টপিকঃ আগুনের পরশমণি – হুমায়ূন আহমেদ (কাহিনী সংক্ষেপ)
বইয়ের নাম : আগুনের পরশমণি
লেখক : হুমায়ূন আহমেদ
লেখার ধরন : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস
সতর্কীকরণ : কাহিনী সংক্ষেপটি স্পয়লার দোষে দুষ্ট
কাহিনী সংক্ষেপ :
১৯৭১ সালের জুলাই মাসের ৬ তারিখে মতিন সাহেব সারাদিন বদিউল আলম নামের একটি ছেলের আসার অপেক্ষা করে কাটিয়ে দিলেন, কিন্তু সেই বদিউল আলম নামের ছেলেটি যখন এলো তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে, কারফিউ শুরুর সময় হয়ে গেছে ঢাকায়। বদিউল আলম ঢাকা শহরে ৭ জনের একটি দল নিয়ে এসেছে গেরিলা অপারেশন করার জন্য। সে একজন মুক্তিযোদ্ধা।
মতিন সাহেবের স্ত্রী সুরমা বেগম বদিউল আলমকে দেখে কিছু বললেন না। রাতের খাওয়া শেষে বদিউল আলমকে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে তিনি বললেন, এখানে তিনি তার দুটি মেয়ে নিয়ে থাকেন, তাই তিনি চাননা কোন ঝামেলা এখানে হোক, সকালে উঠেই যেন বদিউল আলম চলে যায়। কিন্তু বদিউল আলম স্পষ্টভাবে বলে দিল সেটা সম্ভব না। তাকে ৭ দিন এখানেই থাকতে হবে, কারণ যারা তার সাথে যোগাযোগ করবে তাদেই এই ঠিকানাই দেয়া আছে।
এরপরে সুরমা বেগম সহজ ভাবেই বদিউল আলমকে মনে নিলেন, দেখতে দেখতে মতিন সাহেবের বাড়িতে ৩ দিন কেটে গেলো কিন্তু যাদের আসার কথা তারা কেউই দেখা করতে এলো না। বদিউল আলম তাদের গোপন মিটিং এর স্থানে গিয়ে দেখে সেখানেও কেউ নেই। পরে ৩ দিন বাদে সাদেক আসে দেখা করতে। তারা তাদের পরিকল্পনা পাকাপাকি করে ফেলে। কিভাবে কি করবে সব ঠিক করে ফেলে তারা। দুপুরে দু’জন এক সাথে খেতে বসে, তাদের সাথে খেতে বসে বাড়ি বড় মেয়ে রাত্রি।
বদিউল আলমরা তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনে সবাই একে একে নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো হয়। আজকেই তাদের একটা গেরিলা অপারেশানে যাওয়ার কথা। কিন্তু দেখা গেলো তাদের বিষ্ফরক নিয়ে যে কাজ করবে সে খুবই অসুস্থ, সে কিছুতেই যেতে পারবে না। নানান দিক চিন্তা করে শেষে তাকে বাদ দিয়েই হামলার আয়োজন করা হয়। দুটি গাড়ি যোগার করা হয়, যার একটি তাদের নিজের আর আরেকটি গাড়ি অন্য এক ভদ্রলোকের। ভদ্রলোক যখন জানলো এই গাড়ি মুক্তি যোদ্ধারা ব্যবহার করবে তখন কোন কথা না বাড়িয়ে সাথে সাথে গাড়িটি দিয়ে দেন তিনি।
দলটি যখন যাত্রা শুরু করলো তখন কিছু দূর যেতেই সামনে একটা বিপদ দেখা দিলো। রাস্তায় কয়েকজন পাকিস্তানি সামরিক লোক চেক পোস্ট বসিয়েছে। বদিউল আলমরা দু’জন সেখানে ভালো মানুষের মত নেমে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে আক্রমন করে। অনায়াসে শত্রুদের খতম করে এগিয়ে যায় ফার্মগেটের দিকে। সেখানে ২০-২৫ জন মিলিটারির একটা চৌকি আছে। আলমরা সেখানে পৌছে অতর্কিতে দুটো গ্রেনেট ছুড়ে আর একরাশ গুলি করে সবাইকে ধরাশায়ী করে। এরপর তারা এগিয়ে যায় হোটেল ইন্টারকনের দিকে। সেখানে চলতি অবস্থায় দুটি গ্রেনেড ছুড়ে চলে যাবে। বিদেশী সাংবাদিকরা তখন বুঝতে পারবে ঢাকাতেও যুদ্ধ চলছে।
এদিকে সুরমা বেগম তার বড় মেয়ে রাত্রির অচরণ দেখে বুঝতে পারেন রাত্রি বদিউল আলমকে পছন্দ করতে শুরু করেছে। তাই তিনি সেদিনই বদিউল আলম ফিরে এলে তাকে চলে যেতে বলেন। বদিউল আলম রাত্রিদের বাড়ি থেকে চলে যায় তার মামার বাড়িতে। কদিনের মধ্যেই আরো কয়েকটা গেরিলা বাহিনী ঢাকাতে ঢুকে পরে। তারা পাওয়ার স্টেশান উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। এরমধ্যে বদিউল আলমরা যায় একটি পেট্রল পাম্প উড়িয়ে দিতে। পেট্রলপাম্প উড়িয়ে দিয়ে ফেরার সময় একটি মেলিটারি ট্রাকের সাথে তাদের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সেখানে বদিউল আলমে শরীরে গুলি লাগে। বদিউল আলমের সহযোদ্ধা আশফাক তাকে রাত্রিদের বাড়িতে রেখে চলে যায় ডাক্তার ঢাকতে। কিন্তু সে ধরা পরে যায় আর্মি ইন্টেলিজেন্সের হাতে। তখনও তার গাড়িতে তার দুজন শহীদ সহযোদ্ধার লাশ।
বদিউল অলমকে সবাই মিলে নানা ভাবে সেবা করে। বদিউল আলম ব্যথায় অস্থির হয়ে যায়। আশফাক ডাক্তার নিয়ে আসবে এই আশায় পথ চেয়ে থাকে সবাই, কিন্তু ওরা জানে না আশফাক ধরা পরে গেছে। আশফাককে তখন টর্চার করা হচ্ছে তার সঙ্গীদের ঠিকানা বলার জন্য। একে একে আশফাকের হাতের ৪টি অঙ্গুল ভেঙ্গে ফেলা হলেও সে কোন ঠিকানাই দেয় না। তাই তাকে হত্যা করার হুকুম দেয়া হয় আর ডাক্তারের অপেক্ষায় অপেক্ষায় রাত শেষ হয়ে ভোর হওয়ার সময় হয়ে আসে ঢাকার বুকে।
----- সমাপ্ত -----