টপিকঃ ফুলের নাম : তারাঝরা
তারাঝরা
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : অ্যারোমেটিক জুঁই, এরোমেটিক জুঁই
Common Name : Fragrant virgin's bower, fragrant clematis, sweet-scented virgin's bower, Indian Traveller's Joy
Scientific Name : Clematis flammula / Clematis gouriana
বিদেশী গাছ বলে এদের বাংলা কোনো নাম ছিলো না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার “সম্ভাষণ” কবিতায় এই ফুলের নাম দিয়ে ছিলেন “তারাঝরা”। কিন্তু আমাদের দেশের নার্সারী লোকেরা তারাঝরা নামের হদিস না জানার কারণে নিজেদের মতো করে এর নাম দিয়েছে “অ্যারোমেটিক জুঁই”। অ্যারোমেটিক জুঁই নামের সাথে জুঁই শব্দটি থাকলেও বাস্তবে আসল জুঁই এর সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তারাঝরা ঝরে গিয়ে এখন অ্যারোমেটিক জুঁই নামটাই সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছিলো। তবে ইদানিং তারাঝরা নামটার প্রসার ঘটছে।
সম্ভাষণ
রোজই ডাকি তোমার নাম ধরে,
বলি "চারু'।
হঠাৎ ইচ্ছা হল আর-কিছু বলি,
যাকে বলে সম্ভাষণ,
যেমন বলত সত্যযুগের ভালোবাসায়।
সব চেয়ে সহজ ডাক-- প্রিয়তমে।
সেটা আবৃত্তি করেছি মনে মনে,
তার উত্তরে মনে-মনেই শুনেছি তোমার উচ্চহাসি।
বুঝেছি, মন্দমধুর হাসি এ যুগের নয়;
এ যে নয় অবন্তী, নয় উজ্জয়িনী।
আটপহুরে নামটাতে দোষ কী হল
এই তোমার প্রশ্ন।
বলি তবে।
কাজ ছিল না বেশি,
সকাল সকাল ফিরেছি বাসায়।
হাতে বিকেলের খবরের কাগজ,
বসেছি বারান্দায়, রেলিঙে পা দুটো তোলা।
হঠাৎ চোখে পড়ল পাশের ঘরে
তোমার বৈকালিকী সাজের ধারা।
বাঁধছিলে চুল আয়নার সামনে
বেণী পাকিয়ে পাকিয়ে, কাঁটা বিঁধে বিঁধে।
এমন মন দিয়ে দেখি নি তোমাকে অনেক দিন;
দেখি নি এমন বাঁকা করে মাথা-হেলানো
চুল-বাঁধার কারিগরিতে,
এমন দুই হাতের মিতালি
চুড়িবালার ঠুনঠুনির তালে।
শেষে ওই ধানিরঙের আঁচলখানিতে
কোথাও কিছু ঢিল দিলে,
আঁট করলে কোথাও বা,
কোথাও একটু টেনে দিলে নীচের দিকে,
কবিরা যেমন ছন্দ বদল করে
একটু আধটু বাঁকিয়ে চুরিয়ে।
আজ প্রথম আমার মনে হল
অল্প মজুরির দিন-চালানো
একটা মানুষের জন্যে
নিজেকে তো সাজিয়ে তুলছে
আমাদের ঘরের পুরোনো বউ
দিনে দিনে নতুন-দাম দেওয়া রূপে।
এ তো নয় আমার আটপহুরে চারু।
ঠিক এমনি করেই দেখা দিত অন্যযুগের অবন্তিকা
ভালোলাগার অপরূপবেশে
ভালোবাসার চকিত চোখে।
অমরুশতকের চৌপদীতে
--শিখরিণীতে হোক, স্রগ্ধরায় হোক--
ওকে তো ঠিক মানাতো।
সাজের ঘর থেকে বসবার ঘরে
ওই যে আসছে অভিসারিকা,
ও যেন কাছের কালে আসছে
দূরের কালের বাণী।
বাগানে গেলেম নেমে।
ঠিক করেছি আমিও আমার সোহাগকে দেব মর্যাদা
শিল্পে-সাজিয়ে-তোলা মানপত্রে।
যখন ডাকব তোমাকে ঘরে
সে হবে যেন আবাহনী।
সামনেই লতা ভরেছে সাদা ফুলে--
বিলিতি নাম, মনে থাকে না--
নাম দিয়েছি তারাঝরা;
রাতের বেলায় গন্ধ তার
ফুলবাগানের প্রলাপের মতো।
এবার সে ফুটেছে অকালে,
সবুর সয় নি শীত ফুরোবার।
এনেছি তার একটি গুচ্ছ,
তারও একটি সই থাকবে আমার নিবেদনে।
আজ গোধূলিলগ্নে তুমি ক্লাসিক যুগের চারুপ্রভা,
আমি ক্লাসিকযুগের অজিতকুমার।
দুটি কথা আজ বলব আমি,
সাজানো কথা--
হাসতে হয় হেসো।
সে কথা মনে মনে গড়ে তুলেছি
যেমন করে তুমি জড়িয়ে তুলেছ তোমার খোঁপা।
বলব, "প্রিয়ে, এই পরদেশী ফুলের মঞ্জরী
আকাশে চেয়ে খুঁজছিল বসন্তের রাত্রি,
এনেছি আমি তাকে দয়া করে
তোমার ওই কালো চুলে।"
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
তারাঝরার আদিনিবাস ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চল ও আফ্রিকার উত্তরাঞ্চল। গুচ্ছবদ্ধ ছোট মিষ্টি সাদা ফুল ও তার ঘ্রাণের জন্য এটি বিখ্যাত। এর এক নিকট আত্মীয় আছে আমাদের দেশের বন-জঙ্গলে, নামতার “ছাগলবটি”, Scientific Name : Clematis zeylanica.
তারাঝরা লতান আরোহী গাছ। প্রচুর শাখা-প্রশাখা যুক্ত গাছটি অবলম্বন পেলে বেয়ে বেড়ে উঠে। আমাদের দেশে এপ্রিল মাস থেকে গাছ ভরে গুচ্ছবদ্ধ সাদা সাদা সুগন্ধি ফুল ফোঁটে। মজার বিষয় হলো এই ফুলের কোনো পাপড়ি নেই, পাপড়ির মতো দেখতে অংশগুলো ফুলের বৃতি। প্রতিটি ফুল ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি প্রশস্ত হয়। ফুলের মাঝখান হালকা সবুজ আভাযুক্ত এবং এখান থেকে বের হয় অসংখ্য সাদা রঙের পুংকেশর।
ছবি তোলার স্থান : ছোটো বোনের ছাদ বাগান, বাড্ডা, ঢাকা, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ০৯/০৫/২০১৯ ইং