টপিকঃ নিঃশব্দ প্রেম -সাধারণ মেয়ের প্রেম কাহানি

অনেক দিন আগে একটা গল্প পরেছিলাম ওরং নাম্বার । সকালে ফম শুনছিলাম রেডিও মিরছিতে "    বাকরা অফ the  ডে"। মিলিয়ে মিশিয়ে একটা গল্প বানলাম একটি সাধারণ মেয়ের প্রেম কাহানি | আমি কাখন কাখন ভাবি মুভি হোক বা গল্প সব খানে কি মেয়েদের অতি সুন্দারি হতে হাবে সাধারণ দেখতে আমাদের পাশের বাড়ির মেয়েরা কি প্রেম করে না ; না তাদের নিয়া গল্প লিকতে  নাই | অদ্ভুত দিছারিতা আমাদের 
                                                                  পুরুষ করেছ মানুষ কারো নি


মেয়েটা ঘুমোতে পারছিল না। পাশ ফিরে, চিৎ হয়ে, উপুড় হয়ে - ঘুম আসছিল না কিছুতেই। বারবার চোখের পাতায় ভেসে উঠছিল ছেলেটার মুখ।রাতের নিস্তব্ধতা চিরে মেয়েটা নিজের বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটার শব্দটা শুনতে পাচ্ছিল স্পষ্ট। উত্তেজনা দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিল সে।
মাঝে মাঝেই উঠে বসছিল বিছানায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় মাপছিল। ঠিক আর ক ঘন্টা বাকি! যদিও তখন রাত গভীর, তবু তার চোখ আকাশের বুক খুঁড়ে আলোর রেখা দেখতে চাইছিল। মেয়েটার কান্ড দেখে এক আকাশ তারা যেন ঝিকমিক করে হেসে উঠছিল। কিন্তু মেয়েটা ভ্রূক্ষেপ করছিল না তাতে। ছটফট করতে করতেই শুধু প্রহর গুনছিল। অপেক্ষার প্রহর। হঠাৎই যেন হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়লো একটা ফাজিল তারা। আকাশ চিরে দ্রুত বেগে নেমে আসতে লাগলো মাটির বুকে। মেয়েটা অন্যমনস্ক হল। চোখ বন্ধ করে বুকের কাছে হাতদুটো জড় করে বিড় বিড় করে কি যেন বললো।

তারপর নিজেকেই যেন প্রশ্ন করলো , "সত্যিই ও আসবে তো? আচ্ছা ও কি জানে, কাল আমার জন্মদিন ? এই বিশেষ দিনটা কি আমার জীবনের আর এক বিশেষ দিন হয়ে উঠবে? কি বলতে চায় ও? কিছু বলার জন্যই তো সে আসছে! তেমনই তো বললো ফোনে।"
অস্থির হচ্ছিল মেয়ে। কি মনে হতে মোবাইলটা হাতে নেয়। সময় তখন প্রায় রাত আড়াইটে। কি মনে হতে এক বিশেষ নম্বরে ফোন করে মেয়েটা। ওপ্রান্তে রিং শুরু হয়। কেউ ধরে না ফোন। মেয়ে বোঝে, সে ছেলে ঘুমোচ্ছে। ঘুমোনোরই তো কথা। রাত যে আড়াইটে। আর ওই ছেলে তো "কুম্ভকর্নের মাসতুতো ভাই"।
মেয়েটা ওই নামেই ডাকে তাকে। সকাল আটটাতেও যে ঘুম ভাঙে না তার। প্রতিদিনই অফিস লেট।
ফোন না ধরায় মেয়েটা মেসেজ লেখে, "জানি তুমি এখন ঘুমোচ্ছো। ঘুমন্ত তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। এও জানি আমার এ ইচ্ছে পূর্ন হওয়ার নয়। তবু এই মুহূর্তে এ ইচ্ছেরই দাস আমি!
জানো, এইমাত্র আকাশে একটা তারা খসে পড়া দেখলাম। সঙ্গে সঙ্গেই মনে মনে বললাম, আমি যেন সারাজীবন তোমার সাথে থাকতে পারি। শুনেছি, খসে পড়া তারা দেখতে দেখতে কিছু চাইলে সে ইচ্ছে নাকি পূর্ন হবেই। এর আগে কখনও এ ভাবে কিছু চাই নি। তাই জানি না, এ কথা সত্যি কিনা! কিন্তু যদি সত্যিই হয়ে যায় আমার এ চাওয়া?

দুর কি সব লিখছি। এ যে হওয়ার নয়। মা-ও হাল ছেড়েছে এখন। বয়সও নয় নয় করে পঁচিশ পার। কালো কুচ্ছিৎ,! কতবার যে পাত্রপক্ষ মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল! আর যারা নিমরাজী হচ্ছিল, তারা রূপের অভাব রূপোয় পোষাতে চাইছিল। কোনোটাই সম্ভব ছিল না। তাদের খাঁই মেটানো সম্ভব হল না আমার বাবার পক্ষে। তারপর তো বাবা চলেই গেল তারাদের দেশে। মা একা, দিশেহারা।
একটু আগে যখন আকাশ থেকে তারাটা নেমে এলো, আমার মনে হচ্ছিল, ওটা যেন তারা নয়, আমার বাবা হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। ঠিক ছোট্টবেলার মত করেই তাই বাবার কাছে আবদারও করে বসলাম। বাবা তো আমার সব আবদারই মিটিয়ে দিত। কিন্তু পারে নি, আমার এক 'অচিনপুরের রাজকুমার 'এর রানী হওয়ার সাধ মেটাতে।
জানো, এমন সাধের কথা আমি কখনও বাবাকে বলি নি। তবু বাবা বুঝে ফেলেছিল। বাবা আমার চোখের ভাষা পড়তে জানতো। মা কিন্তু পারে না। তুমিও কি পারবে? তুমিও কি বুঝতে পারবে, আমার সেই 'অচিনপুরের রাজার কুমার ' আর কেউ নয়, তুমি, শুধুই তুমি। "

এই পর্যন্ত লিখে মেয়েটা ঠোঁট কামড়ে থেমে গেল। মেসেজটা না পাঠিয়ে ডিলিট করতে গিয়েও ড্রাফট করে রেখে দিল। আসলে, মনের কথাগুলো অব্যক্ত থাকার সিদ্ধান্তকেই স্বাগত জানালো। এ কথা যে বলার নয়।

তারপর ফোনের এক বিশেষ ফাইল খুলে বের করলো সেই ছেলের ছবি। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে অস্ফূটে বলে উঠলো, 'সত্যিই তুমি রাজার কুমার! অচিন দেশের রাজার কুমার। ভুল করে জন্মেছে এ কালে। সেই জন্যই বুঝি এই কালো কুচ্ছিত এলেবেলে মেয়েটার সাথে পরিচয় হয়ে গেল এক রং নম্বরের ফোনে।
কি যেন বলেছিলে? __হ্যালো শোভন আছে?
আমি যত বলি, এখানে শোভন নামে কেউ থাকে না। তুমি মানতে চাও না। শেষে বললে, "এটা কি ৯৪৩৪১৯৬_ _ _ "?
গলাটা অসম্ভব গম্ভীর আর ভরাট। ভালো লেগেছিল আমার। তোমার মুখে নম্বরটা শুনে বলে উঠলাম, "এ মা, এ তো আমার নম্বর। ''
তুমি বললে, "তাহলে শোভনকে দিন একটু। "
আবারও বলি, এখানে শোভন নামে কেউ থাকে না।
তুমি আবারও মানতে চাইছিলে না। আমি শুনতে পাচ্ছিলাম তোমার পাশে বসে কারা যেন হাসছে।
সেদিন শোভনের সাথে তোমার কথা হয় নি। আবার আমার সাথে তর্কেরও মীমাংসা হয় নি।
পরের দিন আবার ফোন করেছিলে। বলেছিলে, তুমি খুব ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখেছো, এটা শোভনের নম্বর। এদিনও তর্ক শেষ হল না। আমি ছোট্ট থেকেই ঝগড়া করতে পারি না। তাই বিনীত সুরেই তোমাকে বোঝাতে চেষ্টা করি। তুমি বুঝছিলে না। ফোন ছাড়লে অমীমাংসিত কথাতেই।
তৃতীয়দিন ফোন করলে যখন, তখন প্রথমেই বললে, "আমি জানি এটা শোভনের নম্বর নয়। তবু ফোন করছি। জানতে পারি কি, এটা কার নম্বর! "
আমি হেসে ফেলেছিলাম, "এমা, জেনেশুনে কেউ রং নম্বরে ফোন করে নাকি?"
তুমি বলেছিলে, "করে, ম্যাডাম করে! এখন আপনার নামটা বলুন তো দেখি!তাহলেই আর রং নম্বর থাকবে না। "
-- আলো। আলোকপর্না সেন।
-- ওরে বাবা সাংঘাতিক নাম। নির্ঘাত পুলিশে চাকরি করেন।
আমি একেবারেই ঘরোয়া একটা মেয়ে। লেখাপড়াতেও দখল ছিল না তেমন, যাতে একটা চাকরি জুটিয়ে নিয়ে অচিনপুরে যাওয়ার ছাড়পত্র কিনতে পারি। কিন্তু সে কথা তো বলা যায় না। তাই সত্যি কথাই বললাম। একথা ও কথা শেষে তুমি যখন ফোন ছাড়তে চাইলে, আমি তোমার নামটা জিজ্ঞাসা না করে পারলাম না।
তুমি হা হা করে হেসে বললে, "আমিই শোভন। "
--মানে?
-- এটা আমাদের বন্ধুদের একটা মজার খেলা। এলোমেলো নম্বরে ফোন করে নিজের নাম ধরে বলি অমুককে একটু ডেকে দিন তো। মাঝে মাঝে সত্যি সত্যিই একই নামের কোনো মানুষকে পাওয়া যায়। তখন ফোন কেটে দিই। আর না পাওয়া গেলে বিরক্ত করতে থাকি। ব্যাপারটা শেষ হয় গালাগালির পর্যায়ে গিয়ে। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে কিছুই হলো না। একটু রাগ টাগ করতেও তো পারতেন? আপনি একটা যাচ্ছেতাই রকম বাজে!
আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।
দু তিনদিন পর আবার ফোন করেছিলে। আমিও যেন অপেক্ষায় ছিলাম। ফোন করে বললে, "হ্যালো রং নম্বর? "
আমি হেসে ফেলেছিলাম। বলেছিলাম, "হ্যাঁ, আমি রং নম্বরই বলছি। "
এলোমেলো কথায় আধঘন্টা পার। আবার দুদিন পর ফোন করেছিলে। তারপর তার পরের দিন, তার পরের দিন। প্রতিদিন। তারপর কয়েকঘন্টা পর পর।
আমি জেনেছিলাম, তোমার বাড়ি আমার বাড়ি থেকে বহুদূরে। প্রায় ৫০০ কিমি পেরিয়ে। তুমি এক সরকারি অফিসে চাকরি করো। বাবা মার একমাত্র সন্তান। বয়স প্রায় আঠাশ। বিয়ের কথা চলছে। কিন্তু মনের মত রাজকন্যে পাওয়া নি নাকি এখনও!
প্রতিদিন কথা বলাটা যেন নেশা হয়ে গিয়েছিল আমার। তুমি বলতে, আমার গলার স্বরটা নাকি তোমার খুব ভালো লাগে। আমি বলতে পারতাম না, তোমার গলার স্বর আমাকে এক মোহময় জাদুতে আকর্ষন করে।
একদিন রাতে হঠাৎ মেসেজ টোনের আওয়াজে চমকে তাকিয়ে দেখি, স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করছে লেখা "মেসেজ ফ্রম শোভন "। তাড়াতাড়ি দেখি লেখা, "ঘুমিয়ে পড়েছো? "
উত্তর দিলাম "না "। আরও দু একটা মেসেজ দেওয়া নেওয়া হল।
কিছুদিন পর ঘুমোনোর আগে মেসেজে কথা বলাটা প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেল।

দিন কেটে যাচ্ছিল। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করতো খুব। কিন্তু কখনও বলতে পারি নি। তবু চাওয়াটা প্রবল হয়ে উঠছিল। তুমি ভরসা দিয়েছিলে, আমি যখন খুশী ফোন করতে পারি। তাই আমিও তোমাকে যখন খুশী ফোন করি তখন। এই ফোন করার দৌলতেই একদিন কথা হয়ে গেল, তোমার মায়ের সাথে।
সেদিন আমার ঘুম ভেঙেছিল, এক আবছা মুখের পুরুষের স্বপ্ন দেখে। তাই সাত সকালেই ফোন করেছিলাম তোমায়। ফোন ধরলেন তোমার মা। বললেন, তুমি নাকি আটটার আগে ঘুম থেকে ওঠোই না। তারপর ছোটাছুটি করে অফিস যাও। সেদিন অনেক কথা হয়েছিল ওনার সাথে। উনি আমার সম্বন্ধে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করলেন। আমিও তোমার সম্বন্ধে বহু কথা জানলাম। তোমার মধ্যে যে একটা দুষ্টু ছেলেমানুষ লুকিয়ে আছে বুঝতে পেরেছিলাম। এরপর মাঝে মধ্যেই তোমার মায়ের সাথে কথা হত। কখনও কখনও বাবার সাথেও। ওনারা ওনাদের নম্বর দিয়েছিলেন আমায়।
হঠাৎ একদিন আমায় বললে, তুমি কলকাতায় আসছো অফিসের কাজেই। একসপ্তাহ থাকবে। কলকাতা আমাদের এখানে থেকে প্রায় ষাট কিলোমিটার। মন ছটফট করে উঠলো তোমাকে দেখার জন্য। কিন্তু বলতে পারলাম না। চুপ করে রইলাম তাই খবরটা শুনে।
আমাকে অবাক করেই তুমি বললে, "আলো, তোমাকে যে দেখতে ইচ্ছে করছে! আসবে কলকাতায়? "
আমি যে কলকাতার কোনো পথঘাট চিনি না। লজ্জার মাথা খেয়ে সত্যিটাই বললাম। তুমি হা হা করে হেসে বললে," হাওড়া পর্যন্ত আসতে পারবে? "
কোনোমতে "হ্যাঁ " বললাম।
তুমি বললে, হাওড়া স্টেশনেই তুমি থাকবে।

হ্যাঁ তাই ছিলে। আমার ট্রেন এসেছিল কুড়ি নম্বর প্ল্যাটফর্মে। ট্রেন থেকে নেমে হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে দিশেহারা আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে তোমায় ফোন করতে যাচ্ছিলাম, তার আগেই কেউ আমায় যেন ডেকে উঠলো, "আলো! "
আমার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠেছিল। তুমি এত সুন্দর আগে ভাবি নি। আমার "অচিন পুরের সেই রাজপুত্র "যেন সশরীরে সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। সবচেয়ে আকর্ষনীয় ছিল তোমার চোখদুটো। আমি সম্মোহিত হয়েছিলাম।
প্রায় সারাদিন কেটেছিল দক্ষিনেশ্বরে। পূজো দিয়েছিলাম। নৌকা চড়েছিলাম। আর শুধু কথার জাল বুনেছিলাম।
ফেরার সময় বুক ভেঙে যাচ্ছিল। বলতে পারছিলাম না। খুব চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলাম। তুমিও। আমার দিকে তাকাচ্ছিলে না। আমার মনে হচ্ছিল যে কারনে, পাত্রপক্ষ মুখ ঘুরিয়ে চলে যেত। তুমিও বোধহয় সেই কারনেই, কথা বলছো না বা তাকাচ্ছো না!
ট্রেনে ওঠার আগে আমার হাতটা ছুঁয়ে বললে, "সাবধানে যেও। আর বাড়িতে পৌঁছে একটা ফোন করে দিও। "
সে প্রায় ছ মাস আগের কথা। সেই দিনই আমি তোমাকে বুঝতে না দিয়ে আমার মোবাইলে তোমার একটা ছবি তুলে নিয়েছিলাম। তারপর থেকে শয়নে, স্বপনে, জাগরনে শুধুই তোমাকে ভেবেছি। কিন্তু সে কথা কি বলা যায়?

ফোনে কথা চলতেই থাকলো। তোমার মা বাবাও কথা বলতেন। তোমাদের বাড়িতে আমাকে যাওয়ার কথা বলতেন। মন চাইতো প্রবলভাবে। ততদিনে আমি জেনে গেছি যে, আমার স্বপ্নের সেই অচিনপুরের ঠিকানাটা। কিন্তু তাতো আর বলা যায় না।
সপ্তাহখানেক আগে তুমি বললে, আবার কলকাতায় আসছো। তবে এবার তুমিই আসবে আমাদের এই অজগাঁয়ে। আমার সাথে ঘুরে বেড়াবে আমাদের গ্রামের ধূলোমাটির পথে!
বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাই ফের জিজ্ঞাসা করলাম, "সত্যি? "
-- হ্যাঁ সত্যি। পরে হয়তো আর ঘোরা হবে না।
প্রশ্ন না করে পারলাম না, "কেন? "
--আরে চিরকাল কি একা থাকবো? বউ যদি না রাজী হয়! বাবা মা তো পারলে আজকেই ধরেবেঁধে বিয়ে দিয়ে দিতে পারলে বাঁচে।
আবারও প্রশ্ন করলাম, "পাত্রী ঠিক হয়ে গেছে? বলেছিলে যে, পছন্দ হচ্ছে না? "
তুমি বললে, "মোটামুটি এক জায়গায় পছন্দ হয়ে গেছে। ফিরে এসে ফাইনাল করবো। "
বুঝলাম, শোভনের সাথে আমার দ্বিতীয় আর শেষ দেখা হতে চলেছে। এ নিয়ে আর কথা বাড়াই নি। কিন্তু তুমিই আগ বাড়িয়ে বললে, কি যেন একটা বলবে আমাকে।
আমি জানতে চাইলাম, "কবে আসছো? "
তুমি যে তারিখটা বললে, সেটা আমার জন্মদিন। তাই চমকে থমকে গেলাম। আমার নীরবতায় তুমি জানতে চাইলে, ওইদিন এলে অসুবিধা আছে কি? তাহলে যাব না।
আমি আঁতকে উঠি। অন্যকথা বলে পরিস্থিতি সামাল দিই।
তারপর তো শুধুই দিন গোনা।

সারারাত জেগে জেগে ভোরবেলা ঘুমিয়ে পড়লো মেয়েটা। মায়ের ডাকে যখন ঘুম ভাঙলো, রোদ বেশ চড়া তখন। প্রায় সাতটা দশ বাজছে। মেয়ে লাফালাফি করে স্নান সারলে। সাড়ে দশটা আর কতক্ষনই পর। ওই ট্রেনেই তো সে আসছে। অকারনে মায়ের কাছে রান্নার খোঁজ নিলে। বহুবছর পর রান্নাঘরে অনেক পদ রান্না করছেন মা। সবই মেয়ের ইচ্ছে।

দশটা নাগাদ মেয়ে চললো স্টেশনে। যাওয়ার আগে বহুদিন পর হালকা সাজগোজও করলো। মা মুগ্ধচোখে তাকিয়ে দেখলেন।
দূর থেকে যখন ট্রেনটা দেখা গেল মেয়ের বুকে হাজার সমুদ্রের ঢেউ তোলপাড় করে আছড়ে পড়তে লাগলো যেন। গলায় শুকিয়ে কাঠ। অচিনপুরের রাজার কুমার আসছে তার গাঁয়ে - একি কম কথা।
ট্রেন থামলো। কত লোক উঠলো, নামলো। কিন্তু সেই ছেলে নেই কোত্থাও। প্ল্যাটফর্মের ও প্রান্ত থেকে ও প্রান্তু খুঁজে বেড়ালো মেয়েটা। কোথাও নেই সে।প্ল্যাটফর্মের শেষ মানুষটি চলে যাওয়ার পর ক্লান্ত হতাশ মনে মেয়ে ফোন করে সেই ছেলের ফোনে, "তুমি কোথায়? আমি তোমাকে খুঁজে পাচ্ছি না যে! "
ও প্রান্তে ছেলের আওয়াজ ভেসে আসে, "সরি আলো, এবার যেতে পারলাম না। আটকে গেলাম জরুরি কাজে। কিছু মনে করো না। "
অস্ফুটে "ও " বলে ফোন কেটে দেয় মেয়ে। হু হু করে বুক ভাঙা কান্না বেরিয়ে আসে চোখ বেয়ে। দুহাতে মুখ ঢেকে বিকৃত চাপা স্বরে কেঁদে ওঠে মেয়েটা।
প্রায় সাথে সাথেই ফোন আসে মেয়ের ফোনে। চোখ না মুছেই ফোন ধরে মেয়ে। ও প্রান্ত থেকে ছেলে বলে, "আলো, আমি যেতে পারি নি তাই রাগ করেছো? "
প্রানপনে গলাকে স্বাভাবিক রেখে মেয়ে উত্তর দেয়, "না রাগ করবো কেন? অসুবিধে তো থাকতেই পারে! "
-- কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যে, তুমি কাঁদছো!
-- না না কাঁদবো কেন? আমি ঠিক আছি।
-- রাগ করো নি তো?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ে বলে, "না, রাগও করি নি। "
ছেলেটা ফোন কেটে দেয়।

মেয়েটা প্ল্যাটফর্মের একটা বেঞ্চে বসে পড়ে রুমালে চোখ ঢাকে। বাড়ি ফেরার আগে যতটা হালকা হওয়া যায় ! মায়ের সামনেও তো অভিনয় করতে হবে। মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলে মেয়ে।

হঠাৎ মনে হল, কে যেন তার হাতদুটো ধরে মুখ থেকে ঢাকা সরাচ্ছে। চমকে তাকায় মেয়ে। সামনে তাকে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছিল না। ছেলের মুখে মুচকি হাসি, "কাঁদছো কেন আলোরানী? তুমি তো কাঁদো নি! "
আর সামলাতে পারে না মেয়ে। সব ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছেলের বুকে। মুখ ঘষতে ঘষতে বলে,"কেন কেন এরকম করে কষ্ট দাও আমায়? "
আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে ছেলে বলে, "আমার আলোর জন্মদিন আমি আসবো না, তাই কি হয়! "
তারপর দুহাতের অঞ্জলীতে মেয়ের মুখটা ধরে সেই ছেলে বলে, " আমার রানী হবে আলো? "
চোখ বন্ধ করে আদুরে গলায় মেয়ে উত্তর দেয়, "হুঁ উ উ ...!!"