সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন যাপিত সময় (০৮-০১-২০১৩ ০০:১১)

টপিকঃ টোটেম (১ম অংশ)

(আমি হুমায়ূন আহ্‌মেদ স্যারের সৃষ্ট মিসির আলী চরিত্রটির অসম্ভব ভক্ত। হুমায়ূন আহ্‌মেদ আজ নেই, কিন্তু আমি মানতে পারিনা এই ধারালো চরিত্রটি নিয়ে আর কোন গল্প লেখা হবেনা। শুধুমাত্র এই কারনে এই চরিত্রটি নিয়ে গল্পটা লিখলাম। আমি নিশ্চিত, স্যার বেঁচে থাকলে আমার এই ধৃষ্টতা ক্ষমা করে দিতেন।)


মিসির আলী মাত্র চায়ের কাপ নিয়ে বিছানায় উঠতেই কে যেন ঠক্‌ ঠক্‌ করে দরজায় ঘা দিল। বেশী রাত তিনি একদমই জাগতে পারেন না, আর আজকাল তো দশটা না বাজতেই বিছানায় চলে যান। নতুন করে এই ঠান্ডা পড়তে না পড়তে তার অ্যাজ্‌মার সমস্যাটা আবার দেখা দিয়েছে। শুয়ে থাকলে তাও অতটা খারাপ লাগেনা, কিন্তু এখন তো কম্বলের তল থেকে একদমই বের হতে ইচ্ছা করছে না। মিসির আলী ভাবলেন যে সাড়া দিবেন না। কিন্তু অধৈর্য্য হাতের ফের ঠক্‌ ঠকানি শুনে আর চুপ থাকতে পারলেননা। কম্বলের ভিতর থেকেই জিজ্ঞেস করলেন - কে?
- স্যার, আমি।
- আমি কে?
- স্যার, আমি ইমরান।
- কোন ইমরান।
এমন করে তিনি সচরাচর কাউকে দরজার বাইরে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেন না, বুদ্ধিমান হলে বুঝা উচিৎ যে তিনি এখন দরজা খুলতে চাচ্ছেননা। কিন্তু দেখা গেল যে আগন্তুক তেমন একটা বুদ্ধিমান না। দ্বিগুন উৎসাহে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল
- স্যার আমি আপনার ছাত্র, সিক্সটিন ব্যাচের।
এখন তো আর কিছু বলা যায়না। মিসির আলী কে বাধ্য হয়ে উঠতেই হল। দরজা খুলে দেখেন বেশ স্বাস্থ্যবান এক যুবক দাঁড়িয়ে। ঠিক চিনতে পারলেননা।
- স্যার মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন?
- না, ঠিক আছে। কি ব্যাপার?
- আমাকে চিনতে পেরেছেন স্যার? আমি রতনগড় থেকে আসছি। কমলের সাথে রতনগড় যে গিয়েছিলেন, আমার মামার বাসায় রাত্রে থাকার ব্যবস্থা করেছিলাম। পরদিন আপনাদেরকে ওস্তাদ চৈতন মিয়ার কাছে নিয়ে যেতে চাইছিলাম, কাজ হয়ে গেল জন্যে আপনারা আর থাকলেননা, ট্রেনে করে চলে এলেন। এখন কি স্যার চিনতে পেরেছেন?
মিসির আলীর শুধু মনে আছে তিনি রতনগড় গিয়েছিলেন। কিন্তু কেন, কবে গিয়েছিলেন, কোথায় ছিলেন কিছুই মনে নেই। ইদানিং অনেক কিছুই মনে রাখতে পারছেন না। তবু হ্যাঁ হুঁ করে বললেন
- আচ্ছা, এস ভিতরে এস।
ছেলেটা ভিতরে এসে সোফায় বসল। ঠান্ডায় বেচারা রীতিমত কাঁপছে।
- রতনগড় তো অনেক দূর, কোন কাজে এসেছিলে নাকি?
- জ্বী স্যার, এখানে একটা কাজ ছিল। নতুন কিছু ঝুটা মালের ব্যাবসা শুরু করব ভাবছি, এখানে এসে একটু স্বশরীরে মালিকদের সাথে কথা বললাম আর কি। তো ভাবলাম এদিকে এলাম যখন আপনার সাথে দেখা না হয় করেই যাই।
- হুঁ। ঠাণ্ডায় তো জমে যাচ্ছ। চা খাবে নাকি।
- চা খাওয়া যায় স্যার। রান্নাঘর দেখিয়ে দেন স্যার, আমিই বানিয়ে নিয়ে আসছি।
- লাগবেনা, বস তুমি।
মিসির আলী ইমরান কে বসিয়ে রেখে রান্নাঘরে গেলেন। তার নিজের চা একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে। নিজের জন্যেও আর এক কাপ বানাবেন।

চা এনে দেখেন ছেলেটা আরাম করে জুতা টুতা খুলে পা গুটিয়ে বসে পেপার পড়ছে। রাতে থাকার প্ল্যান নাকি? মিসির আলী শঙ্কিত হয়ে উঠলেন। তার এখানে এক্সট্রা কোন বিছানা নেই। কোথায় থাকতে দেবেন? নাহ্‌, তেমন কিছু দেখলে কিছুটা রূঢ়ই হতে হবে মনে হয়।
- নাও চা খাও।
- ধন্যবাদ স্যার।
ছেলেটা নিজেই উঠে এসে মিসির আলীর হাত থেকে চায়ের কাপ নিল।
- কখন রওনা দিয়েছিলে?
- সকালে স্যার, প্রায় আটটার দিকে।
- সকাল আটটায় রওনা দিলে রতনগড় থেকে এখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে না হলেও রাত আটটা বাজার কথা, ব্যাবসায়ী মালিকদের সাথে কথা বলার সময় পেলে কখন?
ছেলেটা কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে থাকল।
- আমার কাছে যেহেতু এসেছ, নিশ্চয় খোঁজখবর নিয়েই এসেছ। দেখ, ইমরান, তুমি যে ধরনের বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছ বলে আমি নিশ্চিত, ওগুলোতে এখন আর আমি বিন্দুমাত্র আগ্রহী নই। কাজেই তোমার মনে হয় চা টা শেষ করে চলে গেলেই ভাল হবে। যদিও অনেক দূর থেকে এসেছ, কিন্তু আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত যে আমার আসলেই কিছু করার নেই।
- স্যার, আমি খুবই লজ্জিত। আসলে সব জেনেই এসেছি, কিন্তু স্যার বিশ্বাস করুন, আমার আসলেই কিছু করার ছিলনা। আর আমি আপনাকে ঠিক মিথ্যা বলি নাই, দুইটা কোম্পানীর মালিকের সাথে আমার আসলেই দেখা করার কথা, কিন্তু তা কালকে। আমি স্যার আপনাকে ঠিক কোনো স্ট্রেস দিবনা। আপনি শুধু আমার গল্পটা শুনবেন, আর মতামতটা দেবেন। আমি তারপরেই চলে যাব। প্লিজ স্যার না করবেননা।
- কি জন্যে তোমার গল্পটা আমাকে বলা জরুরী বলে মনে হচ্ছে তোমার কাছে?
- স্যার, এটার উপর আমার জীবন নির্ভর করছে।
মিসির আলী খানিক্ষন চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন
-চা টা শেষ কর। তারপর শুরু কর। কিন্তু মনে রাখ, আমি কোন সমাধান হয়তো নাও দিতে পারি।
ছেলেটা এক চুমুকে  চা টা শেষ করে বলল
-আচ্ছা, সমস্যা নাই স্যার। আমি শুরু করছি।

চলবে...

Re: টোটেম (১ম অংশ)

শুরুয়াদ আচ্ছা হুয়া thumbs_up অরিজিনাল আমেজতা মোটামুটি বজায় রেখেছেন! আশা করি গল্পটি সম্পূর্ণ করবেন।

Calm... like a bomb.

Re: টোটেম (১ম অংশ)

Re: টোটেম (১ম অংশ)

শুরু চমৎকার। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম

এখনও শিখছি। আরো শিখতে চাই। পরে নাহয় শেখানো যাবে। আপাতত শেয়ার করতে পারি

Re: টোটেম (১ম অংশ)

যাক্ মিসির আলী এখনো বেঁচে আছেন দেখে ভালো লাগছে....।
ভালো হয়েছে।

বেদনাদায়ি, তবুও দিনান্তে যে তোমায় ভালবাসি!

Re: টোটেম (১ম অংশ)

হুমায়ূন বেঁচে থাকলে তো ঐ সুযোগই পেতেন না tongue তবে, তিনি বোধহয় অখুশী হতেন না smile চমৎকার হচ্ছে। একটা মিসির আলি নাটকের শুরুটা অনেকটা এরকম ছিলো যতদূর মনে হচ্ছে thinking

উদাসীন'এর ওয়েবসাইট

লেখাটি CC by-nc 3.0 এর অধীনে প্রকাশিত

Re: টোটেম (১ম অংশ)

ভাল হইছে smile পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দিও মামা ।

সালেহ আহমদ'এর ওয়েবসাইট

লেখাটি GPL v3 এর অধীনে প্রকাশিত

সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন যাপিত সময় (০৮-০১-২০১৩ ০০:৫৫)

Re: টোটেম (১ম অংশ)

Re: টোটেম (১ম অংশ)

hit like thunder and disappear like smoke

১০

Re: টোটেম (১ম অংশ)

১১

Re: টোটেম (১ম অংশ)

গল্প ভালো লিখেছেন clap কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, আপনাকে মিসির আলীই কেন লিখতে হবে? বুঝলাম ফ্যান, তারপরেও...... আমি নিজে আইজাক আসিমভ এর বিশাল ফ্যান। কিন্তু তাই বলে হ্যারী সেলডন বা হোভার ম্যালো তৈরীর চেষ্টা করি নাই। অন্য কোন নাম দিয়ে চেষ্টা করলে আরও যে ভালো হতো না, তা নিশ্চয় নয়?  এটা অবশ্য আমার ব্যক্তিগত মতামত donttell

রাবনে বানাদি ভুড়ি :-(

১২

Re: টোটেম (১ম অংশ)

চমতকার শুরু ! ভাল লাখল ।

১৩ সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন যাপিত সময় (০৮-০১-২০১৩ ২৩:১১)

Re: টোটেম (১ম অংশ)

১৪

Re: টোটেম (১ম অংশ)

অনেক ভাল হইছে ......... প্রিন্ট করে মাত্র পড়লাম

ভাল লাগল  smile smile

১৫

Re: টোটেম (১ম অংশ)

১৬

Re: টোটেম (১ম অংশ)

dancing dancing সুন্দর হয়েছে  সব লেখা গুলা ।