টপিকঃ আগ্নেয় দ্বীপ বালি ( পর্ব #৪)
এবার যাবার পালা উবুদ মাঙ্কি ফরেস্ট এ । রাস্তার দুপাশে সারি সারি ধান ক্ষেত আসলে বলা উচিত ধাপে ধাপে ধানক্ষেত আর নানা রঙ বেরঙ এর ফুলের গাছ ।
আমাদের গাড়ি এসে থামল শাখামৃগের রাজ্যে । এই মাঙ্কি ফরেস্ট সংরক্ষিত এলাকা আর হিন্দু মন্দির । সপরিবারে বানরকুল গাছে ,নালার ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।
টিকেট কেটে ভিতরে প্রবেশ করার মুখে খাবারের দোকান যেখানে দু একটা বানর দাঁড়িয়ে আছে বিস্কিটের আশায় ,গ্রাহক বা দোকানী মাঝে মাঝে খাবার ছুড়ে দেয়া মাত্র তা লুফে নিচ্ছে বানর এর দল।
চমৎকার সব ভাস্কর্য আর প্রচুর গাছপালায় ঘেরা পুরো এলাকা । এখানে প্রায় ১১৫ প্রজাতির বিভিন্ন রকম গাছ আছে । কিছু কিছু গাছ এত প্রাচীন যে গাছে লতা/জটা মাটি ছুয়েছে ।
মূলত এই সংরক্ষিত বনটা লম্বা লেজ এর কাঁকড়া খেকো ম্যাকাকা ( long-tailed macaque / crab-eating macaque ) বানরের বিচরণ ক্ষেত্র।
ছোট ছোট বানর ছানা গুলো মায়ের সাথে লেপটে আছে কিন্তু এর মাঝেই চলছে তাদের হুড়োহুড়ি ।
আমরা কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলাম নিচে । সেখানে পিচ্ছিল পাথর আর কাঠের পাটাতন পার হয়ে ছোট্ট একটা ঝর্ণার কাছে পৌছালাম।
বনের কর্মীরা বারবার সতর্ক করে দিচ্ছিল যেন ব্যাগ আর ক্যামেরা সাবধানে রাখি ।
বনের বেশ ভিতরে আছে চৌদ্দ শতকে নির্মিত হিন্দু মন্দির পুরা দালেম অগাং পাদান্তেগাল বা গ্রেট ডেথ টেম্পল ।
বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে এবার চললাম কফি প্লান্টেশন দেখতে । পড়ন্ত বিকেলে নারিকেল গাছ ঘেরা এক জায়গায় এসে গাড়ি থামল ।
গেটের কাছে দেখি লুয়াক মিয়া লুঙ্গি/সারাং পড়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
আমরা এলাম জাম্বে আসরি কফি প্লান্টেশন এ ।
ভিতরে ঢুকতেই এক মিষ্টি মেয়ে এগিয়ে এল আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে এবং সেই আমাদের এলাকাটা ঘুরিয়ে দেখাল । আমরা ওর পিছনে হাঁটতে শুরু করলাম। গাছের ফাঁকে ফাঁকে লুয়াক এর খাঁচা । লুয়াক বা ইন্দোনেশিয়ান সিভিট বিড়াল জাতীয় প্রানি ।
ওর নামেই নাম পৃথিবীর সবচেয়ে দামী কফি লুয়াক এর কপি লুয়াক (Kopi Luwak) । কারন এই কফি তৈরির প্রক্রিয়া টা একটু ভিন্ন । এখানে কফিবিন গুলো লুয়াক খায় আর পরের দিন সে যখন প্রাতঃক্রিয়া মানে পটি করে তখন সেখান থেকে কফিবিন গুলো সংগ্রহ করা হয় । এরপর নানা প্রসেস এর মাধ্যমে তৈরি হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামী কফি লুয়াক কফি ।
প্রথমে পটি সংগ্রহ করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে কুটে তৈরি হয় এই কফি ।
বাগান ঘুরে আমরা এলাম ছাউনি ঘেরা ক্যান্টিনে , টেস্ট করার জন্য হাজির করা হল তের রকম পানীয় ।
আমি হিবিস্কাস মানে রোজেলা চা আর লেমন চা খেলাম ।
এরপর ওদের শপ থেকে এই দুই রকম চা ছাড়াও কিনলাম জাফরান ,এলাচ, দারুচিনি আর স্টার এনাইস । এরপর ফেরার পালা ,পুরোটা সময় জুড়ে আলোচনা চলল লুয়াক আর লুয়াক কফি নিয়েই...............