টপিকঃ ধন সমাচার
ধন সমাচার
গিনি
ডাকাতি শেষ। অনেক স্বর্ণের গহনা পাওয়া গেছে। দস্যুর দল এখন পালিয়ে নতুন এক গ্রামে উঠে। কিছু দূরে এক ঘরে আলো দেখা যায়। বেশ গান বাজনার শব্দ ভেসে আসছে। দস্যু প্রধান ভাবে আরও একটা সুযোগ এসে গেছে। এই ঘর ও লুট করা যাবে। ধীরে কাছে আসে। আঁধারে দাঁড়ায়ে দেখে দরজা খোলা আর কয়েক জন মিলে রঙ্গিন জামা পরে নাচ , গানে মত্ত। প্রধান বুঝে এ বাউলের ঘর। বুঝে কিছুই পাবার আশা নাই, তবে রাতের জন্য একটু আশ্রয় নেওয়া যায়।
গুরু, আমারা পথ ভুলেছি। আজ রাত একটু তোমার ঘরে জিরাবো। আগামী ভোরে চলে যাবো।
বাউল- কোনো আসুবিধা নাই। জনাব, আমার কিছুই নাই। এ সবই তার। আমি শুধু তার অনুমতি বিনায় ভোগ করে গেলাম। আমি মনে করি আমায় ত যেতেই হবে। যাবার সময় ভাবি এই মনটা যেন কলঙ্ক মুক্ত থাকে। জনাবে একটু আসুবিধা হবে। আমার এখানে কোনো বিছানা নাই শুধু ঐ চাদর খানা সম্বল। একাই থাকি । ওটা পেতে শুয়ে যাই। বেশী সময় ত ধ্যান ধারনায় কেটে যায়। এরা আমার সাথি। আপনারা হয়ত ক্লান্ত। অখানে শুয়ে যান। একটু চিড়া আর কলা আছে। ভাগা ভাগি করে সবার হয়ে যাবে। বেশী খেলে অসুখ বিসুখ হয় তাই বেশী খাই না।
দস্যু প্রধান অবাক হয়ে শুধু শুনে।
বাউল আরও বলে, যতই কাছে রাখার চেষ্টা করে মানুষ, এই আত্মা ছাড়া আর কিছু সাথি নাই। সবাই, কাড়াকাড়ি করে, হত্যা করে, কেড়ে নেয়। দুটো রসালো জিনিস খায়, উপভোগ করে। যখন শেষ হয় তখন আরও পেতে চায়। বিপথে যায়। আমার কিছু নাই, চিন্তাও নাই। মন কে সজাগ রাখতে শুধুই তত্ত্বের সুর ধরি। হ্রদয় হয় পূর্ণ, শান্ত হয় মন। বিধাতার এই সংসারে সবই ছড়ানো আছে। পয়সা লাগে না। কেউ কেউ শুধুই কাড়াকাড়ি, মারামারি করে নিজের জীবন অস্থির আর অন্যের জীবন ও শেষ করে। সে গল্প শোনেন নাই ? এক জমিদার তার অগাদ ধন দৌলতের জন্য ঘুমাতে ভয় পেতেন আর সারা রাত জেগে জানালা দিয়ে বাহিরে দেখতেন এক মুচি তার ভাঙ্গা বাক্সটা পাশে রেখে সুখ নিদ্রা দেয়। তাই সে একদিন তার ধনের বাক্সটা ঐ মুচির কাছে দিয়ে বললেন এই বাক্সে অনেক ধন আছে আজ রাত তোমার কাছে থাক আমি একটু ঘুমাই। কিন্তু সেই রাতে মুচির আর ঘুম নাই। কারন ঐ ধন সে এখন পাহাড় দেয় আর ভয়ে থাকে কখন তার জীবন যায়। পরের দিন ভোর না হতেই সে বাক্সটা আবার জমিদারের নিকট ফেরত দেয়। এই হল ধনের কারসাজি।
জনাব আপনারা ঘুমান। আমরা আজ শুধু গান, বাজানায় করে মহা প্রভুর প্রশ্নংশায় রাত পার করবো ঐ উঠানে।
কোনো উৎকণ্ঠা নাই। ছেড়ে যাওয়ার আস্ফালন নাই, শান্তি, পরম শান্তি। ঘুমেও স্বপন আসে না। হয় না কোনো ব্যাঘাত।
ডাকাত সরদার অস্থির হয়। সারা জীবন শুধুই পালিয়েই বেরেয়েছে। এক দণ্ড শান্তি ছিল না। ঘুম ছিল না। এখন ক্লান্ত শরীর। একটু শান্তি চায়। তার ধনের প্রতি মায়া উঠে যায়। সে ভাবে শান্তি এতো সহজ আর সারা জীবন ভুল পথে চলে সব নষ্ট করেছে। সে তার সাথি দের ডাকে, বুঝায়। সাথিরা সব শুনে নিরব চুপসে যায়। ঠিক করে ভোর হলে গয়না গুলি ফেরত দিয়ে আসবে।
সে রাতে বাউল গানের দল অনেক বড় হয়।