টপিকঃ অগ্নিকন্যা - ভালবাসার হাত ধরে একটি নারীর হার না মানার কাহিনী পার্ট ২

আট বছর পর....

কলেজ থেকে ফিরে বেশ ক্লান্ত লাগছিল অনুর। ব্যাগ টা সোফায় রেখে বসে পড়লো মাথা হেলান দিয়ে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। ফোনটা কানে নিয়ে ক্লান্ত গলায় বলল হুমম মা বল।
মা -- ফিরেছিস?
--হুমম এই মাত্র ফিরলাম।
--খেয়েছিস কিছু?
--হ্যাঁ লাঞ্চ বক্স তো নিয়ে ই যায়।
--আচ্ছা বলছিলাম যে....
কথা শেষ না হতেই অনু বললো জানি মা কি বলবে, ভেব না আমরা এই Sunday তেই যাচ্ছি ওখানে, মন খারাপ কোরো না মা সব ঠিক হয়ে যাবে। মায়ের গলা টা একটু ভিজে এলো হয়তো পুরোনো কিছু মনে করে। ভেজা গলায় বললো হুমম, সাবধানে থাকিস মা,ভাল থাকিস ।
-- এখন রাখলাম মা, বলে অনু ফোন রাখল, তারপর ফোন টা পাশে সোফায় ছুড়ে ফেলে মাথা টা আবার হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। পুরোনো স্মৃতিরা এসে চোখের পাতা ভিজিয়ে দিলো, আট বছর আগে এরম একদিন মা কাঁদতে কাঁদতে ফোন করেছিল। এক এক করে মনে পড়ে যাচ্ছে সব।সেই দিনের কথা সেই রাতটার কথা। সেই দিন টা যেদিন রূপ কে হারিয়ে ফেলেছিল।
হঠাৎ একটা হাত কাঁধে পড়তেই অনু চমকে উঠল।
অনু-- সাত্যকি... কখন এলে?চশমা খুলে চোখ মুছতে মুছতে বলল অনু।
সাত্যকি অনামিকার স্বামী। 5 বছর হল ওদের বিয়ে হয়েছে। অনু কলেজের অধ্যাপক, আর সাত্যকি একজন নামজাদা উকিল। সাত্যকি, ওদের আড়াই বছরের মেয়ে কুহু, আর সাত্যকির মা, এই নিয়ে অনামিকার ছোট্ট সংসার।
সাত্যকি অনুর পাশে এসে বসে ওর হাত টা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললো আবার পুরোনো কথা মনে করে কষ্ট পাচ্ছ?
অনামিকা বললো কি করব বল ওই অ্যাসিড টা আমদের সবার জীবনে এমন দাগ কেটে দিয়েছে চাইলে ও ভুলতে পারি না।
সাত্যকি-- যা হয়েছে খারাপ হয়েছে, কিন্ত একটা কথা সত্যি করে বলতো ওই দিনগুলো যদি না আসতো তাহলে কি আমরা এত ভালো একজন IPS officer কে পেতাম!? তুমি বল রূপ কে হারিয়ে ফেলেছ...  হয়তো ঠিকই বল, কিন্তু রূপ কে না হারালে কি ASP অপরূপা কে আমরা পেতাম!!? রূপ কে ছিল জানি না, আমি অপু কে চিনি, এক অপরাজিতা কে চিনি, আমাদের সবার প্রেরণা। এগুলো কি কিচ্ছু নয়?
অনু - ঠিক ই বলেছ, কিন্তু জানো একদিন আমি ওকে বলেছিলাম নিজের কথা ভুলে অন্যের জন্য বাঁচতে, আর দেখো ও আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে, নিজের কথা ভুলে গেছে। কত দায়িত্ব।সমাজসেবী, কত কাজ তার , সবার কথা ভাবতে ভাবতে নিজের আর আমাদের কথা ভুলে গেছে।
কিন্তু যে ছেলেটা এত গুলো বছর ওর জন্য অপেক্ষা করছে তার কি দোষ বল? চার বছর আগে বলত কারুর দয়া চায় না, এখন তো ওর পায়ের নিচে শক্ত মাটি, আর যা তেবর কেউ চাইলেও দয়া করতে পারবে না।
ওর কথা শুনে সাত্যকি হেসে ফেলল।
--আচ্ছা কুহু আর মা কোথায়?
--মা একটু হাঁটতে গেছে, কুহু কে নিয়ে গেছে।
--আর তাই তুমি দরজা হাট করে খোলা রেখে ভাবসাগরে ডুব দিয়েছিলে। এত ভেব না সব ঠিক হয়ে যাবে অনুর কাঁধে হাত রেখে বললো সাত্যকি।
--মা কেউ একই কথা বললাম। মা বাবার tension হয় ওকে নিয়ে এটুকু তো বুঝবে!
আর যে ওকে এত ভালোবাসে তার কথা, জানো প্রথমে খুব ভুল বুঝেছিলাম ছেলেটাকে, কিন্তু বড় ভালো ও, ওর জন্যই এখন বেশি কষ্ট হয় । বোনু বোকা। জেদি।
কিছুক্ষন চুপ থেকে সাত্যকির দিকে করুন দৃষ্টিতে  তাকিয়ে বললো, আচ্ছা আমার বোন টা কি কোনোদিন সুখী হবে না ...
ওকে ও ভাবে দেখলে নিজেকে খুব অসহায় লাগে সাত্যকির। ওর মাথা টা কাঁধে নিয়ে বললো কেনো হবে না? নিশ্চয় হবে, খুব সুখী হবে ওর ভালবাসা আছে তো ওর সাথে। তুমি আছ, আমরা সবাই আছি।
দু জন খানিকক্ষন চুপ করে থাকার পর সাত্যকি নিস্তব্ধতা ভাঙল।
--আচ্ছা ওই ছেলে টা কি যেনো নাম, ওদের সাথে ই পড়তো, যার সাথে....
--সপ্তক!!?
--হুমম ওর কি খবর।
--শুনেছিলাম দু বছর আগে বিয়ে করেছে।
--ও একবার ও আসেনি?
--এসেছিলো। একবার এসেছিল। যেদিন এসেছিল আমাদের বাড়ি, আমি বোনুকে একা ছাড়নি। ভয় করছিলো। জানতাম ও মুখে যাই বলুক মনে মনে সপ্তক কে পাশে চায়, কিন্তু বিশ্বাস ভেঙে গেলে কি হবে, সেই ভয়ে ছাড়িনি। জানো প্রথমবার বোনুর দিকে তাকিয়ে মুখ টা সরিয়ে নিয়েছিলো। হ্যাঁ একটা instant reaction হয়ত স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে ওভাবে ছিল। খুব খারাপ লাগছিল বোনুর দিকে তাকিয়ে।
বোনু সেদিন ওকে বলেছিল আমি চায় না তুমি আমার সাথে থাকো। ভেব না, কেউ তোমায় খারাপ বলবে না, বলবে আমি চাইনি তোমায় সাথে রাখতে। ভালো থেকো। কথা গুলো ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারেনি। যাওয়ার সময় সপ্তক বলেছিলো ভালো থাকিস। ব্যাস চলে গিয়েছিলো। মুখে যাই বলুক বোনু চেয়েছিল ও ফিরে আসুক। ওর পাশে দাঁড়াক।অনেক দিন পর্যন্ত ফোন, বা বেল বাজলেই চমকে উঠতো।ভাবত হয়তো সপ্তক এলো, বুঝতে পারতাম সবই।
--আর নীলাদৃ?
--তার পরের দিন এসেছিল।আসলে হসপিটাল এও এসেছিল। কিন্তু আমরা দেখা করতে দিইনি। পুলিশ নিয়ে গিয়েছিলো, জেরা করেছিল। কিন্তু কোনো প্রমান না পাওয়ায় ছেড়েও দিয়েছিলো। আর তাছাড়া তত দিনে আমরা আসল অপরাধী কে চিনতে পেরে গিয়েছিলাম। তাই সেদিন দেখা করতে দিয়েছিলাম।
--হ্যাঁ... চিনতে পেরেছিলে কি ভাবে যে অর্ঘ্যই করেছে?
--যে দিন বোনুকে নিয়ে এসেছিলাম সেদিন রাতেই ও আমায় বলেছিলো যে ওই কাজ টা করেছে তার মুখ টা ঢাকা ছিল কিন্তু চোখ গুলো দেখা যাচ্ছিল। চোখ গুলো ঘোলাটে রঙের ছিল, নাকের ঠিক ওপরে একটা কাটা দাগ ছিল, আর ডান হাতের আঙ্গুলের দুটো আংটি। একটা সবুজ পাথরের পান্না, আর একটা প্রবাল। আসলে ছোট বেলা থেকেই ও খুব ভালো observe করতে পারত।
সেদিন ও মনে হয়নি কিছু, ভেবেছিলাম নীলাদৃ তো কাউকে দিয়ে করাতে পারে! পরে যখন ঠান্ডা মাথায় ভাবলাম অর্ঘ্যর কথা মাথায় এলো। শেষ যখন ওকে দেখেছিলাম ওর নাকের কাছে দাগ দেখেছিলাম।আর ঘোলাটে চোখ গুলো মনে ছিল। আর আজও নিজেকে তাই জন্য দোষী মনে হয়।
--না না, তোমার কি দোষ?
--অর্ঘ্য আমার classmate ছিল। আমার জন্যই ও আমদের জীবনে এসেছিল, বোনুর জীবনে এসেছিল। আমিই তো প্রথম ওকে অপমান করেছিলাম,সেই রাগ টা পুষে রেখেছিল। জানো ছোট বেলায় আমরা একসাথে পড়তাম ক্লাস ফাইভ থেকে। প্রায় আমাদের বাড়ি আসতো নোট নিতে, কামাই করলে পড়া জানতে, কোনো দিনই খারাপ কিছু মনে হয়নি।
কিন্তু যখন আমরা 11 এ পড়ি তখন বোনুকে propose করে। তত দিনে ওর বদনাম ছড়িয়েছে।বাজে ছেলে হিসেবে সবাই চেনে। তখন আমরা ছোট, বোনু এইট এ পড়ে। তখন খুব রাগ হয়েছিল। অল্প বয়স, হয়তো ঠান্ডা মাথায় বলতে পারতাম কিন্তু immature ছিলাম। খুব অপমান করেছিলাম সবার সামনে। তারপর যখন বোন 10 এ তখন আমি দিল্লী চলে গেলাম। তখন ও আর একবার বোনকে  বলেছিলো একই কথা। সেদিনও বোনু আমায় ফোন করে বলেছিল, আমি দূরে ছিলাম ওকে নিয়ে tension হচ্ছিল তাই মাকে বলেছিলাম। তখন ঔ first year এ, বাবা ওর বাড়ি গিয়ে ওর মা বাবা কে বলে এসেছিল, ওদের বাড়ি টাও আমাদের খুব পরিচিত , অত বড় ছেলের complain করা হয়তো ঠিক হয়নি। তারপর যখন বোনু সপ্তকের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তখন ও আরও রেগে যায়।
--আর এসবের প্রতিশোধ ও অপুর ওপর নেয়।
--হুমম ।আসলে ও যখন সপ্তকের সাথে ওকে দেখত রাগ হতো। একদিন ও ফেসবুকে বোনুকে মেসেজ ও করেছিলো, যাচ্ছে তাই ভাষায়। সপ্তককে নিয়ে খুব বাজে বাজে কথা বলে ছিল, আর ওকে নিয়েও। নোংরা কথা বলেছিলো। তখন বোনু ও ওকে খুব কড়া ভাষায় রিপ্লাই করেছিলো।কিন্তু ও ভেবেছিল
নীলাদৃ এরকম করছে। কারণ কোনো profile picture ছিল না আর account টাও ওর ডাক নামে খোলা ছিল। যদিও সেদিন বোনু এমন কিছু লেখেনি যাতে বোঝা যায়, নীলাদৃকে লিখছে। অর্ঘ্য ভেবেছিল ওকেই বলছে। আর তারপর যখন সপ্তককে বলেছিল ও একই কাজ করেছিলো। আর তারপর নীলাদৃর সাথে অনেক ঝামেলা ও করেছিলো, তখনও পর্যন্ত ওরা বুঝতে পারেনি ওটা নীলাদৃ নয় অন্য কেউ। অর্ঘ্য ও বুঝতে পারেনি আর পারলেও কোনো লাভ হতো না, ও এমনিতেই সপ্তক  আর বোনুকে একসাথে দেখে খুব রেগে ছিল। যে দিন identify করার জন্য বোনুকে ওর সামনে দাঁড়াতে হয়েছিল সেদিন মুখটা ঘৃণায় সরিয়ে নিয়ে ছিল। খুব রাগ হয়েছিল। সপাটে একটা চড় মেরে ছিলাম।দশ বছরের শাস্তি টাও কম মনে হয় ওর জন্য। কি অদ্ভুত দেখো ও নাকি ওকে ভালোবাসত। আর সপ্তক ও তো ওকে একই কথা বলেছিল একদিন, ভালোবাসি। ব্যাঙ্গের হাসি ফুটে উঠেছে অনুর মুখে।
--ভালোবাসা ভালো রাখতে জানে। সেই ভালো বাসায় সত্যি, যে ভালোবাসা পাশে থাকে সবসময়, সব অবস্থায়, সব পরিস্থিতিতে যেমন ভাবে নীলাদৃ আছে ওর পাশে।
--কিন্তু ও সেটা কে accept করছে নাতো, নীলাদৃর জেদের কাছে তো ওর family ও হার মেনে গ্যাছে। ও কেনো মানছে না।
--আরে ঔ তো নীলাদৃকে ভালোবাসে। না ভালোবেসে যাবেই বা কোথায়। নীলাদৃ সবসময় ওর পাশে ছিল। ও  তোমার সাথে দিল্লি চলে গেলো, নীলাদৃ ও মাস্টার্স করার নাম করে চলে এলো। ওখানেই থেকে গেলো আটটা বছর। সব ছেড়ে। business টা তুলে আনল। সবার against এ গিয়ে ওর পাশে ছিল। কোনো rape victim হোক বা কোনো নিরীহ শিশুর জন্য লড়াই সবসময় আমাদের পাশে থেকেছে।আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবার জন্য লড়ছে। ছেলেটার মধ্যে সবার জন্য করুণা আছে। দেখো আমি তোমাদের case টা লড়িনি, তখন আমরা কেউ কাউকে চিনতাম না। কিন্তু এত কেস লড়ে বুঝেছি যে সব থেকে বড় লড়াই টা নিজের সাথে হয়।কিন্তু কেউ পাশে থাকলে নিজের সাথে লড়াইটা সহজ হয়ে যায়। তখন বাইরের দুনিয়া আর  তোমায় দুর্বল করতে পারে না। তোমরা সবাই পাশে ছিলে, নীলাদৃ ছিল বলে লড়াই টা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল অপুর জন্য এটুকু নিশ্চিত বলতে পারি।তবে কি জানতো সাত বছর ধরে তোমাদের সবাই কে চিনি, তাই বলছি, নীলাদৃ ও কম জেদি নয়। ও ঠিক মানিয়ে নেবে আপু কে একদিন । তাই ভেব না, আর অপুর ওপর ও একটু ভরসা রাখো।
তিন দিন পর....
বেল বাজতেই ছুটে গিয়ে দরজা খুলল অপরূপা।
অপু-- এত দেরি। কখন থেকে তোমাদের জন্য wait করছি।
সাত্যকি--ভীষণ ট্রাফিক জ্যাম ছিল। আগ্রাতেও আজকাল ভীষণ ট্রাফিক জ্যাম হচ্ছে।
--এসো। কুহু কোথায়?
--কুহু সোনা আমার কাছে বলে নীলাদৃ কুহুকে কোলে করে ঢুকলো।
--তুমি এখানে
--আরে অনুদি, সাত্যকিদা, কুহু সোনা এসেছে আর আমি আসবো না দেখা করতে?
সবাই মিলে হৈ হুললোর করে কাটালো দিনটা, একবারে dinner করে নীলাদৃ বাড়ি ফিরল। নীলাদৃ তার বাবার business এ হাত লাগিয়েছে।তবে দিল্লি তেই একটা brunch খুলে। আট টা বছর একদিনের জন্যও অপরূপাকে ছাড়েনি। একা হয়ে যেতে দেয়নি।এর মধ্যে অনেক গল্প হয়েছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। Specially crime নিয়ে। ওদের শক্তি ক্লাব নিয়ে। ওখানে অসহায়, অত্যাচারিত মেয়ে দের সাহায্য করা হয়। স্ব নির্ভর করার চেষ্টা করা হয়।ছোট ছোট অনাথ বাচ্চাদেরও সাহায্য করা হয়। self defense শেখানো হয়।
এর মাঝে অনু ওর সাথে নীলাদৃর ব্যাপারে কথা বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে অপু এড়িয়ে গেছে।
রাত 11 টার দিকে সবাই ঘুমোতে গেলো। ভোরের দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল অনামিকার। তখন ভোর 4:00। অপুর ঘর টা ওদের পাশেই। একটা common বেলকনি।কাচের দরজা টা খুললেই ওর ঘরের বেলকনি টাতে যাওয়া যায়।অপু ওখানে দাড়িয়ে ছিল। অনু আসতেই পেছন না ঘুরে ই বললো কি রে এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছিস?
অনু-- তুই ও তো উঠে পড়েছিস।
--আমি রোজ ই উঠি, আজ আর একটু তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম। এখানে সকাল খুব সুন্দর, খুব ভালো লাগে।
--হুমম
অনু ওর দিকে তাকিয়ে দেখলো মুখে কোনো কাপড় বাঁধা নেই। নাহলে এক সুতির কাপড়ে মুখ টা ঢেকে রাখে।
অপু--চা খাবি।
অনু -- না থাক। একটু দাড়ায় এখানে ভালো লাগছে।
অনেকক্ষণ চুপ করেছিল ওরা, পাখির শব্দে চারিদিক ভরে যাচ্ছে। হঠাৎ অনু বললো তোর ঘরে ওই potret টা নীলাদৃ একেছে তাই না?
--হুমম।আলো আঁধারি দিয়ে আমার মুখটা একেছে।
--অসাধারণ।
-- কিছু ক্ষন চুপ থাকার পর অপু হঠাৎ বললো, আমি জানি দিদি ভাই তুই, মা বাবা সবাই খুব tension করছিস আমায় নিয়ে।বিশ্বাস কর আমার ও কখনো কখনো মনে হয় এবার নীল কে নিয়ে বাঁচি। ও এত গুলো বছর আমার জন্য অপেক্ষা করেছে।কত বোঝালাম ফিরে যেতে, বুঝলো না। ওর মা বাবা ভাবে হয়তো আমিই ওদের ছেলে কে কেড়ে নিয়েছি। এত গুলো বছর পেরিয়ে গেল। আজকাল মনে হয় যদি কোনো জাদু বলে সময়ের চাকা ঘুরিয়ে কলেজের সেই দিনটাতে ফিরে যেতে পারতাম যে দিন আমায় ও চেয়ে ছিল ওর সঙ্গীনী হিসেবে, আমায় propose করেছিলো তাহলে ওকে জড়িয়ে ধরতাম। কিন্তু...
--তোর কি এখনো মনে হয় ও তোকে দয়া করছে?
--না এখন আর মনে হয় না।
--তাহলে?
--পারি না। ভয় করে।আমিতো আর রূপ নেই। কখনো কখনো মনে হয় ওর তো সব আছে। জেদি ছেলে কোথাকার। এত বছরেও বোঝাতে পারলাম না। চাইলেই সব পেতে পারে, কিন্তু আমার জন্য এত গুলো বছর এভাবে কাটিয়ে দিলো। আমি ওর জীবন টাকে নষ্ট করে দিচ্ছি।
--ওর ভালোবাসা accept না করে ওকে বাচাচছিস? ওকে একা করে?
-- ওর মা বাবা যে আমায় চায় না।
--এখন তো তারাও মেনে গেছে।
-- নীলের জেদের জন্য, মন থেকে আমায় মেনে নেয়নি।
--নীলাদৃ এতটা করেছে বাকি নাহয় তুই করে নিস।
--কি করে পারবো দিদিভাই? আমি এত গুলো দায়িত্ব কি ভাবে?পারবো না।
--যখন ওই ঘটনার পর দিল্লি চলে এলি। কলেজে application দিয়ে এখান থেকে পড়ে exam দিয়ে পাশ করলি, সাথে সাথে তোর সার্জারি চলছিল? কোর্টে কেস ও, শক্তির সাথে আমরা তখন ভালো ভাবে যুক্ত। সাথে চলছে তোর upsc preparation তখন তো বলিসনি কি ভাবে পারবো?
দিদির কথা শুনে গলা ভিজে এলো। পুরোনো দিনের সেই সাংঘাতিক struggle এর কথা মনে পড়ে গেল।
--আমি শক্তির বাচ্চা গুলোর সামনে মুখ বেঁধে রাখি ভয় করে ওদের চোখে ভয় না দেখতে হয়।
--কোনোদিন বাঁধন খুলে দিস, আমার বিশ্বাস শ্রদ্ধা টা চোখে পড়বে।
এবার সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলল IPS অপরূপা। না আমি পারব না ওকে সুখী করতে, ভালো রাখতে। তুই তো বলেছিলি সূর্যের মতো হয়ে উঠতে। সূর্য উজ্জল, কিন্তু আকাশে একা থাকে। তার দিকে তাকাতে গেলে চোখ ঝলসে যায়।
--কে বলেছে সূর্যের দিকে কেউ তাকাতে পারে না। ভোরের সূর্য কে দেখ। নরম আলো দিয়ে পাখিদের ঘুম ভাঙায়। পৃথিবী কে জাগায়। আবার সন্ধ্যে বেলায় কোমল আলো দিয়ে আকাশকে সাজায়। আর হ্যাঁ সূর্য একা, আকাশের বুকে।
--আকাশ কে তো তারা রাও সাজায়, কিন্তু নীল আকাশে শুধু সূর্যই থাকে তাই না।আওয়াজ শুনে ওরা পেছনে তাকালো দেখলো সাত্যকি এসে দাঁড়িয়েছে। তোমার আকাশ, তোমার নীল ও তার সূর্যের জন্য অপেক্ষা করছে, তার ভোরের অপেক্ষা করছে।
--জানি সাত্যকিদা।
--তাহলে বোঝ না কেনো, দেখ তোমার মত মেয়েদের কাছে কোথাও না কোথাও এইরকম একটা মেসেজ পৌওচোছে যে যাদের জীবনে খারাপ কিছু হয়ে যায় তারা normal জীবন যাপন করতে পারে না। কিন্তু আজ তাদের কথা ভাবতে বলব না তোমায়। জানি তোমার দিদি একদিন নিজের কথা ভুলে সবার কথা ভাবতে বলেছিল। তুমি বলেছিলে সেটাই তোমায় বাঁচতে শিখিয়েছে। কিন্তু আজ আমি উল্টো কথা বলছি। কারুর কথা না ভেবে এমনকি নীলাদৃর কথাও না ভেবে শুধু নিজের জন্য ডিসিশন নিও। কিন্তু নিও, পালিয়ে যেও না। এড়িয়ে যেও না।
ও তো সারাজীবন পাশে থাকবে বন্ধু হিসেবে কি ভাবে তুমি রাখবে সেটা তোমার হাতে।
এবার আমাদের যেতে হবে 6:00 টার মধ্যে বেড়োবো আমাকে 10:30 মধ্যে কোর্ট এ পৌঁছতে হবে, আর অনুর ও কলেজ আছে।
--এত অল্প সময়ের জন্য এলে! সময় নিয়ে এসো এবার একদিন।
অনু - - আসব। মা বাড়িতে একা, কাজের মাসি কে থাকতে বলেছি যদিও, কিন্তু যেতেই হবে। অনেক কাজ আছে। তোর ও তো ছুটি নেই।
সাত্যকি--পরের বার লম্বা ছুটি নিয়ে আসবো। তাছাড়া তুমি তো আসছোই দিল্লী।
অপু - হুম।
ওদের বিদায় জানিয়ে নিজে ও ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

তিন দিন পর... (সন্ধ্যা 7:00)
বেল বাজতে ছুটে গিয়ে দরজা খুলল নীলাদৃ।
নীলাদৃ--একি ASP সাহেবা স্বয়ং আমার বাড়িতে। ইস না চিস কো ইয়াদ কিয়া হোতা তো ও খুদ হাজির হো যাতা।
--ঠাট্টা করছ?
--আমার ঘাড়ে কটা মাথা? ভেতরে আয়।
নীলাদৃর বাড়ি টা আগ্রার বাইরে। অপরূপার বাড়ি থেকে এক ঘণ্টার একটু বেশি সময় লাগে আসতে। প্রায় ই দিল্লি ছুটতে হয় ওকে, আগে দিল্লি তেই ছিল। নিজে ফ্ল্যাট কিনেছিল। এখন ওর কাছে থাকবে বলে এটা ভাড়া নিয়েছে। তাও খুব একটা কাছে নয়। তবুও মনের শান্তি। সপ্তাহে প্রায় দু দিন ওর কাছে যায়।সন্ধ্যেটা কাটিয়ে আসে। মাঝে মাঝে ও আসে। মাঝে মাঝেই একসাথে দিল্লী যায় ওরা বিভিন্ন কাজে।এই ভাবেই চলছে ওদের সম্পর্ক টা।
--কি হাল করেছ ঘর টার।
--তুই আসবি জানলে একটু গোছানোর চেষ্টা করে দেখতাম। কাকা দু দিনের জন্য বাড়ি গেছে তো!
--ও তাহলে তো এক কাপ চা ও পাওয়া যাবে না।
--না না তা কেনো, দাড়া আমি তোকে রান্না ঘর টা দেখিয়ে দিচ্ছি, হাসতে হাসতে বলল নীলাদৃ।
--থাক আর অত ভাল কাজ করতে হবে না। আমি জানি ওটা কোন দিকে, আমি চা বানিয়ে আনছি, তত ক্ষনে যেনো এই কাগজ গুলো ঠিক ঠিক জায়গায় রাখা হয়ে যায়। নাহলে কপালে দুঃখ আছে তোমার। হেসে ফেলল নীলাদৃ ওর কথায়, আজ ওকে অন্য রকম লাগছে,খুশী লাগছে। আজ ও শাড়ি পরে এসেছে। নীলাদৃর কাছে ও কোনোদিনই মুখ বেঁধে রাখে না। অনেক দিন পর ওকে শাড়িতে দেখলো নীলাদৃ। খুব ভালো লাগছে আজ ওকে।
চা নিয়ে এলো অপু।
--আহ হা অমৃত।
--ইয়ারকি ছাড়ো। কি খাবে বল?
--হুমম অর্ডার করতে হবে তো! আমার জন্য  Chicken handi, আর....
--রোজ রোজ ওই এক খাবার তোমার, বারন করেছি না এত rich খাবার রোজ খেতে। এরম করলে কিন্তু আমাদের বিয়ের মেনু থেকে Chicken handi বাদ দিয়ে দেবো।
-- কি করব বল... কি বললি? হঠাৎ কথা টা খেয়াল করে তাকিয়ে থাকলো অপুর দিকে নীলাদৃ। আরেক বার বল কি বললি?
--আমি দিদি কেউ বলে দিয়েছি বড় ছুটি নিতে।
--তুই সত্যি সত্যি...
এতক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল এবার নীলাদৃর দিকে তাকিয়ে অপরূপা বললো  আমি ক্লান্ত, এবার তোমার কাছে ধরা দিতে চাই। আমার সমস্ত ক্লান্তি নিয়ে সন্ধ্যের রং মেখে আমার আকাশের বুকে ঢোলে পড়তে চাই, ভোরের সূর্য হয়ে আমার নীল আকাশের বুকে জেগে উঠতে চাই। আমাদের জীবন কে সাজাতে চাই। গ্রহণ করবে আমায়?
খানিকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলো নীল। এই দিন টার জন্য ও এতগুলো দিন অপেক্ষা করেছে। আজ পর্যন্ত কেউ ওকে কাঁদতে দেখেনি। কিন্তু আজ চোখের জলে দু জন দুজনকে ভিজিয়ে দিলো। আজ নীলের রূপ, তার ভালোবাসা, নিজে থেকে এসেছে তার ভালোবাসা কে দয়ার নাম না দিয়ে ভালোবাসার স্বীকৃতি দিতে। সে এসেছে তাকে ভালবেসে ভালোবাসতে। ভোরের সূর্যের মতো নীল আকাশ কে সাজিয়ে দিতে।