টপিকঃ আগ্নেয় দ্বীপ বালি ( পর্ব #৫)
হোটেলে পৌছাতে পৌছাতে রাত প্রায় নয়টা , কোন রকমে ঝটপট শাওয়ার নিয়েই ছুটলাম রাতের খানা খেতে । আমাদের হোটেল থেকে হাঁটা দূরত্বে বেশ কয়েকটা খাবারের রেস্তোরাঁ , আমরা ঢুকলাম গারুপা তে ।
গারুপা এক মাছের নাম এবং সে দেখতে যথেষ্ট বদসুরত কিন্তু ম্যানেজার বার বার বলছিল এই মাছটা যেন ট্রাই করি ,অগত্যা রাজি হলাম এবং বুঝলাম দেখতে পচা হলেও খেতে অসাধারন মজা । এক কোনে বসে একমনে পিয়ানো বাজাচ্ছিল এক জন আর তাকে ঘিরে কিছু গুণমুগ্ধ শ্রোতা এর ভিড় । রেস্তোরাঁ বেশ জমজমাট আর প্রচুর লোকজন এর ভিড় ।হবেই না কেন মৌসুম টা তো উৎসবের একদিকে ক্রিসমাস আর অন্যদিকে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি ।
এক জন মনোযোগ সহকারে খানা দানার বিউটিফিকেশন করছিল ।
মাছ ছাড়াও আমরা রাইস ,চিকেন ,সূপ আর ড্রিংকস নিলাম ।
পেটপুরে খেয়ে লক্ষ লক্ষ রুপিয়া বিল দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে গেলাম হোটেলে ,রাত এগারটা বাজে প্রায় আর রাস্তাও বেশ সুনশান ।
ফিরে এলাম হোটেলে ,লবির দোকান টা তখনও খোলা । একবার ঢুঁ মারার লোভ সামলাতে পারলাম না এবং বরাবরের মতই আমার ভাই বিরক্ত হতে হতে চাবি নিয়ে চলে গেল রুমে । কিছুক্ষণ নিচে গপশপ করে আমরাও চললাম ঘুমাতে ।
পরদিন যথারীতি সাত টার একটু পরপরই নেমে গেলাম নাস্তা খেতে আর আট টার মধ্যে খাবার শেষ করে লবিতে বসে অপেক্ষায় থাকলাম কখন গাড়ি আসবে । আটটায় আসার কথা থাকলেও ড্রাইভার এল আটটা বিশে । রাগ করব কি হি হি করতে করতে বলল কি জানি হইছিল গাড়ির সেতা ঠিক করতে একটু দেরি হয়ে গেছে । কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে পরলাম ।
অনেক খানি পথ পেড়িয়ে এসে থামলাম মন্দির কমপ্লেক্স এ ,কিন্তু চারপাশে গাড়ি আর দোকানের মেলা।
কোথায় টেম্পল জিগ্যেস করতেই ড্রাইভার বলল ঐ গেট পার হয়ে আরও খানিকটা যেতে হবে আমাদের । তীব্র রোদে মাথার চাঁদি পুড়ে যাবার অবস্থা ।
বালির সেই আইকনিক গেট পার হয়ে দেখি রাস্তার দুই পাশে দোকানের সাড়ি ,পরে কিনব আগে মন্দির দেখে আসি এই ভেবে দিলাম হাটা ।
আরও কিছু পথ পেরিয়ে এসে পৌছালাম আর এক তোরণ এর সামেনে ,সিড়ি বেয়ে উঠার আগেই কানে এসে পৌছাল সাগরের গর্জন ।
ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল সাগর ,কেমন উথাল পাথাল ঢেউ। একদল কিশোর কিশোরী আবদার করল ওদের সাথে ছবি তোলার ,মনের আনন্দে ছবি টবি তুলে ছুটলাম সাগর পানে । আহ চোখের সামনে সেই টেম্পল তানাহ লট(Tanah Lot) ।বালিনিজ ভাষায় যার অর্থ সাগরের মাঝে এক টুকরো জমি ( land in the sea) ।
এই মন্দির কে ঘিরে আছে নানারকম উপকথা ,লোককথা । বালিনিজ মাইথোলজিতে এর অনেক অনেক গল্প আছে । পূর্ব জাভা থেকে এক উচ্চ পদস্থ প্রিস্ট নিরাথা একবার বালি বেড়াতে আসেন । বালির মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক রূপ দেখে তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন ।তখন তিনি সমুদ্র দেবতা বরুনা /ভারুনা এর সম্মানে এই পাথুরে মন্দির স্থাপন করেন ।
যতই এগিয়ে যাচ্ছি ততই বাতাসের ঝাপটা আর সমুদ্রের গর্জন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কি পিচ্ছিল পাথর ,দাঁড়ানোই মুশকিল কিন্তু তাতে কি আর ফটো সেশন থামে? হঠাত তীব্র ব্যথায় বাঁকা হয়ে গেলাম। যন্ত্রণায় মিখ থেকে অটো চিৎকার বেড়িয়ে এল ।পানিতে ভিজে একাকার সেদিকে খেয়াল নাই শুধু মনে হল কে যেন পিঠের উপর প্রচন্ড জোরে বাড়ি দিল।ঢেউ এর এত্ত শক্তি !! ভাই এর হাত ধরে কোন রকমে পতন ঠেকালাম । আমি সাম্লে উঠতে না উঠতেই সফেন ধপাস । বেচারি বাথা লজ্জায় উঠে দাঁড়ানোর বার্থ চেষ্টা করছে ,ভাই আর কেয়াপু মিলে ওকে দাড় করাল। আশে পাশে দেখি আর ও দুই জন এর এক ই দশা । এর মাঝে পু পু করে বাশি বাজাতে বাজাতে ভলান্টিয়ার এসে হাজির । সরে যেতে হবে , প্রচন্ড আক্রোশে ফুঁসছে ব্যাটা ভারত মহাসাগর ।
কি আর করা ওখান থেকে সরে আমরা ঢাল বেয়ে উঠে গেলাম ।
অনেকক্ষণ দেখলাম কেমন করে সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাথুরে দেয়ালে .....................