টপিকঃ ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে পার্ট ১
একনাগাড়ে বেশ কিছুক্ষণ বেজে চলা ফোনটা সপ্তর্ষি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এল জয়ীতার গলা- "ওই, কালকের দেখাশোনায় পাত্রপক্ষর আমাকে পছন্দ হয়েছে, বিয়েতে রাজি। তবে ছেলের অফিসে বেশি ছুটি নেই বলে আপাতত কেবল রেজিস্ট্রি হবে। এক সপ্তাহ পর রেজিস্ট্রির ফাইনাল ডেট জানাবে বলেছে। মা-বাপি খুব খুশি।" "আর তুই? " পাল্টা প্রশ্ন করল সপ্তর্ষি। "খুবববব., তুই না?" বাচ্চাদের মত হেসে উত্তর দিল জয়ীতা। "হুম, আজ অফিস আসছিস তো? আয় তাড়াতাড়ি কথা হবে। আমাকে এখন বেরোতে হবে।রাখছি ফোনটা। বাই।"- একনাগাড়ে কথাগুলো বলে ফোনটা কেটে দিল সপ্তর্ষি। মাথাটা কেমন ভারি ভারি লাগছে তার। বড়ো একা লাগছে জয়িতা কি কোন দিন বুজবে না তার মনের কথা ।।এতো দিন বলি বলি করে ও জয়িতার সমানে নিজেকে মেলে ধরতে পারলও না।। শোওয়ের জলের সাথে সপ্তর্ষিএর চোখের জল এক হয়ে যায়ে |
অফিস এ আজ মনটা বসে না চুপচাপ মুখ গুজে কাজ কারতে থাকে কিন্তু চোখ বার বার জয়তিএর দিকে চলে যায় জয়িতা ২ ৩ বার চোখের এশারাতে জিজ্ঞাসা করে কি ব্যাপার কিন্তু মনের কথা মুখে আসে না বলে উটতে পারে না জয়ী আমি তোকে বড়ে ভালবাসি রে |
রোজ দুপুরে ক্যান্টিনের এই জায়গাটা কিছুক্ষণের জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়ে অফিস স্টাফদের আনাগোণায়। রোজকার অভ্যাস মতই ওরা আজও কোণের একটা টেবিলে মুখোমুখি বসেছে। প্লেটে প্রায় ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ভেজ চাউমিন চামচে করে নাড়তে নাড়তে প্রশ্নটা জয়ীতাকে করেই ফেললো সপ্তর্ষি, "বিয়েটা তুই কি তাহলে করেই ফেলছিস? " "অফকোর্স, হোয়াই নট ?" হাতের ট্যাবটা থেকে মুখ না তুলেই উত্তর দিল জয়ীতা। এইসময় রোজ সে ফেবু স্ট্যাটাস চেক করে। সপ্তর্ষি ওর মুখের দিকে তাকাল একবার। জয়ীতার ঠোঁটের ঠিক উপরে জমে আছে মুক্তবিন্দুর মত সাত-আটটা জলের ফোঁটা। চোখ নামিয়ে আবার চাউমিনে মন দিল সে।
বিকাল চারটে নাগাদ ট্যাবে টুং টাং "আজ জেনারেলে উঠব। অপেক্ষা করিস।" চারটে নাগাদ চ্যাটবক্সে ঢুকল জয়ীতার মেসেজটা। "ওকে।" বলে অফলাইন হল সপ্তর্ষি। হাতে আর খুব বেশি সময় নেই। অনেক কাজ বাকি আছে তার।
"আজ ল্যেডিস স্পেশাল ধরলি না কেন?" ছটা পাঁচের ব্যান্ডেল লোকালের শেষ কামরার একটা সিটে বসে জয়ীতাকে প্রশ্ন করল সপ্তর্ষি। "তোর সাথে বাড়ি ফেরার ইচ্ছা হল তাই"- জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল জয়ীতা। ট্রন তখন লিলুয়া ছাড়িয়ে সামান্য গতি নিয়েছে। জানলা দিয়ে আসা হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে উড়ছে জয়ীতার খোলা চুল।
রিষড়া পার হতেই উঠে দাঁড়াল জয়ীতা। এবার নামতে হবে তাকে। যাওয়ার আগে হাতটা একবার সপ্তর্ষির কাঁধে রাখল সে। "কিছু বলবি?" জয়ীতার মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকল সপ্তর্ষি। উত্তর দিতে পারলোনা কিছু। ইতিমধ্যে ট্রেন গতি কমিয়ে শ্রীরামপুর স্টেশানে ঢুকেছে। জয়ীতাকে নামতে হবে এবার। চ্যানেল ছেড়ে ধীর পায়ে গেটের দিকে এগিয়ে গেল ও। সেখানে তখন বেশ ভিড়।।
সপ্তর্ষি জল ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে না আজও মুখু ফুটে বলতে পারলও না আমি তোকে ভালবাসিরে ... জয়ীটা কোন দিনও তার এই নীরব প্রেম বুজবে না।।
রাত-দশটা-
"কালকে এগারোটা নাগাদ ভিক্টোরিয়ার গেটে দাঁড়াস, আমি অপেক্ষা করব। আর পারলে ওই ব্লু শার্টটা পড়ে আসিস। ঘুম পাচ্ছে। আমি এলাম।" "আর তুইও পারলে নুপূরটা......" টিং করে জয়ীতার ম্যেসেজটা হোয়াটসএপে ঢুকতেই তড়িঘড়ি রিপ্লাই দিল সপ্তর্ষি। "হুমম" বলে তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অফলাইন হয়ে গেল জয়ীতা। রিপ্লাই টাইপ করতে গিয়েও থেমে গেল সপ্তর্ষি। চ্যাটবক্সের কোণে তখন লেখা উঠছে, "লাস্ট সিন টু মিনিটস এগো।" জয়ীতা ঘুমিয়ে পড়েছে।
পার্ট ২
ওয়েট করতে হবে