টপিকঃ হারিয়েখুঁজি
#হারিয়েখুঁজি
দিশা আর সৌরভ শিবপুর BE famous couple.তারপর কি হল। কলেজ এর পর ওদের সাথে যোগাযোগ ছিলই না আমার সবাই ছিটকে গাছি | কদিন আগে দিশা সাথে দেকা লাস্ট শুনে ছিলাম ওদের ব্রেক আপ হয়ে গাছে খুব অবাক হয়ে ছিলাম কারণ সৌরভ খুব matured and brillent student chilo, he knows value of relation. onek kotha holo. Still Disha is unmarried
এয়ারপোর্ট এ পৌঁছে দিশা আর ওর বাবা তাড়াতাড়ি ট্যাক্সি থেকে মাল গুলো নামিয়ে একটি ট্রলিতে ভোরে নিলো। এরমধ্যেই দিশার মায়ের কান্না শুরু হলো, এতো দূরে মেয়েটি যাচ্ছে তাদের ছেড়ে, দিশারও কান্না এসে যাচ্ছিলো কিন্তু কোনোক্রমে নিজেকে সামলে নেয় সে, 'মা আমি USA পৌছিয়েই তোমাদের ভিসার ব্যবস্থা করবো দেখো'। দিশার মাও নিজেকে সামলে নিলেন, এতদূরে যাচ্ছে মেয়েটা, কান্নাকাটি এখন না করাই ভালো। এয়ারপোর্ট এর গেট এ সাত আটজনের লাইন পড়েছে। একদিকে ওর মা সমানে বলে চলেছেন যেন ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করে, মোটা জ্যাকেট টা যেন হাতের কাছে রাখে, অন্যদিকে দিশার বাবাও মেয়েকে কাস্টমস, পাসপোর্ট, ডলার এর ব্যাপার গুলো বুঝিয়ে দিচ্ছেন ঝটপট, দিশাও একবার এরটা শোনে আরেকবার ওরটা।এই সময়ই হটাৎ একটা ট্যাক্সি থেকে অভি আর সোহম এসে নামে। মুহূর্তে দিশারা তিনজনেই গম্ভীর হয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়, অভি একটাও কথা না বললেও সোহম ই জিজ্ঞেস করে,'সত্যি চলে যাচ্ছিস দিশা?' দিশা না শোনার ভান করে থাকে। দিশার বাবা গম্ভীর ভাবে শুধু জবাব দেয়,'না প্লেন দেখতে এসেছি এখানে'। দিশা এইসময় ঢুকে যায় এয়ারপোর্টের ভিতরে
প্লেনটা ঠিক সময় ছেড়ে দিয়েছে, একটু বাদেই দিল্লি পৌঁছে যাবে সে, আর সেখান থেকে একদম নিউয়র্ক... কতদূরে চলে যাবে সে। সব ঠিক থাকলে তিন মাস পরে আজকের দিনেই তার অভির সাথে বিয়ে হতো। নাহ, অভি কে আর প্রশ্রয় দেওয়া যায়না, দিনের পর দিন অভি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে, কয়েকবার গায়ে হাত ও তুলেছে, সব মুখ বুঝে সহ্য করেছে ও,আর নয়। অভি বাড়তে বাড়তে এতটাই বেড়েছে যে বাবার দিকে মারমূখী হয়ে এগিয়ে যায়! মাঝেমাঝে ভাবে দিশা চারটে বছর সহ্য করলো কিভাবে ও! অবশ্য খারাপ লাগলেও কিইবা করবে, যে ভুল এককালে সৌরভ এর সাথে ও করেছে তারই শাস্তি এসব। চোখে জল এসে যায় দিশার, এসব তো হওয়ার ই ছিল, সৌরভ যে সবাই হতে পারেনা, ওর তুলনা ওই। মনে পরে দিশার মাঝে মাঝেই এসব কথা, ইঞ্জিনারিং পড়ার সময় আলাপ, বন্ধুত্ব যে কখন প্রেম এ পরিণত হয় তা ওরা নিজেরাও বোঝেনি, সৌরভ অনেক বেশি পরিণত মনের ছিল, মনের কথা ওকে বলে যে শান্তি দিশা পেতো তা বোধহয় নিজের সাথে কথা বলেও ও পেতোনা।এমন কি যে বাবা চিরকাল প্রেমের তীব্র বিরোধী ছিলেন তিনিও সৌরভ কে ভালোবেসে ফেলেন, আসলে সৌরভ কখনোই প্রেমে গদগদ হয়ে যেতোনা। ঘনঘন ফোন করা বা দিশাদের বাড়ি গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটায়নি।ও সবসময়ই ভাবতো প্রেমতো মনের টান, বন্ধুত্ব, আর বিশ্বাস, তাই বাহ্যিক ব্যাপারটা ঠিক মানতোনা। আর দিশার ও এ নিয়ে কখনো আপত্তি ছিলোনা। তার সৌরভ কে সে এভাবেই ভালোবেসেছে। কিন্তু ঝড়ের মতো অভি যেভাবে ওর জীবনে এসে পরে আর সব ওলোটপালোট করে দেয়, এক লহমায় দিশা সব ভুলে যায়, পরে যায় অভির প্রেমে। এক চোখ জল নিয়ে দিশা ভাবে কেন অভির প্রেমে সে পড়তে গেলো, জীবনটা তো এভাবে বদলাতোনা। অফিস এ নতুন জয়েন করা রীতিমতো কাঁপানো হ্যান্ডসম অভির উগ্র মেজাজ, চুপচাপ নিজের মতো কাজ করা ছেলেটা বড্ডো টানতো ওকে, নিজেই এগিয়ে আলাপ করেছিল দিশা। অভির কম বয়েসে মা মারা যাওয়া, বাবার দ্বিতীয় বিয়ে, প্রথম প্রেম ভেঙে যাওয়া সব আপন করে নিয়েছিল দিশা, অভির রাগ দুঃখ ,অভিমান ভালোবেসে সামলাতে সামলাতে কবে যেন ও অভির সম্পত্তি হয়ে উঠেছিল। আর এটাই হয়ে উঠলো ওর কাল। প্রেমে যদি কেউ কারুকে নিজস্ব সম্পত্তি ভাবতে থাকে সেখান থেকেই অবিশ্বাস , সন্দেহ আর না জানি আরো কত কি ঢুকতে থাকে।অভি ও দিশার সম্পর্কটা শেষে একরকম জোর করে চলছিল। হাঁপিয়ে উঠছিলো দিশা। অভির রাগ শেষমেশ ওকে মারমূখী করে তোলে। কিন্তু দিশা সব মেনে নিলেও মা বাবার অসম্মান মেনে নিতে পারেনি। একেই তারা দিশার উপর অসন্তুষ্ট সৌরভের মতো ছেলের সাথে দিশার এই ব্যবহারের জন্য। অভিকে তারা একরকম জোর করে মেনে নিলেও খুব যে পছন্দ করেনা তা বোঝে অভিও । দিশা না চেয়েও বারেবারে সৌরভের তুলনা টেনে আনে অভির সামনে। এই নিয়ে ঝামেলা এতো দূর ই গড়ায়, অভি দিশার বাড়িতে, তার মা বাবার সামনেই দু-ঘা বসিয়ে দেয় দিশাকে। দিশার বাবা হতচকিত হয়ে এগিয়ে আসে, তীব্র প্রতিবাদের মুখে পরে অভি এগিয়ে যায় দিশার বাবাকে মারতেও। আর দিশা সামলাতে পারেনি নিজেকে... বিয়ে ভেঙে দেয় সেইমুহূর্তেই। অভির বারবার অনুরোধেও আর মুখ ফেরায়নি সে। অবশেষে বিদেশ থেকে চাকরির অফারটা পেয়ে দিশা পালিয়ে বাঁচে...
নিউইয়র্কে পৌঁছে বড্ডো ক্লান্ত হয়ে পরে দিশা। অফিস থেকে কেউএকজন ওকে পিক- আপ করবে শুনেছে। ট্রলিটা টানতে টানতে এয়ারপোর্টের থেকে বেরিয়ে নিজের নাম লেখা প্লাকার্ডটা দেখতে পায়। কিন্তু প্লাকার্ডধারীকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকায় ও। অস্ফুটে বলে ওঠে 'সৌরভ' ! গাড়িতে দিশাকে পিছনের সিটে বসিয়ে সৌরভ বসলো সামনের ড্রাইভারের সিটে।হাজারো কথা ভিড় করছিলো দিশার মনে। দুচারটি দরকারি কথা ছাড়া কিছুই বলছিলোনা সৌরভ। বড্ডো সুন্দর লাগছিলো ওকে দেখতে, একটু যেন মোটাও হয়েছে। তবে দিশা অবাক হচ্ছিলো এটা দেখে যে সৌরভ যেন ওকে চেনেইনা। দিশা ভাবতে পারছিলোনা যে সৌরভের সাথে এভাবে ওর দেখা হবে। হঠাৎ বড্ডো ভালোলাগে দিশার, খুব রাগ করেছে সৌরভ, তাই তো কেমন না চেনার ভান করছে, কিন্তু দিশা ভুলিয়ে দেবে সব রাগ...
পরদিন সকালে কলিংবেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙে দিশার। হুড়মুড় করে গিয়ে দরজা খুলতেই মনটা ভাল হয়ে গেলো ওর। সামনে দাঁড়িয়ে আছে সৌরভ। উফঃ! কি সুন্দর ই না লাগছে, বোঝাই যাচ্ছে প্রাতঃভ্রমণ সেরে ফিরছে। খুব নর্মাল অথচ গম্ভীর ভাবে সৌরভ বলে গেলো, 'একঘন্টার মধ্যেই আমি বেরোব, প্রথম দিন অফিস যাওয়ার রাস্তাটা চিনে নেবেন, আপনি রেডি হয়ে নেবেন', বলেই বেরিয়ে গেল সৌরভ । হাসি পেল দিশার, বাবুর ভারী রাগ হয়েছে..সব রাগ ওকে ভাঙাতেই হবে। ভগবানের অসীম কৃপায় যখন এতদূর আস্তে পেরেছে বাকিটাও পারতেই হবে তার । এখনো বাবা মাকেও জানায়নি সৌরভের ব্যাপারটা। সব ঠিকঠাক চলুক তারপর সৌরভকে বগলদাবা করে একেবারে নিয়ে ফিরবে ইন্ডিয়াতে। দুজনের কেউই দেশ ছেড়ে বাইর আসতে চাইতোনা কখনো। সৌরভ সবসময় বলতো, 'বুঝলি দিশা আর যাই হোকনা কেন দেশে চাকরি করবো, বিয়ে করে এই পোড়া দেশেই পড়ে থাকবো, এখানেই বিয়ে করে এখানে হানিমুন করবো।' দিশা হেসে বলতো,'একদম, আর আমরা যাবো পুরীতে হানিমুন করতে'। দিশা ভাবে, সেই ওর স্মৃতি থেকে বাঁচতেই বেচারা হয়তো আজ বিদেশে, যেমন ও পালিয়ে এসেছে আজ। তবে এবার দুজনেই ফিরবে দেশে। সৌরভেরই গিফ্ট করা একটা পুলওভার চাপালো আজ... হাল্কা ঠান্ডার রেশ আছে। সুন্দর অথচ ছিমছাম ভাবে সাজলো দিশা, অফিসে যাওয়ার জন্য ও রেডি। সময় যেন আর এগোচ্ছেনা। তাড়াতাড়ি বাইরে এসে ওয়েট করতে লাগলো সৌরভের। কিছুক্ষনের মধ্যেই কালকের সুন্দর লাল গাড়িটা নিয়ে হাজির সৌরভ। কিন্তু গাড়িতে ওটা কে বসে! ড্রাইভারের সিট্ থেকে নেমে এলো সৌরভ। ঠিক তার পাশের সিট্ থেকেই উঁকি দিয়ে দিশাকে 'হ্যাল্লো' বলে উঠলো অল্প বয়েসী রীতিমতো সুন্দরী মেয়েটি। পিছনের দরজা খুলে গাড়িতে দিশার উঠে বসার জন্য ওয়েট করলো সৌরভ। পা যেন আর নড়ছিলোনা দিশার।
গাড়িটা হু হু করে ছুটছিল সুন্দর রাস্তাটা ধরে। সামনে সৌরভের পাশে বসে থাকা মেয়েটি নিজেই নিজের পরিচয় দিলো, 'হাই, আমি দূর্বা। আমার অফিসটা তোমাদের অফিসের পাশেই...।' অনেক কিছুই বলে যাচ্ছিলো দূর্বা, দিশার মাথায় বিশেষ কিছু ঢুকছিল না। কথায় কথায় আলোচনা আসলে ঘুরে গেছে। দূর্বা আর সৌরভের মধ্যে রীতিমতো তর্ক বেঁধেছে, প্রথম ম্যারেজ এনিভার্সেরীতে কোথায় যাওয়া হবে, গ্রেট ক্যানিয়ন না কি নায়াগ্রা। অবশেষে দূর্বা জানতে চাইলো,' দিশা প্লিস, হেল্প আস। তুমি আমার জায়গায় থাকলে কোথায় যেতে?' দিশার যেন চমক ভাঙলো, কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিলো,'পুরী'...
আজও দিশা বিয়ে করে নি কিন্তু kano ....পাঠক দের জন্য রইল প্রশ্ন...দেকি কে কি ভাবছেন