টপিকঃ ভালবাসার সেকাল একাল

আমার কথা
গতকাল দিওয়ালী ছিল কিছু টা অলস সময় তাই একটু মুভি দেখেতে বসেছলাম সিনেমা গুলো ব্রওসে করতে করতে একটা মুভি নামে চোখ আটকে গালও  লভে আজ কাল ... মুভি টা টিক হাজম হলনা , জাগাখুছুরি  বলিউড মুভি যা হয়।। কিন্তু ভাবনা মাথাতে থেকে গালও |  কিছু পুরনো
স্মৃতি ১৪ ফেব্রুয়ারী  আজ সবাই যানে ৮ থেকে ৮০ । কিন্তু প্রেম কি শুধু একটা দিনের আমার তো মনে প্রেম জরিয়া থাকে প্রেমিক প্রমিকার
প্রতিটি নিশ্বাস এ |  এই গল্পের দুই নারী চরিত্র আমার খুব কাছের মানুষ ...বাকিটা পড়রে দেখুন

আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে ।সকাল থেকে ভীষণ ব্যস্ত মিমলি ।এক মুহূর্ত দম ফেলার সময় নেই ওর আজ ।অন্য দিন সকাল ন টার সময় কোনও রকম নাকে মুখে একটু খাবার গুঁজে সে দৌড় লাগায় অফিসের দিকে কিন্তু আজ মিমলি আর সৌরভ এর বিয়ের আগের এই শেষ ভ্যালেন্টাইন্স ডে ।তাই প্রতি বছরের মতো আজকে ওরা দুজনে মিলে একসঙ্গে সিনেমা দেখে,পার্কে বসে,গল্প করে একটু নিজেদের মতো করে আনন্দ করে দিনটা কাটাবে তেমনটা ঠিক করেছে ।তাই আজ সকাল থেকে মিমলি খুব
ব্যস্ত । কোন শাড়িটা পরবে সে ,চুলটা ঠিক কিভাবে সেট করবে, শাড়ির সঙ্গে মানানসই কোন হার দুল টা পরবে ,কি রঙের লিপস্টিক পরবে ইত্যাদি নিয়ে ।

বাড়িতে এখন দাদান,ঠাম্মি আর একা মিমলি ।বাবা, মা দুজনে মিমলির বিয়ের নিমন্ত্রণ সারতে গেছে একদিনের জন্য মিমলির পিসির বাড়ি হাওড়ায় ।তবে এই সময় বাড়িতে বাবা, মা থাকলে এভাবে অফিস ছুটি নিয়ে সেজেগুজে ড্যাংড্যাং করে হবু বরের সঙ্গে দেখা করতে যেতে মিমলির বেশ লজ্জাই করত ।
যদিও মিমলির বিয়ের এখনও মাসখানেক দেরি আছে তবুও মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ পর্ব সব আগেভাগেই সেরে ফেলছেন মিমলির বাবা মা ।

" মিমলি দিদিভাই কেমন সাজগোজ করলি দেখি একবার " মিমলির ঘরে ঢুকে ওকে দেখে একেবারে চমকে উঠল মাধবী ।অন্য দিনের মতো জিন্স আর একখানা ম্যাড়ম্যাড়ে টপ পরেনি আজ, তার একমাত্র আদরের
নাতনি ।গোলাপি রঙের পিওর সিল্ক শাড়ি আর হাল্কা গোলাপী মুক্তোর গয়নায়
বেশ মানিয়েছে আজ মিমলি কে ।মাধবী কে নিজের ঘরে দেখে ঠাম্মি বলে জাপটে জড়িয়ে ধরল মিমলি ।ঠাম্মি আর নাতনির আদর পর্বের পর বিছানার ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা জিনিসপত্রের পাশে সৌরভের জন্য চকলেট বক্স আর লাল গোলাপের তোড়াটা লক্ষ্য করল মাধবী ।
বুঝতে অসুবিধা হল না মাধবীর, মিমলির তরফ থেকে এগুলো হবু নাতজামাই এর উপহার ।

" হ্যাঁ রে মিমলি খবরকাগজে, টিভি তে এখন একটাই চর্চা 14ই ফেব্রুয়ারি ওই কি যেন বলে ভ্যালেন না না মনে হয় ভিলেন ডে!!!! তাই না"?

মাধবী আজকাল কানে বেশ ভালো কম শুনছে ।
ঠোঁটে লিপস্টিক দিতে দিতে তাই মিমলি মুচকি হেসে, ঠাম্মি কে শুধরে দিয়ে নিজের মুখটা মাধবীর কানের কাছে নিয়ে গিয়ে একটু জোরে বলল আজ কোনও "ভিলেন ডে" নয় ঠাম্মি আজ হচ্ছে
" ভ্যালেন্টাইন্স ডে " বিশুদ্ধ বাংলা ভাষায় যাকে বলে ভালোবাসার দিন ।
আজকের এই দিনে প্রত্যেকে নিজের ভালোবাসার মানুষটি কে ভালোবাসার কথা জানায় ,কিছু সুন্দর উপহার দেয় একে অপরকে ।একসঙ্গে সময় কাটায় দুজনে ব্যাস ।
ভালোবাসা জানানোর দিন এই কথাটা বেশ অবাক করল মাধবী কে ।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে

" ভালোবাসি ভালোবাসি এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি ভালোবাসি "গানটি গুনগুন করতে করতে সাজগোজে ব্যস্ত মিমলি কে উদ্দেশ্য করে মাধবী বলল" আমাদের সময় বাপু এসব ভালোবাসার দিন টিন বলে আলাদা কিছু ছিল না।এই যে তোর দাদান আমাকে ভালোবাসে কিংবা আমি তোর দাদান কে কতখানি ভালোবাসি সেটা একে অপরকে কখনও বলার প্রয়োজন বোধ করিনি
আমরা ।
আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা জানানোর জন্য বা ভালোবাসা দেখানোর জন্য কোনও নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন হয় নাকি? ভালোবাসা তো উপলব্ধি করতে হয় অনুভব করতে হয় " ।

মাধবী বলে চলল "সেই আমাদের বিয়ের দিন শুভদৃষ্টির সময় একে অপরকে প্রথম দেখেছিলাম আমরা ।সেই তখন থেকেই দুজন দুজনের চোখের ভাষা পড়ে ফেলতে পারি ।
আমাদের বিয়ের পর তখন আমরা গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে ।তখন ওখানে গ্যাসের কোনও বালাই ছিল না ।বাড়ির সব রান্না হত কাঠের জ্বালে ।অভ্যাস না থাকায় উনুনের সেই ধোঁয়াতে শুরু হল আমার চোখে জল পড়া আর জ্বালাভাব ।বাড়ির নতুন বৌ আমি কাউকে নিজের অসুবিধার কথা মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারিনি । তখন কিন্তু তোর দাদান আমি মুখে কিছু না বলা সত্বেও ,আমার অবস্থা সব বুঝতে পেরে বাড়িতে কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজের সাইকেল টা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে হঠাত্ একদিন একটা স্টোভ এনে হাজির করল, আমার সুবিধার জন্য ।সেই সময় গ্যাসের চেয়ে তোর দাদানের কারখানায় কাজে যাবার জন্য ওই সাইকেল টা অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল ওর ।এরপর সাইকেল টা না থাকায় বাড়ি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা সে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করত রোজ ।

এইভাবেই চলছিল সময় কিন্তু তারপর হঠাত্ একদিন তোর দাদানের চাকরি টা চলে গেল । কারখানা লকআউট হয়ে গেল ।খোকা মানে তোর বাবা তখন আমার গর্ভে ।অভাবের সংসার তখন আমাদের ।এরইমধ্যে ডাক্তারবাবু বলে দিলেন আমার শরীরে রক্ত কম একটু ভালো মন্দ খেতে হবে, যত্নে থাকতে হবে আমাকে ।সেই সময় দিন রাত টিউশনি করেছে তোর দাদান, এমনকী রাতের বেলা না ঘুমিয়ে শহরের অনেক অফিসের হিসেবপত্র লেখালেখির কাজ করেছে , দুটো পয়সা বেশি রোজগারের জন্য যাতে শুধুমাত্র আমাকে একটু ভালো রাখতে পারে ।
তারপর সময় বদলালো খোকাও একটু একটু করে বড় হচ্ছিল ।ধীরে ধীরে সচ্ছলতা ফিরছিল আমাদের সংসারে ।আমরা ছিলাম ছাপোষা
মানুষ ।এই বাহান্ন বছরের বিবাহিত জীবনে কোনও দিন তোর দাদান কে ভালোবাসি একথা বলতেই পারিনি ।তবে সংসারের ভালোমন্দে অভাব অনটনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবসময় পাশে থেকেছি ।সন্তানের জন্ম দিয়ে তোর দাদান কে বাবা হবার সুখ দিতে পেরেছি ।চকলেট, ফুল বা অন্য কোনও উপহার এসব হাতে তুলে দিতে পারিনি কখনও, এসব ছিল আমাদের কাছে বিলাসিতা ।তবে তোর দাদানের সবচেয়ে পছন্দের তালের বড়া,সুগন্ধী চালের পায়েস আর লাউচিংড়ি নিজের হাতে যত্ন করে রেঁধে খাইয়েছি বহু বার ।তোর দাদানের অফিস বেরনোর সময় দরজায় দাঁড়িয়ে ওর মঙ্গলকামনায় " দূগ্গা দূগ্গা " বলতে ভুলিনি কখনও ।ওর পথ চেয়ে অপেক্ষা করেছি রোজ ।
ঘর্মাক্ত শরীরে ও যখন অফিস থেকে বাড়ি ফিরত তখন শত ব্যস্ততার মধ্যেও আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে দিয়ে জল সরবতের গ্লাস এগিয়ে দিয়েছি ।
তোর দাদানের এককালে করা শরীরের ওপর এত অত্যাচার যাবে কোথায়? মিষ্টি খেতে মানুষটা যে কি ভালোবাসত ,সে আমি জানি । কিন্তু রক্ত পরীক্ষায় যেদিন ব্লাডসুগার ধরা পড়ল সেদিন থেকে ওনার মিষ্টি খাওয়াটাও ঘুচল ।আর তোর দাদানের তীব্র আপত্তি থাকা সত্বেও ,ওর সঙ্গে আমিও নিজের ইচ্ছায় মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করলাম ।

বুঝলি মিমলি দিদিভাই, সবটাই ছিল আমাদের এই দুই বুড়ো বুড়ির নিখাদ ভালোবাসার প্রকাশ ।তবে এখন যুগ বদলেছে আর যুগের সঙ্গে ভালোবাসার প্রকাশের পদ্ধতিরও বদল হয়েছে "।

ঠাম্মির গল্প শুনতে শুনতে হঠাত্
" কি রোম্যান্টিক ঠাম্মি "বলে মাধবীর গলাটা জড়িয়ে ধরল মিমলি ।
অতীতের কথা বলতে বলতে মাধবী খেয়াল করেনি, যে গল্প শুনতে শুনতে মিমলি কখন ওর পাশে এসে বসেছে ।
এরমধ্যে মিমলির ফোনে অনেকগুলো মিসড্ কল সৌরভের ।তাই আর দেরি না করে মিমলি টা টা করে বেরিয়ে পড়ল ।

এদিকে নিজের বৌ কে অনেকক্ষণ দেখতে না পেয়ে ওদিকে আবার মিমলির দাদান চিৎকার জুড়েছে ,
" কই গো কোথায় গেলে? মাধু আমাকে একটা পান সেজে দাও "।
" যাই যাই বুড়োর আবার পান খাওয়ার শখ হয়েছে দেখছি " নিজের মনে কথাটা বলে নিজের ঘরের দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল মাধবী ।সে ইদানীং কানে কম শুনলেও নিজের স্বামীর আদর করে ডাকা ওই " মাধু " ডাক শুনতে যে, সে আজও ভুল করেনা ।এই একটি ডাক শুনবার জন্য মাধবী যে হাজার হাজার আলোকবর্ষ হাঁটতেও রাজী আছে ।।।।