টপিকঃ কে প্রথম কাছে এসেছি ,প্রথম চেয়ে দেখেছি কে প্রথম ভালোবেসেছি তুমি না আমি

বৌভাতের রাতের সমস্তরকমের ব্যস্ততাকে ছাপিয়ে আজ অভীক ও অনন্যার ফুলশজ্জা। পূর্বে ওরা দুজনেই আলাদা আলাদা সম্পর্কে জড়িয়ে থাকলেও অবশেষে অভীক আর অনন্যার একটি বিখ্যাত ম্যাট্রিমনি সাইটের হাত ধরে সম্বন্ধ করেই বিয়েটা হয়েছে। একেই হয়তো বলে ভাগ্যের ফের। আজকের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে ওরা নিজেরাও কিন্তু ভাবেনি যে, জীবনে কখনও পরিবারের পছন্দসই পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে। সে যাই হোক, আজ ওদের জীবনের বহু প্রতীক্ষিত সেই রাত। দুরুদুরু হৃদস্পন্দন, ঘনঘন নি:শ্বাস, শরীরের উষ্ণতা, কম্পিত ওষ্ঠযুগল, ঘুলঘুলি দিয়ে বয়ে আসা এক ঝলক হিমেল বাতাস, আলো-আঁধারি পরিবেশ এসবই যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে নবদম্পতিকে। রাত প্রায় ১টা। একে একে সকল আত্মীয়-পরিজন-বন্ধুবান্ধব চলে গিয়ে বাড়ি ফাঁকা হয়ে গেল নিমেষেই। তারপরেও বহু নিয়ম-আচারের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে একটা সময় পর ওরা একান্তে পেল নিজেদেরকে একে অপরের সান্নিধ্যে। বন্ধ দরজার ওপ্রান্তে থাকা নববধূ রূপে অনন্যা হয়তো কিছুটা ভীত-লাজুক অবস্থায় আলগোছে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চিন্তা-ভাবনারা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। নূতন বরের বেশে অভীক ধীর পায়ে স্ত্রীর কাছে এসে দাঁড়াল। 'কি বলবে আর কিই বা করবে ও এখন' এসব অদ্ভুত প্রশ্নগুলো ওর মাথায় যেন উঁকি মারছিল। এসবের ঊর্ধ্বে উঠে গিয়ে অভীক অনন্যার হাত দুটো আলতো করে ধরে এনে সুন্দর করে সজ্জিত নরম বিছানার ওপর বসালো। তারপর পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটি আংটির বাক্স বের করে সেখান থেকে আংটি বের করল এবং অনন্যার বাম হাতটি তুলে ধরে অনামিকায় পড়িয়ে দিল সহস্তে। মুখে লাজুক হাসির রেশ রেখে অনন্যা অভীকের দিকে তাকাল আর বলল, "কিন্তু তোমাকে দেওয়ার মতো যে আমার কাছে কিছুই নেই।"

অভীক বলল, "কে বলল যে কিছুই নেই? আছে আছে। আমি একটা জিনিস চাইলে দেবে আমায় তুমি...??"

- "কি চাও বলো?"

- "চলো আমরা ব্যালকনিতে যাই। ওখানের ওই চাঁদডোবা অন্ধকারে গিয়ে একটু দাঁড়াই।"

অবাক দৃষ্টিতে অনন্যা অভীকের দিকে তাকিয়ে শুধু হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল। একটু পরে ওরা ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। তবে দুজনের কনিষ্ঠাঙ্গুলের স্পর্শ ছিল কিন্তু অটুট। ঘরের ভেতরে গুমোট ভাব থাকলেও বাইরে কিন্তু বেশ মনোরম পরিবেশ। ঘড়ির কাঁটায় রাত প্রায় তিনটে। নীরবতা ভেঙে অভীক অনন্যাকে বলল, "একটা সুন্দর রোমান্টিক গান শোনাবে প্লিজ। আমার জন্যে কখনো কেউ গান গায়নি আসলে, তাই এই ইচ্ছেটুকু পূরণ করার ভার তোমায় দিলাম। আর মনে করো যে, এটাই হবে তোমার দেওয়া আমাকে শ্রেষ্ঠ উপহার।"...

মুখের কথাকে শেষ করতে না দিয়েই গান ধরল নববধূ,

"কে প্রথম কাছে এসেছি

কে প্রথম চেয়ে দেখেছি

কিছুতেই পাই না ভেবে

কে প্রথম ভালোবেসেছি

তুমি না আমি.....।।"

অনন্যাকে থামিয়ে দিয়ে অভীক ওকে কাছে টেনে সুরের রেশ ধরে রেখে গাইল,

"শুরু হল কবে

এত চাওয়া-পাওয়া

একই অনুভবে

একই গান গাওয়া

কে প্রথম মন হারানো

স্রোতে ভেসেছি

তুমি না আমি....??"

গান শেষ হতেই অভীক অনন্যাকে বাহুবেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। এক অদ্ভুত মাদকতায় মিশে রইল যেন দুটি প্রাণ। মূহুর্তেরাও যেন থেমে রইল ওদের যুগলবন্দীর সাক্ষী হয়ে। কিছুক্ষণ পর ওরা একটু ধাতস্ত হয়ে সরে এল পাশাপাশি। সারারাত ওদের গল্প চলেছিল অবশ্য আর তার সাথে ছিল নববধূর শাঁখা-পলার টুংটাং আওয়াজ। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ওরা ঘরে চলে এল। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে অভীক বলল, "অনন্যা, শারীরিক সম্পর্কই জীবনের শেষ কথা নয়। আমি জানি আর এটাও বুঝি যে, তুমি আমার কাছ থেকে এটাই আশা করেছিলে। সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছে বলেই সেই সম্পর্কে জোর খাটাব, এমন মানুষ আমি নই ; তুমি শুধু এই বিশ্বাসটুকু রেখো।"...

অনন্যা শ্রদ্ধা মাখানো কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকালো সবচেয়ে কাছের মানুষটির দিকে। শুধু ভাবলো একটিবার, "এই কি সেই মানুষ যার জন্যে জীবনের পঁচিশটি বসন্ত অপেক্ষা করে এসেছিলাম আমি??"...আনমনেই ওর চোখের কোণটা মনে হয় চিকচিক করে উঠল। এক প্রশান্তিমাখা নি:শ্বাস ফেলে নিভৃতে অভীকের বুকে মাথা রাখল অনন্যা - ওদের এই ভালোবাসার নূতন পথচলার একমাত্র অধিকারিণী হয়ে...||