টপিকঃ করোনা দুর্যোগের মধ্যে বস্তিতে আগুন
একের পর এক বস্তিতে আগুন
করোনা দুর্যোগের মধ্যে আগুনে সহায়-সম্পদ হারিয়েছেন রাজধানীর কমলাপুরের ৩ শতাধিক বস্তিবাসী। শুক্রবার (২৬ জুন) রাতে মেথরপট্টি বস্তিতে দেড় ঘণ্টায় পুড়ে ছাই হয়ে যায় ৭০টি বসতঘর। মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। ছাই হয়ে যাওয়া সংসারের ছিঁটেফোটা পাওয়ার আশায় ধ্বংসস্তূপ হাতড়াচ্ছেন দুই নারী। মায়ের সঙ্গে ছাই কুড়াচ্ছে অবুঝ শিশুরাও।
টিটিপাড়া বস্তির আগুন শুক্রবার (২৬ জুন) মধ্যরাতের পর লাগা ভয়াবহ আগুনে সব হারিয়ে নিঃস্ব রাজধানীর কমলাপুরের মেথরপট্টি বস্তির ৩ শতাধিক মানুষ। ৭০টি ঘর পুড়ে যাওয়ায় খোলা আকাশের নীচে মানবেতর অবস্থায় আছেন বস্তিবাসী।
অভুক্ত, অসহায় মানুষগুলো অভিযোগ করলেন কোনো জনপ্রতিনিধিকে পাশে না পাওয়ার। মহামারীর মধ্যে কোথায় যাবেন, সে প্রশ্নেরও নেই কোনো উত্তর। বার বার পুনর্বাসনের দাবি জানালেন তারা ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি বস্তিতে পরপরই আগুন লাগল। পুড়ে গেল কয়েক শ সংসার। গুলশানের কড়াইল বস্তিতে বছরে গড়ে অন্তত দুবার আগুন লাগে। কোনো কোনো বছর তিনবার আগুন লাগার ঘটনাও আছে। গত কয়েক দিনের মধ্যেই চট্টগ্রামে পরপর দুটি বস্তিতে আগুন লাগল। ঢাকার রূপনগরের আগুনের একটি ছবি ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আগুনের ধোঁয়ার কুণ্ডলীর সামনে জ্বলজ্বল করছে একটা সাইনবোর্ড। তাতে লেখা: ফ্ল্যাট প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত স্থান/বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ। জায়গাটি গণপূর্ত বিভাগের। গণপূর্ত মানে পাবলিক ওয়ার্কস, জনগণের সেবায় বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো বানাবার দায়িত্ব এই বিভাগের। কিন্তু কাদের কল্যাণের জন্য গণপূর্ত সেখানে ফ্ল্যাট বানাবে? জনগণের জন্য নিশ্চয় না। মানুষ এই আগুন আর সেসব নির্মিতব্য ফ্ল্যাট প্রকল্পের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছে—পেতেই পারে। এর মধ্যেই পুড়ে গেছে বস্তিবাসীর ২০০টি ঘর।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব একবার বলেছিলেন, বস্তি উচ্ছেদ করতে অনেক সময়ই কৌশল হিসেবে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অথচ দেশের জিডিপিতে তাদের ভূমিকাও কম নয়।
এই জমিদারেরাই সরকারি জায়গায় বস্তি বসিয়ে ভাড়া তুলে আরও ধনবান হন। বস্তির লোককে জিম্মি করে রাজনৈতিক প্রতাপ দেখান। এসব বস্তির প্রতি বর্গফুট জায়গার ভাড়া যেকোনো মধ্যবিত্ত পরিবারের ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুট ভাড়ার চেয়ে বেশি। মৌলিক অধিকারের মুখে ছাই মেখে সরকারি সংস্থার বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি তাদের কিনতে হয় বাজারমূল্যের চাইতে বেশি হারে—যেহেতু সেসব তাদের অবৈধ পথে পেতে হয়। বস্তিনির্ভর অর্থনীতির শেষ দৃশ্যে আসে আগুন। হানাদারদের পোড়ামাটি নীতি বাস্তবায়নের অবাধ ক্ষেত্রও এই বস্তি। আগুন দিয়ে মানুষগুলোকে তাড়িয়ে সেই পোড়া মাটিতে বহুতল ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা চলে। আমরা কেবল আগুনটা দেখি, আগুন ধরার আগের ও পরের এই তেলেসমাতিটা সবার চোখে পড়ে না।