উৎক্ষেপণ যানের। দুটিই আমেরিকার।
প্রথমটি হল- এসএলএস অর্থাৎ 'স্পেস লঞ্চ সিস্টেম'। এতে করেই এই দশকে আবারও মানুষ পাড়ি দেবে চাঁদে। এর প্রাথমিক ভার্সনের ভারবহন ক্ষমতা হতে চলেছে ৯৫ টন। পরবর্তী ভার্সনগুলিতে তা ক্রমশ বেড়ে ১৩০ টন পর্যন্ত হতে পারে।
দ্বিতীয়টি হল- স্পেসএক্স কোম্পানির 'স্টারশিপ'। এটিই হতে চলেছে সর্বকালের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রকেট। এটির বৈশিষ্ট্য হল এটি শুধু একটি রকেট নয় বরং রকেট+স্পেসশিপ। মূলত মঙ্গলগ্রহে মানব অভিযানের লক্ষ্যে একে তৈরি করা হচ্ছে। এর ভারবহন ক্ষমতা হতে পারে ১৫০ টন এবং তা শুধু নিম্ন পার্থিব কক্ষপথে নয় বরং চাঁদ বা মঙ্গল অবধি অভিযানেও এই সক্ষমতা বজায় থাকবে। অন্যান্য পূর্ব উল্লিখিত রকেটগুলির ক্ষেত্রে গন্তব্য যত দূরে, বহনক্ষমতা তত হ্রাস পেতে থাকে। স্পেস শাটল আর এনার্জিয়া-বুরানের অন্যান্য জগতে (যেমন চাঁদ বা মঙ্গল) যাওয়ার সক্ষমতা একেবারেই ছিল না।
আগামী এক-দেড় দশকে আরও যে মহাশক্তিশালী রকেটগুলি নির্মিত হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে আমেরিকান কোম্পানি ব্লু অরিজিনের 'নিউ গ্লেন', চীনের 'লং মার্চ-৯', রাশিয়ার 'ইয়েনিসেই' এবং ভারতের 'এসএইচএলভি'।
(সংগৃহীত)