টপিকঃ যা চলছে ... !
বোঝাই যাচ্ছে কুমিল্লা থেকে ফোন করার বদলে স্বশরীরে ডিপার্টমেন্টের অফিসে হাজির হওয়া অভিভাবক মায়ের উদ্বেগ যথেষ্ট গুরুত্বের দাবী রাখে। ওনার ছেলে এবার ৩য় সেমিস্টারে, ইভিনিং ব্যাচ; কিন্তু জিজ্ঞাস্য হল: ও কি ঠিকঠাকমত ক্লাস করছে? ছেলেটি বললো সে ক্লাসে একটু অনিয়মিত, চাকুরী করে তাই। এভাবে বিভিন্ন অভিভাবকগণ নিজে এসে বা ফোনে প্রায়ই খোঁজখবর নেন, কাজেই আমি এই প্রশ্ন শুনে মোটেও বিচলিত হলাম না। সন্ধ্যা বেলায় আমি অফিসে রয়ে গিয়েছিলাম জন্য এই দেখাটা হয়ে গেল; না হলে খোঁজ না নিয়েই হয়তো ওনাকে ফেরত যেতে হত।
ছেলেকে আইডি জিজ্ঞেস করলাম। বলতে পারে না। বললাম আইডি কার্ড দেখে বল --- সেটাও হারিয়েছে। 'তুমি কেমন ছাত্র, তিন সেমিস্টার ধরে পড় অথচ আইডি মনে রাখতে পার না? এটা বড় নম্বর হওয়ার কারণ এগুলো ভর্তি সেমিস্টার আর ডিপার্টমেন্ট কোডের সমন্বয়ে তৈরী - রেজিস্ট্রেশনের সময়েই ছাত্রদেরকে এটা সহজে মনে রাখার সহজ টেকনিক শিখিয়ে দেই। আইডি নম্বর ছাড়া তো অনলাইনে থাকা শিক্ষকদের রিসোর্স থেকে ওর রেজিস্ট্রেশন আর রেজাল্ট জানা যাবে না। অবশ্য এটার সমাধান আছে - সেটা হল ছাত্র-তথ্যের ডেটাবেস। রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারে ছাত্রদের যে ডেটাবেস থাকে সেখানে নাম, আইডি থেকে শুরু করে মায়ের ফোন নম্বর, বাসার ঠিকানা সবই ইনপুট দেয়া থাকে। যে কোন আইটেম কিংবা ওয়াইল্ডকার্ড দিয়েও সার্চ করে মূহুর্তে সব তথ্য জানা যায়।
মায়ের নাম দিয়ে সার্চ দিয়ে ১৯৫ জনের নাম আসলো, তার মধ্যে এই ডিপার্টমেন্টের ৩জন। কিন্তু সেই ৩ জনের একটাও এই ছেলের নাম নয়। এখন পর্যন্ত এই ডেটাবেসে সার্চ দিয়ে পাইনি এমন কোন অভিজ্ঞতা হয়নি। কিন্তু এবার তাই ঘটল। ছেলের নামের বানান দিয়ে খুঁজেও কাউকে পাওয়া গেল না। কাজেই সে যে আমাদের ছাত্র না সেই বিষয়টায় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কবে ভর্তি হয়েছ? --- গত নভেম্বরে। কিন্তু নভেম্বরে তো ভর্তি নেয় পরের স্প্রিং সেমিস্টারের জন্য, সেখানে ভর্তি হলে এখন ওর ২য় সেমিস্টার চলার কথা। এরপর জিজ্ঞেস করলাম কোন সেকশনে পড়? -- উত্তরে জানালো সি সেকশনে। কতজন ছাত্র সেই সেকশনে? এর উত্তরে জানালো ৬০ জনের মত। ঠান্ডা গলায় জানালাম, আমাদের এখানে ৩য় সেকশন আছে যেই ব্যাচে সেটার এখন ১ম সেমিস্টার চলে; ২য় বা ৩য় নয়। তাছাড়া আমাদের কোন সেকশনে সর্বোচ্চ ৪০ জন থাকে - ৬০ জনের প্রশ্নই আসে না; আর ৩য় সেকশনে সর্বোচ্চ আছে ১৭ জন। সর্বোপরী সি-সেকশন বলে এখানে কিছু নাই; সেকশনের নামকরণ করা হয় অন্য একটা নিয়মে যাতে কখনই সি নামে কোনো সেকশন হয় না।
অভিভাবক মা, এখানে খরচ কেমন জিজ্ঞেস করাতে সেটা জানালাম। বললো এটার পরিমান মিলেছে। অর্থাৎ ছেলে এখানে ভর্তি এবং পড়ার কথা বলে নিয়মিত টাকাপয়সা আনিয়েছে। অভিভাবককে আরও জানালাম, অনিয়মিত ছাত্র হলেও রক্ষা নাই, কারণ ধারাবাহিক অনুপস্থিত ছাত্রের কাছে ফোন করে নিয়মিত খোঁজ নেয়া হয়, আবার অভিভাবকের কাছেও ফোন করে সেটার সত্যতা যাচাই করা হয় - আর সব শেষে সেই রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পুলিশের কাছে দিতে হয় সেই হলি আর্টিজানের ঘটনার পর থেকে। আপনার বাসায় কখনো ফোন গিয়েছে? যায় নাই।
কাজেই আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলাম। জানিনা চলে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে কী কী ঘটলো।